-
Posts
1,173 -
Joined
-
Last visited
-
Days Won
41
Content Type
Profiles
Forums
Events
Everything posted by MUSLIM WOMAN
-
Al-Hasan Al-Basrî said: "The good of this world is knowledge and worship, and the good of the hereafter is Paradise." ♥ (Akhlâq Al-’Ulamâ’ no.30)
-
Asalamu'alaikum Knowledge is of two kinds: that which is absorbed and that which is heard. And that which is heard does not profit if it is not absorbed. (Ali ibn abi Talib)
-
অছিয়ত করা ছাড়াই বদলী হজ্জ করা যাবে কি ? প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তির হজ্জ করার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে হঠাৎ মারা গেছে। কিন্তু কাউকে অছিয়ত করে যায়নি। এক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করা যাবে কি? সে তার ছওয়াব পাবে কি? উত্তর : উক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করা যাবে এবং মাইয়েত তার নেকীও পাবেন (মুসলিম হা/২৭৫৩; মিশকাত হা/১৯৫৫)। তবে বদলী হজ্জ সম্পাদনকারীকে আগে নিজের হজ্জ করতে হবে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৫২৯)। http://talimul-islam...og-post_28.html প্রশ্ন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কোন ব্যক্তি হজ্জ না করে মারা যায়, তাহলে তার ওয়ারিছগণ তার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারবে কি? উত্তর : করতে পারে (ছহীহ নাসাঈ হা/২৬৩৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০৪৭)। তবে বদলী হজ্জকারীকে তার নিজের হজ্জ আগে করতে হবে (আবুদাঊদ হা/১৮১১)।
-
Asalamu'alaikum ]The servant who seeks the pleasure of Allah never abandons tawbah. He remains in the state of tawbah until his death. ~Imam Ibn ul Qayyim rahimahuAllah
-
Asalamu'alaikum "The sins that you do in private kills the heart more than the sins that you do in public, because it means that you value the eyes of the people more than you value the sight of ALLAH. You are more worried about people catching you sinning than ALLAH seeing you." Imam Ibn Qudamah
-
Asalamu'alaikum It was said to Hasan Al-Basri: "Shouldn't one of us feel too shy to ask his Lord to forgive his sin, then do it again, then ask for forgiveness, then do it again?" He said: "The Shaytaan wishes that you would have this attitude, so do not get tired of asking for forgiveness." ["Jaami al-Ulum wal-Hukam", 1/165] I Love Allah Blog
-
ভারত না হয়ে যদি এটি মুসলিমপ্রধান কোন দেশ হতো , তাহলে অবশ্যই নেতিবাচকভাবে ইসলাম ধর্মের উল্লেখ করে খবরটি প্রকাশিত হতো । অপরাধ যখন প্রমাণিত না অর্থাৎ প্রাথমিক অভিযুক্তের বেলায় যদি সে মুসলমান হয় , তবে খবরে ধর্মের উল্লেখ থাকে । অন্যদিকে অপরাধী অমুসলিম হলে ধর্মের উল্লেখ করা হয় না । জানি না , আমরা কবে গণমাধ্যমের এই ইসলাম বিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মানুষকে সচেতন করতে পারবো । **** ভিন্ন খবর : মেয়েসন্তান কাম্য নয় ভারতে ডেস্ক রিপোর্ট মেয়েসন্তান জন্মালে রয়েছে তার বিয়ের খরচ। ওদিকে বংশরক্ষার ক্ষেত্রে তার অন্তত বাবার বংশে কোনো ভূমিকা নেই। এই দুটি ধারণা বিজ্ঞান ও আধুনিকতার সব বাধা পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতেও টিকে গেছে। তাই ভারতে সন্তান কামনা করে অনেকেই; কিন্তু তা অবশ্যই মেয়েসন্তান নয়। সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরে এক স্বামী তার স্ত্রীকে গলা টিপে মেরে ফেলেন