-
Posts
1,173 -
Joined
-
Last visited
-
Days Won
41
Content Type
Profiles
Forums
Events
Everything posted by MUSLIM WOMAN
-
Asalamu'alaikum যাদু ও তার প্রতিকার বিষয়ক বাংলা ভাষায় একমাত্র বই যাদু অত্যন্ত বড় কবীরা গুনাহ যা মানুষকে শিরকের দিকে ধাবিত করে এবং ঈমান ধ্বংস করে দেয়। বর্তমান যুগে রোগ-ব্যাধি ও পাপ ব্যাপকতা যেমন লাভ করেছে তেমনি এগুলোর সাথে সাথে জাদুর ব্যাপকতা লাভ করেছে। সমাজের আনাচে কানাচে এর ব্যবহার অত্যন্ত মারাত্বকভাবে প্রসার লাভ করেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালীর রচিত ‘যাদুকর ও জ্যোতিষির গলায় ধারালো তরবারী’ বইটিতে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছেঃ •যাদুর পরিচয়। •যাদুর প্রমান। •যাদুর প্রকারভেদ। •যাদুকরের জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি। •ইসলামে যাদুর হুকুম। •কেরামত, মু'জেযা ও যাদুর মধ্যে পার্থক্য। •একটি সংশয় ও তার নিরাসন। •কোন কোন পদ্ধতিতে যাদু করা হয়। •যাদু দিয়ে মানুষের কি কি ক্ষতি করা যায়। •যাদুর প্রতিকার বিবরণ সহ আরো অনেক বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যাদু, জ্যোতিষি ও গনকগিরি শয়তানী কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান-আকয়দা নষ্টকারী বিষয়। কেননা এগুলো শিরক ও কুফুরীর মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এজন্য শরীয়ত শিরকের সাথে সাথে যাদু থেকেও সতর্ক করে। এই গুরুত্ত্বপুর্ণ বিষয়টি জানতে বইটি ডাউনলোড করুন, পড়ুন এবং আপনার বন্ধু/আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ ডাউনলোড [৩.৯২ MB] ডাউনলোড করুন MediaFire থেকে ডাউনলোড করুন 4shared থেকে Download the English Version http://www.quraneralo.com/black-magic/
-
Asalamu'alaikum The sahaba used to do the sunnah because it was sunnah, we leave the sunnah because it is sunnah- Marwa Saad
-
Asalamu'alaikum পুত্রসন্তান ফারজানা তান্নী আজ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এলাম। মনটা একটু খারাপ লাগছে বটে! কিন্তু ভালোও লাগছে এই ভেবে যে একটা কাজ ভালোভাবে শেষ করতে পারলাম। বাবার প্রতি দায়িত্বও শেষ হলো। সংসারটা এবার নতুন করে গুছিয়ে নেব। বাবার ঘরটা গেস্টরুম বানাতে হবে। বাসায় একটা গেস্টরুম ছিল না বলে লুনার কত অভিযোগ—বাসায় গেস্ট এলে ওর নাকি মানসম্মান চলে যায়। ঠিকই তো বলেছে, গেস্টরুম একটা প্রয়োজন বৈকি! বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বুদ্ধিটাও তার। আমারও যে মত ছিল না, তা নয়। বাবারও বোধ হয় এটাই ইচ্ছা ছিল। কারণ, তিনি আমাদের মতামতের কোনো বিরোধিতা করেননি। তা ছাড়া মায়ের মৃত্যুর পর বাবা খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। আমি ও লুনা—দুজনই চাকরিজীবী, অফিসে যাই। বাবাকে কে সময় দেবে? ওখানে গিয়ে বাবা নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন। সমবয়সী অনেককে পাবেন সঙ্গী হিসেবে। নাহ্, কাজটা ভালোই করেছি। আমার সব স্বপ্ন আমার পরিবারকে ঘিরে। লুনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের দুজনের সংসারে অনাবিল আনন্দ বয়ে এনেছে আমাদের সোনার টুকরো ছেলে। তাকে পেয়ে আমার জীবনটা সত্যিই অন্য রকম হয়ে গেল। আমার সব মনোযোগ এখন স্ত্রী-পুত্রের দিকে। বাবা-মাকে দেখার সময় কই? যেদিন মা মারা গেলেন, সেদিন একটু অপরাধবোধ মনে জেগেছিল। মনে হয়েছিল, আমার অবহেলার জন্যই কি মা চলে গেলেন? মা স্ট্রোক করেছিলেন। হয়তো ভেতরে ভেতরে আরও অসুখ দানা বেঁধেছিল, কিন্তু মুখ ফুটে কখনো কাউকে কিছু বলেননি তিনি। মাকে দেখতে তো সুস্থই দেখাত, তাই কখনো তাঁকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। বাবার বিষয়-সম্পত্তি তেমন ছিল না। তবে আমাদের একটা ছিমছাম একতলা বাড়ি ছিল। ছোটবেলা থেকে সেখানে বড় হয়েছি বলেই হয়তো বাড়িটা ভালোই মনে হতো। কিন্তু লুনা আধুনিক মেয়ে, ওর বাড়িটা পছন্দ হতো না মোটেই। বলত, পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। পরে ভেবে দেখলাম, কথাটা তো ও ভুল বলেনি! আমি তখন সবেমাত্র চাকরিতে ঢুকেছি। অন্যখানে বাসা নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য আমার হয়ে ওঠেনি। তাই লুনার পরামর্শে বাবাকে বোঝালাম, এই বাড়িটা জমিসহ বিক্রি করে দিলেই মোটামুটি হালফ্যাশনের একটা ফ্ল্যাট কিনেও কিছু টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে। আমার বাবা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। শেষে আমি রাগ করে লুনাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি দিলাম, যদিও জানি, এ আমার সামর্থ্যের বাইরে। লুনা তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় ওর বাড়তি কিছু যত্নআত্তি প্রয়োজন। এ অবস্থায় আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেন মা। তিনি বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করালেন। অবশেষে বাবা রাজিও হলেন, কিন্তু আমার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতেন না আর। সেই থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল আমার। নতুন ফ্ল্যাটটা বাবা-মা আমার নামে দিতে চাইলেন, কিন্তু আমার অনুরোধে বাবা ফ্ল্যাটটা তাঁর নাতির নামে উইল করে দেন। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে এই কাজটি করেছিলাম। যেদিন নতুন ফ্ল্যাটে আমরা শিফট করলাম, সেদিন লুনার আনন্দ যেন বাঁধ মানছিল না। আমারও ভালো লাগছিল ওর হাসিমুখ দেখে। আমাদের ছেলের বয়স তখন চার বছর, ওকেও একটা আলাদা ঘর দেওয়া হলো। ছেলের ঘরটি ছবির মতো করে সাজাল লুনা। শুধু ছেলের ঘরই নয়, পুরো বাসাটাই সুন্দর করে সাজাল সে। ফ্ল্যাট কেনার পর যে টাকা বেঁচে ছিল, এর অনেকটাই ব্যয় করা হলো ঘর সাজানোর কাজে। শুধু বদলাল না বাবা-মায়ের ঘরটি—সেই আগেকার খাট, ঘুণে ধরা চেয়ার-টেবিল, আলমারি—ঠিক আগের বাড়ির ঘরটির মতো। এই ঘরটি সাজাতে দেননি মা। তিনি বলেছিলেন, থাকুক কিছু স্মৃতি। আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু লুনার মনে খেদ ছিল খুব। মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সেই কবে, বাবাকেও আজ বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম, সেই সঙ্গে বাধামুক্ত হলো লুনার ঘর সাজানোর পথটা। পরিশিষ্ট এতক্ষণ নিজের লেখা ডায়েরির কয়েকটি পাতা পড়ছিলেন আবীর চৌধুরী। তাঁর চোখের কোণে পানি। এখন তাঁর বয়স পঁচাত্তর। পাঁচ বছর আগে লুনা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর তাঁর আদরের ছেলে আনন্দ চৌধুরী আজ সকালে তাঁকে রেখে গেল বৃদ্ধাশ্রমে। http://www.quraneralo.com/
-
Asalamu'alaikum দুর্বল ঈমানের কিছু লক্ষন অনুবাদঃ মুহাম্মাদ গাফফার | সম্পাদনাঃ আবদ্ আল-আহাদ | আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, আমাদের ঈমান কখন বাড়ে আবার কখন কমে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের ঈমান ক্রমশ জীর্ণ হতে থাকে যেভাবে “সাউব” (এক ধরনের পোশাক) জীর্ণ হয়ে যায় (পোশাক ক্রমশ পরিধান করতে থাকলে যেমন একটা সময় জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যায়, আমাদের ঈমানও ঠিক তেমনি করে জীর্ণ হয়ে যায়)।” আর তাই প্রিয় নবী (সা:) এর উপদেশ হল, (যেহেতু আমাদের ঈমান জীর্ণ হয়ে যায়) “অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত হৃদয়ে ঈমানের নবায়নের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে দোয়া করা”। [হাদীসটি আল-হাকিম তার “আল-মুসতাদ্রাক” গ্রন্থে, আল-হায়সামি তার “মাজ‘মা আল-যা‘ঈদ” গ্রন্থে, আল-তাবারানি তার “আল-কাবীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।] আত্ম-সচেতনতার জন্য দুর্বল ঈমানের লক্ষনগুলো ভালোভাবে জেনে রাখা আবশ্যক; দুর্বল ঈমানের কিছু লক্ষন হলঃ (১) পাপ করা সত্ত্বেও মনে পাপবোধ সৃষ্টি না হওয়া। (২) কোরআন তেলাওয়াতের ব্যপারে অনীহা এবং অনাগ্রহ বোধ করা। (৩) ভাল কাজে আলসেমি বোধ হওয়া বা ঢিলেমি করা। যেমনঃ নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় না করা। (৪) রাসূল (সা) এর সুন্নাহ্ অনুশীলনের ব্যপারে অবহেলা। (৫) খামখেয়ালী মেজাজ। যেমনঃ সামান্য বিষয়েই তুলকালাম করে ফেলা বা মেজাজ সবসময় তিরিক্ষে বা খিটমিটে হয়ে থাকা। (৬) কুরআনের তেলাওয়াত শুনে বিশেষ করে পাপের জন্য শাস্তি কিংবা সৎকাজের জন্য পুরুস্কারের কথা বলা হয়েছে এমন আয়াতগুলো শুনেও হৃদয়ে কোন রকমের কোন প্রভাব বা অনুভূতির তৈরি না হওয়া। (৭) আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া এবং তাঁকে স্মরণ করা কঠিন মনে হওয়া। (৮) শারীয়াহ্ বিরুদ্ধ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার পরও মনে কোন অনুশোচনা বা অনুতাপ বোধ না হওয়া। (৯) ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি এসব কিছুর পিছনেই সারাক্ষন ছুটে চলা। (১০) ক্রমাগত মানসিক দৈন্যতার পাশাপাশি আর্থিক কৃপণতা বাড়তে থাকা। ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবনতা। (১১) নিজে না করে অন্যকে ভাল কাজের আদেশ দেওয়া। (১২) অন্যের অবনতি, ক্ষয়-ক্ষতি দেখে মানসিক তৃপ্তি বোধ হওয়া। (১৩) শুধু হারাম ও হালালকেই মুখ্য মনে করা অথচ যেসব বিষয় মাকরুহ্ (খুবই অপছন্দনীয়) সেগুলোর দিকে ভ্রূক্ষেপ না করা। (১৪) কেউ কোন ভাল (ছোট) কাজ করলে তা নিয়ে হাসাহাসি করা। যেমনঃ কেউ হয়ত মসজিদ ঝাড়ু দিল যা অবশ্যই ভাল কাজ কিন্তু কাজটি ছোট বলে তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করা। (১৫) নিজে মুসলিম হয়ে অন্য মুসলিমদের কল্যাণসাধনের ব্যপারে কোনরূপ প্রচেষ্টা বা মাথাব্যথা না থাকা। (১৬) ইসলামের তথা মুসলিমদের কল্যাণ এবং উন্নতি হয় এমন বিষয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়া। (১৭) বিপদে ধৈর্য ধারন করতে না পারা। যেমনঃ কেউ মারা গেলে উচ্চস্বরে বিলাপ করে, বুক চাপড়িয়ে কান্নাকাটি করা। (১৮) কোন দলীল-প্রমান ছাড়াই কেবল তর্ক করতে ভাল লাগে তা-ই তর্ক করা। (১৯) দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়া। দুনিয়ার মোহে অন্ধ হওয়ার একটি লক্ষন হল পার্থিব কোন কিছুর ক্ষতি হলেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়া। (২০) সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকা। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই শুধু বেঁচে থাকা। চরম আত্ন-কেন্দ্রিক জীবন যাপন করা। QuranerAlo.com
-
Asalamu'alaikum Imam Ash-Shafi’ee used to say,•►“Whenever I set myself the task to learn,I realize how little I know & the more I learn, the more I realize how ignorant I am.”
-
Asalamu'alaikum "The shortest distance between a problem and its solution is the distance between your knees and the floor. The one who kneels to Allah can stand up to anything."
-
Asalamu'alaikum Whoever loves this worldly life, will estimate its value, and he will make himself a slave to it, and it will humiliate him. And whoever neglects it, will notice his great value, and it will serve him, and it will humiliate itself for him. (Ibn al-Qayyim)
-
Asalamu'alaikum বই – শিক্ষক ছাড়া কুরআন শিক্ষার সহজ পদ্ধতি – লেখকঃ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আমাদের প্রতি আলাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র বড় আমানত। কিছু মুফাসসীরগণের মতে, আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালা এই প্রবিত্র মহাআমানত বহন করতে অপরগতা স্বীকার করে। বাবা আদম ( আ: ) জান্নাতে থাকা অবস্থায় মহান আমানতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আলাহ তা‘য়ালা আদম ( আ: ) - এর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান সর্বশেষ নবী ও রসূল মুহাম্মদ ( সা: )-এর প্রতি সর্বশেষ কিতাব রমজানের লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেন। দীর্ঘ ২৩ বছরে পূর্ণ কুরআনের নাজিল সম্পন্ন হয়। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থাকবে; কারণ আলাহ তা‘য়ালা তাঁর কিতাবের হেফাজতের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। আল-কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকদের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। আর যারা এ কিতাবকে ত্যাগ করবে তথা পাঠ করবে না, এর উপর আমল ও এ দ্বারা বিচার ফয়সালা এবং মেনে চলবে না তারা কিয়ামতের মাঠে কুরআন ত্যাগকারী বলে বিবেচিত হবে তখন তাদের বাঁচার উপায় কি হবে???!!! এই পবিত্র আমানত রক্ষার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি চারটি কাজ জরুরি: ১. কুরআন মজীদের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখে নিয়মিত পাঠ করা। ২. কুরআনুল কারীমের যে অর্থ ও তফসীর রসূলুল্লাহ (দ: ) তাঁর সাহবাগণকে শিক্ষা দিয়েছিলেন তাঁদের পরে তাবে‘য়ী ও ইমামগণ তাই শিখে ছিলেন। আমাদেরকেও সেই সঠিক অর্থ ও তফসীর জানা। ৩. সঠিক অর্থ ও তফসীর জেনে প্রতিটি বিষয়ে তার প্রতি যথাযত আমল করা। ৪. নিজেরা আমল করলেই চলবে না বরং অন্যদেরকেও কুরআনের দা‘ওয়াত ও তাবলীগ করা। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিখার জন্য প্রতিটি ভাষায় কিছু পুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশ। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে, যাদের অধিকাংশ মুসলিম। বাংলাভাষী মুসলিম ভাইদের কুরআন শিক্ষার প্রতি চরম আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আজ স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পরেও আমাদেরকে যাঁরা কুরআনের তা‘লিম তথা শিক্ষা দেন তাঁদের সিংহভাগ আজও উর্দু ও ফার্সী নিয়ম থেকে অতিক্রম করতে পারেননি। উর্দু ও ফার্সী নিয়মে আধুনিক নাম দিয়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বহু বই-পুস্তক রয়েছে। আরো বড় আশ্চর্য লাগে আরবি কুরআন শিক্ষার জন্য আরবি ও বাংলা ভাষার মাঝে শিক্ষার্থীদের মাথার উপর উর্দু-ফার্সীর বোঝা চাপানো দেখে। এ ছাড়া আরো আশ্চর্যের কথা হলো: যখন এক শ্রেণীর মানুষ উর্দু-ফার্সী নিয়মকেই আরবি বলে চালিয়ে দেন। আর উর্দু-ফার্সীর ঝামেলা নয় বরং সরাসরি আরবি টু বাংলার নতুন দিগন্ত উম্মচন করতে আমাদের এ ছোট প্রয়াস। বইটির চারটি অংশ রয়েছে: (এক) কুরআনের পরিচিতি। (দুই) কুরআন শিক্ষার সহজ ব্যাকরণ। (তিন) তাজবীদ অংশ। (চার) কুরআন সম্পর্কে প্রায় একশত প্রশ্নের উত্তর। এই বইটি আমরা যারা প্রথম থেকে কুরআন শিখতে ইচ্ছুক তাদের জন্য নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। বইটির বাকি ৩টি খণ্ড খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। বইটি সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তবে নিজের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় কিছুটা দখল থাকলে অতিদ্রুত ও সহজে বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করা সম্ভব। ইনশাআল্লাহ্ আগামি কয়েক মাসের মধ্যে আমরা এই বইটির সিডি আপলোড করব। যদি এই বইটি এবং এর সিডি এক সাথে মিলে অনুশীলন শুরু করেন, তবে ১০০% নিশ্চিত যে, আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন শিক্ষক মহোদয় আপনার সাথেই আছেন। বইটির কিছু বৈশিষ্ট্যঃ ১. কুরআন পাঠের জন্য বাংলা ভাষার সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ একটি বই। ২. কুরআন শিক্ষার ব্যাকরণ সম্মত একটি কিতাব। ৩. সরাসরি আরবি টু বাংলার ব্যবহার। ৪. উর্দু ও ফার্সীর ঝামেলা মুক্ত একটি বই। ৫. প্রতিটি পাঠে কুরআন ও আরবি ভাষার শব্দ দ্বারা উদাহরণ। ৬. প্রতিটি পাঠে অনুশীলনী ও সহজে বুঝার জন্য বিভিনড়ব রঙের ব্যবহার। ৭. সিডির সাহায্যে শিক্ষক ছাড়া ঘরে বসে কুরআন শিখার সুব্যবস্থা। ৮. সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজিজ -এর কুরআন প্রিন্টিং প্রেস হতে আরবি নিয়মে ছাপা কুরআন পড়ার সমস্যা দূরকরণ। বিদ্রঃ বাজারে বইটির কপি এখনও ছাড়া হইনি। প্রিয় শিক্ষক মহোদয়, শিক্ষার্থী ও বাবা-মা যাঁরাই বইটি পড়বেন বা পড়াবেন তাঁদের জন্য বইটির ৯ পৃষ্ঠায় কিছু জরুরি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশা করি পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে আল্লাহ্ চাহে আপনার কাঙ্খিত আশা পূরণ হবে। আপনারা বইটির PDF ডাউনলোড করে যেকোনো Computer Compose এর দোকান থেকে প্রিন্ট করে পড়তে পারবেন http://www.quraneralo.com/learn-quran/
