Jump to content
IslamicTeachings.org

আরাকানে গণহত্যা বিশ্ববিবেক ফিরে তাকাও


MUSLIM WOMAN

Recommended Posts

Asalamu'alaikum

 

 

 

 

আরাকানে গণহত্যা বিশ্ববিবেক ফিরে তাকাও

 

মুহাম্মদ আমিনুল হক

 

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ জুন জুমাবার মংডুতে রোহিঙ্গা মুসলমান ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে এই দাঙ্গার সূত্রপাত। এতে বহু লোক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। একটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে গত কয়েকদিন আগে বাসে আক্রমণ করে রাখাইনরা ১০ মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোহিঙ্গারা জুমাবার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যায়। এখন সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত দাবি করা হলেও রোহিঙ্গা মুসলিমরা বর্তমানে গণহত্যার শিকার।

 

 

 

এরই মধ্যে সেখানে প্রায় এক হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করার খবর পাওয়া গেছে। আকিয়াব প্রদেশের পাশে অবস্থিত প্রাচীন ‘শফি খান জামে মসজিদ’-এর ইমাম মাওলানা জিয়াউল হককেও হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের শত শত বাড়ি-ঘর জ্বলছে লেলিহান অগ্নিশিখায়। আল্লাহর ঘর মসজিদ পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না জ্বালাও-পোড়াও থেকে। বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে গুলি খাওয়া, জখম হওয়া শত শত মুসলিম নারী-পুরুষ নাফ নদীতে ভাসছে আর মৃত্যুর প্রহর গুনছে!

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যহত জনগোষ্ঠী।

 

 

 

 

এককালে যাদের ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র, ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি, এখন তারাই ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর বলির শিকার। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তথা রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানি মুসলমানের বংশধর। একসময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

 

 

 

১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুইশ’ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। ১৬৩১ সাল থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা থান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোগল শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় মুসলমানের ওপর তার নিষ্ঠুর অমানবিক অত্যাচার-নিপীড়ন। প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর ধরে মুসলমানদের কাটাতে হয় এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে। ১৭৮০ সালে বর্মি রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেন। বর্মি রাজা ঢালাওভাবে মুসলিম নিধন করতে থাকেন। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজদের শাসনে গেলে মুসলিমদের কিছুটা স্বস্তি আসে।

 

 

 

তবে ১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্তশাসন লাভের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং প্রায় ৩০ লাখ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। স্বাধীন দেশের সরকার তাদের নাগিরকত্ব দূরে থাক, মানবিক অধিকারটুকুও দেয়নি। বছরজুড়ে হামলার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশসহ বিশ্বের আনাচে-কানাচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এরা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক। ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সরকার যে নাগরিক আইন করেছে, তাতে তিন ধরনের নাগরিকের কথা বলা হয়েছে। এই তিন শ্রেণীর মধ্যে নেই রোহিঙ্গারা। সরকারিভাবে তাদের সেখানে ‘বসবাসকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার নেই, নেই কোনো সাংবিধানিক ও সামাজিক অধিকার। নিজ দেশে পরবাসী তারা। তারা মিয়ানমারের অন্য প্রদেশে অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না।

 

 

এই ভাগ্যহত মুসলিমদের কি কোনো ঠাঁই হবে না? এরা কি আজীবন নিপীড়িত হতে থাকবে? জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারের পক্ষে কাজ করছে। তারা মিয়ানমার সরকারকে মুসলিম নিধন বন্ধে চাপ প্রয়োগ ও মুসলিম নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের কথা না বলে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান করছে। সত্যিই আজব! আমাদের আরও একটি বিষয় আহত করেছে, সেটি হচ্ছে—মুসলিম রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে তথাকথিত সুশীল গণমাধ্যমের কোনো মাথাব্যথা নেই। পাশের একটি দেশে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গার ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হলেও তাদের মানবতাবোধ জাগ্রত হচ্ছে না।

 

 

শত শত মুসলিম নিধনের চেয়েও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো কিংবা এদেশে বহু বছর ধরে পড়ে থাকা উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সিরিজ রিপোর্ট প্রকাশে তারা ব্যস্ত। সীমান্তের ওপারে নাসাকা, রাখাইন কর্তৃক নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন, কিংবা নাফ নদীতে আহত ও অসহায় নারী-পুরুষের সলিল সমাধির মতো কঠিন দৃশ্যও তাদের তাড়িত করছে না।

 

 

আসলেই রোহিঙ্গা মুসলিমরা বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যহত জাতি। ওদের পাশে কেউ নেই।

 

 

 

গণতন্ত্রের কন্যা অং সাং সু চি’কে মুসলিম রোহিঙ্গারা অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়েছিল একটু মুক্তির আশায়, অথচ সেই সু চি এখন চোখে তালা মেরে বিদেশ ঘুরতে বের হয়েছেন। জাতিসংঘের ভাষায় ওরা রাষ্ট্রহীন নাগরিক। বর্তমান সভ্যতা সারাবিশ্ব থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিনের ভূমিতে বসতি গেড়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে আলাদা করে খ্রিস্টানদের স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছে। কিন্তু এই সভ্যতা আজও মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের এককালের শাসকগোষ্ঠী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থায়ী নাগরিকদের নাগরিকতার সনদও জোগাড় করে দিতে পারেনি। শুধু ওরা কেন, আমরাই বা ওদের জন্য কী করতে পেরেছি? এক মুসলিমের বিপদে অন্য মুসলিম কি পাশে দাঁড়াতে পেরেছি? আমরা কি আমাদের ইমানি দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি?

 

 

 

পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে। আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় না দেয়া অমানবিক। সরকার, আওয়ামী লীগ কিংবা বিরোধী দলের পক্ষ থেকে গণহত্যা বন্ধের কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি, এটা দুঃখজনক। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আরাকানে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানাতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে জনমত তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে আগে থেকে পড়ে থাকা উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সংসদে আরাকানে গণহত্যার নিন্দা করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যখন এদেশে গণহত্যা শুরু করে, তখন আমরা কিন্তু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলাম। মিয়ানমারের মজলুম মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ গোটা মুসলিম জাহান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে করজোড়ে অনুরোধ জানাই।

 

 

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

[email protected]

Link to comment
Share on other sites

  • 4 weeks later...

Asalamu'alaikum

 

 

وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا

75

আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।

 

4:75

 

 


  1.  
     
     
    And what is wrong with you that you fight not in the Cause of Allah, and for those weak, illtreated and oppressed among men, women, and children, whose
    cry
    is: "Our Lord! Rescue us from this town whose people are oppressors; and raise for us from You one who will protect, and raise for us from You one who will help."

     

    (
    سورة النساء
    , An-Nisa, Chapter
    , Verse
    )

Link to comment
Share on other sites

Create an account or sign in to comment

You need to be a member in order to leave a comment

Create an account

Sign up for a new account in our community. It's easy!

Register a new account

Sign in

Already have an account? Sign in here.

Sign In Now
×
×
  • Create New...