-
Posts
1,173 -
Joined
-
Last visited
-
Days Won
41
Content Type
Profiles
Forums
Events
Everything posted by MUSLIM WOMAN
-
Asalamu'alaikum কুরআনে শব্দ খোঁজার জন্য ব্যবহার করুন “জিকর” নামে অসাধারণ সফটওয়্যার কুরআনে কোন কথাটি রয়েছে, কোনটি নেই, কোন আয়াত কত নং সূরার, তা একজন কুরআন বিশ্লেষক মুমীনের জানা খুব জরুরী। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব “জিকর” নামের একটি সফটওয়্যারের সাথে যেটি নিমিষেই জানিয়ে দেবে আপনার কাঙ্খিত শব্দটি। সফটওয়্যারটিতে বাংলায় সার্চ করার সুযোগ রয়েছে। টিউটোরিয়াল ১. প্রথমে এই লিংক থেকে ৭.৭ মেগাবাইটের সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন। (এটি একটি ফ্রিওয়্যার তাই সিরিয়ালের দরকার নেই) ২. এই লিংক এ ক্লিক করে বাংলা অনুবাদের ফাইলটি (muhiuddinkhan.trans.zip) সরাসরি ডাউনলোড করুন। তর্জমাটি মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের করা, যিনি মারেফুল কোরআন (বাদশাহ-ফাহাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সৌদি সরকার কর্তৃক হাজীদের সরবরাহকৃত বিখ্যাত তাফসির) এর অনুবাদক। কেউ অন্য ভাষার তর্জমা চাইলে এখানে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন। ৩. আপনার পিসিতে সোলায়মান লিপি বা যেকোন ইউনিকোড বাংলা ফন্ট ইন্সটল থাকতে হবে। না থাকলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। তারপর কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ফন্ট ফোল্ডারে পেস্ট করুন। [সফটওয়্যারটি চালাতে জাভা রানটাইম ইনভায়রমেন্ট দরকার, যদি পিসিতে না থেকে থাকে তবে এখান থেকে জাভা ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন] ৪. এবার সফটওয়্যারটি চালু করে নিচের স্ক্রিণশট অনুসরণ করুন। প্রথমে Tools>Add>Translation এ ক্লিক করুন। ৫. বাংলা অনুবাদের muhiuddinkhan.trans.zip ফাইলটি হার্ডডিস্ক থেকে সিলেক্ট করে Open এ ক্লিক করুন। ৭. কনর্ফামেশন মেসেজ আসবে OK করুন। ৮. এবার View > Translation > [bn] মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এ ক্লিক করুন। বাংলা আসবে। পর্দায় যে বাংলা দেখা যাচ্ছে তা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার নয়। আমরা এখন সোলায়মান লিপি ফন্ট সিলেক্ট করবো যাতে ঝকঝকে বাংলা পেতে পারি। এজন্য- ৯. Tools থেকে Options এ ক্লিক করুন। এখান থেকে View এ ক্লিক করুন, নিচের স্ক্রিণশটের মত পাবেন- ১০. trans_bn_fontName এর ঘরে SolaimanLipi টাইপ করুন, তারপর একটি কমা (,) দিন যেমন স্ক্রিণশটে দেখানো হয়েছে। Apply করে OK করুন। পেয়ে গেলেন ক্রিস্টাল বাংলা! সার্চ করার কৌশল ধরুন আপনি কোরআন শরীফের “তওবা” শব্দটি কোথায় আছে জানতে চাইছেন। তাহলে বামদিকের Search বা Advanced বক্স থেকে বাংলায় টাইপ করুন তওবা তারপর Search বাটনে ক্লিক করুন। দেখুন তওবা সম্পর্কিত সকল তথ্য এসে গেছে আয়াত নং সহ! কেউ যদি অনলাইনে তেলাওয়াত শুনতে চান তবে- Audio > Recitation থেকে ক্বারীর নাম সিলেক্ট করুন। (আপনার ইন্টারনেট সংযোগ কত গতির সে অনুসারে সিলেক্ট করে নেবনে) যারা অফলাইনে শুনতে চান, তারা পুরো অডিও (Recitation) প্যাকেজটি ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে। Courtesy - Techtunes http://www.quraneralo.com/islamic-software-zekr/
-
Asalamu'alaikum রোজিনা জানান, আদরের মেয়েকে মারার পর খুবই খারাপ লাগছে। মেডিকেলে লাশ নিয়ে যে কান্না করেছি তা অভিনয় ছিল না। ঘটনাটি আমি সহ্য করতে পারছি না।
-
Asalamu'alaikum রোজিনার ওপর স্বামী নুরুলের ঘৃণা, ‘ও মা নয় কালনাগিনী’ কন্যা হারিয়ে বাকরুদ্ধ নুরুল ইসলাম। ঘৃণা তার স্ত্রী রোজিনার ওপর। বলেন, ও কালনাগিনী, কলঙ্কিনী, প্রতারক। ওর ফাঁসি চাই। বলেন, আমি তো ওকে কোন কিছুরই অভাব দেইনি। যখন যা চেয়েছে তা পেয়েছে। ভালবাসারও কোন কমতি ছিল না আমার মাঝে। দু’বছর ধরে তাদের পরকীয়া চলছে একদিনের জন্যও তা আমি টের পাইনি। কি দুর্ভাগ্য আমার। প্রায় এক যুগের সংসার জীবনে তাকে আমি একটুর জন্যও অবিশ্বাস করিনি। নুরুল বলেন, আমি প্লাস্টিকের দোকানে চাকরি করি। সকালে চলে যাই। বাসায় ফিরি কখনও বিকালে, আবার কখনও রাতে। আমার অনুপস্থিতিতে যে সে অভিসারে যায় তা ভাবতেও পারিনি। কোন মা যে তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে- তা আমার ভাবনাতেও ছিল না। নুরুল ইসলাম বলেন, আমার আদরের মেয়েকে হত্যার পর ওই দিনই দুপুরে একটি ছেলে আমার বাসায় এসে রোজিনার খোঁজ নিয়েছে। আমি বাসায় ছিলাম না। আমার মা তাকে জানায়, রোজিনা হাসপাতালে গেছে। আর কিছু না বলে দ্রুত ছেলেটি চলে যায়। এর আগে মা কখনও তাকে দেখেনি। পরে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে মা নিশ্চিত করেন- এই ছেলেটিই সেদিন এসেছিল রোজিনার খোঁজে। সুলতানের নাম আমি এর আগে একবারও শুনিনি। রোজিনা কখনও বলতো না যে, সুলতান নামের কোন ছেলে তাকে ফোন করে। নুরুল ইসলাম জানান, মাসখানেক আগে থেকে রোজিনা মোবাইল ফোনের নতুন সিম ব্যবহার করতে থাকে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আগের সিম কোথায়? রোজিনা জানিয়েছিল সেটি হারিয়ে গেছে। ১০০ টাকা দিয়ে নতুন সিম কিনেছি। আমি কিছু মনে করিনি। ৬ই জানুয়ারি সুলতান গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানতে পারলাম- ওই সিমটি সুলতানের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। নুরুল ইসলাম জানান, মেয়েকে হত্যার ২ দিন পর সুলতান আমাকে ফোন করে তার পরিচয় না দিয়ে বলে, আপনার আপত্তি না থাকলে মেয়ের দাফন-কাফনসহ লোক খাওয়াতে যত খরচ হয় সব আমি বহন করতে চাই। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে তার মোবাইল নম্বরটি পুলিশকে দিয়ে দেই। এদিকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে রোজিনা অকপটে স্বীকার করেছে নিজ সন্তান হত্যার কথা। তিনি জানান, দেড় বছরের পরকীয়ায় বেশ কয়েকবার আমি সুলতানের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়েছি। পরিচয়ের প্রথমদিকে আমরা ছিলাম কেবলই বন্ধু। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বিয়ে করবো। আমাদের মধ্যে আবেগ বেড়ে গিয়েছিল। আমি আমার আড়াই বছরের মেয়ে রিয়াকে খুব ভালবাসতাম। রিয়াও আমাকে ছাড়া থাকতে পারতো না। কিন্তু রিয়াকে নিয়ে এলে সুলতান আমাকে গ্রহণ করবে না- এ কথা সে আগেই জানিয়ে দেয়। আমি পড়ে যাই উভয় সঙ্কটে। একপর্যায়ে গত রমজান মাসে সুলতানকে বিয়ে করতে ২ মেয়েকে রেখে আমি আমার স্বামী নুরুল ইসলামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেঝো বোনের জিঞ্জিরাস্থ বাসায় চলে আসি। কি কারণে এসেছি- তা কেউ জানতো না। আমার স্বামীর বাড়ির লোকজন জানতো বেড়াতে এসেছি। পরদিন আমার স্বামী নুরুল ইসলাম ছোট মেয়ে রিয়াকে নিয়ে আমার কাছে আসে। তুচ্ছ কারণে তার সঙ্গে ঝগড়া করি। একপর্যায়ে রিয়াকে রেখে সে চলে যায়। ঝগড়ার সূত্র ধরে পরদিন রিয়াকে নূরুলের কাছে দিয়ে আসি। অন্যদিকে, সুলতানকে জানিয়ে দেই- আমি তোমাকে বিয়ে করতে নুরুলের কাছ থেকে চলে এসেছি। তখন সুলতান জানায়, আমি বেকার। বিয়ে করলে সংসার চলবে কি করে? একটা চাকরি পেয়ে নিই। পরে বিয়ে করবো। সুলতানের কাছে টাকা-পয়সা না থাকার কারণে মাস খানেক আগে আমার স্বর্ণের চেইন বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করে আমার বোনের বাসার পাশেই তার মেস ঠিক করে দিই। ২-১দিন পরপরই তার মেসে যাই। বিষয়টি মেসের অন্য ছেলেদের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হওয়ায় গত কয়েকদিন সেখানে যাইনি। বিষয়টি আমার ছোট বোন এবং মেঝো বোন জানে। তারা আমাকে নিষেধ করলেও নুরুলকে জানায়নি। ২রা জানুয়ারি আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার সময় নুরুলের কাছে টাকা চাই। নুরুল জানায়, আমার কাছে এখন টাকা নেই। পরে দেবো। এরপর সুলতানের কাছে ফোন করে টাকা চাই। সুলতান জানায়, আমাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে টাকা দেবো। এরপর আমি তার মেসের সামনে গিয়ে তাকে নিয়ে রিকশাযোগে মেডিকেলে যাই। সেখানে গিয়েই মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরদিন আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট আনতে গিয়ে মেয়েকে হত্যা করা হয়। তিনি জানান, আমি সুলতানকে জান বলে ডাকি। এ কারণে ছোট্ট মেয়ে রিয়াও তাকে জান বলে ডাকতো। রোজিনা জানান, আদরের মেয়েকে মারার পর খুবই খারাপ লাগছে। মেডিকেলে লাশ নিয়ে যে কান্না করেছি তা অভিনয় ছিল না। ঘটনাটি আমি সহ্য করতে পারছি না। ওদিকে ঘাতক সুলতান জানায়, বছর দেড়েক আগে রোজিনা হাজারীবাগের শাহিন নামে একজনকে তার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলে, একটি ভাল ছেলে থাকলে দেখিস। আমি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো। শাহিন আমাকে মামা ডাকতো। সে আমাকে এসে রোজিনার নম্বর দেয়। এরপর থেকেই দু’জনের মধ্যে শুরু হয় কথা বলা। একপর্যায়ে গভীর সম্পর্ক। মাস দেড়েক আগে হাজারীবাগের বাঘলপুর এলাকায় একবার আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছিলাম। স্থানীয় জনি, আবু হোসেনসহ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে ৫০০ টাকা দিয়ে তা ফেরত আনি। সুলতান বলে, আমি রিয়াকে মারতে চাইনি। রোজিনাকে কেবল বলেছি, মেয়েকে নিয়ে এলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। ছোট্ট মেয়ে রিয়া রোজিনার পিছু না ছাড়ায় রোজিনার পরামর্শেই রিয়াকে হত্যা করেছি। সুলতান জানায়, জেল থেকে ২০ বছর পর ছাড়া পেলেও রোজিনাকে বিয়ে করবো। http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=30966:2012-01-09-16-28-09&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82
-
Asalamu'alaikum Ameen
-
Asalamu'alaikum আপনি যখন এই নোটটি পড়ছেন আমি (শেখ তারিক-উজ-জামান) তখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে যাপিত জীবন যাপন করছি। আপনার জীবনে কি কখনো এমন সময় এসেছে যে, আপনার পূর্ণাঙ্গ অবসরে আছেন বেশ কিছুদিন? যদি এসে থাকে তবে আপনি নিশ্চয়ই জানেন এমন একটা দিন শুরু করার যন্ত্রণা যেদিন সতিকার অর্থে আপনার কোন নির্দিষ্ট কাজ থাকেনা। এটা হয়তো সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবে একজন বেকার, একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিংবা একজন কয়েদী। হ্যাঁ! ঠিক ধরেছেন। আরকজন সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবে। সেটা হলো একজন মৃত্যু নিশ্চিত জেনে যাওয়া রোগী, যার দিন কাটছে হাসপাতালে ডাক্তার বেধে দেয়া সময় ফুরিয়ে না যাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। আমি সেই শেষোক্ত ব্যক্তিদের একজন। আমার বয়স ১৭ বছর। আপনার বয়সও হয়তো এর কাছাকাছি, কিংবা আপনার ছোট ভাই বা আপনার ভাগিনা বা আপনার পুত্র। আমার বন্ধুরা হয়তো এখন তারুণ্যে টগবগ করে ফুটছে। আর আমি এক তরুণ বৃদ্ধ। ব্যাপারটা যে কি দুঃসহ তা কয়েকদিন আগে আমিও বুঝতাম না। কয়দিন? এইতো সেদিনও আমি কলেজে ভর্তি হয়ে জীবনকে বেশ উপভোগ্য মনে করছিলাম। মৃত্যু নামে যে একটা জিনিস আছে সেটা ভাবনার দূর সীমানাতেও আসেনি কোনদিন। অথচ কি আশ্চর্য! মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে, কয়েকটা মেডিক্যাল রিপোর্টের লেখনীতে এখন আমার আর আমার মা’র প্রতিটা দিন কাটছে জীবন-মৃত্যুর পুলসিরাতে। আমার বোন ক্যান্সার ধরা পড়ে যেদিন সেদিন বুঝেছি খেয়ে হোক না খেয়ে হোক, বেঁচে থাকার আকুলতা কি জিনিস। বিশ্বাস করুন আমার এখন ইচ্ছা করে আমার প্রতিটা অংগ-প্রতঙ্গের বিনিময়ে হলেও আর ক’টা দিন বেশী বেঁচে থাকি, নিজের জন্য না হোক আমার মায়ের জন্য অন্ততঃ। আপনারা হয়তো কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবেন যে কতটা বেদনাদায়ক নিজের জীবনের জন্য, চিকিৎসার জন্য অন্যের কাছে হাত পাতা। আমার মায়ের ইচ্ছায় আমি আজ লিখছি। আমি আপনাদের কাছে সাহায্য চাইছি। আল্লাহ আপনাদের মংগল করুন। আমার অপারেশানের জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন, সেটাও আবার ২৮ দিনের মত। টাকা এবং সময়সীমা দু’টোর অঙ্কই আঁতকে উঠার মত। দিনে প্রায় ১ লক্ষ টাকার চাইতেও বেশী। কিন্তু অনেকের প্রচেষ্টায় সেটা হয়তো সামন্যে পরিণত হবে। আপনাদের সামান্য কিছু ত্যাগের সামষ্টিক ব্যাপ্তি হয়তো আমাকে এবং আমার পরিবারকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে। আমাকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ রেবেকা সুলতানা (আমার মা) BRAC Bank,Dhaka. Phone No : 01827823052 , 01674777830 (Imran) Ibne Sina Hospital, Dhanmondi. (Cabin No : 212) Sheikh Tarikuzzaman is a 17 years old boy in Dhaka, Bangladesh, suffering from Aplastic Anemia. Aplastic anemia is a blood disorder in which the body's bone marrow doesn't make enough new blood cells. Sheikh is in critical condition right now, suffering silently in agony without proper medical treatment due to intense financial hardship, and all his parents can do is watch in dismay. His parents take care of him as much as they can within their limited abilities, but their ability is not anywhere close to enough for their son's treatment. They are terrified, and dumfounded, pleading anyone and everyone for help so they can save their son. He needs around $45,000 or 35,000 EUR for his initial treatment. So we are requesting everyone to help save Sheikh's life by donating generously and keeping him in your prayers. Thank you. Send your donations to: Brac Bank ( Asad Gate Branch ) : Rabaka Sultana Saving Acct# 1506201807961001 You can also visit my blog to donate: http://savetarik.blogspot.com/ Contact: +8801827823052 ( Rabaka Sultana, Bangladesh) +353894617674 (ASM Shamsul Arefin, Ireland) +353858809152 (Zahid, Santry, Ireland) +14059242276 (Sheikh Mominuzzaman/Ishrat Zaman, USA)
-
Asalamu'alaikum Food for Thought~ not for Stomachs! Abû Al-Dardâ`~ [Allâh be pleased with him] ~used to say:- “Learn knowledge before it is taken away, and it is taken away by its people (scholars) being taken away. The scholar and the student are partners in good and there is no good in any other people. The richest of men is the knowledgeable man whose knowledge is needed! he benefits those who need him and if done without, he benefits himself with the knowledge Allâh [Azza wa Jall ]has placed with him. So how is it I see your scholars dying yet the ignorant amongst you not learning? I fear that the predecessor will depart and the successor will not learn. If the scholar studies, he only increases in knowledge, and he does not take anything away from knowledge. And if the ignorant studies, he will find knowledge firm and established. So how is it that I see you full up with food, yet starved of knowledge?” [Al_Asr]
-
Asalamu'alaikum "Go easy on yourself, for the outcome of all affairs is determined by Allaah's decree. If something is meant to go elsewhere, it will never come your way, but if it is yours by destiny, from you it cannot flee." - Umar Ibn al-Khattab
-