-
Asalamu'alaikum -------------------------------------------------------------------------------- ফেসবুক ব্যবহারে কিছু ইসলামী নির্দেশনা Posted: 20 Dec 2011 12:03 PM PST লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় প্রতিটি মানুষই এখন কম-বেশি ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুক এখন পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত বিষয়। ফেসবুক এ জগতের এক নতুন শক্তির নাম। এর মাধ্যমে কোনো দেশে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। কোথাওবা সরকারের গদি টালমাটাল হচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীরা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে সহনীয় করে তুলছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই আজ এই ফেসবুক এক আফিমের মতো। পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য তরুণ-তরুণী এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে এবং মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করছে। তেমনি এর মাধ্যমে হাজারো মুসলিম ভাই-বোন নিজেদের কল্যাণকর চিন্তা ও জনহীতকর ধারণা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশুদ্ধ আকীদা ও চিন্তা-চেতনার প্রসারও সহজ হয়ে গেছে। যখন যে উপলক্ষ আসছে সে সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনা সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে এর মাধ্যমে। ইসলাম ও মানবতার শত্রুরা এতদিন যখন ইন্টারনেটের এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ইচ্ছে মত ইসলাম ও ইসলামের নবী এবং তাঁর আদর্শকে অসম্মান বা অপমান কিংবা তার বিরুদ্ধে বিবেকহীন অপপ্রচার চালিয়েছে কোনো বাধা ছাড়া। আজ তারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া যাচ্ছে। পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা যাচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে। বর্তমানে তাই নেককার মুত্তাকি লোকদেরও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। কিন্তু জুকারবার্গের এ দুনিয়ায় পা রেখেই তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেক দুরাচারী বা রুচিহীন লোকের উৎপাতের কারণে। অনেকে অযথা অভব্য বাক্য লিখে কিংবা অশালীন ছবি পোস্ট করে নিজের ওয়ালে। আর তা তাদের কাছে ভালো লাগলেও অনেকের কাছেই যে ন্যাক্কারজনক প্রতীয়মান হয় সেদিকে তারা খেয়াল করে না। এদের দেখে দমে গেলে হবে না। চেষ্টা করে যেতে হবে সাধ্যমত ভালো কথা বলে যেতে। সে লক্ষ্যেই বক্ষমান নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করব ফেসবুক ব্যবহারের ১০টি ইসলামী নির্দেশিকা তুলে ধরতে। এগুলো মূলত ইসলামের আদর্শ বোধ থেকেই আমাদের সবার খেয়াল করা দরকার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে বুঝার এবং মানার তাওফীক দান করুন। (1) এটা জানা কথা যে পরিমিত লজ্জা নারী চরিত্রকে উচ্চতায় নিয়ে যায়। লজ্জা নারীর বিশেষ ভূষণ বৈ কি। আর লজ্জা খোয়ানোকে তার জন্য একটি দুর্যোগ ভাবা হয়। এটি কলংকিত করাকে এক ধরনের বেইজ্জতি গণ্য করা হয়। অতএব আপনি যখন ফেসবুকে শিষ্টাচারের বৃত্ত অতিক্রম করে কোনো মেয়েকে খোশালাপে মেতে উঠতে দেখবেন। তার আলাপ এতোটা রুচিহীন হয় যে তা যেন কোনো পর্নোগ্রাফির দৃশ্য আপনার সামনে দেখতে দাঁড় করিয়ে দেয় অথবা আপনি শিষ্টাচার বা সার্বজনীন রুচি বহির্ভুত দৃশ্যাবলি দেখতে শুরু করেন। কিংবা চোয়াল উন্মুক্ত করে সে বলছে, ‘হে আমার জীবন, আমার প্রাণপ্রিয়, হে আমার হৃদয়’... ইত্যাদি তবে প্রিয় পাঠক, আপনি তখনই নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে মেয়েটি ‘নির্লজ্জ। লজ্জা বলতে তার কিছু নেই!’ (2) এটা সর্বসম্মত বিষয় যে প্রথম যা ব্যক্তির চিন্তা, তার সংস্কৃতি এবং তার আচার-ব্যবহারের পরিচয় প্রদান করে তা হলো তার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলো। অতএব যখন আপনি ফেসবুকে কারও তথ্য শেয়ারের মধ্য দিয়ে অনুধাবন করবেন যে সে প্রেম ও মেকি ভালোবাসার বিদ্যালয় থেকে পাশ করে এসেছে বা এখনও সেখানে অধ্যয়নরত, তবে আপনি তার থেকে নিজের হাত ধুয়ে নিন। অন্য ভাষায়, তাঁকে একপাশে সরিয়ে দিন এবং তার কাছ থেকে সসম্মানে সরে আসুন। (3) বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা হলো অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার চাবিকাঠি। এটা গ্যারান্টি দেয়া যায় যে এই সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরা আপনাকে একদিন আঘাত দেবে না। কিন্তু মিথ্যাবাদী, বিশ্বাস ও আস্থাহীন লোক আপনার জন্য খামোখাই অকল্যাণ ডেকে আনবে। আপনি যদি ফেসবুকে এমন কাউকে দেখেন যে কিনা নাম প্রকাশ না করে কিংবা আকার-ইঙ্গিতে অন্যের কথা বলে বেড়ায় এবং এমনকি এর চেয়ে খারাপ ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো যে সে নিয়মিত মিথ্যা বলে। যেমন মানুষের প্রশংসা কুড়াবার জন্য অন্যের লেখা বা বক্তব্য চুরি করে অথবা নিজের ক্ষুদ্র পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারে সে মরিয়া, তবে আপনাকে নিশ্চিত হয়ে যেতে হবে যে তাকে আপনি ডিলিট করবেনই। তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক চ্ছিন্ন করতেই হবে। কারণ, তাঁর উপস্থিতি আপনার ক্ষতিই বয়ে আনবে। (4) যে কারও ফেসবুক আপডেটগুলো আপনাকে উপকৃত করছে, হয়তো সে আপনার চেতনাকে শাণিত করছে কিংবা আপনার তথ্য বা জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করছে অথবা আপনাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় আলোকিত করছে- তিনি ওই ব্যক্তি থেকে উত্তম যে তার নিত্য-নতুন আপডেটে শুধু প্রেম-ভালোবাসা কিংবা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাই শেয়ার করে। তখন আপনি আগের বন্ধুদের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। এমনকি যদি এর খেসারত হিসেবে অনেকেই আপনাকে শেয়ার না করে। আর আপনি দ্বিতীয় জন থেকে দূরে থাকুন। কারণ তাকে স্মরণ করে আপনার কোনো লাভ নেই। (5) আমার প্রিয় বোন, মেয়েদের ফেসবুকে শুধু যদি মেয়েরা অংশগ্রহণ করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু যদি কোন ছেলের সাথে অত্যন্ত প্রয়োজনে অংশগ্রহণ করতেই হয়, তবে সেখানে যেন থাকে আপনার আত্মসম্মানবোধ। ছবি শেয়ার করা কখনো আপনার জন্য বৈধ হবে না। তার সাথেই শুধু অতীব প্রয়োজনীয় কোন আলাপ করতে পারেন যে আপনাকে সম্মান করে, আলাপ করতে চাইলে শালিন ও মার্জিত শব্দ চয়ন করে। ভদ্রোচিত পন্থায় আপনার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করবে। অতএব সে আপনাকে সম্বোধন করায়, আপনার প্রশংসায় কিংবা অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ হবার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে না। কিন্তু আপনি যাকে বা যাদের দেখবেন ফেসবুকে রুচিহীনভাবে সম্বোধন করছে কিংবা শ্রদ্ধার সীমা থেকে দূরে গিয়ে সম্বোধন করছে, যেমন : হে চাঁদ, আমার মধু, আমার ভালোবাসা ... ইত্যাদি বলছে, তখন আপনি বুঝে নেবেন যে সে বা তারা প্রেম-ভালোবাসার প্রতারক ভিখিরি। সে আপনাকে অসম্মান করবে, আপনার মর্যাদায় আঘাত দেবে। অতএব আপনি