MUSLIM WOMAN Posted August 7, 2012 Report Share Posted August 7, 2012 ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক মুসলমান রোজা রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। তারা একদিকে যেমন রোজা রাখতে চান, অন্যদিকে আবার ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা বা কীভাবে রাখতে হবে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। অনেকে ভয়ে রোজা রাখেন না, অনেকে আবার নিজের মতো করে ওষুধ পরিবর্তন করেই রোজা রাখতে চান। মোটকথা, ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখা নিয়ে অনেক রোগী, এমনকি অনেক ডাক্তারও বিভ্রান্তিতে ভোগেন। অথচ আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা অনেক সহজ করে দিয়েছে। ডায়াবেটিস হলে রোগী রোজা রাখতে পারবেন না একথা মোটেই ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা এবং ইসলামী আলেমরা রোজা রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। সুতরাং যেসব ডায়াবেটিক রোগী ঝুঁকির কথা জেনেও ধর্মীয় কারণে রোজা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা রোজা শুরুর আগেই চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে জটিলতা এড়িয়েই রোজা রাখতে পারেন। সম্ভাব্য জটিলতা ও করণীয় ডায়াবেটিস রোগে অনেক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেহেতু একজন রোজাদারকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়, তাই তাদের জটিলতার সম্ভাবনা আরও বেশি। রোজার সময় ডায়াবেটিক রোগীদের যেসব জটিলতা হতে পারে তা হলো—রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), সুগার অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), পানিশূন্যতা এবং ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস। এছাড়া অনেকে এই মাসে রোজা রেখেও বাকি সময় অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করেন এবং ব্যায়াম বা হাঁটাচলা প্রায় করেনই না, ফলে রক্তের চর্বি ও শরীরের ওজন বেড়ে যায়। অনেকক্ষণ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা সালফোনাইলইউরিয়া জাতীয় ওষুধ খান, ইনসুলিন নেন, সাহরি খান না বা খুব কম খান অথবা রোজা রেখে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন—তাদের এই ঝুঁকিটা বেশি। হাইপোগ্লাইসেমিয়া বোঝার উপায় হলো—বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম দেয়া, মাথা ঘোরা, শরীর কাঁপা, চোখে ঝাঁপসা দেখা ইত্যাদি। এতে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সুগারের পরিমাণ ৩ বা এর নিচে হলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত বা যে কোনো খাবার খেয়ে নিতে হবে। — রক্তের সুগার কখনও কখনও আতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। এর লক্ষণ হলো—জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, ঝিমুনি, বমি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে হবে এবং এর পরিমাণ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে। রোজা অবস্থায় ইনসুলিন ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না। — শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার উপায় হলো রাতের বেলায় পানি বেশি বেশি পান করা। তারপরও যদি রোজা রাখা অবস্থায় পানিশূন্যতার পরিমাণ বেশি হয় যেমন—জিহ্বা অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়া, বেশি বেশি মাথা ঘোরানো, প্রস্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত কম ইত্যাদির কোনো লক্ষণ দেখা যায়, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে রোজা ভাঙতে হবে। যারা বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন বা বাইরে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কাজ করেন, তাদের বেলায় এই ঝুঁকি বেশি থাকে। অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে এই পানিশূন্যতা আরও প্রকট হতে পারে। — যারা শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাদের জন্য রোজা হলো সুবর্ণ সুযোগ। রোজা তাদের জন্য কোনো জটিলতা সৃষ্টি করে না, বরং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রোজায় দিনের বেলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা ও ইফতার এবং সাহরিতে সময়মত পরিমিত আহারের অভ্যাস যে কোনো ডায়াবেটিক রোগীকে সংযম ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিত্সার মূল উপাদান। এর মাধ্যমে রোগী তার রক্তের সুগার ও চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন, বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে পারেন। পরামর্শ অনেকে রোজার সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন, অনেকে আবার খুবই অল্প খাবার খান। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দুটিই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা যেতে পারে— — সাহরির খাবার সাহরির শেষ সময়ে খাওয়া। — ইফতারের সময় বেশি বেশি চর্বিযুক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া। — ভাজা পোড়া খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া। — পর্যাপ্ত পানি ও অন্যান্য তরল গ্রহণ করা। — ক্যালরি ঠিক রেখে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। — ইফতারে অতিভোজন এবং সাহরিতে অল্প আহার পরিহার করা। — ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে যারা মেটফরমিন, গ্লিটাজোন অথবা ইনক্রিটিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তবে সালফোনাইলইউরিয়া জাতীয় ওষুধ অথবা ইনসুলিন রক্তের সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই এসব ওষুধ গ্রহণকারী রোগীর উচিত রমজানের আগেই চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। — রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ওষুধের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত যেসব পরিবর্তন করা হয় তা হলো—যারা তিনবার ওষুধ খান তাদের বেলায় বেশি মাত্রা ইফতারের সময় খাবেন এবং কমটুকু সাহরির সময় খাবেন। যদি দিনে দুবার খেতে হয় তবে সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সাহরির সময় খাবেন। — যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন তারা রোজায় দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেন, এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। এই ইনসুলিন ইফতারের সময় নিতে হবে এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্প মাত্রায় নিতে হবে। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের অবশ্যই রমজানের আগেই ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। — বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতামত অনুযায়ী রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা এমনকি প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়া যাবে, এতে রোজার কোনো সমস্যা হবে না। তাই সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিক রোগীর উচিত সাহরির ২ ঘণ্টা পর এবং ইফতারের ১ ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা। — এছাড়া দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত। ইফতার বা রাতের খাবারের ১ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করা যেতে পারে। দেহ-মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধির সুযোগ রোজা ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বহু বিতর্ক ছিল এবং আছে। যেহেতু রোজা আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিধানে একটি অপরিহার্য ফরজ এবং আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর প্রতিদান দেবেন, তাই অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কারণ এক মাস রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের দেহ-মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধির সুবর্ণ সময়। ডায়াবেটিস এমনকি অন্য কোনো রোগ হলেও চিকিত্সকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর রোজা রাখা বা না রাখার ব্যাপারে অবশ্যই সুন্দরভাবে সহায়তা দেবেন। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/08/07/158006 Link to comment Share on other sites More sharing options...
Recommended Posts
Create an account or sign in to comment
You need to be a member in order to leave a comment
Create an account
Sign up for a new account in our community. It's easy!
Register a new accountSign in
Already have an account? Sign in here.
Sign In Now