MUSLIM WOMAN Posted September 24, 2012 Report Share Posted September 24, 2012 আমার মাকে কেন বিশ্বসুন্দরী করা হয় না? আমার বয়স তখন দশ বা এগারো। আবুধাবীতে হুলস্থুল শোরগোল পড়ে গেল। প্রথমবারের মত টেলিভিশনে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হবে। আমি বুঝিনা কিছুই। কিন্তু সবাই লাফায় তাই আমিও লাফাতে লাগলাম। বাসায় গিয়ে বাবাকে বললাম বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখব। অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে বাবাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে নিলাম এটি কিসের প্রতিযোগিতা, কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা আমি এ’ব্যাপারে মহামূর্খ। বাবা বলল, “এই প্রতিযোগিতা হোল সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর নানান দেশ থেকে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাদের নির্বাচন করে এখানে নিয়ে আসা হয় এদের মধ্যে কে সবচেয়ে সুন্দর নির্ধারন করার জন্য”। আমি বসে রইলাম দেখার জন্য না জানি এরা কোন স্বর্গের অপ্সরী! কড়া মিউজিক আর বর্নাঢ্য আলোকমালার ঝলকানির মাঝে শুরু হয়ে গেল সুন্দরী প্রতিযোগিতা। প্রথমেই সব সুন্দরীদের জড়ো করা হোল স্টেজে। তাদের দেখে আমি বিশাল এক ধাক্কা খেলাম। বাংলাদেশের গলি ঘুপচিতে এর চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। আমার মাকে দেখেই তো দেশবিদেশের সবাই মা’র সৌন্দর্যের প্রশংসা করত, জিজ্ঞেস করত মা’র বিবাহযোগ্যা বোন আছে কি’না, কার্ড উপহার দিত। বাবাকে বললাম, “এদের চাইতে মাকে বিশ্বসুন্দরী করা হলে ভালো হত”। বাবা হা হা হো হো হাসতে লাগল। আমি বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। তখন বুঝিনি কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে বুঝলাম এই বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন একটা ভূয়া কন্সেপ্ট। প্রত্যেক মানুষের কাছে তার মা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা এবং তার বাবা এই বিশ্বের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ তা তারা দেখতে যেমনই হোন না কেন। কোন শিশুকে কি বলতে শুনেছেন, “আমার বাবা সুন্দর না, আমি এখন থেকে টম ক্রুজকে বাবা ডাকব” বা “আমার মা সুন্দরী নন, আমি এখন থেকে ঐশ্বর্য রাইকে মা ডাকব”? তাহলে কিসের ভিত্তিতে একজন মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হিসেবে নির্বাচন করা সম্ভব যেখানে পৃথিবীর সব মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অনুভূতিগুলোকে বিবেচনায় আনা হয়নি? তাহলে এমন একটি অসার প্রতিযোগিতার আয়োজন করার অর্থ কি? একসময় বুঝতে পারলাম এটি মূলত দেহব্যাবসার একটি আধুনিক ও যুক্তিযুক্ত সংস্করণ। ক্ষেপে যাবার আগে একটু চিন্তা করে দেখুন। দেহকে পুঁজি করে যে ব্যাবসা তাই তো দেহব্যাবসা। একজন সুন্দরী যদি তার দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে পয়সা কামানোর উদ্যোগ নেন তবে তাকে দেহব্যাবসা বলা অযৌক্তিক হয় কোন বিচারে? তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দেহব্যাবসায় আসা অনেক লাভজনক ও মানবিক। আগেকার দিনে লোকালয় থেকে মেয়েদের অপহরণ করে এ’জাতীয় পেশায় বাধ্য করা হত (উদাহরণঃ ‘উমরাও জান’), কখনো সখনো অভাব বা অসহায়ত্ব তাদের এসব পেশায় ঠেলে দিত (উদাহরণঃ অমর প্রেম)। এখন আমরা জাঁকজমক করে আমাদের মেয়েদের স্বেচ্ছায়, সর্বসমক্ষে এবং বাবামা’র আশীর্বাদসহকারে এই পেশায় যোগ দেয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করি। তারা ব্যাবসায় নামার