আর তাদেরকে আপনার সামনে থাকতে দেবেন না। এমনকি দ্বিতীয়বারের মতোও না। (6) প্রত্যেকের নিজস্ব লক্ষ্য ও মনোযোগ রয়েছে। আপনার মনোযোগ ও রুচিকে সবসময় উন্নততর করুন। ফেসবুকে রুচিবোধ সম্পন্ন এবং সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির লোকদের ছেঁকে বের করুন। এমন ব্যক্তির সঙ্গ আপনাকে কোনো উপকারই দিতে পারবে না যে এই সাইটে শুধুমাত্র গেমস বা খেল-তামাশা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অথবা যে কি না গানের সিলেবল বা অংশ স্থাপন বা অধঃপতিত ছায়াছবির দৃশ্য উত্থাপন কিংবা অন্যদের নিয়ে ঠাট্টা-মশকতা বা জরুরি বিষয়ে খেল-তামাশা করা ছাড়া কিছুই জানে না। আপনার তালিকাটিকে পরিষ্কার করুন। তা শুধুমাত্র সুন্দর, দরকারী ও ফলপ্রদ বিষয় ছাড়া কিছুই বহন করবে না। সন্দেহ নেই এটি আপনার জন্য কল্যাণ নিয়েই ফিরে আসবে। কারণ, সুন্দর সুস্থ পরিবেশ আপনাকে সুখাদ্য সরবরাহ করবে আর অসুস্থ পরিবেশ আপনাকে কুখাদ্য দেবে। এখন সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। (7) কোনো বিষয়ে লাইক দিলে তা আপনার দিকে পথ দেখাবে। লাইক পাওয়া ব্যক্তিকে আপনার প্রতি আগ্রহী করবে। যদিও আপনি এমন ব্যক্তি হন যে পড়ে না, দেখে না, কিছু বোঝে না। যে শুধু নিজের ভালোলাগার ইষৎ প্রকাশ ঘটায় এবং খানিক বাদেই চলে যায়। অতএব আপনি কী বলছেন, কী পড়ছেন এবং কোনটাতে লাইক দিচ্ছেন তা জেনে বুঝেই দিন। ফেসবুকে কতই না পেইজ ওপেন করা হয়েছে খারাপ ও কুৎসিত, যা ধর্ম ও চরিত্র বিরোধী। আর কত জনকেই দেখা যায় নির্বুদ্ধিতাবশত এসব পেইজকে লাইক দেন। অথচ তারা খেয়াল করেন না যে এই লাইক দেয়াটা ওই পাতা উন্মোচনকারীকে এসব গাল-মন্দ ও ন্যাক্কারজনক কথাবার্তায় আরও উৎসাহিত করবে। তার লাইক দেয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আরও প্রচার পাবে। আপনি ভালো করেই জানেন যে, অন্যায় করা যেমন অপরাধ অন্যায় পছন্দকারী হয়ে তার প্রসার করাও তেমনি অপরাধ। অথচ তারা বুদ্ধিমানের পরিচয় দিতে পারেন এ ব্যাপারে নিরবতা ও নিস্পৃহতা প্রদর্শন করে। এমন করা হলে চটুল প্রচারকামী ওই ব্যক্তি নিরুৎসাহিত হবে, তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, অধিক পাঠক টানা কিংবা অন্যকে ক্ষুব্ধ করার অশুভ অভিপ্রায়ে ধাক্কা লাগবে। (8) অন্যদের সঙ্গে গিভ এন্ড টেক বা ‘দাও এবং নাও’ নীতি পরিহার করুন। কারণ আপনি যদি এই নীতির ওপর চলেন তাহলে অচিরেই আপনি এমন স্বার্থপর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন যে কি-না সবকিছুতেই বিনিময় প্রত্যাশা করে- এমনকি অনুগ্রহেরও। ফেসবুকে আপনি ওই বিষয়গুলো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না যা নতুন কোনো একাউন্ট খোলা ছাড়াই অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা সম্ভব। এবং যাতে আপনার বা তাদের ওয়াল থেকে এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। বিনিময় বা বদলার জন্য অপেক্ষায় না থেকে সৌজন্যবোধের পরিচয় দিন। শেয়ারযোগ্য মনে করলে সেটি পোস্টকারীর সঙ্গে পরিচয় বা দীর্ঘ সম্পর্ক আছে কি-না তার প্রতি খেয়াল না করে অবশ্যই শেয়ার করুন। আর স্মরণ করুন যে আপনিও তো তাদের কারও পাতায় কোনো প্রকার জবাব দেন নি। অথচ তারপরও তারা বিষয়টি আপনার জন্য সংরক্ষণ করে গেছেন। বরং আপনি তাদেরটা পড়বেন আর তারাও আপনারটা পড়বে। আর এটিই সবচে গুরুত্বপূর্ণ! (9) আপনার ফেসবুক ওয়ালে শুধু তা-ই রাখবেন যা সুন্দর এবং কল্যাণকর। আর আপনি নিষিদ্ধ বিষয় থেকে হুঁশিয়ার থাকবেন। কারণ তা এক প্রকার গুনাহে জারিয়াহ বা চলমান পাপ কিংবা কোনো বিষণ্ণ বিষয়কে মনে করিয়ে দেবে। কারণ, এমন হতে পারে যে কোনো মেয়ের জন্য গানের কোনো অংশ রেখে দিলেন আর সে মারা গেল –আল্লাহ তার ওপর রহম করুন- তখন তা তার কোনো বন্ধু গ্রহণ করল যা সে অন্যদের মাঝে প্রচার করল। আর আপনি যদি মারা যান? তবে তা তো আরও উদ্বেগের বিষয়। সবসময় আপনি যদি মন্দ বর্জন না করতে পারেন তবে অন্তত চেষ্টা করুন। তা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। তা অন্যের কাছে প্রচার করে নিজের গুনাহের পাল্লা ভারি করার কোনো প্রয়োজন নেই। (10) আপনি ফলবতী গাছ হোন, যার ছায়া অন্যদেরকে অজ্ঞতার তাপ থেকে রক্ষা করে। যার ফল অবসরের ক্ষুধা মেটায়। আপনার বন্ধুরা তথ্য দেবার পর তাদের জন্য উপকারী বিষয় উপস্থাপন করুন। তাদের কষ্ট বেদনায় আপনার সম্প্রদায়কে শরীক করুন, তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এবং তাদের দেশের চিন্তা-পেরেশানী আপনার ভাইদের জানান। আপনি সবার কাছে থাকুন। একে অন্যের সাথে আপনার লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করুন। তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন না। তাদের সমালোচনা করবেন না। কিংবা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবেন না। পাঠক, পরিশেষে জেনে রাখুন, আপনি নিজের জীবনের পাতাগুলো দিয়ে অমর হতে পারেন। সম্মানের সঙ্গে আপনি আলোচিত হতে পারেন। এমনকি মৃত্যুর পরও। অতএব আপনার ফেসবুকের পাতাটিকে বানান ইসলামের ও শান্তির এবং সৌন্দর্য ও ভালোবাসার। এমন পাতা যা আপনার নাম ও কীর্তিতে সদা সর্বদা আলোচিত ও স্পন্দিত হতে থাববে। সর্বোপরি মনে রাখবেন আপনার প্রতিটি কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রতিটি সময়ের হিসেব দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সবাইকে প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো গ্রহণ করার এবং মন্দ দিকগুলো বর্জন করার তাওফীক দিন। সকল মন্দ থেকে বাঁচার এবং কল্যাণে শরীক তাওফীক দান করুন। প্রতিটি সময়কে আখিরাতের সঞ্চয় বাড়ানোর কাজে ব্যয় করবার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন।
-
Asalamu'alaikum মুলঃILoveAllaah.com|অনুবাদ: ইমতিয়াজুল হক শুভ | প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি এটা রাশেদ নামক এক ব্যক্তির গল্প। সে তার গল্প বলল এ ভাবেঃ আমার বয়স ত্রিশের বেশি হবে না যখন আমার স্ত্রী আমাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। আমি এখনো সে রাতের কথা ভাবি। সে রাতেও আমি পুরনো অভ্যাসের ন্যায় আমার বন্ধুদের সাথে অনেক রাত অবধি বাইরে ছিলাম। রাতটা ছিল অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় পরিপূর্ণ; তারচেয়েও বেশি পরচর্চা, খোশগল্প আর অন্য লোকদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় ভর্তি। আমি বেশিরভাগ সময়ই ছিলাম অন্যদের হাসানোতে পারদর্শী; অন্যদের নিয়ে উপহাস করতাম আর আমার বন্ধুরা কেবল হাসত আর হাসত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি তাদেরকে অনেক হাসিয়েছিলাম। অন্যদের নকল করার এক অদ্ভুত প্রতিভা ছিল আমার- আমি আমার কন্ঠস্বর নকল করতে পারতাম যতক্ষণ না অবধি যাকে আমি ঠাট্টা করছি হুবহু তার কন্ঠস্বরের মত হত। আমার বিধ্বংসী তামাশার হাত থেকে কেউ রেহাই পেত না; এমনকি আমার বন্ধুরাও না; কেউ কেউ আমার মুখের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এড়িয়েও চলত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি এক অন্ধ ব্যক্তিকে নিয়ে উপহাস করছিলাম যাকে আমি মার্কেটে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম। সবচেয়ে বাজে যা করেছিলামতাছিল আমি আমার পা তার সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- যাতে সে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় আর তারপর সে মাথা ঘুরিয়ে হতবিহ্বলের মত এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। আমি যথারীতি রাতে দেরি করে বাসায় ফিরলাম এবং আমার স্ত্রীকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখলাম। তার অবস্থা ছিল ভয়াবহ, কাঁপা-কাঁপা গলায় সে আমাকে জিজ্ঞেস করলঃ “রাশেদ....