MUSLIM WOMAN Posted August 5, 2012 Report Share Posted August 5, 2012 রোজাকে পরিচ্ছন্ন করতে সদাকাতুল ফিতর আদায় যাযাদি রিপোর্ট রমজানুল মোবারকের ১৬তম দিবস আজ। পবিত্র মাসের প্রথম পাক্ষিক শেষ হয়ে দ্বিতীয় পাক্ষিক শুরু হয়েছে। সিয়াম সাধনার মাস যখন শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন একটি আর্থিক ইবাদতের প্রসঙ্গ আসে, যা 'সদাকাতুল ফিতর' নামে আখ্যায়িত। রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে এই সদাকাটি আদায় করতে হয়। যখন থেকে রমজানের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ঠিক তখন থেকেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। এমনকি যখন যাকাতের আদেশ অবতীর্ণ হয়নি, তখনো সদাকাতুল ফিতরের আদেশ ছিল। রমজান মাসে রোজা রাখা যেমন অবশ্য পালনীয় তেমনি মাসের শেষে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা জরুরি। রমজানে সদাকাতুল ফিতরের বিধান প্রবর্তনের তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, সিয়াম পালনের সময় যে অহেতুক কাজকর্ম ও অমার্জিত বাক্য উচ্চারণ করা হয়, তা পরিষ্কার করার জন্য এবং অভাবী মানুষের খাবার জোগানোর জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা অবশ্য পালনীয় করেছেন। এখানে তিনি দুটো তাৎপর্যের কথা বলেছেন, ফিতর প্রথমত রোজাকে পরিচ্ছন্ন করে। দ্বিতীয়ত অভাবীদের খাবারের জোগান দেয়। সদাকাতুল ফিতর অর্থ ফিতরের দিনের সদকা। ফিতর বলতে ঈদুল ফিতর বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ঈদুল ফিতরের দিন দেয়া সদকাকেই সদাকাতুল ফিতর বলা হয়। একে যাকাতুল ফিতর বা ফেতরাও বলা হয়ে থাকে। ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূল (সা.) সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সামর্থ্যবান সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২) ইবনে আব্বাস (রা) একবার রমজানের শেষ দিকে বসরায় খুতবা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, তোমাদের রোজার সদাকা আদায় কর। লোকেরা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। তখন ইবনে আব্বাস (রা) বললেন, এখানে মদীনার কে আছে দাঁড়াও। তোমাদের ভাইদেরকে বল, তারা তো জানে না। বল যে, রাসূল (সা) এই সদাকা আবশ্যক করেছেন। এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম প্রত্যেক স্বাধীন-দাস, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজিব। (আবু দাউদ : ১৬২২) তবে ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত আছে। ঈদের দিনে যার মালিকানায় তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সমমূল্যের সম্পদ থাকবে, তার জন্য সদাকাতুল ফিতর আদায় করা বাধ্যতামূলক বা ওয়াজিব। যাকাতের সঙ্গে এখানে পার্থক্য প্রধানত দু'টি, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সম্পদ বৃদ্ধিশীল হওয়া শর্ত। যেসব সম্পদ বৃদ্ধিশীল নয়, তা সঞ্চিত থাকলে মূল্য যত বেশিই হোক, যাকাত ফরজ হয় না। আর সদাকাতুল ফিতরের জন্য সঞ্চিত সম্পদ পুরো এক বছর থাকা জরুরি নয়। কিন্তু যাকাতের ক্ষেত্রে পুরো এক চান্দ্র বছর এই অতিরিক্ত সম্পদ মালিকানাভুক্ত থাকা শর্ত। শুধু ঈদুল ফিতরের দিনে কারো কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার জন্য সদাকাতুল ফিতর আদায় করা বাধ্যতামূলক। আর এমন আর্থিক সামর্থ্য ও সচ্ছলতা না থাকলে তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। বস্তুত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত নিয়তসহ পানাহার ও কামাচার বর্জনের নাম রোজা হলেও পাশাপশি পাপাচার বর্জনও কাম্য। তেমনি অনর্থক কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া রোজাদারের জন্য শোভনীয় নয়। অমার্জিত বাক্য উচ্চারণ করা, ঝগড়া-কলহে লিপ্ত হওয়া রোজার সার্থকতা কমে যাওয়ার কারণ। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত অনুষঙ্গ থেকে রমজানের সিয়াম পালনকে মুক্ত রাখতে না পারার প্রতিকার হিসেবে আর্থিক কর্তব্য প্রবর্তন করা হয়েছে। তাহলে বান্দা সব ধরনের আবিলতা থেকে মুক্ত রোজা নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হতে পারে। আর রোজাগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারার আনন্দ যোগ হবে ঈদুল ফিতরের সঙ্গে। তাই ঈদের আনন্দ বাড়ানোর এটি একটি উপায়ও। দ্বিতীয়ত, রমজানের শেষে মুসলিম উম্মাহর আনন্দ উৎসব যেন সবার জন্য উপভোগ্য হয়, সে দিকেও লক্ষ রাখা হয়েছে। অভাবী ও দরিদ্র মুমিন বান্দারাও যেন ঈদের দিনে নিরানন্দ দিন না কাটায়, সে জন্য সচ্ছল ও সঙ্গতিপূর্ণ মুসলমানদের আদেশ দেয়া হয়েছে রমজানের সমাপ্তি উপলক্ষে অভাবীদের উদ্দেশে অর্থ ব্যয়ের। তাহলে ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নিতে পারবে। সদাকাতুল ফিতরের তৃতীয় একটি তাৎপর্য আছে। এটা রমজানের রোজা পালনে সক্ষমতার শোকর। দীর্ঘ একটা মাস সিয়াম পালন করে যাওয়া মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও তৌফিকেই সম্ভব হয়। এ জন্য আর্থিক উপায়ে শোকর আদায় হয় সদাকাতুল ফিতরের আকারে। হাদিসে এসেছে এটার কারণে ধনীদেরকে আল্লাহ তাআলা পরিচ্ছন্ন করবেন। আর দরিদ্রদেরকে দেবেন বদলা। অর্থাৎ ওয়াজিব না হলেও যে দরিদ্র মুমিন ব্যক্তি ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপার্জনে এমন বরকত দান করবেন যে সে ওই অর্থ ব্যয়ের কষ্ট অনুভব করবে না। হযরত আবু হানিফা (র) সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাবের শর্ত করেছেন। কিন্তু হযরত শাফেয়ী (র)সহ তিন ইমাম নেসাবের শর্ত করেননি এই গভীর তাৎপর্যের কারণে। তারা নূ্যনতম সক্ষমতা বা একদিন এক রাতের খাবারের জোগাড় আছে এমন যেকোনো মুমিন ব্যক্তির জন্য সদাকাতুল ফিতর অবশ্য পালনীয় সাব্যস্ত করেছেন। এ বিধান একটু কঠিন পর্যায়ের। আর হানাফি মাযহাব তুলনামূলক সহজ। তবুও আল্লাহ তাআলার একান্ত সানি্নধ্য ও মহাপুরস্কার লাভের আশায় সাহাবায়ে কেরাম যেমন নিজেদের দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতা উপেক্ষা করে দান-সদাকার প্রেরণা লালন করতেন, তেমনি এখনো যারা এমন উঁচু মনোবৃত্তির পরিচয় দেবে, তাদের অসাধারণ প্রতিদান লাভের আশা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। একটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সূরায়ে 'আলা'র আয়াত (ক্বাদ আফলাহা মান তাযাক্কা) ফেতরার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। (সহীহ ইবনে খুযায়মাহ, চতুর্থ খ-, পৃ. ৯০) এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেতরা ফরজ। ইমাম নববী (র), ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ (র) এবং সালাফ প্রমুখ (জমহুর) অধিকাংশ ওলামার মতে ফেতরা ফরজ। ইমাম আবু হানীফার (র) মতে ফেতরা ফরজ নয়, বরং ওয়াজিব। http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=205&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=5 Link to comment Share on other sites More sharing options...
Recommended Posts
Create an account or sign in to comment
You need to be a member in order to leave a comment
Create an account
Sign up for a new account in our community. It's easy!
Register a new accountSign in
Already have an account? Sign in here.
Sign In Now