Asalamu'alaikum যোগাযোগ করুন স্বেচ্ছাসেবক গ্রাফিক ডিজাইনার প্রয়োজন স্বেচ্ছাসেবক অনুবাদক প্রয়োজন http://www.quraneralo.com/salat-2/ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো নামাজ পড়া অবস্থায় অবহেলা করা হয় একজন মুসলমানের উপর নামাজ পড়া অবশ্য কর্তব্য। নামাজ পড়তে যেয়ে আমরা না জানার কারণে কিংবা জেনেও না মানার কারণে কতগুলো বিষয় অবহেলা করি আর যার কারণে আমাদের নামাজগুলো যথার্থরুপে সম্পাদন করা হয় না। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছেঃ *নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ করা *নামাজে অনর্থক নড়াচড়া করা *ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজে ইমামের পূর্বে আগে বেড়ে কাজ করা বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা একজন মুসলিমের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তাই বিষয়গুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ করা সবচেয়ে বড় চুরি হলো নামাজে চুরি করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “সবচেয়ে জঘন্য চোর হল যে তার নামাজে চুরি করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে নামাজে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পূরা করে না” (আহমাদ ৫/৩১০; সহীহ আল-জামে ৯৯৭) নামাজে প্রশান্তি ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ এবং রুকু সিজদায় পিঠ সোজা না করা এবং রুকু থেকে উঠার পর সোজা হয়ে না দাড়ান এবং দুই সিজদার মধ্যে সোজা হয়ে না বসা, অধিকাংশ মুসল্লীর মাঝে এ সব ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। কোন মসজিদই এ ধরণের মুসল্লী থেকে মুক্ত নয়। নামাযে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা থাকা নামাজের একটি রুকন, যা ব্যতিরেকে নামাজ সঠিক হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ “কারো নামাজ ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না রুকু এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা করবে।” (আবু দাউদ ১/৫৩৩; সহীহ আল-জামে ৭২২৪) এতে কোনই সন্দেহ নেই যে এ কাজটি নিন্দনীয় এবং যে এ কাজ করবে সে তিরস্কার এবং শাস্তি পাবার উপযুক্ত। আবু আব্দুল্লাহ আল-আশয়াবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদের নিয়ে নামাজ পড়লেন, অতপর তাদের সাথে বসে পড়লেন। এরই মাঝে একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল এবং নামাজ পড়তে শুরু করল। সে রুকু সিজদায় ঠোকর মারছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তোমরা কি একে দেখছ না? নামাজে ঠোকর মারছে, যেমন কাক রক্তে ঠোকর মারে। যে ব্যক্তি রুকু সিজদায় ঠোকর মারে সে হল ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত যে শুধু একটি দু’টি মাত্র খেজুর খায়, এতে তার কি হবে?” (ইবনে খুজায়মা ১/৩৩২; দেখুন শায়খ আলবানী প্রণীত সিফাতু সালাতিন নবী, পৃ: ১৩১) “হযরত যায়েদ ইবনে ওহাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হুজাইফা (রা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে রুকু সিজদা পূরা করছিল না। তিনি বললেন, তুমি নামাজই পড়নি। যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যেতে তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের আওতায় তোমার মৃত্যু হতো না।” (বুখারী, ফতহুল বারী ২/২৭৪) নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠাহীন ব্যক্তি যখন থেকেই এ বিধানের কথা জানতে পারবে তখন থেকেই তার উপর ফরজ হবে নামাজে এ অভ্যাস চালু করা এবং পূর্বে যা ঘটে গেছে তার জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা। তাকে পূর্বের সব নামাজ পড়তে হবে না। নিম্নে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস তারা বেলায় প্রযোজ্য হবে না। “তুমি ফিরে গিয়ে আবার নামাজ পড়, কেননা তুমি নামাজই পড়নি”। (বুখারী, দেখুন ফতহুল বারী ২/২৭৪) নামাজে অনর্থক নড়াচড়া করা এ এক মারাত্মক ব্যাধি, এথেকে বিরাট সংখ্যক মুসল্লী নিরাপদ নয়। কেননা তারা আল্লাহর এ বাণীকে বাস্তবায়ন করে নাঃ “তোমরা আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও” (বাকারাঃ ২৩৮) তারা আল্লাহর এ বাণীও বুঝে নাঃ “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী, নম্র”।(সূরা মুমিনুনঃ ১-২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাজে কঙ্কর ঠিক করে নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ “তুমি নামাজে তা স্পর্শ করবে না। যদি একান্তাই প্রয়োজন পড়ে তা হলে মাত্র একবার ঠিক করতে পার।” (আবু দাউদ ১/৫৮১, সহীহ আল-জামে ৭৪৫২, মূল হাদীসটি মুসলিম শরীফে রয়েছে, মুয়াইকীব (রা) কর্তৃক বণিত) উলামাগণ উল্লেখ করেছেন যে বিনা প্রয়োজনে একাধারে অনেক নড়াচড়া করলে নামাজই বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে ওদের কি অবস্থা হবে যারা আল্লাহর সামানে নামাজে দাড়িয়ে ঘড়ি দেখে, কাপড় ঠিক করে, নাকের ভিতর আঙ্গুল ঢোকায়, ডানে-বামে এবং আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তাদের কি এ ভয় নেই যে, তার দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেওয়া হতে পারে এবং শয়তান তার নামাজকে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে পারে? ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজে ইমামের পূর্বে আগে বেড়ে কাজ করা তাড়াহুড়া করা মানুষের প্রকৃতিগত অভ্যাস। “মানুষতো তাড়াহুড়া প্রিয়” (বনী ইসরাঈলঃ ১১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ হতে আর তাড়াহুড়া হল শয়তানের পক্ষ হতে।” (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা ১০/১০৪; সিলসিলা ১৭৯৫) অনেক মুসল্লীকেই দেখা যায় ইমামের আগেই রুকু সিজদায় যাচ্ছে, এমনকি সালাম ফিরাবার ক্ষেত্রেও। এটি যদিও অনেকের নিকট তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কিন্তুরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ ব্যাপাড়ে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বেই মাথা উঠায় তার কি এ ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তারা মাথাকে গাধার মাথায় রুপান্তরিত করে দিবেন।” (মুসলিম ১/৩২০-৩২১) যখন মুসল্লীদেরকে ধীরস্থিরভাবে নামাজের জন্য আসতে বলা হয়েছে সেক্ষেত্রে তাদেরকে নামাজে কেমন ধীরস্থির থাকতে হবে তা সহজেই অনুমেয়। অনেকেই আবার ইমামের আগে শুরু হবার আশঙ্কায় দেরীতে শুরু করে। ফকীহ্গণ এব্যাপারে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইমাম সাহেব তাকবীর শেষ করলেই মুক্তাদী তার কাজ শুরু করবে। যখন ইমাম আল্লাহু আকবার বলে শেষ করবে তখনই মুক্তাদী তার কাজ শুরু করবে। এর আগেও করবে না বা পরেও করবে না। এভাবেই সঠিকভাবে কার্যসম্পাদন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহবারা ছিলেন খুবই যত্নবান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগে বেড়ে কোন কাজ করতেন না। তাদের একজন বারা’ ইবনে আযেব (রা) বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে নামাজ পড়তেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু হতে সিজদায় যেতেন তখন তিনি মাটিতে তাঁর কপাল না লাগান পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ নীচু করত না। এরপর আমরা সবাই সিজদায় যেতাম। (মুসলিমঃ ৪৭৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর দিয়ে নামাজ আরম্ভ করতেন তখন সব কিছুই ধীরস্থিরভাবে করতেন। তিনি তাঁর পিছনের মুসল্লীদের সতর্ক করে দিতেন। তিনি বলতেনঃ “হে লোক সকল! আমি কেবল নামাজ শুরু করেছি, সুতরাং তোমরা রুকু ও সিজদায় আমাকে আগে বেড়ে কিছু করো না।” (বায়হাকী ২/৯৩, ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে এ হাদীসটি হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে) ইনশাল্লাহ আমরা বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করবো এবং আমাদের নামাজে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে খেয়াল করব। মহান আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এবং তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবীদের উপর এবং তাদেরকে যারা অনুসরণ করে তাদের উপর বর্ষিত হোক। আমীন। (মূল লেখাটি বর্তমান সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেমে দীন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ কর্তৃক রচিত এক তথ্যনির্ভর বই থেকে নেওয়া হয়েছে। যে বইটি বাংলায় ‘যে হারাম তুচ্ছ নয়’ শিরোনামে অনুদিত হয়েছে) বইটির প্রকাশনায়ঃ দাওয়াহ এন্ড এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী)
-
Asalamu'alaikum Divine help comes with patience, relief follows difficulty and ease follows hardship. Patience aids and supports a person more than an army of people and in the attainment of victory, it is like the head of the body. [ibn Al-Qayyim]
-
Asalamu'alaikum ওয়েবে ইসলামী প্রকাশনা জানাচ্ছেন সাজিদুল হক তানযীল কোরআন পড়ার ওয়েবসাইট অনলাইনে কোরআন পড়ার সুবিধা নিয়ে বেশ কিছু ওয়েবসাইট প্রকাশিত হয়েছে। এর একটি www.quraanshareef.org। এখানে কোরআন শরিফের প্রতিটি সুরা আলাদাভাবে সাজানো রয়েছে। রয়েছে মূল আরবিসহ কোরআন শরিফের বাংলা ও ইংরেজিতে অনুবাদ। মূলত সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ কর্তৃক বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য অনূদিত পবিত্র কোরআন শরিফের অনলাইন সংস্করণ এটি। এ ধরনের আরেকটি ওয়েবসাইট হলো www.ourholyquran.com। মূল আরবিসহ কোরআন শরিফের বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ ছাড়াও এতে আরো রয়েছে তাফসির, হাদিস, কোরআন শিক্ষা, নামাজ শিক্ষা এবং বিভিন্ন ইসলামী প্রশ্নোত্তর। ফ্ল্যাস সফটওয়্যারে তৈরি চমৎকার আরেকটি কোরআন শরিফের ওয়েবসাইট www.quranflash.com| www.qurantoday.com-এ রয়েছে ড. জহুরুল কর্তৃক অনূদিত কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ। এখানে প্রতিটি সুরা pdf ফাইল আকারে রাখা হয়েছে। তাই অফলাইনে পড়তে চাইলে ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন। অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনার মুঠোফোনেও বাংলায় অনুবাদসহ কোরআন শরিফ পড়তে পারেন। জাভা সমর্থিত মাবাইল ফোনসেটে ব্যবহারের জন্য অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে মূল আরবিসহ ২০টি ভাষায় অনুবাদ। আপনার মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন http://m.binu.com থেকে। কোরআন শরিফের তিলাওয়াত এমপিথ্রি ফরম্যাটে অডিও ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন www.freequranmp3.com ওয়েবসাইট থেকে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারি সাহেবদের কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শোনার আরেক ওয়েবসাইট www.tanzil.net। এখানে বাংলা-ইংরেজিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কোরআন শরিফের অনুবাদ পড়ার সুবিধাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআন তিলাওয়াত ডাউনলোড করতে পারবেন http://www.islamhous...pg/9739/quran/1 থেকেও। ইসলামী বই নিয়ে ওয়েবসাইট হাদিস শরিফ এবং বিভিন্ন ইসলামী বই নিয়ে সাজানো হয়েছে www.banglakitab.com ওয়েবসাইটি। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারি (রহ.) রচিত প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ ডাউনলোড করতে পারবেন http://www.banglakit...hariShareef.htm থেকে। হাদিস শরিফ নিয়ে আরেকটি ওয়েবসাইট হলো www.hadithshareef.org। ইসলামিক বই নিয়ে আরো কিছু ওয়েব ঠিকানা হলো_ http://www.islamicbook.ws/bengali http://ohilibrary.blogspot.com http://www.islamhous...pg/9739/books/1 আছে কিছু ব্লগসাইট ইসলামিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ, অডিও-ভিডিও নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ইসলামিক ব্লগসাইট। তেমনই একটি সাইট www.islamhouse.com। বাংলা ভাষায় ইসলামিক জ্ঞানের উপকরণ আকিদা, কোরআন, সুন্নাহ, মাজহাব ইত্যাদি নিয়ে সাজানো হয়েছে বাংলা ব্লগ www.bnislam.com। ইসলামিক ই-বুক, ইসলামিক-ইতিহাস, নির্বাচিত ইসলামিক প্রকাশনা, বিধিবিধান, হাদিস, হামদ-নাত ইত্যাদি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে www.sorolpath.com সাইটটি। এ রকম আরো কিছু বাংলা ইসলামিক ব্লগসাইট হলো_ www.islam.net.bd www.quraneralo.com www.islamibd.com www.ourislam.org জাকাত সম্পর্কিত তথ্য এবং জাকাত আদায়ের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা রয়েছে www.zakatguide.org ওয়েবসাইটে। অনলাইনে বিভিন্ন ইসলামিক সফটওয়্যার, ইসলামিক তথ্য, আরবি ডিকশনারি, ইসলামিক নাম ইত্যাদি পাওয়া যাবে www.searchtruth.com সাইটে। ইসলামী ক্যালিগ্রাফি নিয়ে তৈরি হয়েছে www.calligraphyislamic.com, www.artislamic.com, www.islamicart.com, www.sakkal.com। http://www.kalerkant...pe_id=1&index=1
-
Asalamu'alaikum This knowledge is a matter of Deen, so be careful who you take your Deen from. (Imam Muhammad Ibn Sereen)
-
Asalamu'alaikum মায়ের প্রতি ঋণ শোধ এক লোক মাকে মাকে পিঠে বহন করে মোট সাতবার হজ্জ করে । এরপর সে মনে করলো , মায়ের ঋণ বুঝি শোধ করতে পারলাম । এমনটা ভেবে ঘুমাতে যাওয়ার পর সে একটা স্বপ্ন দেখলো । স্বপ্নে সে নিজেকে একদম শিশু অবস্থায় পেল । শীতের রাতে মায়ের পাশে শুয়ে পেশাব করে সে পুরো বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছে । তার তরুণী মা ঘুম থেকে উঠে বিছানা পরিষ্কার করলেন কিন্ত্ত এই গরীব মায়ের কাছে অন্য কোন তোষক বা চাদর ছিল না । বাচ্চার যেন ঠান্ডা লেগে না যায় , সেজন্য মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত নিজে সেই ভিজা বিছানায় শুয়ে থাকলেন । লোকটি স্বপ্নের মধ্যে শুনলো কেউ একজন বলছে , মায়ের পুরো ঋণ শোধ ? তার এই এক রাতের ঋণই এখনো শোধ হয় নি । এক লোক রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললো , সফরে এক জায়গার মাটি এত গরম পেয়েছি যে আপনি যদি সেখানে এক টুকরো মাংস রাখেন , তাহলে তা সিদ্ধ হয়ে যাবে । আমি এরকম উত্তপ্ত মাটিতে মাকে পিঠে করে ছয় মাইল পথ চলেছি । আমি কি মায়ের প্রতি আমার ঋণ পুরোপুরি শোধ করতে পেরেছি ? রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যার মানে , তোমাকে জন্ম দেয়ার সময় তোমার মা তীব্র প্রসব বেদনা অনেকক্ষণ সহ্য করেছেন । তুমি হয়তো সেই প্রচন্ড বেদনার একটি মাত্র মুহুর্তের ঋণ শোধ দিয়েছ । “ আমি মানুষকে তার মাতা – পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি । তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে ও প্রসব করে কষ্টের সাথে ( পবিত্র কুরআন ; সুরা আহকাফ ; ৪৬ : ১৫ ) । সুবহান আল্লাহ । আমরা যেন মায়ের সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার না করি । সহায়ক সূত্র : http://www.123muslim.com/hadith/11187-rights-mother.html
-
Asalamu'alaikum "If Allah wants ill for a people, he gives them debates and takes away from them actions." — Umar ibn al-Khattab
-
Asalamu'alaikum মায়ের দাম বাজারে জিনিষপত্রের দাম যেভাবে বাড়ে বা কমে , এই সমাজ -সংসারে মায়েদের দামও তেমনি কখনো কমে , কখনো বা খুব বেড়ে যায় । দাম যখন কমে : একজন ছেলে যখন বিয়ে করে , তখন বলা যেতে পারে কিছুদিন পর্যন্ত মায়ের দাম একই থাকে বা সামান্য কমে । তারপর যখন বউ –শাশুড়ির ঝগড়া শুরু হয় , মায়ের দাম কমতে কমতে একেবারেই শূন্যের বা বিয়োগের খাতায় নেমে আসে । সামান্য অজুহাতে বিশ্রী ভাষায় মায়ের সাথে ঝগড়া করতে অনেক ছেলেরই কোন অসুবিধা হয় না , বিবেকে আটকায় না। মায়ের বিরুদ্ধে ছেলের অভিযোগগুলি শুনলে কখনো হাসি পায় , কখনো স্তম্ভিত হতে হয় । মায়ের ‘ গুরুতর ’ অপরাধগুলি হলো - মা কেন বৌমার অনুমতি ছাড়া কাজের বুয়াকে মিষ্টি খেতে দিল , কোন সাহসে মায়ের বুয়া ‘ ভাবীকে ’ চা আগে না দিয়ে বাসায় বেড়াতে আসা বড় আপার বাচ্চার দুধ গরম করলো , তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ড্রাইভার এসেছিল কিন্ত্ত তাকে ঠিকমত নাস্তা দেয়া হয় নি ইত্যাদি ইত্যাদি । যার সামর্থ্য আছে , সে মায়ের ও মায়ের পছন্দে রাখা কাজের বুয়ার এরকম নানা গুরুতর অপরাধে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় । মায়ের কান্না তার মনকে স্পর্শ করে না । মায়ের দাম যখন বাড়ে : সেই একই ছেলের কাছে মায়ের দাম কিছুটা বাড়ে যখন বউ কিছুদিন পর সন্তানসম্ভবা হয় । মাঝেমাঝেই বউয়ের অসুস্থ হওয়া ও নিজের বাসায় কাজের লোক না থাকার সমস্যায় ছেলেটি তখন হিমসিম খায় । যে ছেলে মায়ের সংসারে এতদিন অভ্যস্ত ছিল সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে নাস্তা দেখে , তাকে এখন সকালে খালি পেটে এমন কি এক কাপ চা না খেয়ে অফিসে যেতে হয় । প্রথমবারের মত সংসারের ঝামেলা কী জিনিষ বা মায়ের কাছে কতটা আরামে এতদিন ছিল , তা সে কিছুটা বুঝতে পারে । কিছুদিন বাইরের খাবার খেয়ে ত্যক্ত – বিরক্ত হয়ে তাকে তখন ‘ খোঁজখবর ’ নেয়ার অজুহাতে আবার আসতে হয় অবহেলায় ছেড়ে চলে যাওয়া মায়ের কাছে । তারপর সেই ‘খারাপ মা ‘ ও ‘জঘন্য পরিবেশের ’ বাসাতেই মাঝেমাঝেই এসে থাকতেও শুরু করে ছেলেটি , না একা নয় - বউসহ । এরকম নির্লজ্জ আচরণ স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষ কত অনায়াসেই না করছে । আসতাগফিরুল্লাহ । মায়ের দাম উঠা – নামা করে : মায়ের দাম আরো বাড়ে যখন নতুন অতিথি আসে সংসারে আর যদি বউয়ের মা অন্য জেলায় থাকায় বা কোন সমস্যার জন্য মেয়ের কাছে এসে বেশীদিন থাকতে না পারেন । বউয়ের মা কতদিন তাদের কাছে এসে বাচ্চা সামলাতে পারবেন , তার উপর ছেলের কাছে