এত রাত অবধি কোথায় ছিলে?” “কোথায় আর থাকব, মঙ্গল গ্রহে ছিলাম!” আমি ব্যঙ্গভরে বললাম, “অবশ্যই আমার বন্ধুদের সাথে ছিলাম।” তাকে চরমভাবে পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল, আর অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রেখেছিল। সে বলল, “রাশেদ, আমি প্রচন্ড ক্লান্ত। মনে হচ্ছে বাচ্চা জন্মানোর সময় এসে পড়েছে।” তার গাল বেয়ে এক চিলতে নির্বাক অশ্রু ঝরে পড়ল। আমি অনুভব করলাম যে আমার স্ত্রীকে আমি অনেক অবহেলা করেছি। আমার উচিত ছিল তার যত্ন নেয়া আর এতগুলো রাত দেরি করে বাইরে না থাকা.....বিশেষ করে যখন সে নয় মাসের গর্ভবতী ছিল। আমি তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম; তাকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাওয়া হল আর ঘন্টার পর ঘন্টা সে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করছিল। আমি ধৈর্য্যের সাথে বাচ্চা জন্মাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু তার ডেলিভারি ছিল অনেক জটিল আর আমি অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম এবং তারপরে আমি নিজেও ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই হাসপাতালে আমার ফোন নাম্বার রেখে বাসায় চলে গেলাম যাতে তারা আমাকে ভালো কোন খবর দিতে পারে। একঘন্টা পর তারা আমাকে ‘সালিম’ এর জন্মের সুসংবাদ দিয়ে অভিনন্দন জানাল। আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে গেলাম। যখনই তারা আমাকে দেখল, তখনই আমাকে সেই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বলল যে আমার স্ত্রীর ডেলিভারির দায়িত্বে ছিল। “কিসের ডাক্তার?” আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,“আমি আমার সন্তান সালিমকে দেখতে চাই!” তারা বললঃ “প্রথমে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন”। আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম, তিনি আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে লাগলেন এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “আপনার সন্তানের চোখে মারাত্মক রকমের বিকৃতি রয়েছে আর দেখে মনে হচ্ছে যে তার দৃষ্টিশক্তি নেই।” আমার মাথা নত হয়ে গেল যখন আমি কান্না আটকাবার জন্য যুদ্ধ করছিলাম...মার্কেটের সেই অন্ধ লোকটির কথা মনে পড়ল যাকে আমি ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিলাম অন্যদের হাসানোর জন্য। সুবহানাল্লাহ! যেমন কর্ম তেমন ফল! আমি মনমরা হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম...কি বলব তা আমার জানা ছিল না। তারপর আমার স্ত্রী ও বাচ্চার কথা মনে হল। আমি ডাক্তারকে তার সহানুভূতিশীলতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমার স্ত্রীকে দেখতে গেলাম। আমার স্ত্রী দুঃখী ছিল না। সে আল্লাহর হুকুমের প্রতি আস্থাশীল ছিল... সে ছিল হৃষ্টচিত্ত...কতবারই না আমাকে সে নিষেধ করেছিল অন্যদের প্রতি তামাশা না করতে! “পরনিন্দা করো না,” সে সবসময় আমাকে বারংবার এ কথা বলত...আমরা হাসপাতাল ছাড়লাম আর সালিমকে আমাদের সাথে নিয়ে আসলাম। বাস্তবে আমি ওর প্রতি খুব একটা মনযোগী ছিলাম না। আমি এমনভাব করতাম যেন সে আমাদের সাথে নেই। যখন সে চিৎকার করে কাঁদত, তখন আমি শোয়ার ঘরে পালিয়ে যেতাম সেখানে ঘুমানোর জন্য। আমার স্ত্রী তার বেশ ভালো দেখাশোনা করত আর ওকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু আমি নিজে ওকে ঘৃণাও করতাম না আবার ভালোবাসতেও পারতাম না। সালেম বড় হতে লাগল। সে হামাগুড়ি দিতে শুরু করল, তার হামাগুড়ি দেয়ার ধরনটাও ছিল অদ্ভুত। যখন তার বয়স প্রায় এক বছরের কাছাকাছি, সে কথা বলা শুরু করল আর আমরা আবিষ্কার করলাম যে সে পঙ্গু। আমার কাছে মনে হল সে আমার ঘাড়ে আরো বেশি বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াল। তার পরে আমার স্ত্রী উমার ও খালিদের জন্ম দিল। বছর কেটে যেতে লাগল আর সালিম এবং তার ভাইয়েরাও বড় হতে লাগল।ঘরে বসে থাকতে আমার কখনোই ভালো লাগত না, সবসময়ই আমি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বাইরে থাকতাম...আসলে আমি ছিলাম তাদের কাছে খেলনার মত(তাদের ইচ্ছেমাফিক তাদের আমোদিত করতাম)। আমার স্ত্রী কখনোই আমার সংশোধনের পেছনে হাল ছাড়ত না। সে প্রতিনিয়ত আমার হেদায়াতের জন্য দু’আ করত। আমার বেয়াড়া স্বভাবের প্রতি সে কখনোই রাগান্বিত হত না, কিন্তু তার মনটা খুবই খারাপ হত যখন সে দেখত আমি সালিমকে বাদ দিয়ে তার অন্য ভাইদের প্রতি মনযোগ দিচ্ছি। সালিম বড় হতে লাগল আর সেই সাথে তাকে নিয়ে আমার চিন্তাও বেড়ে যেতে লাগল। আমার স্ত্রী তাকে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে আমাকে বললে আমি কিছু মনে করি নি। বছর পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি অনুভব করি নি। আমার দিনগুলো ছিল প্রায় একই রকম। কাজ, খাওয়া, ঘুম আর বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডা মারা। এক শুক্রবারে, আমি সকাল ১১টার সময় ঘুম থেকে উঠলাম। আমার জন্য তা ছিল অনেক তাড়াতাড়ি। আমার দাওয়াত ছিল এক মজলিসে যাওয়ার, তাই আমি কাপড়-চোপড় পড়ে সুগন্ধী মাখলাম আর বেরিয়েযেতে উদ্যত হলাম। আমি শোবার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই সালিমকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! এটা ছিল প্রথম বার যখন আমি সালিমকে তার শৈশবের পর কাঁদতে দেখেছি। দশ বছর কেটে গিয়েছে, আর আমি তার প্রতি মনযোগ দিই নি! আমি তখন তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না...আমি শুনতে পেলাম সে তার মাকে ডাকছে। আমি তার দিকে মুখ ঘুরালাম ও তার পাশে গেলাম। জিজ্ঞেস করলামঃ “সালিম! তুমি কাঁদছ কেন?” আমার গলা শুনে সে কান্না থামিয়ে দিল। তারপর যখন সে বুঝতে পারল আমি তার খুব কাছে, সে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে চারপাশে হাতড়াতে লাগল। তার সমস্যা কি? আমি আবিষ্কার করলাম যে সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছিল! মনে হচ্ছিল সে যেন বলছে, “এখন তুমি আমাকে দেখছো! এই দশ বছর তুমি কোথায় ছিলে!” আমি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম...সে তার রুমে চলে গেল। প্রথমে সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে চাইছিল না। আমি তার সাথে শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম...সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে শুরু করল আর আমি তা শুনে কেঁপে উঠছিলাম। আপনারা কি জানেন সেই কারণটা কি? তার ভাই উমার, যে কিনা তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, দেরি করেছিল। আর যেহেতু, দিনটা ছিল জুমুআ’, সালিম প্রথম কাতারে জায়গা পাবে কিনা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিল। সে উমারকে ডাকছিলো...তার মাকে ডাকছিলো...কিন্তু কেউই সাড়া দিচ্ছিল না, তাই সে কাঁদছিল। তার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুর দিকে আমি তাকিয়ে থাকলাম। তার বাকি কথাগুলো আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি আমার হাত তার মুখের ওপর বুলিয়ে বললামঃ “সালিম! তুমি কি এজন্যই কাঁদছিলে?” সে বলল, “হ্যাঁ।” আমি আমার বন্ধুদের কথা ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম আমার দাওয়াতের কথা আর তাকে বললামঃ “কেঁদো না সালিম। তুমি কি জানো তোমাকে আজ কে মসজিদে নিয়ে যাবে?” “অবশ্যই উমার....কিন্তু সে সবসময় দেরি করে।” আমি বললাম, “না, আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।” সালিম হতবাক হয়ে গেলো...সে এটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ভাবছিল আমি বুঝি তার সাথে ঠাট্টা করছিলাম। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল আর সে আবারো কাঁদতে লাগল। আমি নিজ হাতে তার চোখের পানি মুছে দিলাম, তারপর তার হাত ধরলাম। আমি তাকে মসজিদে গাড়ীতে করে নিয়ে যেতে চাইলাম। সে না করল আর বলল, “মসজিদ কাছেই...