আগেই নিজেদের অ্যাডভার্টাইজ করার মত একটি প্ল্যাটফর্ম পায়, সুপরিচিত হবার সুযোগ পায়। আর লোকজনও তাদের ছি ছি করেনা বরং বাহবা দেয়। একদল বুদ্ধিমান এবং সৃষ্টিশীল লোক এই সুন্দরী নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্য থাকে এমন একদল মেয়েকে খুঁজে বের করা যারা নিজেকে পণ্য হিসেবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী নয় বা খ্যাতির পেছনে ছুটতে গিয়ে তাদের কি বিসর্জন দিতে হচ্ছে তা দেখতে না পাবার মত যথেষ্ট অসচেতন এবং যাদের পরিবার যথেষ্ট লোভী অথবা বোকা। অতঃপর তারা এদের একজনকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচন করে তাকে দিয়ে ফলাও করে নানাপ্রকার আপাতদৃষ্টিতে ভালো কাজ করায়। এটি একপ্রকার মূলা ঝুলানো। কেননা তখন বাকী সুন্দরীরা কে কোথায় গেল বা কি করল তা নিয়ে মানুষ আর মাথা ঘামায়না। তবে ধন্য মিডিয়া। এ’ যেন শাঁখের করাত। সে নিজেই এই নিষ্পাপ মেয়েগুলোকে পতিত করে আবার এই পতনের কাহিনী নাটক সিনেমা নিউজ আকারে তুলে ধরে- এক্কেবারে “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও” ফিলসফির বাস্তব প্রয়োগ। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা এখন জানি এই বাকী মেয়েগুলোর কি হয়। সৌন্দর্যের খেতাবপ্রাপ্তির স্বপ্নে বিভোর মেয়েগুলো বাস্তবের জন্য প্রস্তুত থাকেনা মোটেই। ফলে যারা রিজেক্টেড হয় তাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। উপরন্তু যেহেতু নিজের সৌন্দর্যকে বর্ধিত করার মত গুন ব্যাতীত তেমন আর কোন যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ বা সময় তাদের হয়না, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এটিই তাদের একমাত্র পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। যারা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয় তাদের প্রথম টার্গেট হয় মডেল বা অভিনেত্রী হওয়া। হায় রে! মডেল মানে তো কাপড়ের হ্যাঙ্গার বা বস্তুকে বিকানোর জন্য মানুষের ব্যাবহার! বান্ধবী শিমু বলত, “সিনেমার নামে কি সুকৌশলে আমাদের পর্ণোগ্রাফির টুকরো টুকরো ডোজ গিলিয়ে দেয়া হচ্ছে আমরা নিজেরাও টের পাচ্ছিনা”। একটু ভেবে দেখুন যে মেয়েটি এবং যে ছেলেটি অভিনয় করছে তারা আদতেই কেউ কারো কিছু নয়। অথচ একে অপরকে স্পর্শ করা থেকে অবলীলায় পরস্পরের সাথে শুয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবই তারা নির্দ্বিধায় করছে (পয়সার জন্য, কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়) আর আমরা সব জেনেও না জানার ভান করে সপরিবারে সাড়ম্বরে সামর্থের বাইরে গিয়েও বিশালাকার টিভি, ডিভিডি ইত্যাদি কিনে তাদের কীর্তিকলাপ দেখছি! এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমরা আত্মীয় স্বজন আসলে বা ফোন করলে বিরক্ত হই, প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধবের জন্য আমাদের হাতে কোন সময় নেই, বিয়েবাড়ীতে এখানে সেখানে সিনেমা টেলিভিশনের নায়িকা আর মডেলরাই এখন আমাদের আদর্শ। তাহলে আমাদের সন্তানেরা মডেল হওয়া বা অভিনেত্রী হওয়াকে উত্তম পেশা মনে করবে না কেন? ফলে আমাদের সন্তানদের এখন স্বপ্ন বড় মডেল বা নায়িকা হওয়া। খুব মজা লাগে যখন শোনা যায় অমুক নায়িকা খুব ভালো, সে অভিনয় করার সময় তার মা সাথে থাকে। আহারে, কি পবিত্র কাজে মা তার মেয়েকে সাহচর্য দেন! আরেকবার শুনলাম অমুক নায়িকা খুব ভালো সে শুধু তার স্বামীর সাথেই অভিনয় করে। কি মজা! স্বামীস্ত্রীর প্রেম্ কি সর্বসমক্ষে প্রদর্শনী দেয়ার মত ব্যাপার নাকি পয়সা কামানোর জন্য পুঁজি করার মত