নিজের মায়ের দাম উঠা – নামা করে । মায়ের দাম যখন আকাশচুম্বী : শিশুর মা যদি কর্মজীবি হন ও ছুটি ফুরিয়ে যাওয়ায় অফিসে যোগদানের সময় ঘনিয়ে আসে , তখন ছেলের কাছে মায়ের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় । তখন যেভাবে হোক মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসা চাই –ই চাই । রাগ করে , জেদ ধরে , অনুরোধ করে হোক - অল্প কয়েকদিনের কথা বলে বাচ্চা কিছুটা বড় বা ভাল কোন কাজের বুয়া না পাওয়া পর্যন্ত মাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় ছেলে । মানুষ যে দরকারে কতটা স্বার্থপর ও নির্লজ্জ হতে পারে , তা এসব গুণধর ছেলেদের দেখলে কিছুটা আন্দাজ করা যায় । আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন । মায়ের মর্যাদা নিয়ে ইসলাম কী বলে ? আর আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা বলেন , “ আমি মানুষকে তার মাতা – পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি । তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে ও প্রসব করে কষ্টের সাথে ( সুরা আহকাফ ; ৪৬ : ১৫ ) । হজরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যার মানে , সাবধান , মা – বাবাকে অসন্ত্তষ্ট করবে না । বেহেশতের সুবাস হাজার বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে , কিন্ত্ত যে মা – বাবার অবাধ্য ও যারা রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে , তারা এর সুবাস পাবে না । এক লোক একবার রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললো , আমি আমার মাকে পিঠে করে ইয়ামেন থেকে মক্কায় বয়ে এনেছি যাতে মা হজ্জ করতে পারেন । এরপর তাওয়াফ ও সায়ী করার সময়ে , আরাফাত, মুজদালিফা ও মীনাতেও তাকে পিঠে বহন করেছি । আমার উপর তার যা অধিকার আছে ও মায়ের প্রতি আমার যা কর্তব্য , তা কি আমি পুরোটা পালন করি নি অর্থাৎ মায়ের ঋণ শোধ করেছি কি ? রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : না , একটি ধূলিকণার সমানও শোধ হয় নি । রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যার মানে , যে মা – বাবাকে অসন্ত্তষ্ট করলো , সে যেন আল্লাহকেই অসন্ত্তষ্ট করলো । যে মা – বাবাকে রাগালো , সে যেন আল্লাহকেই রাগালো । আরেকটি হাদীসে আছে , যে মা – বাবাকে কষ্ট দিল , সে আমাকে কষ্ট দিল এবং যে আমাকে কষ্ট দিল , সে আল্লাহকে কষ্ট দিল । যে আল্লাহকে কষ্ট দেয় সে অভিশপ্ত । *** নব- দম্পতিদের প্রতি অনুরোধ : যৌথ সংসারে থাকতে না চাইলে দয়া করে মা-বাবা / শ্বশুর – শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করবেন না । তাদের ভালভাবে বুঝিয়ে কাছাকাছি কোন বাসায় আলাদা থাকুন , নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন , আল্লাহ তওফীক দিন ।
-
Asalamu'alaikum "Love of Allah is a sweetness or pleasure that if you are without it, life becomes a thing of worries and of pain." - Ibn Qayyim al-Jawziyya rahimahullah
-
-৪- কম খাও , সাবধান হও ও সবসময় আল্লাহর যিকির করো : ইবনে জামাহ বলেন : জ্ঞান অর্জনের জন্য ও জ্ঞান চর্চার সময় বিরক্তিবোধ না করার সেরা উপায় হলো খুব কম খাও ও হালাল খাবার খাও । আশ শাফেয়ী رضي الله عنهم বলেন : গত ষোল বছর ধরে আমি পেট ভরে খাই নি । এর কারণ হলো বেশী খেলে বেশী পানি পান করতে হয় , বেশী ঘুমাতে হয় , সব চেতনাগুলি ধীরে ধীরে তখন ভোঁতা হয়ে যায় ও দেহ অলস হয়ে যায় । শরীয়াহতে বেশী খাওয়া অপছন্দ করা হয়েছে । বেশী খেলে শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয় । বলা হয়ে থাকে , যা রোগ তুমি দেখো তার বেশীরভাগ হয় খাওয়া ও পান করা থেকে । কোন আলিম বা আউলিয়া সম্পর্কে এটা জানা যায় নি যে তিনি বেশী খেতেন । বেশী খাওয়া হলো বুদ্ধিহীন প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য । একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা হলো তার কাজের উৎস । এটি খুবই মহান একটি গুণ যাকে ঘৃণ্য একটি বিষয় - অতিরিক্ত খাওয়া দিয়ে ক্ষতি ও নষ্ট করা যেতে পারে না । অন্য কোন খারাপ দিক যদি নাও থাকে , বেশী খাওয়ার জন্য বেশীবার যে টয়লেটে যেতে হয় - একজন বুদ্ধিমান মানুষের জন্য এই বদঅভ্যাস থেকে দূরে থাকতে শুধু এই কারণই যথেষ্ট । যে বেশী খাওয়া , পান করা ও বেশী ঘুমের পক্ষে , তার জন্য জ্ঞান অর্জনে সফল হওয়া অসম্ভব । ইবনে কুদামাহ رضي الله عنهم বলেন : খাওয়ার লোভ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও এটাই আদম আলাইহিস সালামকে বেহেশত থেকে বের করে এনেছিল । খাওয়ার লোভ থেকে আসে শারীরিক সম্পর্ক ও সম্পদের প্রতি আকর্ষণ । এসব অনেক সমস্যার দিকে নিয়ে যায় । উকবাহ আর রাশিবী বলেন : আমি আল হাসানের কাছে গেলাম যখন তিনি খাচ্ছিলেন । তিনি আমাকে তার সাথে খেতে বললে আমি জানাই , আমি ততক্ষণ পর্যন্ত খেয়েছি যখন আর খাওয়া সম্ভব না । শুনে তিনি বলেন , “ সুবহান আল্লাহ । মুসলমানরা কি এতটা খায় যখন সে আর খেতে না পারে ”? পরিমিত খাওয়া হচ্ছে তাই যখন কিছু ক্ষুধা থাকতে একজন হাত গুটিয়ে নেয় অর্থাৎ খাওয়া শেষ করে । এটা দেহকে শক্তিশালী করে ও অসুখকে দূরে রাখে , কেননা এই ব্যক্তি ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খায় না আর ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া শেষ করে । অবশ্য বেশী কম খেলে শরীর দূর্বল হয়ে যেতে পারে । কিছু মানুষ এত কম খেতো যে তারা তাদের কর্তব্য পালনের মতো সুস্থ থাকতো না । না জেনে তারা মনে করতো এটা ভাল অভ্যাস কিন্ত্ত আসলে তা না । যারা ক্ষুধার্ত থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন ও এই অবস্থার প্রশংসা করেছেন তারা পরিমিত খাওয়ার কথা বলেছেন যা উপরে বলা হয়েছে । এসব কিছু করা হয় সাবধানতা থেকে । সাবধানতা হলো আল্লাহর পথে যাত্রাস্থল । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন একজন মানুষের ধর্ম তখন নিখুঁত হয় যখন যে বিষয়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই , অন্যের সেসব বিষয়ে সে অহেতুক নিজেকে জড়িত করে না । বিনা দরকারে কোন বিষয়ে কথা বলা , কোন কিছুর দিকে তাকানো , শোনা , ধরা , সেদিকে যাওয়া বা তা নিয়ে চিন্তা – ভাবনা করা , দৈহিক বা মানসিকভাবে সে বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়ানো – এসব কিছু এই হাদীসের আওতায় আসবে । ইবরাহীম বিন আদহাম বলেন : সাবধানতা হলো যা সন্দেহজনক তা ত্যাগ করা । যা তোমার সাথে সম্পর্কযুক্ত না এমন কিছু ত্যাগ করা মানে যাতে তোমার দরকার নেই , সেটাও ত্যাগ করা । সাবধানতার সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ দিক হলো যাতে সন্দেহ আছে তা থেকে দূরে থাকা । যে সন্দেহযুক্ত বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে , সে পাপের সাথেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে । পাপ হচ্ছে সীমানা যা আল্লাহ স্থাপন করেছেন । যে এই সীমানার কাছে ঘোরাফেরা করবে , সে সেই সীমানা পার হয়ে যাবে ( ইমাম বুখারী , ইমাম মুসলিম ) । আল বাগহাওয়ী বলেন : সাবধানতার বিষয়টি যখন আসে ,তখন এই হাদীসটি খুবই গূরুত্বপূর্ণ । এটা শেখায় যে কেউ যদি বুঝতে না পারে কোনকিছু বৈধ না অবৈধ , তবে সাবধানী ব্যক্তি তা থেকে দূরে থাকবে । কেননা সে যদি তা ত্যাগ না করে , সন্দেহযুক্ত বিষয় নিয়ে এগিয়ে যায় ও এটাকে অভ্যাসে বানিয়ে ফেলে , তবে তা তাকে সেখানে নিয়ে যাবে যা হারাম । বেশীরভাগ সন্দেহপূর্ণ বিষয়কে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । প্রথম শ্রেণী হলো সেটা যা হালাল না হারাম তা নিয়ে কোন সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না । এই না থাকাটাই নিশ্চিত করছে যে একজন এ থেকে দূরে থাকবে । দ্বিতীয় শ্রেণী হলো তা যার সূত্র আছে ও স্পষ্ট ভিত্তি আছে বলার জন্য যে এটা হালাল বা হারাম । তাই এ বিষয়ে যা স্পষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত , তা একজন মেনে নেবে । এ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত মতের বাইরে চলে যাওয়া উচিত হবে না ,যদি না তার এ নিয়ে নিশ্চিত কোন জ্ঞান থাকে । যেমন কোন মানুষ যদি সন্দেহ করে যে উযু আছে কি নেই , তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সে ইবাদত করবে । এছাড়াও যদি কেউ মরুভূমিতে এমন পানি পায় যা পাক্ কি না তাতে সে নিশ্চিত নয় , তবে পানির বিষয়ে যে মূল নীতিগুলি আছে সে তাতে দৃঢ় থাকবে ও শয়তানের কূ-মন্ত্রণায় পড়বে না । ইবনে হাযার رضي الله عنهم বলেন , কোনটা হালাল তা স্পষ্ট , কোনটা হারাম তা স্পষ্ট ; এটা বোঝায় যে নিয়ম তিন ভাগে বিভক্ত । কেননা , প্রতিটি বিষয়ের জন্য ধর্মগ্রন্থে হয় স্পষ্ট নির্দেশনা আছে সেটার গূরুত্ব বিষয়ে ও তা করতে হবে সে নিয়ে অথবা স্পষ্ট আদেশ আছে যে এটা ক্ষতিকর , এর মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যাবে না অথবা এই দুই ধরণের কোন বক্তব্য নেই । তাই প্রথমটি স্পষ্টতই হালাল ও দ্বিতীয়টি স্পষ্টতই হারাম । তাই রাসূল صلى الله عليه وسلم যখন বলেন , “ কোনটা হালাল তা স্পষ্ট ”, তখন তিনি বুঝিয়েছেন এতে অতিরিক্ত কোন ব্যাখ্যার দরকার নেই ও এটা সবার জানা । তৃতীয় ভাগটি হলো অস্পষ্ট । যারা সতর্ক থাকতে পছন্দ করে তারা এটাকে ভয় পায় কেননা তারা জানে না এটা হালাল না হারাম । এক্ষেত্রে সে এটা এড়িয়ে চলবে । কেননা , যদি এটা হারাম হয় তবে সে নিরাপদ থাকলো । আর যদি হালাল হয় , তবে ভাল নিয়তে এটা না করার জন্য সে পুরষ্কার পাবে । তাই জ্ঞানের সন্ধানীরা জীবনের সব ক্ষেত্রে সাবধান থাকবে । খাবার , পানীয় , কাপড় ও আবাস যেন হালাল হয় সেদিকে তারা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে । সে ও তার পরিবারের সদস্যদের যা যা দরকার হয় , সেসব বিষয়ে এই সাবধান থাকার মত সে প্রয়োগ করবে যেন তার মন আলোকিত হতে পারে । এভাবে সে জ্ঞানের আলো পেতে নিজেকে অভ্যস্থ করবে এবং এ থেকে কল্যাণ পাবে । যা সব হালাল , সেসবের প্রতিও সে বেশী বেশী ঝুঁকে পড়বে না যদি সে সাবধান থাকে ও সে সবে তার দরকার না থাকে । সে হালাল জিনিষও বেশী বেশী উপভোগ করবে না । বরং সে উচ্চতর স্তরের খোঁজ করবে ও অতীতের সঠিক পথের জ্ঞানীদের অনুসরণ করবে । তারা যা হালাল ছিল সে বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতেন । ছাত্ররা যাকে সবচেয়ে বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করবে তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم । রাসূল صلى الله عليه وسلم রাস্তায় পড়ে থাকা কোন একটি খেজুরও খেতেন না এই ভয়ে যে যদি এটা দানের হয়ে থাকে ; যদিও এমনটি না হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক । জ্ঞানের সন্ধানকারীরা অবশ্যই এসব অনুসরণ করবে ; তারা যদি সাবধানতা অবলম্বন না করে তবে কারা তা করবে ? আনাস رضي الله عنهم বলেন : রাসূল صلى الله عليه وسلم রাস্তায় একটি খেজুর দেখতে পান যা গাছ থেকে পড়েছিল । তিনি বলেন : এটা হয়তো দানের হতে পারে । তা না হলে আমি এটা খেতাম ( বুখারী , মুসলিম ) । আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন : রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , আমি আমার পরিবারের কাছে গেলাম ও আমার বিছানায় একটি খেজুর দেখতে পেলাম । আমি সেটা সেটা মুখের কাছে আনলাম খাওয়ার জন্য , তারপর ভয় পেলাম যে এটা দানের হতে পারে । তাই আমি তা নামিয়ে রাখলাম । ইবনে হাজার বলেন : এখানে রাসূল صلى الله عليه وسلم নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে তিনি খেজুর বিছানায় পেয়েছিলেন । তারপরেও তিনি সাবধানতা হিসাবে সেটা খান নি । আন নাওয়ায়ী বলেন , এই হাদীস সাবধানতার একটি উদাহরণ । খেজুরটি খাওয়া হারাম ছিল না এই সন্দেহ করে যে এটি দানের হতে পারে ; বরং এটি সাবধানতা থেকে করা হয়েছে ( মুসলিম) । যিকির করা : সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ে ছাত্ররা বিশেষভাবে সাবধান থাকবে তা হলো , সব পরিস্থিতিতে আল্লাহকে মনে করা বা যিকির করা । একজন যা চায় তা পাওয়ার সেরা উপায় হলো আল্লাহর যিকির । যে এই পথ থেকে ফিরে যায় , সে অবশ্যই সব কল্যাণ থেকে দূরে থাকলো ও সঠিক পথ থেকে সরে গেল । যে এই পথে পরিচালিত হলো সে সত্যিই হেদায়েতপ্রাপ্ত ও সেরা নেতা এবং পথপ্রদর্শক দিয়ে পরিচালিত । ইবনে আল কাইয়াম বলেন : আল্লাহর দিকে ছুটে যাওয়া , তাঁর উপর নির্ভর করা , তাঁর প্রতি সন্ত্তষ্ট থাকা , আল্লাহর জন্য ভালবাসায় মন পূর্ণ করা , সবসময় যিকির করা , আল্লাহকে জানার আনন্দ - এ সব কিছুর পুরষ্কার সাথেসাথে পাওয়া যায় । এ হলো দুনিয়ার বেহেশত ও এমন একটি জীবন যার সাথে রাজা - বাদশাহর জীবনও তুলনা করা যায় না । আমি শুনেছি শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ رضي الله عنهم বলেন : অবশ্যই এই দুনিয়ায় একটি বেহেশত আছে । যে এখানে ঢুকবে না , সে পরকালের বেহেশতও ঢুকতে পারবে না । একবার তিনি আমাকে বলেন : শত্রুরা আমার কী করবে ? আমার বেহেশত ও বাগান আমার বুকের ভিতরে । আমি যেখানেই যাই না কেন , এই দুইটি আমার সাথে থাকে । বন্দী জীবন হলো আল্লাহর সাথে আমার একান্ত সান্নিধ্য , আমার নিহত হওয়া হলো শহীদের মৃত্যু ও দেশ থেকে নির্বাসন হলো আমার সফর । আল্লাহ জানেন , আমি শেখ ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ رضي الله عنهم এর মতো এমন পবিত্র জীবনের অধিকারী আর কাউকে পাই নি যদিও তিনি কঠিন সব বিপদ , অত্যন্ত দু:খ - কষ্টের মধ্যে বন্দী ও খুন হওয়ার আশংকার মধ্যে ছিলেন । এত সব কিছুর মধ্যে তিনি পাক – পবিত্র জীবনযাপন করতেন ; দৃঢ় ও উদার মনের ছিলেন ; আধ্যাত্মিকভাবে সুখী আত্মা ও আলোকিত চেহারার অধিকারী ছিলেন । যখন আমরা ভয় পেতাম , মনে খারাপ চিন্তা আসতো , মনে হতো দুনিয়া শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে আমাদের - তখন আমরা তার কাছে ছুটে যেতাম । শুধু তাকে দেখে ও তার কথা শুনেই ভয় , দু:চিন্তা দূর হয়ে আমরা আশ্বস্ত হতাম । সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের আগেই দাসদের জন্য এই দুনিয়ায় বেহেশত দেখার অনুমতি দিয়েছেন ও সেই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়েছেন ; এর স্বাদ ও আনন্দের ভাগ দিয়েছেন যার জন্য দাস তার শক্তি , সামর্থ্য উৎসর্গ করেছিল । কিছু জ্ঞানী মানুষ বলেন যদি রাজারা ও তাদের ছেলেরা জানতো আমরা কী অভিজ্ঞতা লাভ করছি , তাহলে তা পাওয়ার জন্য তরবারী নিয়ে আমাদের সাথে লড়াই করতো । আরেকজন বলেন : সেই মানুষ বন্ঞ্চিত , যারা এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল সবচেয়ে উপভোগ্য জিনিষটির স্বাদ না পেয়ে । তাকে প্রশ্ন করা হলো সেটা কী ? তিনি বললেন , আল্লাহর ভালবাসা , তাঁকে জানা ও তাঁকে মনে করা । ভালবাসা , জ্ঞান ও সবসময় যিকির করা ; তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়া , তাঁর স্মরণে শান্তি লাভ , ভালবাসা , ভয় , আশা , নির্ভরতা ও মনোযোগ – সবই আল্লাহর জন্য ; এই দুনিয়ার বেহেশত ও তার আনন্দের সাথে এখানকার অন্য আনন্দের তুলনা হয় না । যারা আল্লাহকে ভালবাসে , তাদের জন্য এটা চোখের শান্তি এবং যারা তাকে জানে তাদের জন্য এটাই সত্যিকারের জীবন । ইবনে আল কাইয়াম বলেন : আমি শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহর সাথে একদিন ছিলাম যখন তিনি ফজরের সালাত পড়ছিলেন । এরপর তিনি যিকির করতে থাকেন দুপুরের আগে পর্যন্ত । আমার দিকে ফিরে তিনি বললেন , এটাই আমার খাবার । যদি আমি এটা না পাই , তবে আমি মুক্তি পাবো না । একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন : আমি যিকির থেকে কখনোই বিরত হই না । ব্যতিক্রম হলো , এই ইচ্ছা নিয়ে আমি মাঝেমাঝে বিশ্রাম নেই যাতে শক্তি সঞ্চয় করে আরো বেশী যিকির করতে পারি । তামা , রূপা ইত্যাদিতে যেমন মরিচা পড়ে , তেমনি মনেও মরিচা ধরে । একে উজ্জ্বল করতে হয় যিকির দিয়ে । মনকে চকচকে আয়নার মতো পরিষ্কার করে যিকির । মনকে যদি খালি রাখো , এটায় আবারো মরিচা ধরবে । যদি আল্লাহকে স্মরণ করো , এটা আবারো চকচকে হবে । মনে মরিচা পড়ে দুইটি কারণে : অসাবধানতা ও পাপ । তওবা ও যিকিরে এই মরিচা দূর হয় । তাই যে বেশী অসাবধান , তার মনে বেশী মরিচা ধরে । যার মনে মরিচা ধরে , সে আর কোনকিছুর আসল চেহারা দেখতে পায় না । তাই সে মিথ্যাকে সত্য দেখবে আর সত্যকে মিথ্যা জানবে । তাই যদি মরিচা বাড়ে আর মনকে অন্ধকার করে ফেলে , তাহলে তার বোঝার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে । সে আর সত্যকে সত্য বলে মানতে পারবে না ; মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অস্বীকার করবে না । এটা হচ্ছে মনের জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি । এ সবকিছু আসে অসাবধানতা থেকে ও নফসের ইচ্ছামতো চললে অর্থাৎ মনের ইচ্ছার বশ হলে । তখন মনের আলো নিভে যায় ও মন অন্ধ হয় । ‘ তুমি তার আনুগত্য করবে না যার মনকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি , যে তার খেয়াল – খুশীর অনুসরণ করে ও যার কাজ সীমা লংঘন করে ’ ( সুরা কাহফ ; ১৮ : ২৮) । তাই আল্লাহর কোন দাস যদি কাউকে অনুসরণ করতে চায় , তাহলে সে দেখবে – এ কি তাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে স্মরণ করে , না কি এ অসাবধানীদের দলে ? এ কি নিজের খেয়ালখুশীতে চলে না ওহী মেনে চলে ? তাই সে যদি নিজের নফসকে গূরুত্ব দেয় ও অসাবধানীদের দলের হয় , তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্থ । তার সব কাজ , সাফল্য নষ্ট হয়ে যাবে । এগুলি অপচয় কেননা এসব তার কোন কাজে আসবে না । এ হচ্ছে সত্যের বিপরীত । এমন লোকদের মেনে চলতে আল্লাহ মানা করেছেন । তাই একজন তার শিক্ষক ও নেতার আদর্শ কী তা খেয়াল করবে । যদি এসব দোষ তাদের থাকে , তবে সে তাদেরকে এড়িয়ে চলবে । যদি সে এমন কাউকে পায় যে সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে , সুন্নাহ মেনে চলে ও যার আমল নষ্ট হয় নি , সে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হবে । জীবিত ও মৃত মানুষের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো আল্লাহর স্মরণ । যে তার রবকে স্মরণ করে ও যে তা করে না , তারা হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো । শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ رضي الله عنهم বলেন : অনেক সময় আমি একটি আয়াতের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাই । তখন আমি আল্লাহকে বলি , আমি যেন আয়াতের সঠিক মানে বুঝতে পারি । আমি এভাবে বলি : হে আদম আলাইহিস সালাম ও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শিক্ষক , আমাকে শেখান । আমি কোন পরিত্যক্ত মসজিদে যাই , সিজদা করি ও আল্লাহকে বলি : হে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শিক্ষক , আমাকে শেখান । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন , যে তার প্রভুকে স্মরণ করে ও যে তা করে না , তারা হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো ( বর্ণনায় আবু মুসা আল আশারী رضي الله عنهم ; বুখারী হাদীস ) । ইমাম মুসলিম رضي الله عنهم বলেন , যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় ও যে ঘরে তা করা হয় না , সে দুইটি হলো জীবিত ও মৃত মানুষের ঘরের মতো । আশ সাওকানি رضي الله عنهم বলেন , আল্লাহর যিকিরের চমৎকার সৌন্দর্য ও পবিত্র মাহাত্ম্য এই রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে । এটা দেখায় , আল্লাহকে যে ভুলে থাকে , যদিও সে আক্ষরিক অর্থে জীবিত , আসলে সে বেঁচে নেই । বরং সে মরা মানুষের মতো । জীবিত মানুষ যেভাবে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে , মৃত মানুষ তা করতে পারে না । এই হাদীসে যা আছে তা কুরআনের আয়াতেও বলা হয়েছে : যে মৃত ছিল , যাকে আমি পরে জীবিত করেছি ......( সুরা আল আনাম ; ৬ : ১২২ ) । এর মানে অবিশ্বাসীরা মরা মানুষের মতো আর ইসলামের পথে পরিচালিত হওয়া মানে জীবন । আল- বুখারী তার বইতে একটি অধ্যায় লিখেছেন এই শিরোনামে : আল্লাহর যিকিরের মাহাত্ম্য । এই অধ্যায়ে তিনি উপরে আবু মুসা ও আবু হুরায়রার উল্লেখ করা হাদীসের কথা লিখেছেন । এতে বলা আছে , রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন : আল্লাহর কিছু ফিরিশতা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাদের খোঁজে , যারা আল্লাহর যিকির করে । যদি তারা এমন কাউকে পায় , তারা তখন অন্য ফিরিশতাদের ডাক দিয়ে বলে - আসো , তুমি যাদেরকে খুঁজে বেড়াচ্ছো তাদেরকে দেখে যাও । তখন আকাশ পর্যন্ত ডানা মেলে দিয়ে ফিরিশতারা যিকিরকারীকে ঘিরে ধরে । তাদের রব প্রশ্ন করেন যদিও তিনি তাদের থেকে বেশী জানেন - আমার দাসরা কী বলছে ? ফিরিশতারা জবাব দেয় : তারা বলে সুবহান আল্লাহ , আল্লাহু আকবর ও আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ তখন বলেন : ওরা কি আমাকে দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে : না , আপনার শপথ , তারা আপনাকে দেখে নি । আল্লাহ বলেন : যদি তারা আমাকে দেখতো তাহলে তারা কী করতো ? ফিরিশতারা জবাব দেয় : যদি তারা আপনাকে দেখতো , তাহলে তারা আরো আন্তরিকভাবে আপনার ইবাদত করতো , আরো বেশী করে আপনার প্রশংসা করতো এবং সৃষ্ট কোন কিছুর মতো হওয়া থেকে আপনার মুক্ত থাকার বিষয়টি আরো বেশী বেশী করে ঘোষণা করতো । আল্লাহ বলবেন : তারা আমার কাছে কী চায় ? ফিরিশতাদের জবাব : তারা বেহেশত চায় । আল্লাহ বলেন : তারা কি সেটা দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে , না , ও প্রভু , আপনার শপথ । তারা বেহেশত দেখে নি । আল্লাহ বলেন : যদি তারা এটা দেখতো তাহলে তারা কী করতো ? ফিরিশতারা বলে : যদি তারা তা দেখতো , তাহলে আরো বেশী করে তারা এটা চাইতো , বেহেশত পাওয়ার আগ্রহ অনেক বেশী হতো । আল্লাহ বলেন : তারা কী থেকে আশ্রয় চায় ? ফিরিশতারা বলে : তারা আগুন থেকে আপনার আশ্রয় চায় । আল্লাহ বলেন , তারা কী এটা দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে , না , ও আল্লাহ । তারা এটা দেখে নি । আল্লাহ বলেন : যদি তারা এটা দেখতো তাহলে কী হতো ? ফিরিশতারা বলে : যদি তারা তা দেখতো , তাহলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যেত আর এ আগুনকে খুবই ভয় পেত । তখন আল্লাহ বলবেন , আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করলাম যে এদেরকে মাফ করা হলো । একজন ফিরিশতা তখন বলবে : সেখানে এমন একজন লোক ছিল যে এদের মতো ছিল না । বরং সে তার কোন এক দরকারে সেখানে গিয়েছিল । আল্লাহ বলবেন : এরা এমন মানুষ যাদের সাথীরা দু:খিত হবে না ( সহীহ বুখারী ) । আল হাফিয ইবনে হাযার رضي الله عنهم বলেন : আল্লাহকে স্মরণ করার মানে হলো যে সব শব্দ বলতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে তা বলা ও এই যিকির সবসময় করা । যেমন , এগুলি বলা : সুবহান আল্লাহ ( সব মহিমা আল্লাহর ) ; আলহামদুলিল্লাহ ( সব প্রশংসা আল্লাহর ) ; লা ইলাহা ইল্লাললাহ ( নেই কোন রব আল্লাহ ছাড়া ) ; আল্লাহু আকবর ( আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ) , লা হাওলা ওয়ালা কুয়াআতা ইল্লা বিল্লাহ ( আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নেই ) , বিসমিল্লাহ ( আল্লাহর নামে শুরু ) , হাসবুনা আল্লাহ ওয়া নিমাআল ওয়াকিল ( আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট ) ও তিনি সেরা মীমাংসাকারী । এসবের পাশাপাশি আল্লাহর ক্ষমা চাইতেই হবে ও এই দুনিয়া এবং পরকালের জন্য কল্যাণ চাইতে হবে । আল্লাহ যা করতে আদেশ বা উৎসাহ দিয়েছেন যেমন কুরআন তেলাওয়াত , হাদীস পড়া , জ্ঞান চর্চা , নফল ইবাদত ইত্যাদি আল্লাহকে স্মরণ করার অন্তর্ভূক্ত । যিকির অনেক সময় জিহবা দিয়ে শুধু করা হয় - যা বলা হচ্ছে তার মানে না জেনেও , আল্লাহর নাম বলার জন্য যিকিরকারী পুরষ্কার পাবে । তবে মানে জেনে নিয়ে যিকির করা ও শুধু জিহবা না বরং মন থেকেও সে সব বললে তা বেশী ভাল । আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা হয় যে সব শব্দ দিয়ে ও আল্লাহর কোন দোষ – ত্রুটি আছে এমন কথা অস্বীকার করা হয় যা দিয়ে - সে সব বুঝে বলা বেশী ভাল । যদি যিকিরকারী সঠিক কোন কাজ যেমন ইবাদত , জিহাদ এসবের মধ্যে যিকির করে , তবে তা যিকিরের মাহাত্ম্য বাড়ায় । যদি যিকিরকারী আল্লাহর দিকে পুরোপুরি চলে যায় ও আন্তরিক থাকে সে যা করছে তাতে , তাহলে সেটা সবচেয়ে ভাল ও প্রায় পরিপূর্ণ একটি কাজ । ইমাম মুসলিম رضي الله عنهم এর বর্ণিত হাদীস : যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় ও যে ঘরে তা করা হয় না , সে দুটি হলো যেন জীবিত ও মৃত মানুষের ঘর । ইবনে হাজার এ নিয়ে বলেন , এখানে আসলে ঘরে যারা থাকে তাদের কথা বোঝানো হয়েছে , ঘরের কথা বলা হয় নি । কোন ঘর জীবিত না মৃত মানে তার বাসিন্দারা বেঁচে আছে না মারা গিয়েছে । যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে , তার সম্পর্কে রাসুল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , সে এমন একজন , যার বাইরের দিক জীবনের আলো দিয়ে সুন্দর ও ভিতরের দিক সুন্দর জ্ঞানের আলো দিয়ে - এ বেঁচে আছে । যে আল্লাহর যিকির করে না , সে সবদিক থেকে ধ্বংস হয়েছে । আরো বলা হয়েছে , জীবিত ও মৃত মানুষের মতো মানে হলো যে বেঁচে আছে সে বন্ধুদের ক্ষতি করতে পারে যা মৃত মানুষ পারে না । যারা যিকিরকে দৃঢ়ভাবে ধরেছে , তারা জ্ঞানী । তারা এমন যেন খাড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায় ও যেখানে যেতে চায় সেদিকে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় । যিকির ছাড়া চলার চেষ্টা করলে তাদের পা ধীরগতির হয়ে যাবে , মনে মরিচা ধরবে ও তারা পথ হারিয়ে ফেলবে - যেমনটি বলা হয় - যদি আমরা অসুস্থ হই , যিকির দিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করি । যদি এক মুহুর্তের জন্যও যিকির থেকে বিরত হই , তাহলে আমরা হতাশায় ভুগি ।
-
Asalamu'alaikum নববর্ষ : আত্মপর্যালোচনার দারুণ উপলক্ষ লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ আবার এলো নববর্ষ। আবারো নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে অপচয় করা হবে কোটি কোটি ডলার। আতশবাজি, উদ্দাম নৃত্য, গান পরিবেশন, যুবক-যুবতীদের প্রণয় বিনিময়, একান্তে সময় কাটানো, বন্ধু বান্ধবীদের উদ্দেশে মোবাইল, মেইল বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়, মদ্য পান ও নারী নিয়ে ফূর্তি করাসহ রকমারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় দেয়া হবে ২০১১ সালকে। বরণ করা হবে ২০১২ সাল। দেশের ফাইভ স্টার হোটেলগুলো ও পর্যটন স্পটগুলোয় আয়োজন করা হবে নানা অনুষ্ঠানের। মোবাইল কোম্পানিগুলোর হাওয়া থেকে উপার্জিত অর্থের সৌজন্যে কক্সবাজারে আয়োজন করা হবে চোখ ধাঁধানো বর্ষবরণ উৎসবের। Happy new year 2012 লেখায় রাস্তা ও দেয়ালগুলো সুশোভিত হয়ে উঠবে। নতুন বর্ষকে বরণের উৎসব করতে গিয়ে আরো কত কিছুই না করা হবে! আচ্ছা, আমরা কি ভেবে দেখেছি একটি বছরের বিদায় শুধু আনন্দের বিষয়? কেবলই ফূর্তি ও উল্লাস প্রকাশের উপলক্ষ? নাহ, এ কেবল আনন্দের বিষয় হতে পারে না। বরং এটি আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও পর্যালোচনার মোক্ষম উপলক্ষ বৈ কি। কেন? কারণ, একটি বছরের সাথে সাথে আমাদের জীবন নামক প্রাসাদ থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর খসে পড়ে। ছোট হয়ে আসে আমাদের নাতিদীর্ঘ জীবন। আমরা বিগত বছরটি কিভাবে কাটিয়েছি, আগামী বছর কিভাবে কাটাবো এবং এ বছর আমার অর্জন কী কী? ইত্যকার আরো নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরা উচিত আমাদের চেতনা জগতকে। এখন আমাদের আনন্দ-উল্লাসের এতটুকু ফুরসত থাকার কথা নয়। এখন শুধু হিসাব-নিকাশ মেলাবার সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا، وزنوا أعمالكم قبل أن توزنوا، وتزينوا للعرض الأكبر، يوم لا تخفى عليكم خافية ‘তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব সম্পন্ন করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমলসমূহ ওজন করে নাও, কিয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত কর। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না।’ আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ভেবে দেখা দরকার, আমরা কী করছি? এর পরিমাণ কী? হাসান বছরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, رحم الله عبداً وقف عند همه، فإن كان لله مضى، وإن كان لغيره تأخر ‘আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করেন, যে তার পদক্ষেপে থামে। (এবং চিন্তা করে) যদি তা আল্লাহর জন্য হয় তা সম্পন্ন করে আর যদি তা হয় অন্য কারও জন্য তবে তা বিলম্বিত করে।’ আমরা তো কিঞ্চিৎ নেক আমল করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। ইবন আবী মুলাইকাহ্ রহ. বলেন, أدركت ثلاثين من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم كلهم يخاف النفاق على نفسه، ما منهم أحد يقول إنه على إيمان جبريل وميكائيل ‘আমি ত্রিশজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীকে পেয়েছি, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিফাক সম্পর্কে সন্ত্রস্ত ছিলেন। তাঁদের কেউ এমন ছিলেন না, যিনি বলতেন যে তিনি জিবরীল এবং মিকাঈলের মতো ঈমানের ওপর আছেন।’ বিশ্বের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম নাগরিকের দেশ বাংলাদেশে টিএসসিসহ উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক স্পটগুলোতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নববর্ষ উদযাপরনের নামে যেভাবে বেহায়া ও বেলেল্লাপনা, অবাধ যৌনাচার ও অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করতে হয়। ২০০০ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাঁধন নামের একটি মেয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছিল। যা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আহত ও অপমানিত করেছিল। গত বছর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে গিয়ে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এর বছর দুয়েক আগে ব্যাংককের একটি নাইটক্লাবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে প্রাণ দিতে হয়েছে কমপক্ষে ৬০ জনকে। আহত হয়েছে আরো অনেকে। থাইল্যান্ডের ওই ক্লাবে তারা যখন আনন্দে আত্মহারা ঠিক তখনই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা তাদের বেষ্টন করে নেয়। নিমিষেই সমাপ্তি ঘটে সকল আনন্দ-উল্লাসের। এরপরও কি কেউ শিক্ষা গ্রহণ করেছে? তওবা করে ফিরে এসেছে চির শান্তির পথে? অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَدۡنَىٰ دُونَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَكۡبَرِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢١ [السجدة : ٢١] ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আজাবের পূর্বে লঘু আজাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। {আলিফ-লাম-মীম আস-সাজদাহ, আয়াত : ২১} অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١٨ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩ [الحشر: ١٨، ١٩] ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। তোমরা তাদের মত হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক।’ {সূরা আল-হাশর, আয়াত : ১৮, ১৯} আমরা সব অভিভাবকই চাই আমাদের কোমলমতি সন্তানদের জীবন হোক নিরোগ, নিটোল ও অনাবিল সুন্দর। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি নববর্ষের মতো এরূপ নানা উপলক্ষে যখন নিজেদের শাসনের বাঁধন একটু শিথিল করি, একটু সুযোগ দেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবার তখনই তাদেরকে বন্ধু-সতীর্থরা নিয়ে যায় লক্ষ্যহীন সাময়িক সুখের জীবনে। মাদক ও নেশার ভুবনে। যে ভুবন একটি শান্ত পুষ্পিত জীবনকে করে অশান্ত পূঁতি-গন্ধময়। যে জগত একজন ভদ্র সুবোধ সন্তানকে বানায় মা-বাবা’র অবাধ্য ও অপ্রিয়। ইদানীং প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে তরুণ-তরুণীরা অধিক সংখ্যায় রাস্তায় বেরুবার সুযোগ পাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে নিজেদের কলিজার টুকরো মেয়েটিকে পর্যন্ত আমরা মধ্য রাতে পথে-হোটেলে যাবার সুযোগ দেই? এই যে শত শত তরুণী দুপুর রাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন, এরা সবাই কি অভিভাবকহীন? নাকি এদের অভিভাবকরা সন্তানদের বল্গাহীন জীবনকে সাদরে মেনে নিয়েছেন? মনে রাখা উচিৎ আমাদের একটু অসর্তকতার জন্য যদি সন্তানরা বিপথগামী হবার সুযোগ পায়। তবে এর ক্ষতির প্রথম শিকার হতে হবে আমাকেই। সমাজে মাথা নিচু হবে আমারই। আপন ঔরসজাত সন্তানের জন্য মানুষের কটু-কাটব্যও হজম করতে হবে কেবল আমাকে। তাছাড়া মরণের পরেও এর জন্য ক্ষতি পোহাতে হবে। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, «كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ. الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ, وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهْوَ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ, وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ» ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল; তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। মহিলা দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। ভৃত্যও একজন দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মুনিবের সম্পদ সম্পর্কে। (এককথায়) তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে।’ [বুখারী : ৮৪৪, জুমআ আধ্যায়] অতএব আমাদের যুবসম্প্রদায়কে যেমন সংযত হতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও একটু সজাগ হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন। http://www.quraneralo.com/celebrating-new-years/