আমি সেখানে হেঁটে যেতে চাই।” হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ, এ কথাই সে আমাকে বলল। আমি মনে করতে পারছিলাম না যে শেষ কবে মসজিদে প্রবেশ করেছিলাম, কিন্তু সেবার প্রথমবারের মত আমি ভয় পাচ্ছিলাম ও অনুশোচনায় ভুগছিলাম এত বছর ধরে আমি কি অবহেলা করেছি ভেবে। মসজিদ মুসল্লীতে পরিপূর্ণ ছিল, তারপরেও আমি সালিমের জন্য প্রথম কাতারে একটা স্থান খুঁজে পেলাম। আমরা একসাথে জুমু’আর খুতবা শুনতে লাগলাম, এবং সে আমার পাশে সালাত আদায় করল। কিন্তু বাস্তবে, আমিই ওর পাশে সালাত আদায় করেছিলাম। সালাতের পর সালিম আমাকে একটা কোরআন এনে দিতে বলল। আমি অবাক হয়ে গেলাম! সে তো অন্ধ ছিল, সে কিভাবে তা পড়বে? আমি তার অনুরোধ প্রায় ফেলে দিচ্ছিলাম, কিন্তু সে কষ্ট পাবে এই ভয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম তার অনুরোধকে সম্মান জানাব। আমি তাকে কোরআন দিলাম। সে আমাকে সূরা কাহফ খুলতে বলল। আমি সূচিপত্র দেখে পাতা উল্টাতে লাগলাম যতক্ষণ না সূরাটা পাই। সে কোরআনটা আমার কাছ থেকে নিলো, তার সামনে রাখল আর সূরাটা তিলাওয়াত করতে শুরু করল...চোখ বন্ধ করে...ও আল্লাহ! পুরো সূরাটাই তার মুখস্থ ছিল। আমি নিজের কাছে লজ্জিত হয়ে গেলাম। আমি একটা কোরআন নিলাম...অনুভব করলাম আমার পেশিগুলো যেন কাঁপছে...আমি পড়তে থাকলাম তো পড়তেই থাকলাম। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলাম আমাকে মাফ করে দিতে ও সরল পথে পরিচালনা করতে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না...আমি শিশুর মত কাঁদতে শুরু করলাম। মসজিদে তখনো কিছু লোক সুন্নত সালাত আদায় করছিল... তাদের উপস্থিতিতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম, তাই আমি কান্না থামাতে চেষ্টা করলাম। আমার কান্না দীর্ঘ শ্বাসযুক্ত ফোঁপানোতে পরিণত হল। কেবলমাত্র অনুভব করলাম একজোড়া ছোট হাত আমার মুখের ওপর এসে পড়েছে, আর আমার অশ্রু মুছে দিচ্ছে। এটা ছিল সালিম! আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম...তার দিকে তাকালাম। নিজেকে বললাম...তুমি(সালিম) অন্ধ নও, বরং অন্ধ তো আমি, কারণ আমি সেই সব দুষ্ট লোকদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম যারা আমাকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। আমার স্ত্রী সালিমকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা করছিল, কিন্তু তার দুশ্চিন্তা আনন্দময় অশ্রুতে পরিণত হয়ে গেলো যখন সে শুনল যে আমি সালিমের সাথে জুমু’আর সালাত পড়েছি। সেই দিন থেকে আমার কখনো জামাতে সালাদ আদায় করা বাদ পড়ে নি। আমি আমার খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলাম...আর মসজিদে যেসব সৎ লোকদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলাম। তাদের সাথে মিলে আমি ঈমানের মধুরতার স্বাদ আস্বাদন করলাম। তাদের কাছ থেকে শিখলাম কোন জিনিসগুলো দুনিয়া থেকে আমার মনযোগ সরাতে পারবে। আমি কখনোই হালাকা(যে মজলিসে আল্লাহর যিকির হয়) কিংবা বিতরের সালাত বাদ দিতাম না। একমাসের মধ্যেই আমি পুরো কোরআন বেশ কয়েকবার পড়ে ফেললাম। আল্লাহ্ আমার পরনিন্দা ও অন্যদের ব্যঙ্গ করার গোনাহ ক্ষমা করবেন, এই আশায় আমি আমার যবান আল্লাহর যিকিরে সিক্ত করলাম। আমি আমার পরিবারের নৈকট্য অনুভব করলাম। আমার স্ত্রীর চোখে আগে যে ভয় ও অনুকম্পা মিশ্রিত দৃষ্টি ছিল, তা দূর হয়ে গেল। সালিমের মুখ থেকে এখন আর এক চিলতে হাসি কখনোই অদৃশ্য হয় না। তাকে দেখলে মনে হতো যেন সে এই দুনিয়ার সব কিছুর মালিক। আমি আল্লাহকে তাঁর এই অফুরন্ত নিয়ামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ দিতে লাগলাম। একদিন আমার সৎ বন্ধুরা মিলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী এক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করল। তাদের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে আমি ইতস্তত করছিলাম। আমি ইসতিখারার সালাত আদায় করলাম ও আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করলাম। ভেবেছিলাম সে হয়তো না করবে...কিন্তু এর উল্টোটাই ঘটল! সে খুবই খুশি হল এমনকি আমাকে উৎসাহিতও করল...কারণ অতীতে সে আমাকে দেখেছে ওর সাথে কোন আলোচনা না করেই খারাপ কারণে আমি অনেক জায়গা ঘুরে বেরিয়েছি। আমি সালিমের কাছে গিয়ে আমার ভ্রমণের ব্যাপারে বললাম। অশ্রুসজল নয়নে সে আমাকে তার ছোট্ট বাহুদ্বয় দ্বারা জড়িয়ে ধরল... আমি সাড়ে তিন মাসের জন্য বাড়ীর বাইরে ছিলাম। সেই সময়ে, আমি সুযোগ পেলেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করতাম। আমি তাদেরকে প্রচন্ডভাবে মিস করতাম...আর হ্যাঁ, সালিমকে কিভাবে মিস করতাম। আমি তার গলার আওয়াজ শুনতে চাইতাম...যবেত্থেকে আমি সফরে বেরিয়েছিলাম, একমাত্র সেই আমার সাথে কথা বলেনি। আমি যখনই ফোন করতাম, তখনই হয় সে স্কুলে থাক নতুবা মসজিদে থাকত। যখনই আমি আমার স্ত্রীকে বলতাম সালিমকে আমি কত্ত মিস করি, তখনই সে অত্যন্ত তৃপ্তির হাসি হাসত, কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটল একবারই, যেবার আমি তাকে শেষ ফোন করেছিলাম। আমি তার আগের হাসি শুনতে পেলাম না। তার কন্ঠস্বর ছিলভিন্ন । আমি তাকে বলেছিলাম, “সালিমকে আমার সালাম জানিয়ো,” আর সে বলেছিল, “ইনশাল্লাহ্,” অতঃপর সে চুপ ছিল। অবশেষে আমি ঘরে চলে আসলাম। আমি দরজার কড়া নাড়লাম। আমি আশা করছিলাম হয়তো সালিম দরজা খুলবে, কিন্তু দরজায় খালিদকে দেখে খুবই অবাক হলাম, তার বয়স চার বছরের বেশি ছিল না। আমি তাকে কোলে নেয়ার পর সে বাবা! বাবা! বলে তীক্ষ্ণ চিৎকার দিল। ঘরে ঢোকার পর আমার অন্তরে কেন জানি চাপা একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আমি আল্লাহর নিকট অভিশাপগ্রস্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইলাম...স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেলাম...তার চেহারা ছিল অন্যরকম। যেন মনে হচ্ছিল সে খুশী হবার ভান করছে। আমি তাকে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কি হয়েছে?” সে বলল, “কই, কিছু হয়নি তো।” হঠাৎ করে আমার সালিমের কথা মনে পড়ল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম “সালিম কোথায়?” সে মাথা নিচু করে ফেলল। কোনো জবাব দিল না। তার গাল বেয়ে উষ্ণ অশ্রু নেমে এল। “সালিম! কোথায় আমার সালিম?” আমি চিৎকার করে শুধালাম। ঠিক সেই মূহুর্তে আমি খালিদকে তার নিজের ভাষায় বলতে শুনলাম, “বাবা...থালিম আল্লাহর কাছে জান্নাতে চলে গেছে...” আমার স্ত্রী আর সহ্য করতে পারছিল না। সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সে প্রায় মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিল, এবং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পরে আমি জানতে পারলাম যে আমার আসার দুসপ্তাহ আগে সালিম জ্বরাক্রান্ত হয়েছিল, তাই আমার স্ত্রী তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল...জ্বর আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল ও সালিম সেরে উঠছিল না...যতক্ষণ না তার আত্মা দেহত্যাগ করেছিল। এই দুনিয়া যদি তার বিশালতা সত্ত্বেও তোমার সামনে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, আর তোমার আত্মা যদি তার ভার সইতে না পেরে তোমাকে ছেড়ে যেতে উদ্যত হয়, তখন বলে ওঠোঃ “ও আল্লাহ্।” যদি সমাধান না থাকে, পথগুলো খুব বন্ধুর হয়ে পড়ে এবং রজ্জুগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর তোমার আশা নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন ডাক দাওঃ “ও আল্লাহ।” আল্লাহ্ সালিমের মৃত্যুর পূর্বে তার মাধ্যমে তার পিতাকে সঠিক পথে আনতে ইচ্ছা করেছিলেন। কত করুণাময়ই না আল্লাহ্! “অনেক বড় কাজও নিয়্যাতের কারণে ক্ষুদ্র হয়ে যায় আবার অনেক ক্ষুদ্র কাজও বড় হয়ে যায় কেবলমাত্র নিয়্যাতেরই কারণে.....। (আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক)
-
Asalamu'alaikum Do not ask, "Where is God?" Rather ask, "Where am I?" Be with Allah. You will find Allah with you.