পণ্য?! হলিউডের বিখ্যাত ফন্ডা পরিবারের খ্যাতনামা অভিনেত্রী জেন ফন্ডা থেকে শুরু করে ষাটের দশকের সকল আমেরিকান অভিনেত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে যেকোন প্রকার রোল পাবার জন্য তাদের আগে ডাইরেক্টরদের সন্তুষ্ট করতে হত। আর আজকাল তো ঘরের কাছেই বলিউডে নায়িকারা কিভাবে সিনেমায় সুযোগ পান তা নিজেরাই প্রচার করেন। যারা মডেলিং করেন তাদের অবস্থাও তথৈবচ। ব্যাতিক্রম আছে তবে তাকে তো আর নিয়মের মধ্যে ধরা যায়না। তবে একটু ভেবে দেখুন যদি একজন অভিনেত্রী, মডেল, গায়িকা বা নর্তকীর গুনই তার আসল পরিচয় হয় তবে তাকে পুতুলের মত সাজিয়ে, ক্যামেরার নানাবিধ পদ্ধতি প্রয়োগ করে তার দৈহিক শৈলীকেই কেন মূল উপজীব্য করে তুলে ধরা হয়? কেন নানাধরনের বিশেষন প্রয়োগ করে তাদের নিয়তই কনভিন্স করার চেষ্টা করা হয় যে তারা ভারী সুন্দর ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে তারা নিজেরাও জানে কোন মানুষই সবদিক মিলিয়ে সবচেয়ে সুন্দর হতে পারেনা? এ তো গেল যাদের কোন উপায়ে এইসব ইন্ডাস্ট্রিতে ঠাঁই হয় তাদের কথা। যাদের হয়না তাদের নিয়ে তৈরী ভিক্টোরিয়া প্রিন্সিপাল অভিনীত Mistress মুভিটি দেখুন। সৌন্দর্যের গরবে এবং খরচে তাদের পক্ষে সাধারন মেয়েদের মত যেমনতেমন কোন চাকরী করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয়না। ফলে এদের একটা উপায় হয় কোন সুন্দরের পুজারী বড়লোক পুরুষকে বিয়ে করা। যাদের ভাগ্য ততটা ভালো হয়না তারা কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ নিরুপায় হয়ে কখনো অন্য মহিলার বড়লোক অথচ লম্পট স্বামীর ঘাড়ে ঝুলে পড়ার কায়দা করে, কেউ ব্যার্থ হয়ে নিজের চরিত্র বিসর্জন দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে। এই কি জীবনের সার্থকতা?! এই কি রূপের সার্থক ব্যাবহার?! একটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। একবার এক বিশাল বড়লোক আত্মীয়ের বাসায় গেছি। খানিক পর শার্টপ্যান্ট পরা এক অসাধারন সুন্দরী মহিলা এলেন। তাঁর নখের আগা থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত সৌন্দর্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে যেন। আত্মীয়ার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মুক্তোর মত কিছু অশ্রুবিন্দু তাঁর মসৃন গাল বেয়ে নেমে এলো। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় তাঁর প্রতি স্বামীর সমস্ত আকর্ষণ শেষ। তিনি রান্না পারেন না, ঘরের প্রতি তাঁর কোন সহজাত আকর্ষণ নেই, পার্টির প্রতি স্বামীর আর নেশা নেই, তাঁর নিজের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য যে বিশাল খরচ তা চালাবার মত যোগ্যতা তাঁর নেই, এদিকে সংসার ভাঙ্গে ভাঙ্গে অবস্থা। সেই অসম্ভব সুন্দর মুখে মক্তোর মত জ্বলজ্বলে অশ্রবিন্দু সেকথাই জানান দিল রূপে নয়, গুনেই পরিচয়। সুতরাং চলুন, আমরা রূপের নয়, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে গুনের চর্চা করি। আর রূপ? একটি জীবন পার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট! Collected From Sister রেহনুমা বিনত আনিস http://collected-notes.blogspot.com/2011/05/blog-post_3462.html Link to comment Share on other sites More sharing options...
Recommended Posts
Create an account or sign in to comment
You need to be a member in order to leave a comment
Create an account
Sign up for a new account in our community. It's easy!
Register a new accountSign in
Already have an account? Sign in here.
Sign In Now