-
Asalamu'alaikum ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ লেখক : ইঞ্জিনিয়ার মো: এনামুল হক | সম্পাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - মো: আব্দুল কাদের ভূমিকা নববর্ষ বা New Year’s day – এই শব্দগুলো নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো – এই সবকিছু কতটা ইসলাম সম্মত? ৮৭ ভাগ মুসলিম যে আল্লাহতে বিশ্বাসী, সেই আল্লাহ কি মুসলিমদের এইসকল আচরণে আনন্দ-আপ্লুত হন, না ক্রোধান্বিত হন ? নববর্ষকে সামনে রেখে এই নিবন্ধে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে । ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখা অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম] বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ সম্পর্কে বলেন: “উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আল-মায়িদাহ :৪৮] ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ [আল-হাজ্জ্ব :৬৭] যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি। সেজন্য তাদের [অমুসলিমদের] উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।…নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ। উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা.) ইঙ্গিত করেছেন, যখন তিনি বলেন: ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।’ [বুখারী, মুসলিম] এছাড়া আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর ।’ ” [সূনান আবু দাউদ] এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে। ইসলামের এই যে উৎসব – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয়, এবং এই বিষয়টি আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিৎ, যা হচ্ছে: অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে। অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন: “আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” [সূরা যারিয়াত:৫৬] সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা । তাইতো দেখা যায় যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এ দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন – এদিন এজন্য উৎসবের নয় যে এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ কিছুটা শিথিল হতে পারে, যেমনটি বহু মুসলিমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য। তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুল আরাফা, এদিনটি আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে আনন্দের দিন – ঈদুল আযহা। এমনিভাবে মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরীয়তসম্মত বৈধ আনন্দ উপভোগের দিন – এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা। নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মু্হাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর(সা.) মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে? কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে গেল। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন: “নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়িদাহ :৭২] নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয় , যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি: শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়ন আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি – এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও “রাশিফল” প্রকাশ। এবারে এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে অনুষ্ঠিত মূল কর্মকান্ড এবং ইসলামে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা করা যাক: নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানো: এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র, যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকেরই ধর্মের নাম শোনামাত্র গাত্রদাহ সৃষ্টি হলেও প্রকৃতি-পূজারী আদিম ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নকল করতে তাদের অন্তরে অসাধারণ পুলক অনুভূত হয়। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রীস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। খ্রীস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত যীশু খ্রীস্টের তথাকথিত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরও মূলত এসেছে রোমক সৌর-পূজারীদের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে, যীশু খ্রীস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে নয়। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “ক্লাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন: “আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…”[সূরা আন নামল :২৪] নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতা: নববর্ষের পার্টি বা “উদযাপন আয়োজনের” অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে – পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা একটা অলিখিত প্রলোভন। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা। নববর্ষের পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে। পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন: “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী ও মুসলিম] সমাজ নারীকে কোন অবস্থায়, কি ভূমিকায়, কি ধরনের পোশাকে দেখতে চায় – এ বিষয়টি সেই সমাজের ধ্বংস কিংবা উন্নতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নারীর বিচরণক্ষেত্র, ভূমিকা এবং পোশাক এবং পুরুষের সাপেক্ষে তার অবস্থান – এ সবকিছুই ইসলামে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ দ্বারা নির্ধারিত, এখানে ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রথা, হালের ফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের কোন গুরুত্বই নেই। যেমন ইসলামে নারীদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া আছে, আর তা হচ্ছে এই যে একজন নারীর চেহারা ও হস্তদ্বয় ছাড়া দেহের অন্য কোন অঙ্গই বহিরাগত পুরুষেরা দেখতে পারবে না। বহিরাগত পুরুষ কারা? স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীদের পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, মুসলিম নারী, নিজেদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনাহীন কোন পুরুষ এবং এমন শিশু যাদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে সংবেদনশীলতা তৈরী হয়নি, তারা বাদে সবাই একজন নারীর জন্য বহিরাগত। এখানে ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের প্রশ্ন নেই। যেমন কোন নারী যদি বহিরাগত পুরুষের সামনে চুল উন্মুক্ত রেখে দাবী করে যে তার এই বেশ যথেষ্ট শালীন, তবে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শালীনতা-অশালীনতার সামাজিক মাপকাঠি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, আর তাই সমাজ ধীরে ধীরে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ উন্মুক্তকরণকে অনুমোদন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে যে, যেখানে বস্তুত দেহের প্রতিটি অঙ্গ নগ্ন থাকলেও সমাজে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় – যেমনটা পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে দেখা যায়। মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ভারতবর্ষে যা শালীন, বাংলাদেশে হয়ত এখনও সেটা অশালীন – তাহলে শালীনতার মাপকাঠি কি? সেজন্য ইসলামে এধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে মানুষের কামনা-বাসনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং তা কুরআন ও হাদীসের বিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেমনি নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনা-ব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে কবীরাহ গুনাহ, এর পরিণতিতে হাদীসে আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে। এর প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি। আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে। এ সকল কিছু রোধ করার জন্য ইসলামে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নারী ও পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করা এবং দৃষ্টি অবনত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। যে সমাজ নারীকে অশালীনতায় নামিয়ে আনে, সেই সমাজ অশান্তি ও সকল পাপকাজের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, কেননা নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের চরিত্রে বিদ্যমান অন্যতম অদম্য এক স্বভাব, যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সামাজিক সমৃদ্ধির মূলতত্ত্ব। আর এজন্যই ইসলামে সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যে কোন প্রকার সৌন্দর্য বা ভালবাসার প্রদর্শনী ও চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের ফলাফল দেখতে চাইলে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকানোই যথেষ্ট, গোটা বিশ্বে শান্তি, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঝান্ডাবাহী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয় মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সভ্য দেশে মানুষের ভিতরকার এই পশুকে কে বের করে আনল? অত্যন্ত নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেও সহজেই বুঝতে পারে যে, স্রষ্টার বেঁধে দেয়া শালীনতার সীমা যখনই শিথিল করা শুরু হয়, তখনই মানুষের ভিতরকার পশুটি পরিপুষ্ট হতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্বের অশালীনতার চিত্রও কিন্তু একদিনে রচিত হয়নি। সেখানকার সমাজে নারীরা একদিনেই নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেনি, বরং ধাপে ধাপে তাদের পোশাকে সংক্ষিপ্ততা ও যৌনতা এসেছে, আজকে যেমনিভাবে দেহের অংশবিশেষ প্রদর্শনকারী ও সাজসজ্জা গ্রহণকারী বাঙালি নারী নিজেকে শালীন বলে দাবী করে, ঠিক একইভাবেই বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে দেহ উন্মুক্তকরণ শুরু হয়েছিল তথাকথিত “নির্দোষ” পথে। নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলন নিয়ে ইসলামের বিধান আলোচনা করা এই নিবন্ধের আওতা বহির্ভূত, তবে এ সম্পর্কে মোটামুটি একটা চিত্র ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। এই বিধি-নিষেধের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীর যে অবাধ উপস্থিতি, সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং পুরুষের সাথে মেলামেশা – তা পরিপূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী, তা কতিপয় মানুষের কাছে যতই লোভনীয় বা আকর্ষণীয়ই হোক না কেন। এই অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের ধ্বংসের পূর্বাভাস দিচ্ছে। ৩ বছরের বালিকা ধর্ষণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিদ্যাপীঠে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন, পিতার সম্মুখে কন্যা এবং স্বামীর সম্মুখে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি – বাংলাদেশের সমাজে এধরনের বিকৃত ঘটনা সংঘটনের প্রকৃত কারণ ও উৎস কি? প্রকৃতপক্ষে এর জন্য সেইসব মা-বোনেরা দায়ী যারা প্রথমবারের মত নিজেদের অবগুন্ঠনকে উন্মুক্ত করেও নিজেদেরকে শালীন ভাবতে শিখেছে এবং সমাজের সেইসমস্ত লোকেরা দায়ী, যারা একে প্রগতির প্রতীক হিসেবে বাহবা দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছে। ব্যভিচারের প্রতি আহবান জানানো শয়তানের ক্লাসিকাল ট্রিকগুলোর অপর একটি, যেটাকে কুরআনে “ফাহিশাহ” শব্দের আওতায় আলোচনা করা হয়েছে, শয়তানের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন: “হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ [ব্যভিচার, মদ্যপান, হত্যা ইত্যাদি] করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলতে যা তোমরা জান না।” [সূরা আল বাকারা :১৬৮-১৬৯] এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা: “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২] ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা ও কাজ এই আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পর্দাবিহীন নারীকে আকর্ষণীয়, প্রগতিশীল, আধুনিক ও অভিজাত বলে মনে হতে পারে, কেননা, শয়তান পাপকাজকে মানুষের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। যেসব মুসলিম ব্যক্তির কাছে নারীর এই অবাধ সৌন্দর্য প্রদর্শনকে সুখকর বলে মনে হয়, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য: ক. ছোট শিশুরা অনেক সময় আগুন স্পর্শ করতে চায়, কারণ আগুনের রং তাদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু আগুনের মূল প্রকৃতি জানার পর কেউই আগুন ধরতে চাইবে না। তেমনি ব্যভিচারকে আকর্ষণীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখিরাতে এর জন্য যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, সেটা স্মরণ করলে বিষয়টিকে আকর্ষণীয় মনে হবে না। খ. প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, একজন নারী যখন নিজের দেহকে উন্মুক্ত করে সজ্জিত হয়ে বহু পুরুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের মনে যৌন-লালসার উদ্রেক করে, তখন সেই দৃশ্য দেখে এবং সেই নারীকে দেখে বহু-পুরুষের মনে যে কামভাবের উদ্রেক হয়, সেকথা চিন্তা করে এই নারীর বাবার কাছে তার কন্যার নগ্নতার দৃশ্যটি কি খুব উপভোগ্য হবে? এই নারীর সন্তানের কাছে তার মায়ের জনসম্মুখে উন্মুক্ততা কি উপভোগ্য? এই নারীর ভাইয়ের কাছে তার বোনের এই অবস্থা কি আনন্দদায়ক? এই নারীর স্বামীর নিকট তার স্ত্রীর এই অবস্থা কি সুখকর? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি পরনারীর সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পছন্দ করতে পারে? এই পরনারী তো কারও কন্যা কিংবা কারও মা, কিংবা কারও বোন অথবা কারও স্ত্রী? এই লোকগুলোর কি পিতৃসুলভ অনুভূতি নেই, তারা কি সন্তানসুলভ আবেগশূন্য, তাদের বোনের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ স্নেহশূন্য কিংবা স্ত্রীর প্রতি স্বামীসুলভ অনুভূতিহীন? নিশ্চয়ই নয়। বরং আপনি-আমি একজন পিতা, সন্তান, ভাই কিংবা স্বামী হিসেবে যে অনুভূতির অধিকারী, রাস্তার উন্মুক্ত নারীটির পরিবারও সেই একই অনুভূতির অধিকারী। তাহলে আমরা আমাদের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য যা চাই না, তা কিভাবে অন্যের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য কামনা করতে পারি? তবে কোন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, সে নিজের কন্যা, মাতা, ভগ্নী বা স্ত্রীকেও পরপুরুষের যথেচ্ছ লালসার বস্তু হতে দেখে বিচলিত হয় না, তবে সে তো পশুতুল্য, নরাধম। বরং অধিকাংশেরই এধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ অন্তর থেকে এই ব্যভিচারের চর্চাকে ঘৃণা করা। এই ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে পারে, যেমনটি নবীজী(সা.) বর্ণনা করেছেন: “…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা প্রত্যাখ্যান করে।” [বুখারী ও মুসলিম] দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে, তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য সে সকল স্থান থেকে শতহস্ত দূরে থাকা, যে সকল স্থানে দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়। সঙ্গীত ও বাদ্য: নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ – একথা পূর্বের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া, এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো কূটচালের একটি, আল্লাহ এ কথা কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন: “এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে পার পর্যায়ক্রমে বোকা বানাও তোমার গলার স্বরের সাহায্যে, … ” [সূরা বনী ইসরাঈল :৬৪] যে কোন আওয়াজ, যা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান জানায়, তার সবই এই আয়াতে বর্ণিত আওয়াজের অন্তর্ভুক্ত। [তফসীর ইবন কাসীর] আল্লাহ আরও বলেন: “এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর পথ থেকে [মানুষকে] বিচ্যুত করার জন্য কোন জ্ঞান ছাড়াই অনর্থক কথাকে ক্রয় করে, এবং একে ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” [সূরা লোকমান :৬] রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন: “আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান করবে।” [বুখারী] এছাড়াও এ ধরনের অনর্থক ও পাপপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এবং আল্লাহর রাসূলের হাদীসে। যে সকল মুসলিমদের মধ্যে ঈমান এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের উচিৎ এসবকিছুকে সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা। আমাদের করণীয় সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে: ১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত ২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান ৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান ৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে: - এ বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। - যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই নির্দেশ জারি করতে পারেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে নববর্ষকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হবে না, নববর্ষ উপলক্ষে কেউ বিশেষ পোশাক পরতে পারবে না কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবে না। - মসজিদের ইমামগণ এ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন ও বিরত থাকার উপদেশ দেবেন। - পরিবারের প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। (এটুকু ইনশা’আল্লাহ্ চাইলে সবাই/অনেকেই করতে পারবেন) - এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী ও পরিবারের মানুষকে উপদেশ দেবেন এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী(সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর। “এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান ও জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” [সূরা আলে-ইমরান:১৩৩]