-
Asalamu'alaikum "A friend cannot considered a friend until he is tested in three occasions: In time of need,behind your back, and after your death": -Ali ibn Talib (radiALLAH anhu)
-
Asalamu'alaikum যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন যৌন পীড়নের শিকার। আর প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন স্বামী বা স্বজনদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সরকারি জরিপে নারীর প্রতি সহিংসতার এ চিত্র বের হয়ে আসে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইন-স্টিটিউট অফ জাস্টিস ২০১০ সাল থেকে এ জরিপকাজ শুরু করে। স্বামী, ছেলে, বন্ধু ও স্বজনদের হাতে পীড়ন, ধর্ষণ এবং যৌনতার জন্য সহিংসতা বিষয়গুলো নিয়ে এ জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে অংশ নেয়া এক শতাংশ নারী বলেছেন, তারা গত এক বছরের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১৩ লাখ নারী ধর্ষণ বা ধর্ষণের জন্য পীড়নের শিকার। জরিপে পুরুষদের প্রতি পীড়নেরও ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাতজন পুরুষের মধ্যে একজন স্বজন কর্তৃক পীড়নের শিকার। প্রতি ৭১ জন পুরুষের মধ্যে একজন যৌন নিপীড়নে শিকার। জরিপে অংশগ্রহণকারী পীড়নের শিকার পুরুষদের অধিকাংশই ১১ বছর বয়সের আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পীড়নের শিকার যুক্তরাষ্ট্রের এসব নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। নারীদের মধ্যে যারা পীড়নের শিকার তাদের মধ্যে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, মানসিক অসুস্থতাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার হার বেশি। এসব নারী-পুরুষ ক্রমাগত মাথাব্যথা, নিদ্রাহীনতা, কাজ-কর্মে অনীহায় ভুগছে। ফিউচার উইদাউট ভায়োল্যান্স নামে মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক লিসা জেমস বলেছেন, পীড়নের শিকার নারী-পুরুষেরা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সহিংস দাম্পত্য জীবনে নারীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বেশি। মার্কিন সরকারের জরিপে দেখা গেছে, অল্পবয়সীরাই যৌন পীড়নের বেশি শিকার। পীড়নের শিকারদের মধ্যে ২৮ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছে ১০ বছর বয়সের আগেই তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। নারীদের বেলায় তা ১২ শতাংশ। পীড়নের শিকারদের মধ্যে অর্ধেক ১৮ বছর বয়সে এবং ৮০ শতাংশ ২৫ বছর বয়সের আগেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে যারা অল্প বয়সে পীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের ৩৫ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর পুনরায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক লিনডা ডিগাটিস বলেছেন, নারীদের মধ্যে যৌন পীড়নের শিকার-সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য রীতিমতো ভয়াবহ। এ চিত্র আমাদের অনেকেরই ধারণার বাইরে। http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=303&cat_id=1&menu_id=1&news_type_id=1&index=5
-
লিখেছেনঃ ডঃ আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপস্ অনুবাদঃ মাসুদ শরিফ সম্পাদনাঃ আবদ্ আল-আহাদ এবং শাবাব শাহরিয়ার খান প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট বিষয়বস্তু উপস্থাপনের দিক থেকে কোরআন আল-কারীম এক অনন্য সাধারন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেও কোরআন নিজেই অলৌকিকতায় ভরপুর এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। “অলৌকিক” বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি তা হল, অতিপ্রাকৃতিক কিংবা বিস্ময়কর কোন ঘটনা যা মানুষের পক্ষে কখনই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। নবী কারীম (সা) তৎকালীন আরবদেরকে কোরআনের ভাষা, ছন্দ ও বিষয়বস্তুর অলংকারের সমতুল্য সাহিত্য রচনার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অথচ তারাই কাব্যসাহিত্যে ব্যাপক পারদর্শী ছিল। কিন্তু কাব্য রচনায় নিজেদের এতো সাফল্য আর উৎকর্ষতা থাকার পরেও তারা উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কোরআন এর অবিকল কিছু সৃষ্টির ঐ চ্যালেঞ্জ আরবসহ পুরো মানবজাতির উপর তিনটি পর্যায়ে দেয়া হয়েছেঃ ১. সম্পূর্ণ কোরআনঃ কোরআন আল-কারীমে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন প্রিয় নবী (সা) কে প্রথমে এই বলে সকল মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে বলেছেন যে, পারলে তারা যেন কোরআনের সমমর্যাদার কোন গ্রন্থ বানিয়ে দেখায়ঃ “বলঃ যদি সকল মানুষ ও জিন মিলে কোরআনের অবিকল কিছু বানিয়ে আনার চেষ্টা করে, তবুও তারা পারবেনা, এমনকি যদি তারা একে অপরকে সাহায্যও করে। [সূরা আল-ইস্রা; ১৭:৮৮] ২. দশটি সূরাঃ যারা এর সত্যতাকে এরপরও অস্বীকার করে যাচ্ছিল তাদেরকে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন নিদেনপক্ষে কোরআনের মত করে দশটি সূরা রচনা করতে বললেনঃ “অথবা তারা কি এটা বলে নাকি যে সে (মুহাম্মাদ) নিজেই এটা রচনা করেছে? (তাদের) বল, ‘যদি তাই হয়, তাহলে তোমরাও এর অনুরূপ (মাত্র) দশটি সূরাহ নিয়ে আসো এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমারা আর যাদের উপাসনা কর তাদেরকেও সাহায্য করতে বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা হূদ; ১১:১৩] সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ ছিল, অন্তত পক্ষে কোরআন-এর একটি সূরার অনুরূপ তারা যেন বানিয়ে আনে, আর কোরানের সবচাইতে ছোট সূরা হচ্ছে সূরা আল-কাউসার, যার আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি। “এবং আমার বান্দার (মুহাম্মাদ) উপর আমি যা নাযিল করেছি, তার ব্যাপারে তোমাদের মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে, তাহলে এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আসো, এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর যেসব সাহায্যকারী আছে তাদের সাহায্যের জন্য ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা আল বাক্বারাহ্; ২:২৩] এই চ্যালেঞ্জগুলা কিন্তু নিছক কথার কথা ছিল না যে, কেউ এর জবাব দিতে চায়নি কিংবা কোরআনকে ভুল প্রমাণিত করতে চায়নি। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) মানুষদের আল্লাহ্র একত্ববাদ, সকল ধরণের মূর্তিপূজা বাতিল এবং দাস-দাসী ও মনিবের মধ্যে যে সাম্যবাদের ডাক দিচ্ছিলেন তা সাধারণভাবে মাক্কার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী কুরাইশ গোত্রের জন্য তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আরবের প্রধান বাণিজ্য ও ধর্মীয় কেন্দ্র মাক্কার অধিবাসীরা রাসূল (সা) এর সেই সাম্যবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল। এর জন্য তাদের শুধু এটুকু করলেই চলত, যদি তারা কোরআনের অনুরূপ মাত্র একটি সূরা বানিয়ে আনতে পারত! বহু কুরাইশ কবি ও বাকপটু লোক উক্ত চ্যালেঞ্জের উত্তর দিয়ে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়ে তারা বরঞ্চ তাঁকে অনেক সম্পদ, সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসন এমনকি গোত্রের সবচাইতে অভিজাত এবং সুন্দরী মেয়েদেরকে উপঢৌকন হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। আর তা করেছিল শুধুমাত্র এই জন্যে যে, যাতে তিনি ইসলামের এই দা’ওয়াত বন্ধ করে দেন। উল্টো তিনি তাদের সূরা ফুসসিলাত এর প্রথম তেরটি আয়াতের আবৃত্তির মাধ্যমে তাদের জবাব দেন। এতে তারা যারপরনাই বিরক্ত হয়ে তাঁকে থামতে বলেন [ আল হাকীম, আল-বাইহাক্বী, আবূ ইয়’লা ও ইবন্ হিশাম কর্তৃক সংগৃহীত, ইব্রহীম আল-‘আলী তাঁর সহীহ্ আস-সীরাহ্ আন-নাবাওয়ীয়্যাহ-তে এই বর্ণনাকে ‘হাসান’ বলেছেন, পৃঃ৬৪]। প্রিয় নবী (সা) কে প্ররোচিত করতে ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা তাদের দাস-দাসী ও আত্মীয়দের মধ্যে যারা ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহণ করছিল, তাদেরকে পৌত্তলিক ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্যাতন করে যাচ্ছিল। যদিও তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসেননি। এতো কিছুতে না পেরে পরবর্তীতে তারা প্রিয় নবী (সা) এবং তাঁর অনুসারী ও তাঁর বংশ বানূ হাশীম গোত্রের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে করে তারা অনাহারের কষ্টে তাদের কাছে মাথা নত করে। বলাবাহুল্য, তাদের এই চেষ্টাও বিফলে গিয়েছে। শেষমেশ তারা তাঁকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই উদ্দেশ্যে তারা কুরাইশদের সকল বংশ থেকে একজন করে সশস্ত্র লোককে পাঠায়, যাতে করে পরবর্তীতে নবী কারীম (সা) এর নিজস্ব বংশের লোকেরা আর তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে না পারে। যাইহোক, এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন রাসূল (সা) সহ তাঁর সকল অনুসারীগণকে মক্কা থেকে উত্তরে ইয়াসরিব নামক শহরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন যেখানে আগে থেকেই বেশ কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছিল। ইয়াসরিব এর লোকজনদের মধ্যে ইসলাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল এবং বছর না ঘুরতেই মুসলিমরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলে। প্রিয় নবী (সা) কে সেখানকার শাসক বানানো হয় এবং ইয়াসরিব শহরটিকে মাদীনাহ্ আন-নবী [নবী (সা)-এর শহর] এই নামে নতুন করে নামকরণ করা হয়। পরবর্তী আট বছরের বিভিন্ন সময়ে মক্কা এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন গোত্র ও বংশের অধিবাসীরা ক্রমবর্ধমান মদীনাহ্-এর মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ যুদ্ধাভিযান চালায়। যার পরিসমাপ্তি ঘটে মুসলিমদের মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে। কুরাইশ এবং তাদের মিত্র বাহিনী কেউ যদি শুধুমাত্র কোরআনের সূরা এর অনুরূপ মাত্র তিনটি কবিতার লাইন কিংবা পুঁথি রচনা করতে পারত তাহলেই কিন্তু এতো রক্তারক্তির আর দরকার পড়ত না। সুতরাং, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কোরআনের ভাষাশৈলীর অনুপম মর্যাদা, শব্দের মাধুর্য এবং ছন্দের গতিশীলতার এই অলৌকিক বিস্ময় কোন মানুষের পক্ষে অনুকরণ করা সম্ভব নয়। অনেকে এমনটা ধারণা করে যে, কোরআনের অসাদৃশ্যতা এমন কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়। যেমন, বিখ্যাত ইংরেজ কবি শেক্সপীয়ার, চসার অথবা যে কোন ভাষারই যে কোন বিখ্যাত কবির প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা রচনাশৈলী থাকে যা তাদের সমসাময়িক অন্যান্য লেখকদের থেকে পৃথক করে রাখে। কিন্তু যদি এমন হয়, আজকের দিনের শীর্ষস্থানীয় কোন কবি শেক্সপীয়ার এর সাহিত্যকর্মের উপর গভীর পড়াশুনা করে এবং পুরাতন কালি দিয়ে পুরাতন কোন কাগজে শেক্সপীয়ারের রচনাশৈলী নকল করে নিজে কোন ‘সনেট’ লিখে সেটা শেক্সপীয়ারের নামে দাবী করে, তাহলে তার সেই দাবীকৃত কবিতাটি ভালভাবে দেখার পর হয়তো সেটা শেক্সপীয়ারের বলেই মেনে নেয়া হবে। একজন কবি যতই বড় হোকনা কেন, এভাবে ঠিকই তাঁর রচনাশৈলীর অনুকরণ করা যায়। অনেক বড় এবং বিখ্যাত চিত্রকরের চিত্রকর্ম ঠিক যেমন অনুকরণ করা সম্ভব হয়েছে। [প্রকৃত পক্ষে অনেক ইংরেজ সাহিত্যিকদের মতে শেক্সপীয়ার এর সাহিত্যকর্ম হিসেবে যেগুলা ধরা হয়, তার বেশকিছু আসলে তারই সমসাময়িক লেখক ক্রিস্টোফার মার্ল এর লেখা।] কোরআন এই ক্ষেত্রে অনেক বেশীই উপরে। কেননা, ১৪০০ বছর আগ থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই কোরআন এর অনুরূপ সূরা নকল করে লেখার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু ভাল করে পরীক্ষা করার পর দেখা গেছে ওগুলো নিরর্থক পণ্ডশ্রম; নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কোরআনের সামান্য একটি আয়াতের ধারেকাছে যাওয়ারও ক্ষমতা এদের নেই। যেমনটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তখন কোরআন এর অনুকরণ করার চেষ্টা ছিল এখনকার যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় সময়ের দাবি, যখন কোরআন নাযিল হচ্ছিল, যখন সাহিত্যের চর্চা ছিল সর্বোচ্চ শিখরে। অথচ তখনই কেউ এর অনুরূপ কিছু সৃষ্টি করতে পারেনি, আর এখনতো প্রশ্নই উঠে না! আমাদের সাথে অনুবাদক হিসাবে কাজ করতে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন। QuranerAlo.com http://www.quraneralo.com/challenge-of-the-quran/?utm_source=feedburner&utm_medium=email&utm_campaign=Feed%3A+quraneralo+%28QuranerAlo.com+-+%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%27%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0+%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%29
-
Asalamu'alaikum Whoever loves this Dunya and is pleased by it, then he should know that love of the akhira is leaving their heart because the two cannot co-exist in one heart. ~Hassan Al-Basree.
-
Asalamu'alaikum This dunya is like a shadow. If you try to catch it, you will never be able to do so. If you turn your back towards it, it has no choice but to follow you. -Ibn Qayyim Al-Jawziyyah
-
Asalamu'alaikum “Do not argue with your Lord on behalf of your soul. Rather argue with your soul on behalf of your Lord."
-
Asalamu'alaikum As long as you are performing prayer, you are knocking at the door of Allah, and whoever is knocking at the door of Allah, Allah will open it for him. ♥ (Imam Ibn al Qayyim Rahimahullah)
-
Asalamu'alaikum "The bigger desire you have for a sin, the greater your imaan is if you leave it." ~Shaykh Ibn 'Uthaymeen
-
Asalamu'alaikum "Shaytan rejoiced when Adam (peace be upon him) came out of Paradise, but he did not know that when a diver sinks into the sea, he collects pearls and then rises again." ~ Ibnnul-Qayyim
-
Asalamu'alaikum Abu Darda said: "Three make me laugh. Those that make me laugh are a person who puts his hopes in this worldly life while death pursues him, a person who is heedless of Allah while Allah is not heedless of him, and a person who always laughs while he does not know whether he has pleased Allah or angered Him." (Collected by Ibn Al Mubarak)
-
Asalamu'alaikum "Watch your eye, should it ever reveal to you the faults of others, say to it - Oh my eye, other people have eyes too" ~Imaam Al-Shafi (ra)
-
If asked whether you love God, say nothing. This is because if you say, 'I do not love God,'you are an unbeliever. If, on the other hand, you say, 'I do love God,' your actions contradict you. - Fudayl
-
Asalamu'alaikum 'Every love that leads away from His love is in fact a punishment; only a love that leads to His love is a heartfelt & pure love.' Ibn Al-Qayyim
-
Asalamu'alaikum মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ লেখকঃ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল | অনুবাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়! সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো: ১. বেশী বেশী দু‘আ করা মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে, رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤] ‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪] رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١] ‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীমঃ৪১] এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨ ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] । মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ». অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০] মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ। ২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ » অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩] তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি। ৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম পালনঃ মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ» অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]। অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই। ৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, «أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ» অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২] তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে। ৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِى سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِى سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِى سَوَادٍ فَأُتِىَ بِهِ لِيُضَحِّىَ بِهِ فَقَالَ لَهَا « يَا عَائِشَةُ هَلُمِّى الْمُدْيَةَ » ثُمَّ قَالَ « اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ ». فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ « بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ». ثُمَّ ضَحَّى بِهِ. অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন। [ সহীহ মুসলিম:৫২০৩] ৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, «قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ نُعْتِقُ عَنْهَا رَقَبَةً ، وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ ، قَالَ : ادْعُ بِهَا ، فَجَاءَتْ ، فَقَالَ : مَنْ رَبُّكِ ؟ قَالَتِ : اللَّهُ ، قَالَ : مَنْ أَنَا ؟ قَالَتْ : رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : أَعْتِقْهَا ، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ». অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯] ৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ ». অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]। মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, «إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ « أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ » অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১] ৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ» ‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২] ৯. ঋণ পরিশোধ করা মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ». অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩] ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে, «مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ» অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯] ১০. কাফফারা আদায় করা মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, ﴿وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢] অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) [ সূরা আন-নিসা:৯২] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, « مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ». অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’ [সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] । এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন। ১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে, «عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ» অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]। মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, «عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ». অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]। তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা। ১২. মান্নত পূরণ করা মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, «أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :« صُمْ عَنْهَا ». অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০] ১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে, «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ » ‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০] «مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ» যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]। ১৪. কবর যিয়ারত করা সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ» অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]। যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]। কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে, «السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ». অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭] ১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا ٣٤ ﴾ [الاسراء: ٣٤] অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪] ১৬.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ». এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]। ১৭.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে, «عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ». আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮] সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন! وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين QuranerAlo.com