-
Asalamu'alaikum Meet people in such a way that if you should die, they should weep for you, and if you live, they should long for you. [Ali radi Allah anhu]
-
- ৩ - জ্ঞানের দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে: ইবনে আল কাইয়্যুম رضي الله عنهم বলেন: তুমি কী পাচ্ছো তা নির্ভর করে অভ্যাস ত্যাগ ও অন্য কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার উপর। কিছু নিয়ম চালু আছে যাতে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে ও এসব রীতিকে শরীয়াহর স্তরে বসিয়েছে, বরং কিছু ক্ষেত্রে এসব রীতিকে শরীয়াহ থেকে বেশী সম্মান দেয়া হয়। যারা এসব মানতে চান না, তাদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয়; এমনো হয় এদেরকে কাফির, বেদাআত সৃষ্টিকারী বা পথভ্রষ্ট বলা হয়। প্রচলিত এসব নিয়মের জন্য এরা রাসুল ﷺ এর নিয়মকে মেরে ফেলে ও নিজেদের নিয়মকে রাসুল ﷺ এর অংশীদার বানায়। এদের কাছে সেটাই ভাল যা তাদের নিয়ম মেনে চলে ও তাই খারাপ যা এসবের বিরোধী। এসব অভ্যাস ও রীতিকে আদমের সন্তানদের বিভিন্ন দল গ্রহণ করেছে যেমন রাজা, নেতা, বিচারক, সুফি, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ। একদম ছোট থাকতেই একজনকে এসব শেখানো হয়; বৃদ্ধরা এসব শিখেই বড় হয়েছে - এসব রীতিকে সুন্নাহ হিসাবে পালন করা হয়। বরং যারা এসব পালন করে, তারা এসব অভ্যাসকে সুন্নতের থেকেও বেশী গুরুত্ব দেয়। যে এসব প্রচলিত অভ্যাস দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সে আসলে খুবই হতভাগ্য - এর শেষ ঘটে কুরআন ও সুন্নাহ ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে। এদের কাছে সেটাই ভাল যা তাদের রীতি অনুসারে চলে ও তাই খারাপ যা এসবের বিরোধী। এসব অভ্যাস ও রীতিকে আদমের সন্তানদের বিভিন্ন দল গ্রহণ করেছে যেমন রাজা, নেতা, বিচারক, সুফি, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ। আল্লাহর পথে যাওয়ার সময় শরীয়াহ বিরোধী বাহ্যিক ও আত্মিক নানা বাধা মনের ক্ষতি করে। এসব তিনটি বাধা হলো: শিরক, বেদাত ও পাপ। শিরকের বাধা দূর করার জন্য তাওহীদকে অবলম্বন করতে হবে। বেদআতের বাধা দূর করতে সুন্নাহ মেনে চলতে হবে; প্রকৃত তওবার মধ্য দিয়ে পাপের বাধা সরাতে হবে। আল্লাহ ও পরকালের পথে দাস যাত্রা শুরু না করা পর্যন্ত এসব বাধা তার কাছে স্পষ্ট হয় না। বাধাগুলি লক্ষ্য করার পরে একজন বুঝতে পারে কিভাবে এসব তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল। আল্লাহর পথে রওনা না হলে একজন ওভাবেই থেকে যাবে, এসব বাধার গোপন প্রভাব বুঝতে পারবে না। এই তিনটি বাধা থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যে শক্তি দরকার, তার জন্য উচ্চতর লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। তা না হলে এসবের সাথে সম্পর্ক শেষ করা সম্ভব না। মন এমন কিছু ছাড়তে চায় না, যা সে পছন্দ করে। ব্যতিক্রম হলো যা ত্যাগ করা হচ্ছে তার বদলে আরো বেশী পছন্দের ও গূরুত্বপূর্ণ কিছু যদি পাওয়া যায়। যা সে চায় তার সাথে সম্পর্ক যত জোড়ালো হবে, অন্য কিছুর সাথে সম্পর্ক তত দূর্বল হবে। ইবনে আল কাইয়্যুম رضي الله عنهم বলেন, লক্ষ্যে যেতে হলে দরকার বাজে অভ্যাসগুলি বাদ দেয়া; অন্যান্য কিছুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ও অন্য বাধাগুলি পার হওয়া। এসব নির্ভর করবে বৃহত্তর লক্ষ্যের সাথে আপনার সম্পর্ক কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। লক্ষ্যের প্রতি আপনার ইচ্ছা যত প্রবল হবে, সেটার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করা তত সহজ হবে। আপনার মনে হবে আপনি যা চান তা যেন পেয়ে গিয়েছেন। লক্ষ্যস্থলে যাওয়াটা মনে হবে অল্প কিছুদিনের ব্যপার, ত্যাগ যা করতে হবে তা খুবই সামান্য। বদঅভ্যাসগুলি হলো মরিচীকার মতো যেমনটি আল ইমাম আহমদ رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন: যদি কেউ মৃত্যুর কথা ভাবে, তবে এই দুনিয়ার সবকিছুই গূরুত্বহীন হয়ে পড়ে। – যে জ্ঞানের চর্চাকারী, তার আকাংখা থাকবে মৃত্যুর পরের জীবন ও আল্লাহর জন্য। সেজন্য এই লক্ষ্যস্থলের জন্য প্রবল একাত্মতা তার মনে থাকতে হবে। এই দুনিয়ার ভোগ –বিলাস ও চাকচিক্য থেকে দূরে থাকার মতো ব্যস্ততার জন্য জ্ঞান চর্চা যথেষ্ট আর বাকী দিন যা আছে তা খুবই অল্প। আল আশহাত আবু আর- রাবি বর্ণনা করেন: সুহবাহ তাকে বলেন – তুমি তোমার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলে ও তুমি হয়েছো ধনী ও সফল। আমি হাদীসের সাথে ছিলাম ও হয়েছি গরীব। সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সুববাহ বলেছেন: যে হাদীস নিয়ে পড়াশোনা করবে, সে গরীব হবে। আমি এতটাই গরীব হয়ে পড়ি যে আমার মায়ের একটি পট সাত দিনারে বিক্রি করি। আয যুবায়ের বিন আবু বকর বলেন: আমাকে নিয়ে আমার ভাতিজি বলে, আমাদের পরিবারে চাচা তার স্ত্রীর সাথে সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করেন। চাচা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেন নি বা দাসী কেনেন নি। আমি বললাম: আমার স্ত্রী বলেন, এসব বই থেকে তিন সতীন তার জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক হতো। আবু তাহান বলেন: সুহবাহ তার নিজের অবস্থার বর্ণনা করেছেন ও যারা হাদীসের ছাত্র তাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। যারা হাদীস চর্চা করে তাদের সময় এর পিছনেই চলে যায়; তাই তারা নিজের ও পরিবারের জন্য আয় করতে পারে না। ফলে তারা অন্যের উপর বোঝা হয়ে যায় - এটা সহীহ হাদীসে যা আদেশ করা হয়েছে তার বিরোধী। সুববাহের কথা থেকে এই মানে করা ঠিক হবে না যে, বেশী অর্থ রোজগার করতে না পারায় তিনি দু:খ পেতেন। তিনি ছিলেন মহৎ ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী - এতটাই তিনি নির্লোভ ছিলেন যে একবার আল – মাহদী তাকে ত্রিশ হাজার দিরহাম উপহার দিলে সুহহাব সাথেসাথে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তার কথা থেকে এটাও মনে করা ঠিক হবে না যে, তিনি মানুষকে হাদীস চর্চা থেকে বিরত থাকতে বলতেন। বরং তিনি হাদীস চর্চার পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের জন্য ছাত্রদের উৎসাহ দিতেন। সুফিয়ান বিন উয়াহনাহ বলেন: এসব কালির পাত্র যে মানুষের ঘরে ঢুকে, তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য জীবন কঠিন হয়ে যায়। আত - তাহহান বলেন: কালির পাত্র বলতে এখানে হাদীসের চর্চাকারীরা যে কালি তাদের সাথে রাখেন যেন যখন যা হাদীস তারা শুনতে পান, তা লিখে রাখতে পারেন সেটা বোঝানো হয়েছে। সুফিয়ান সওরী (রহঃ) বুঝিয়েছেন হাদীসের ছাত্রদের বেশীরভাগই লেখা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে পরিবারের জন্য আয় করতে পারেন না। ফলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা অভাবের মধ্যে থাকে। কালির পাত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই এদের এই কঠিন অবস্থা। ইবনে জামাহ বলেন: ছাত্ররা জ্ঞানের পথে তাদের তারুণ্য ও সময়কে যতটুকু সম্ভব কাজে লাগাবে। কালকের জন্য আজকের পড়া ফেলে রাখতে তারা যেন প্ররোচিত না হয়। প্রতিটি ঘন্টা যা তাদের জীবন থেকে চলে যাচ্ছে তা খুবই মূল্যবান ও তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। জ্ঞান অর্জনের পথে যে সব বাধা আছে ও যা তার মনোযোগ নষ্ট করে, সে সবের সাথে সম্পর্ক সাধ্যমতো শেষ করতে হবে। এর বদলে তার শক্তি ও সামর্থ্যকে জ্ঞান অর্জনের পথে কাজে লাগাতে হবে। এজন্যই যারা সালাফ তারা পরিবার ও দেশ থেকে দূরে চলে যেতে পছন্দ করতেন। কেননা, যদি একজনের চিন্তা - ভাবনা অনেক কিছুকে ঘিরে হয়, তাহলে সে জ্ঞানকে আবিষ্কার করতে পারবে না - আল্লাহ মানুষের মনে দুইটি অন্তর দেন নি। [ অনুবাদকের ব্যাখ্যা: একটি মন জ্ঞান চর্চা করবে, অন্যটি সংসার চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে, এমনটি সম্ভব না ]। আল খাতীব আল বাগদাদী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন: জ্ঞান তখনই একজনের হয়। যখন সে তার কারখানা বন্ধ করে, বাগান ধ্বংস করে, বন্ধুদের ত্যাগ করে ও পরিবারের সব সদস্য মারা গিয়েছে বলে তাকে আর কারো জানাযায় যেতে হয় না। হয়তো একটু বেশী বলা হয়ে গিয়েছে - এখানে মূল কথা হলো জ্ঞানের জন্য একজন তার সব চিন্তা ও মনোযোগকে কাজে লাগাবে। অন্যকিছুর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা মানে তার উপর যারা নির্ভর করে, তাদের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করা বা আয় না করে অন্যের করুণার উপর নির্ভর করা - যারা হয়তো সাহায্য করবে বা করবে না - তা নয়। আশ শাফেয়ী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন: যার বাসায় খাবার নেই, তার সাথে পরামর্শ করবে না; কেননা সে যুক্তিহীন মানুষ। জ্ঞানের পথে মনোযোগ নষ্ট করে এমন বিষয়ের সাথে সম্পর্ক না রাখার মানে যা করার দরকার নেই, তাতে সে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে না। আয় করা ও মন এবং শক্তিকে জ্ঞান চর্চায় ব্যবহারে ভারসাম্য রাখতে হবে। আবু ইউসুফ আল কাজী বলেন: জ্ঞান তোমাকে তার এতটুকুও দেবে না যতক্ষণ না তুমি তাকে তোমার পুরোপুরি দিচ্ছ। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: সেরা দিনার হলো সেটি যা একজন তার পরিবারের জন্য, আল্লাহর পথে পশু ও সাথীদের পিছনে খরচ করে ( বর্ণনায় সাওবান )। হাদীস বর্ণনাকারী আবু কিলাবাহ (রহঃ) বলেন: রাসূল ﷺ পরিবারের কথা আগে বলেছেন। তার চেয়ে বড় পুরষ্কার আর কে পাবে, যে তার সন্তানদের জন্য খরচ করে ও তাদেরকে সুরক্ষা দেয়? রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন: আল্লাহর পথে তুমি যা খরচ করো যেমন দাস মুক্তি, গরীবকে দান করা ও পরিবারের ভরণপোষণ, এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুরষ্কার পাবে যা তুমি পরিবারের জন্য খরচ করলে ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা عنهم رضي الله )। খায়তামাহ বলেন, আমরা একদিন আবদুল্লাহ বিন উমরের (রাযিঃ) সাথে ছিলাম। তার কোষাগারের কর্মচারী সেখানে আসলে তিনি জানতে চান - দাসদের খাবার দিয়েছ? না উত্তর শুনে তিনি বললেন, যাও, ওদের খেতে দাও। রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন: পাপের জন্য এটাই যথেষ্ট যে একজন তার অধীনে যারা আছে তাদেরকে সময়মতো খেতে দেয় নি ( সহীহ মুসলিম )। সুফিয়ান আস সাওরীর (রহঃ) কাছে কেউ জ্ঞান অর্জনের জন্য আসলে তিনি তাকে প্রশ্ন করতেন: তোমার কি কোন রোজগার আছে? যদি নিজের খরচ চালানোর মতো ক্ষমতা তার থাকতো, তবেই তিনি তাকে অনুমতি দিতেন তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের। তা না হলে বলতেন, যাও, আগে কিছু রোজগার করো। এই আলোকে আমরা সালাফদের কথা এভাবে ব্যাখ্যা করবো যে, তারা বেঁচে থাকার জন্য কমপক্ষে যতটুকু দরকার ঠিক সেটাই নিজের ও পরিবারের জন্য চাইতেন। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দুনিয়াদারির অনর্থক কাজে তারা ব্যস্ত হতেন না। ও সব প্রলোভন থেকে মুক্ত থাকতেন। সালাফরা জ্ঞানকে এতই ভালবাসতেন যে, সেটা তাদের দুনিয়ার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ নিয়ে আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন, তোমরা বলো আমি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছ থেকে শোনা কথা অনেক বেশী বর্ণনা করেছি। তোমরা জানতে চাও কেন মুহাজির ও আনসাররা আমার মতো এত বেশী হাদীস বর্ণনা করে নি? আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে তাদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি রাসুল صلى الله عليه وسلم এর কাছে থাকতাম; আর তারা যা মুখস্ত করতো না, আমি তা মুখস্ত করতাম। এ সময় যা খেতে পেতাম তাতেই আমি খুশী থাকতাম। আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি আস – শুফফার এক গরীব মানুষ সেই হাদীস মুখস্ত করতাম যা তারা ভুলে যেত। রাসুল صلى الله عليه وسلم বলেছিলেন, “ আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে তার কাপড় গুটিয়ে নেবে না, সে তাই মনে রাখতে পারবে যা আমি বলেছি।” তাই রাসুল صلى الله عليه وسلم এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি চাদর মেলে বসে থাকতাম। যখন তিনি কথা শেষ করতেন, তখন চাদর গুটিয়ে বুকে ধরতাম। তাই আমি রাসুল صلى الله عليه وسلم এর বলা কথা ভুলি নি ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম )। ক্ষুধা লাগলেও খেতে না গিয়ে রাসুল صلى الله عليه وسلم এর সাথে আমি থাকতাম। ঐ সময়ে আমি ভাজা রুটি খেতাম না বা রঙীন কাপড় পরতাম না। কোন নারী – পুরুষ আমাকে খাবার বেড়ে খাওয়ায় নি; আমি পেটে পাথর বেধে রাখতাম আর কাউকে কুরআনের কোন আয়াত শুনাতে বলতাম যদিও তা আমার জানা থাকতো ( বুখারী )। ইমাম বুখারী তার বইয়ের সহীহ জ্ঞান অধ্যায়ে আবু হুরায়রার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। “ লোকে বলে আবু হুরায়রা খুব বেশী হাদীস বলে। আল্লাহর বইতে যদি এই দুইটি আয়াত না থাকতো, তবে আমি একটি হাদীসও বর্ণনা করতাম না: মানুষের জন্য যা আমি কিতাবে বর্ণনা করি, তারপর যারা আমার নাযিল করা সুস্পষ্ট নিদর্শন ও পরিষ্কার পথনির্দেশ গোপন করে, এরাই হচ্ছে সেই লোক যাদের আল্লাহ অভিশাপ দেন, অভিশাপ দেয় অন্যান্য অভিশাপকারীগণও। তবে যারা ফিরে আসবে ও নিজেদের শুধরে নেবে, খোলাখুলিভাবে তারা ( সে সব সত্য ) কথা প্রকাশ করবে ( যা এতদিন আহলে কিতাবরা গোপন করে এসেছিল ), তারা হবে সেই লোক যাদের উপর আমি দয়া দেখাবো, আমি পরম ক্ষমাকারী, দয়ালু ( সূরা বাকারা ১৫৯ – ১৬০ )। অবশ্যই আমাদের মুহাজির ভাইয়েরা ব্যবসা ও আনসার ভাইয়েরা তাদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আর আবু হুরায়রা রাসুল صلى الله عليه وسلم এর সাথেসাথে থাকতেন। অন্যরা যাতে অংশ নিতো না, তিনি তাতে যোগ দিতেন ও অন্যরা যা মুখস্ত করতো না, তিনি তা মুখস্ত করতেন। আল হাফিয ইবনে হাজার رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন, তিনি ( বুখারী ) তার বইয়ের এই অধ্যায়ে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) ছাড়া আর কারো কথা বলেন নি। এর কারণ আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হাদীস মুখস্ত করেছেন। আশ শাফেয়ী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন: আবু হুরায়রা رضي الله عنهم তার সময়কালে সবচেয়ে বেশী বর্ণনা মুখস্ত করেছেন। আবু হুরায়রার জানাযায় দাড়িয়ে ইবনে উমর رضي الله عنهم আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করেন এই বলে যে তিনি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কথা মুসলমানদের জন্য মুখস্ত করেছিলেন। আন নাওয়ায়ী বলেন: তিনি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর সাথে সবসময় থাকতেন; নিজের জন্য যে জীবিকার ব্যবস্থা হতো, তিনি তাতেই সন্তুষ্ট হতেন; টাকা জমানোর দিকে তার কোন আকর্ষণ ছিল না ( সহীহ মুসলিম )। রাসূল صلى الله عليه وسلم একবার আবু হুরায়রা (রাযিঃ)কে বলেছিলেন, তুমি কি আমার কাছে গণীমতের মাল নিয়ে জানতে চাইবে না যা অন্য সাহাবীরা জানতে চেয়েছে? আবু হুরায়রার জবাব ছিল, আমি আপনার কাছে তাই জানতে চাই যা আল্লাহ আপনাকে জানিয়েছেন ( বর্ণনায় ইবনে কাসির )। আবু হুরায়রা যদিও হজরত মুহাম্মদ صلى الله عليه وسلم এর সাথে বেশীদিন থাকার সুযোগ পান নি, সাহাবীদের মধ্যে তিনিই বেশীরভাগ হাদীস মুখস্ত করে নেন। মনে করা হয় ত্রিশ বছর বয়সে তিনি ইসলাম কবুল করেন। এরপর থেকে তিনি রাসূল صلى الله عليه وسلم মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর সাথে সবসময় থাকতেন। তাই মাত্র তিন বছর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর সাথে থাকার সুযোগ পাওয়ার পরেও তিনি সবচেয়ে হাদীস মুখস্ত ও বর্ণনা করেন। এটা সম্ভব হয়েছিল কেননা জ্ঞানের ব্যপারে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক; এ বিষয়ে দুনিয়ার সব বাঁধা তিনি দূর করেছিলেন ও মনকে অন্য সব কিছু থেকে মুক্ত রেখেছিলেন। জ্ঞানের পথে যা বাধা দেয়, তা থেকে ছাত্রদের দূরে থাকতে হবে; কেননা কারো মনোযোগ যদি এদিক – সেদিক ছড়িয়ে যায়, তবে সে জ্ঞানকে পাবে না। সালাফরা সবকিছু থেকে জ্ঞানকে বেশী গূরুত্ব দিতেন। যেমন আল ইমাম আহমদ رضي الله عنهم (রহঃ) চল্লিশের পরে বিয়ে করেন। আবু বকর আল আম্বারীকে এক দাসী দেয়া হয়েছিল। সে যখন একবার আম্বারীর কাছে যায়, তখন তিনি একটি বিষয়ে রায় কী হবে তা নিয়ে ভাবছিলেন। দাসীকে ঘরে ঢুকতে দেখে তিনি বললেন, একে ফেরত পাঠাও। দাসী জানতে চাইলো তার অপরাধ কী? তিনি বললেন, তোমার জন্য আমার মনোযোগ নষ্ট হয়েছে। জ্ঞানের চেয়ে তুমি আমার কাছে মূল্যবান না। আশ শাফেয়ী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন, কেউ ধনী ও মর্যাদাবান থাকার সময় জ্ঞানের খোঁজ করলে সে সফল হবে না। বরং যারা বিনীতভাবে কম মর্যাদার স্থানে থেকে জ্ঞানীদের সেবা দেয়, তারা সফল হবে। মালিক বিন আনাস رضي الله عنهم বলেন, কেউ জ্ঞানের খোঁজ পাবে না যতক্ষণ না সে অভাবের মুখোমুখি হয় ও জ্ঞানকে সবকিছুর উপর গূরুত্ব দেয়।
-
Asalamu'alaikum Abu Darda (Radi Allahu 'anhu) said: "I love three things that are hateful to people: 'I love poverty, sickness, and death. I love them because: ✔-poverty is humility, ✔-sickness is expiation for sins & ✔-death results in a meeting with Allah.' ••►"But perhaps you hate a thing and it is good for you; and perhaps you love a thing and it is bad for you. And Allah Knows, while you know not." [2:216]
-
- ২ - শরীয়াহ বিরোধী সবকিছু থেকে মন ও আচরণকে শুদ্ধ করতে হবে: জ্ঞান অর্জনের পথে যে ছাত্র, সে নিজেকে শুদ্ধ রাখবে সব বিদআত থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাহ, জীবনের সব ক্ষেত্রে সে প্রয়োগ করবে ও উযু বজায় রেখে সাধ্যমত দেহ ও পোশাক পবিত্র রাখবে। আবদুল মালিক আল মায়মুনি বলেন: ইমাম আহমেদ বিন হাম্বল (রঃ)এর চেয়ে আর কাউকে আমি এত পরিষ্কার কাপড় পরতে, গোঁফ ছাটাতে মনোযোগী, চুল – দাড়ি পরিপাটি রাখা ও ধবধবে সাদা – পাক কাপড় পরতে দেখি নি ( বর্ণনায় ইবনে আবু হাতিম )। আহমেদ বিন হাম্বল رضي الله عنهم (রঃ) এর সব কাজ ছিল সুন্নাহ অনুসারে যেমনটি তিনি বলেন: আমি কখনোই এমন কোন হাদিস লিখিনি যা আমি নিজে আমল করিনি। একবার আমি জানতে পারলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন ( গা থেকে দুষিত রক্ত বের করে দেয়া ) ও এক দিনার মজুরী দিয়েছিলেন। সেজন্য আমিও শিঙ্গা লাগাই ও যে এটা করে তাকে এক দিনার দেই। পরিষ্কার কাপড় পরা নিয়ে কেউ যেন ভুল ধারণা না রাখে ও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘ বাদহাদা ’ আসে ঈমান থেকে। ইবনে আল আতহীর (রঃ) বলেন: বাদহাদা হলো সাদাসিধা ভাবে মানুষের সামনে হাজির হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, পোশাকের মধ্য দিয়ে একজন বিনয় প্রকাশ করবে - অহংকার নয়। আবু আবদুল্লাহ আল বুসিনজী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন - বাদহাদা আসে ঈমান থেকে, সেটা হলো সেই বিনয় যা একজন তার পোশাকের মধ্য দিয়ে প্রদর্শন করেন। এটা হলো নম্রতা যা দামী, চটকদার কাপড় পরা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে প্রকাশ পায়। আল খাতীব رضي الله عنهم বলেন: শিক্ষার্থী অবশ্যই হাসি- তামাশা, অর্থহীন ও নীচু শ্রেণীর কথাবার্তা যেমন অপরিপক্ক কথা, অট্টহাসি, ফিকফিক করে হাসা ও অতিরিক্ত কৌতুক থেকে দূরে থাকবে। মাঝেমাঝে অল্প হাসার অনুমতি তার আছে – সেটা এমন হবে যেন জ্ঞানের সন্ধানে যে আছে, তার আদবের সীমা না ছাড়ায়। সবসময় কেউ যদি জ্ঞানের ছাত্রের উপযুক্ত না এমন সব কথা বলে ও অপরিপক্ক ও ছেলেমানুষী আচরণ, বেশী বেশী হাসি – তামাশা করে, তবে তা তার প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেবে ও সেটা তার ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর। মালেক رضي الله عنهم (রঃ) বলেন: ছাত্ররা স্থিরতা, বিনয় ও প্রশান্তভাবের অধিকারী হবে ও তার আগে যে আলিমগণ চলে গেছেন, তাদের সে অনুসরণ করবে। সাইয়্যিদ বিন আমীর বলেন, আমরা হিসাম – আদ – দাসতাওয়াই এর সাথে ছিলাম। আমাদের মধ্যে একজন জোরে হেসে উঠলে হিসাম বললেন: তুমি হাসছো যখন তুমি হাদীস নিয়ে পড়ছো? ( বর্ণনায় মুহাম্মদ বিন আল হুসাইন )। একজন ছাত্র হিসামের সামনে হেসে উঠলে তিনি বলেন: হে তরুণ; তুমি জ্ঞানের সন্ধান করছো আর হাসছো? ছেলেটি উত্তর দিল: আল্লাহই কি আমাদের কাঁদান ও হাসান না? হিসাম বললেন, তাহলে তুমি কাঁদো (তরুণটি সূরা নাজমের ৪৩ নং আয়াতের উদ্ধুতি দিয়েছিল; বর্ণনায় আবদুর রহমান বিন মাহদী। ) বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জন করার জন্য সব মুসলমানের উচিত সুন্নাহ মেনে চলা যেমন দেহ পাক্ রাখা, পরিষ্কার কাপড় পরা, মানুষের সামনে যথাযথ ভাবে হাজির হওয়া। বিশেষত যারা ছাত্র, তাদের জন্য এসব পালন করা অবশ্য কর্তব্য কেননা তারা তাদের জ্ঞান দিয়ে ভাল কাজের প্রতি উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে অণু পরিমাণ কিবর আছে, সে বেহেশতে যাবে না ( বর্ণনায় মুসলিম; সূত্র আবদুল্লাহ বিন মাসউদ )। একজন এটা শুনে বললো, অনেকে এটা পছন্দ করে যে তার কাপড় – জুতা দেখতে সুন্দর হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর ও তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। কিবর হলো সত্যকে অস্বীকার করা ও মানুষকে তুচ্ছ করা ( সহীহ মুসলিম )। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর সুগন্ধী ভালবাসতেন ও নিয়মিত সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। আবু মুসা বিন আনাস বিন মালিকের পিতা জানান রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সুককাহ ছিল ও তিনি তা ব্যবহার করতেন। আল আলবানি বলেন: সুককাহ হলো কালো মৃগনাভি; সময়ের সাথে সাথে এর সুগন্ধ বাড়ে। এর আরেকটি মানে হতে পারে মৃগনাভি রাখার পাত্র, এটাই মনে হয় সঠিক ( বর্ণনায় দাউদ, মুসলিম)। রাসূল ﷺ দূর্গন্ধ অপছন্দ করতেন ও তা থেকে ফিরে যেতেন। যেমন আবু সাঈদ আল খুদরী رضي الله عنهم বলেন, যখন খায়বার জয় করা হলো তখন আমরা কয়েকজন সাহাবী ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই রসুন গাছের কাছে গিয়ে প্রচুর রসুন খাই যতক্ষণ না মন সন্তুষ্ট হয়। এরপর মসজিদে যাই। রাসূল ﷺ গন্ধ পেয়ে বললেন: যে এরকম বাজে গন্ধযুক্ত কিছু খায়, সে মসজিদে আসবে না। সবাই বলা শুরু করলো, রসুন হারাম হয়ে গিয়েছে।। রাসূল ﷺ এটা জানতে পেরে বললেন: হে মানুষ; আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা আমি হারাম করতে পারি না। তবে রসুনের গন্ধ আমি অপছন্দ করি ( বর্ণনায় মুসলিম )। রাসূল ﷺ বলেন, যে রসুন, পেয়াজ ও পেয়াজের তরকারী খায়, সে ( ওসব খেয়ে ) মসজিদে আসবে না। কেননা, মানুষের মতো ফিরিশতারাও এসব গন্ধে কষ্ট পায় ( বর্ণনায় জাবির رضي الله عنهم )। রাসূল ﷺ বলেছিলেন, মুসলমানরা চল্লিশ দিনের বেশী গোঁফ না ছেটে, নখ, চুল, বগলের লোম না কেটে থাকবে না। আনাস বিন মালিক رضي الله عنهم বলেন, রাসূল ﷺ গোঁফ ছাটার জন্য ও নখ ও বগলের লোম কাটা ও যে চুল দেখা যায় না তা কাটতে ৪০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন। আন – নাওয়ায়ী (রহঃ)বলেন: এর মানে ৪০ দিনের বেশী না কেটে এসব রাখা যাবে না; আবার এর মানে এই না ৪০ দিন পর্যন্ত রাখতেই হবে ( সহীহ মুসলিম )। রাসুল ﷺ আরো উৎসাহ দিয়েছেন মিসওয়াক ব্যবহার করতে। তিনি বলেছেন, যদি আমি এই ভয় না পেতাম যে উম্মাতের জন্য এটা খুব কঠিন হবে, তাহলে প্রত্যেক সালাতের আগে মিসওয়াক ব্যবহার করতে আদেশ দিতাম ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা رضي الله عنهم, বুখারী ও মুসলিম)। তাই এসব পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ছাত্ররা সতর্ক থাকবে। রাসুল ﷺ এর সুন্নাহ মেনে এসব পালন করতে হবে ও দৃঢ়ভাবে একে ধরে রাখতে হবে। যারা জ্ঞানের ছাত্র, তাদেরকেই বেশী করে এসব ব্যপারে দৃষ্টি রাখতে হবে; কেননা তারা রাসুল ﷺ এর ওয়ারিস। এটাই স্বাভাবিক যে তারাই রাসুল ﷺ কে বেশী মেনে চলবে ও তাঁর দেখানো আদর্শে পথ চলবে। অন্তরের পবিত্রতার জন্য জ্ঞানের ছাত্ররা অবশ্যই নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করবে অপছন্দীয় ও নিন্দনীয় স্বভাব থেকে। যেহেতু জ্ঞান হলো মনের ইবাদত, গোপন প্রার্থনা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। বাহ্যিক অঙ্গগুলির উপাসনা গ্রহণযোগ্য হয় না, যদি তা বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত না হয়। আত্মিক উপাসনাও তেমনি কবুল হয় না যতক্ষণ না একজন নিজেকে পবিত্র করছে অপবিত্র আচরণ ও স্বভাব থেকে। আল্লাহ বলেন: অবশ্যই মুশরিকরা অপবিত্র ( সূরা তওবা; ৯: ২৮ )। এই আয়াত দেখায় যে পবিত্রতা শুধু বাইরের দিকেই সীমিত না যা ইন্দ্রিয়গুলি দিয়ে অনূভব করা যায়; যেহেতু অবিশ্বাসীরা গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরে বাইরের দিক পবিত্র রাখতে পারে কিন্তু তার আত্মিক দিক নোংরা ও অপবিত্র। অন্যভাবে বলা যায়, তার অন্তর নাপাকীতে ভরা। নাজাশাহ ( অপবিত্রতা ) একটি পরিভাষা যা ব্যবহৃত হয় যা থেকে দূরে থাকতে হবে ও যেটা থেকে ফিরে আসতে হবে। মনের নাপাকী সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ অপবিত্রতা যা থেকে একজন দূরে থাকতে চাইবে। কারন এখন যদিও এটা শুধুই অপবিত্রতা, পরে স্বাভাবিকভাবেই এর এমন বিকাশ হবে যা একজনকে ধ্বংস করবে। একবার জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসুল ﷺ এর সাথে দেখা করার কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আসতে দেরী করলেন। ফলে রাসুল ﷺ বিচলিত হলেন। পরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম অভিযোগ করে বললেন, আমরা এমন ঘরে ঢুকি না যেখানে ছবি বা কুকুর আছে ( সহীহ বুখারী; বর্ণনায় ইবনে উমর رضي الله عنهم )। আবু হামিদ আল গাযযালী رضي الله عنهم বলেন: মনও হলো বাসা। এই বাসা হলো ফিরিশতাদের যেখানে তারা নেমে আসে ও বাস করে। নিন্দনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন রাগ, লোভ, মিথ্যা বলা, হিংসা, উদ্ধত ভাব, আত্মপ্রশংসা ইত্যাদি হলো ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের মতো। তাই কিভাবে ফেরেশতা এমন জায়গায় ঢুকবে? ইবনে জামাহ رضي الله عنه বলেন: জ্ঞানের পথের ছাত্র তার মনকে নৈতিক ত্রুটি, প্রতারণা, হিংসা ও খারাপ স্বভাব থেকে মুক্ত রাখবে যাতে সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, তা মনে রাখতে পারে, কোন বিষয়ের বিস্তারিত অর্থ ও জ্ঞানের গোপন সম্পদ আবিষ্কার করতে পারে। অনেকে যেমনটি বলেন - জ্ঞান হলো গোপন ইবাদত, মনের উপাসনা ও আল্লাহকে কাছে পাবার আত্মিক উপায়। নোংরা ও নাপাকী থেকে মুক্ত না হলে বাহ্যিক ইন্দ্রিয়সমূহের ইবাদত কবুল হয় না; তেমনি মনের ইবাদত জ্ঞান অর্জন করা সহজ হবে না যদি সে নীচু, ঘৃণ্য স্বভাব ও আচরণ থেকে মুক্ত না হয়। যদি তুমি তোমার মনকে জ্ঞানের জন্য পরিষ্কার রাখো, এর কল্যাণ স্পষ্ট বোঝা যাবে - ঠিক যেমন এক টুকরো জমি চাষের পর ফলনশীল হয়। হাদীসে বলা হয়েছে: অবশ্যই দেহের মধ্যে এক টুকরা মাংস আছে। যদি সেটা ভাল থাকে, তবে বাকী শরীর ভাল থাকবে। যদি এটা নষ্ট হয়, তবে বাকী দেহ নষ্ট হবে। অবশ্যই এটা হলো মন বা অন্তর ( ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইবনে হিববানের বর্ণিত একটি বড় হাদীসের অংশ এটি )। কোন আলোর জন্য এমন মনের ভিতরে ঢোকা নিষেধ, যেখানে সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত আল্লাহ যা ঘৃণা করেন তা থাকে। ইবনে আল কাইয়্যুম رضي الله عنهم বলেন: পাপ এই দুনিয়ায় দেহ - মনে কুৎসিত, নিন্দনীয় ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না এসবের প্রভাব পরকালে কী হবে। যার উপর এই প্রভাব পড়ে, সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে না; কেননা জ্ঞান হলো এমন এক আলো যা আল্লাহ মনের ভিতরে রেখে দেন ও পাপ তা বের করে দেয়। যখন আশ – শাফেয়ী (রঃ) পড়ে শোনাবার জন্য ইমাম মালেক (রঃ) এর সামনে বসেন, তখন শাফেয়ীর বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, বোঝা ও উপলব্ধি করার ক্ষমতা দেখে ইমাম (রঃ) অভিভূত হোন। তিনি বলেন: আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মনের ভিতরে আল্লাহ আলো দিয়েছেন। তাই পাপের অন্ধকার দিয়ে এই আলো মন থেকে বের করে দিও না।ইমাম শাফীয়ি (রঃ) বলেন, আমি ওয়াকির কাছে মনে রাখার ব্যপারে আমার দূর্বলতা নিয়ে অভিযোগ করলাম। তিনি উপদেশ দেন পাপ ত্যাগ করতে ও বলেন: জেনে রাখো - জ্ঞান হলো রহমত ও আল্লাহর রহমত পাপীদের কাছে পৌঁছায় না ( বর্ণনায় ইবনে আল জাওরী رضي الله عنهم (রহঃ)। আবু আবদুল্লাহ বিন আল জালা বলেন: আমি এক খ্রিষ্টান বালকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যার চেহারা ছিল খুব সুন্দর। আবু আবদুল্লাহ আল কলযী আমাকে বললেন: তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম: চাচা, আপনি কি এই সুন্দর চেহারা দেখছেন না? এত সুন্দর মুখ কিভাবে আগুনে শাস্তি পাবে? তিনি আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, তোমার এই কাজের পরিণাম একদিন তুমি পাবেই। এই ঘটনার চল্লিশ বছর পর শাস্তিটা পেলাম – আমি কুরআন ভুলে গেলাম। আবু আল আদিয়ান বলেন: আমি আমার শিক্ষক আবু বকর আদ দাককারের সাথে ছিলাম। সেখানে এমন একটা কিছু ঘটলো যা ঠিক ছিল না – আমি তা তাকিয়ে দেখলাম। তিনি এটা খেয়াল করে বললেন: বৎস, এই তাকানোর পরিণাম তুমি ভোগ করবে, যদিও তা অনেক পরে হয়। বিশ বছর পার হয়ে গেল অপেক্ষায় – খারাপ কিছু ঘটলো না। এক রাতে আমি এ নিয়ে চিন্তা করে ঘুমাতে গেলাম। জেগে উঠে বুঝলাম আমি পুরো কুরআন ভুলে গিয়েছি। আবু হামিদ رضي الله عنهم বলেন, যদি তুমি বলতে চাও - কিন্তু আমি তো এমন অনেক ছাত্র দেখেছি যাদের আদব ভাল না কিন্তু তারা যথেষ্ট জ্ঞানী - এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এই ছাত্র প্রকৃত, দরকারী জ্ঞান যা তাকে পরকালে কল্যাণ ও সুখ এনে দেবে - তার থেকে অনেক দূরে রয়েছে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ থেকে তার কাছে এটা স্পষ্ট যে পাপ হলো প্রাণঘাতি ও ধ্বংসাত্মক বিষ। তুমি কি এমন কাউকে কখনো দেখেছ যে প্রাণঘাতি বিষের স্পর্শে আসতে চাচ্ছে? এটা জেনেও যে তা বিষ? তুমি যা দেখেছো তা হলো তারা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে যা তাদের মন অস্বীকার করছে; আর একে কোন ভাবেই জ্ঞান বলে না। ইবনে মাসউদ رضي الله عنهم বলেন: জ্ঞান কোন ধারাবাহিক বর্ণনা না, বরং এটা আলো যা মনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অনেকে বলেন - জ্ঞান হলো ভয় যেমনটি আল্লাহ বলেন: অবশ্যই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই তাঁকে ভয় করে ( সূরা ফাতির; ৩৫: ২৮ )। কেউ কেউ এ নিয়ে বলেন: আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জ্ঞানের সন্ধান করেছিলাম। আর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য হতে চায় নি। তাই জ্ঞান আমাদের থেকে চলে গেল ও তার আসল পরিচয় আমাদের কাছে প্রকাশ করলো না। তাই তুমি যদি বলো, আমি একদল জ্ঞানী ও বিচারকদের দেখেছি যারা খুবই মেধাবী ও জ্ঞানীদের মধ্যে যাদেরকে সবচেয়ে সফল বিবেচনা করা হয় কিন্তু নিন্দনীয় আচরণ থেকে তারা মুক্ত নয়; তবে আমরা বলবো: যদি তুমি প্রকৃত জ্ঞান কী তা বুঝতে পারো ও পরকাল সম্পর্কে জানতে পারো, তাহলে তোমার কাছে এটা স্পষ্ট হবে যে তাদের মনকে যা আচ্ছন্ন করে রেখেছে, তা কোন কল্যাণকর জ্ঞান নয়। বরং সেটাই প্রকৃত কল্যাণকর জ্ঞান যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য,মহিমান্বিত আল্লাহর জন্য আমল করা হয়। মনের পবিত্রতা ও দেহের অঙ্গের শরীয়াহ আইনের প্রতি সমর্পণকে ঘিরে এসব কিছু আবর্তিত হয়। তাই শিক্ষার্থীকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে আত্মিক ও বাহ্যিক দুই অবস্থার দিকেই যা হবে সুন্নাতপন্থী; যাতে আল্লাহ তার জন্য জ্ঞানের আলো ও সম্পদ উন্মুক্ত করে দেন। এসব হলো আল্লাহর অকৃপণ দান যা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন ও আল্লাহ হলেন অফুরন্ত দানের মালিক।
-
ছাত্রদের জন্য যে সব আদব কায়দা জানা বাধ্যতামূলক সেসব হলো: -১- জ্ঞানের সন্ধান করার সময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়্যত করতে হবে: আবু হামিদ আল গাযযালী (রঃ) বলেন: নিয়্যত, ইরাদা ও ক্বাসদ - এগুলি আলাদা পরিভাষা হলেও এদের মানে এক। এগুলি মনের অবস্থা বর্ণনা করে। মন দু’টি জিনিষের উৎস - জ্ঞান ও কাজ। প্রথমে আসে জ্ঞান, কেননা এটা হলো স্তম্ভ ও শর্ত। এরপর কাজ তার অনুসরণ করে, কেননা কাজ হলো জ্ঞানের শাখা। জ্ঞান, ইচ্ছা ও সামর্থ্য - এগুলি ছাড়া কোন কাজ হয় না। তার মানে, সেই বিষয়ে জানতে হবে, সেটা করার ইচ্ছা মনে থাকতে হবে। মানুষ এমন ভাবে সৃষ্ট হয়েছে, যাতে সে মাঝেমাঝে এমন কাজ করে, যা তার মন চায়, আবার এমন কাজও সে করে, যার সাথে মনের ইচ্ছার সংঘর্ষ হয়। এই অবস্থায় সে তাই করবে, যা তার জন্য ভাল; যা ক্ষতিকর সেটা থেকে সে দূরে থাকবে। এজন্য তার জানা থাকতে হবে, কী তার জন্য কল্যাণকর, আর কী তার ক্ষতি করবে। যে আগুন দেখতে পাচ্ছে না, সে আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। তাই আল্লাহ হেদায়েত ও জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন, এগুলি পাওয়ার উপায় ঠিক করে দিয়েছেন - সেগুলি হলো আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ইন্দ্রিয় সমূহ। কোন কিছু করার জন্য একজনের মনে কোন লক্ষ্য থাকবে যা তাকে উদ্দীপিত করবে। কারো মনে কোন লক্ষ্য থাকলে তা তাকে কোন কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সে তখন লক্ষ্য পূরণের জন্য তার শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগায়। অর্থাৎ কোন কাজ করে। আল্লাহ এমন কোন কাজ গ্রহণ করেন না, যা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়নি। রাসূল صلى الله عليه وسلم নিয়্যতের গুরুত্ব সম্পর্কে ও যা একজনের কাজকে নষ্ট করে ফেলতে পারে, তা থেকে নিয়্যত শুদ্ধ রাখার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বলেছেন। রাসূল صلى الله عليه وسلم যা বলেছেন তার মানে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করেছে, সে আল্লাহর কাছ থেকে পুরষ্কার পাবে। আর যে দুনিয়ার সম্পদ বা কোন নারীর জন্য হিজরত করে, তবে সেই হিজরতের জন্য পরকালে কোন পুরষ্কার থাকবে না। শরীয়াহতে এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য ছাড়া কোন ইবাদত করা হলে তা আল্লাহ গ্রহণ করেন না। খলিফা উমর رضي الله عنهم একদিন মিম্বারে দাড়িয়ে বলেন: রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন: অবশ্যই কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল; একজন মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়্যত করে। তাই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর জন্য হিজরত করে, তার হিজরত এদেরই জন্য আর যে হিজরত করে দুনিয়াতে কোন লাভের জন্য বা কোন নারীকে বিয়ের জন্য, তার হিজরত সেজন্যই ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী, সূত্র আলকামাহ বিন ওয়াকাস আল লায়থি)। আন – নওয়াবি (রহঃ) বলেন: এই হাদিসের গুরুত্ব সম্পর্কে মুসলমানরা একমত – এর সূত্র নির্ভরযোগ্য ও এই এক হাদিসের মধ্যে অনেক কল্যাণ আছে। আশ – শাফেয়ী ও অন্যান্যরা বলেন: ইসলামের চার ভাগের এক ভাগ আছে এই একটি হাদিসে। আবদুর রাহমান বিন মাহদী ও অন্যান্যরা বলেন: যে বই লিখে তার জন্য এটা অপরিহার্য যে সে এই হাদিস দিয়ে বইটি শুরু করবে – এটা ছাত্রদেরকে শুদ্ধভাবে আবারও নিয়্যত করার কথা মনে করাবে। আল – বুখারী (রঃ)ও আরো অনেকে তাদের বইয়ের শুরুতে এই হাদিসের উল্লেখ করতেন। বুখারী (রঃ) তার বইয়ের সাত জায়গায় এই হাদিসের উল্লেখ করেন। বেশীরভাগ ইসলামিক চিন্তাবিদ, ভাষাবিদ ও আইনবিদ মনে করেন যে ‘ অবশ্যই ’ শব্দটি এটাই নিশ্চিত করে যা বলা হয়েছে ও অন্যকিছুকে প্রত্যাখ্যান করে – এর মানে নিয়্যতের উপর কাজ নির্ভরশীল ও নিয়্যত সঠিক না হলে সে কাজের ফলাফল শূন্য। কুরআন ও হাদিসে এর অনেক প্রমাণ আছে। যেমন সূরা ক্বাহফে আল্লাহ বলেন, বলুন: আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ; আমার প্রতি ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ হলেন এক। তাই যে তার মাবুদের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন ভাল কাজ করে। এবং তার মাবুদের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। ( ১৮: ১১০ )। তাদেরকে এছাড়া কোন আদেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে ( সূরা বায়্যিনা: ৯৮:৫ )। এক লোক রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে জানতে চাইলো: কেউ যদি পুরষ্কার ও সম্মানের আশায় যুদ্ধ করে, তবে সে কী পাবে? রাসূল صلى الله عليه وسلم উত্তর দিলেন, কিছু না। লোকটি তিনবার প্রশ্ন করলো, রাসূল صلى الله عليه وسلم তিনবার একই উত্তর দিলেন। তারপর বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন কাজ গ্রহণ করেন না যদি সেটা আন্তরিকতার সাথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা না হয় ( হাদিস বর্ণনায় আবু উমামাহ )। রাসূল صلى الله عليه وسلم জানান, আল্লাহ বলেছেন: আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ - আমার কোন অংশীদারের দরকার নেই। তাই কেউ যদি কোন কাজ করে যাতে সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করেছে, তবে আমি তার থেকে মুক্ত ও যাকে সে আমার অংশীদার বানিয়েছে, তার জন্য ওকে ছেড়ে দেব ( বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা )। তাই যে কোন কাজে আল্লাহর জন্য নিয়ত করা জরুরী। ইবনে আল কাইয়্যুম বলেন: ঠিক যেমনটি উনি একমাত্র উপাস্য কোন অংশীদার ছাড়া, এটি অপরিহার্য যে উপাসনা হবে শুধু তাঁরই জন্য। তাই যেভাবে উনি উপাস্য হিসাবে একক, ইবাদতের জন্যও সবার থেকে তাঁকে আলাদা করতে হবে। সৎ কাজ হচ্ছে তাই যা রিয়া বা লোক দেখানো না ও সুন্নতপন্থী। সুলায়মান বিন আবদুল্লাহ رضي الله عنهم বলেন: কোন কাজ গ্রহণ হওয়ার জন্য দুইটি স্তম্ভের দরকার - তা সঠিক হতে হবে ও আন্তরিকতার সাথে করতে হবে। সৎ কাজ হচ্ছে তাই যা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মানানসই যেমনটি কুরআনে আদেশ দেয়া হয়েছে: সে যেন ভাল কাজ করে ( সূরা কাহফ; ১৮: ১১০ )। আন্তরিক কাজ সেটাই যা গোপন ও প্রকাশ্য শিরক থেকে মুক্ত যেমনটি আল্লাহ বলেন: এবং তার মাবুদের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে ( সূরা কাহফ; ১৮: ১১০)। যে জ্ঞানের সন্ধান করছে, সে তার নিয়্যতকে শুদ্ধ করবে - “ আর জ্ঞানের সন্ধানের সময় সঠিক নিয়্যত হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ও সেজন্য কাজ করা, তাঁর শরীয়তকে জীবন দান বা শরীয়াহ আইনের প্রচলন ঘটানো, নিজের মনকে আলোকিত ও আত্মিক জগতকে সুন্দর করা, কিয়ামতের দিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য যে মহা-পুরষ্কারের আয়োজন রেখেছেন, সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা। সুফিয়ান আস সাওরী (রহঃ) বলেন, নিয়্যত সংশোধনের মতো কঠিন চেষ্টা অন্য কোন কাজে আমাকে কখনো করতে হয় নি। এই দুনিয়ায় কোন কিছু পাওয়ার লোভে অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ লাভ, সম্মান ও টাকা – পয়সা বৃদ্ধি বা আশেপাশের মানুষের চোখে জ্ঞানী ও মহান ব্যক্তির মর্যাদা লাভ, জ্ঞানী – গুণী - সম্মানিত ব্যক্তিদের আসরে যাওয়ার সুযোগ অর্জন ইত্যাদির জন্য একজন জ্ঞান চর্চা করবে না। তাহলে তা হবে খারাপের সাথে ভালোর বদল। আবু ইউসুফ رضي الله عنهم(রহঃ)বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহকে খুজো। জ্ঞানের সন্ধানে আমি বিনীত না হয়ে কোথাও কখনো বসি নি আর সে জায়গা থেকে সবার চেয়ে বেশী জ্ঞান অর্জন করেই আমি উঠেছি। সবার থেকে আমি সেরা তা দেখানোর আশায় কখনো কোথাও বসি নি - নিজে থেকে তা প্রকাশ পেয়ে গেলে তা আলাদা কথা। জ্ঞান হলো ইবাদতের কাজ ও আল্লাহর কাছে যাওয়ার একটি উপায়। তাই এই ইবাদতে আপনার নিয়্যত যদি খাঁটি হয়, তবে তা গ্রহণ করা হবে, বিশুদ্ধ করা হবে ও কল্যাণকর হবে। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছুর ইচ্ছা থাকে, তবে তা নষ্ট ও অপচয় হবে - আপনি তার কল্যাণ হারাবেন। এমন হতে পারে যে কেউ মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করলো আর তার লক্ষ্য পূরণ হলো না। ফলে তার সব পরিশ্রম ও চেষ্টা বৃথা গেল। উপরে যা বলা হয়েছে তার সার- সংক্ষেপ একটি হাদিসে বলা হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনজনকে প্রথমে আগুনে ফেলে দেয়া হবে। এরা হলো আলেম, মুজাহিদ ও দাতা। আল্লাহ জ্ঞানী বা আলেমকে প্রশ্ন করবেন: তুমি দুনিয়ায় কী করেছ? সে বলবে: আমি আপনার জন্য জ্ঞান অর্জন করেছিলাম ও আপনার সন্তুষ্টির জন্য সেই জ্ঞান দান করেছি। তখন তাকে বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছো যেন তোমাকে জ্ঞানী বলা হয়। তুমি যা চেয়েছিলে তা দুনিয়াতে পেয়ে গিয়েছ। তখন আদেশ করা হবে সেই জ্ঞানীকে দোযখে ফেলে দেয়ার জন্য। দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন: তুমি দুনিয়ায় কী করেছো? সে বলবে: আমি আপনার জন্য হালাল ভাবে সম্পদ অর্জন করেছিলাম ও আপনার পথে তা দান করেছি। তখন তাকে বলা হবে, “ তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ দান করেছো যেন তোমাকে দানশীল বলা হয়। তুমি যা চেয়েছিলে তা দুনিয়াতে পেয়ে গিয়েছ ”। তখন আদেশ করা হবে সেই দানশীল ব্যক্তিকে দোযখে ফেলে দেয়ার জন্য। মুজাহিদকে প্রশ্ন করা হবে: তুমি দুনিয়ায় কী করেছিলে? সে বলবে: আমি আপনার জন্য মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করেছিলাম। তাকে বলা হবে, “ তুমি মিথ্যাবাদী। তুমি এজন্য লড়াই করেছো যেন তোমাকে বীর যোদ্ধা বলা হয় ও তাই হয়েছে। তুমি দুনিয়াতেই তোমার পুরষ্কার পেয়ে গিয়েছ ”। এরপর তাকে দোযখে ফেলে দেয়ার আদেশ হবে। আল – নওয়ারী رضي الله عنهم (রঃ) বলেন: লোক দেখানো কাজ করা মানা, ও তা করলে যে কঠিন শাস্তি পেতে হব, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এই হাদিস তার একটি প্রমাণ। কোন কাজের জন্য সঠিক নিয়্যত থাকার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন: তাদেরকে এছাড়া কোন আদেশ দেয়া হয় নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে ( সূরা বায়্যিনাহ; ৯৮: ৫ )। এটা আরো বোঝায় যে জিহাদ, জ্ঞান চর্চা, দান - এসবের মর্যাদা ও প্রতিদান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এসব করবে। এই হাদিসের আলোকে বলা যায় - একজন ছাত্র জ্ঞান চর্চায় তার নিয়্যত শুদ্ধ করবে - এটা নিয়ে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। সে জ্ঞানের খোঁজ করবে আর কাউকে না বরং আল্লাহর জন্য; তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ও পুরষ্কার আল্লাহর কাছ থেকেই আশা করবে। আল্লাহর রাসূল হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে এজন্য জ্ঞান চর্চা করে যেন জ্ঞানীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে, যারা জানে না তাদের থেকে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে পারে বা মানুষ যেন তাকে সম্মানের চোখে দেখে, তবে সে দোযখে যাবে ( আল - আলবানী এই হাদিসকে সহীহ বলেছেন )।
-
Bangla translation of The Manners of the Knowledge Seeker. Author: Abu 'Abdillah Muhammad Sa'id Raslan আদব (জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা) মূল (আরবী): শেখ আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাঈদ রাসলিন, সৌদি আরব। ইংরেজী অনুবাদ: আবু সাবাইয়া। ইংরেজী থেকে অনুবাদ: জাবীন হামিদ, বাংলাদেশ। "আমি ত্রিশ বছর ধরে আদব শিখেছি আর জ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছি বিশ বছর।"–আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক। সূচি : ভূমিকা ১. জ্ঞানের সন্ধান করার সময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে : ২. শরীয়াহ বিরোধী সবকিছু থেকে মন ও আচরণকে শুদ্ধ করতে হবে : ৩. জ্ঞানের দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে : মনকে মুক্ত করতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে : ৪. কম খাও , সাবধান হও ও সবসময় আল্লাহর যিকির করো : ৫. খাওয়া , ঘুম ও কথা যত কম তত ভাল : ৬. সঠিক বন্ধু বেছে নেয়া ও সামাজিকতা কমানো : ৭. কী শিখবে ? কার কাছে শিখবে ? ৮ . শিক্ষকের সাথে সেরা আচরণ করতে হবে : ৯ . বইয়ের যত্ন নেবে : ১০ . যেভাবে পড়তে হবে : শেষ কথা : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম অবশ্যই সব প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে মাফ চাই। আমাদের আত্মার অকল্যাণ ও কাজের ভুল থেকে আল্লাহর আশ্রয় আমরা প্রার্থনা করি। আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করেন না, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নয়, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ صلى الله عليه وسلم আল্লাহর দাস ও রাসূল। "হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থ ভাবে ভয় করো ও আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।" (সূরা আলে ইমরান: ১০২)। "হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে অনেক নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর আল্লাহকে ভয় কর; যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার (ও পাওনা) দাবী কর এবং সতর্ক থাক আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।" (সূরা আন্-নিসা: :১)। হে মুমিনগণ ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন। এবং তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। ( সূরা আল – আহযাব; ৩৩: ৭০-৭১ )। নিশ্চয়ই সব কথার মধ্যে আল্লাহর কথাই সবচেয়ে সত্য ও রাসূল صلى الله عليه وسلم সবচেয়ে সুন্দরভাবে আমাদের পথ দেখিয়েছেন। সবচেয়ে খারাপ কাজ হলো বিদআত ও সব বিদআত পথভ্রষ্ট; আর সব পথভ্রষ্টতা নিয়ে যায় দোযখের আগুনের দিকে। জ্ঞান হলো মনের ইবাদত, জীবনের রহস্য ও শক্তির উৎস। যিনি জ্ঞান অনুসন্ধান করছেন তার জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য যে, জ্ঞান বিষয়ক যে সব আদবকায়দা আছে, তা তিনি জেনে নেবেন ও এই আদব শিখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। তা না হলে তিনি যাবেন একদিকে, জ্ঞান যাবে অন্যদিকে যেমনটি বলা হয়ে থাকে – জ্ঞান যায় পূর্বে, সে যায় পশ্চিমে - পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে কতই না দূরত্ব। একজনকে বুঝতে হবে এসব আদব অন্য সব আচরণের মত না। যে ইচ্ছা হলো তা করলাম, ইচ্ছা না হলে এই আদব শিখলাম না। এসব আদব একই স্তরের না বরং কিছু কিছু আদব শেখা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক – তা সে যেখানেই থাকুক না কেন বা ছাত্র - অছাত্র যেই হোক না কেন। শরীয়াহ সম্পর্কে জানার লক্ষ্য হলো নিখুঁত ও স্পষ্টভাবে মনোভাব প্রকাশ করতে শেখা। নিজের মনোভাব স্পষ্ট ও নিখুঁত প্রকাশের লক্ষ্য হলো আল্লাহকে সবার থেকে আলাদা করা। ও শুধু তাঁরই ইবাদত করা। তাই জ্ঞানের সন্ধান করার উদ্দেশ্য হলো। আল্লাহ যিনি সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত তাঁকে আর সবার থেকে আলাদা করা। ও একমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করা - এটি তখনই ভালভাবে একজন বুঝতে পারে যখন সে জ্ঞানের প্রতি সুবিচার করে - তা সে ছাত্র বা শিক্ষক যেই হোক না কেন। যে জ্ঞানের সন্ধান করছে তার থেকে আদব তাই আলাদা নয়, কেননা এই আদব কায়দার অন্তর্ভুক্ত হলো ধর্মের মূলনীতি। ধর্মীয় আদর্শের সাথে মতবিরোধে যাওয়ার বিলাসিতা একজন করতে পারে না বা এটাকে গুরুত্ব না দেয়ার কোন উপায় নেই। জ্ঞান চর্চাকারীর জন্য আদব শেখা তাই সবসময়ই বাধ্যতামূলক ও আল্লাহ হলেন সাহায্যের উৎস ও তাঁর উপরেই আমরা ভরসা রাখি।