তৃতীয় মেয়েসন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে। তার কয়েকদিন আগে দক্ষিণের ব্যাঙ্গালোর শহরের ঘটনা। ২৫ বছর বয়সের বাবা তার তিন মাসের মেয়েসন্তানকে শারীরিক নিপীড়ন করে মেরে ফেলেছেন শুধু মেয়েসন্তান হওয়ার দোষে। এছাড়া আঁস্তাকুড়ে কিংবা কুয়োয় মেয়েসন্তানের ভ্রূণ, এসব তো আছেই। জাতিসংঘের বিচারে ভারত হলো মেয়েসন্তানদের জন্য সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক দেশ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতে প্রতি হাজার পুরুষসন্তানের প্রতি মাত্র ৯১৪টি মেয়েসন্তান জন্ম নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের সাবেক সহ-সভানেত্রী ড. রমা দাস এই পরিস্থিতির জন্য সবার আগে দেশের বিয়ে পদ্ধতিকে দায়ী করেন। দ্বিতীয়ত, তিনি মনে করেন, নারীরা স্বয়ং প্রতিবাদ না জানালে, শুধু শিক্ষায় বিশেষ কাজ হবে না। অল্পবয়সী, অত্যাচারিত মেয়েরা যখন নিজেরাই প্রশাসনের কাছে গিয়ে তাদের কথা জানাবে, শুধু তখনই কাজ হবে বলে তার ধারণা। সূত্র : ডিডব্লিউ http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/20/141639
-
Asalamu'alaikum Do you realize How Short our Life is? When we are born.... "Adzaan" was given. When we die.... "Salaat" is prayed. That's how short our life is.... It's only the time between "adzaan" and "salaat" So.... Have you utilized your time perfectly? Like if YES! Share if you are ready to utilize it from Now On! | Mobile S.L. - http://on.fb.me/I4GTJ0
-
Asalamu'alaikum বাংলাদেশের টিভি নাটকে সালাত আদায় ও কুরআন তেলাওয়াত দেখানো হয় না কেন ? ভারতীয় হিন্দি বা বাংলা নাটকের একটি অতি চেনা দৃশ্য - পূজা ঘর , দেব – দেবীর সামনে নায়িকা প্রার্থনা সংগীত গাইছেন , আশেপাশে মঙ্গল প্রদীপ জ্বলছে , অন্যান্যরা ভক্তি ভরে মূর্তিকে প্রণাম করছেন ইত্যাদি । আগে নিয়মিত নাটক দেখতাম । বাংলাদেশের নাটকে নায়ক বা নায়িকা সালাত আদায় করছে বা কুরআন তেলাওয়াত করছে , এমন কোন দৃশ্য দেখেছি কি না মনে করার চেষ্টা করলাম , পারলাম না । অনেক আগে হুমায়ূন আহমেদের দুই একটি নাটকে আজানের ধ্বনি শুনেছি , উযু করা বা মেয়ের চাকরীর সাক্ষাতকারের দিনে বাবার নফল সালাত আদায়ের দৃশ্যের প্রচার দেখেছি । কিন্ত্ত অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম নাটকের মূল আকর্ষণ অর্থাৎ নায়িকা বা নায়ক ইবাদত করছেন , এমন দৃশ্য টিভি চ্যানেলে দেখেছি কি না । এখনকার নাটকে এমন কিছু প্রচার করা হয় কি না , তা কি কেউ বলতে পারবেন ? ভারতীয় নাট্যকার , পরিচালক , প্রযোজকরা যদি প্রতি সিরিয়ালে তাদের ধর্মীয় দৃশ্যের প্রচার করতে পারেন , তাহলে আমাদের দেশের মুসলমানদের এত হীনমন্যতার কারণ কী ? কার ভয়ে তারা কখনো মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃশ্য কখনো নাটকে প্রচার করেন না ? তারা কি ভয় পান যে ধর্ম পালন করা হচ্ছে , এটা প্রচার করলে তারা সবার চোখে ‘ মৌলবাদি ’ হয়ে যাবেন ? পূজার দৃশ্য প্রচার করলে ভারতীয় নির্মাতারা যদি হিন্দু মৌলবাদি না হোন , তবে সালাত আদায় দেখালে আশা করি আমাদের প্রযোজক – নাট্যকারদেরও বদনাম হবে না বা হলেও তারা তাতে লজ্জিত হবেন না । তাছাড়া , মৌলবাদি শব্দের অর্থও মোটেও খারাপ কিছু না । আশা করি , আমাদের নির্মাতারা তাদের অহেতুক ভয় কাটিয়ে উঠবেন । প্রেমের দৃশ্য প্রচারে তারা যতটা উৎসাহী , তার অন্তত একশত ভাগের এক ভাগ উৎসাহ দেখিয়ে ধর্মীয় দৃশ্য তারা দেখাবেন ।
-
“Every type of pleasure is enjoyed only once, except for acts of worship, which are enjoyed three times: ✓when you do it, ✓when you remember it, and ✓when you are given the reward for it.” ♥ ~‘Abd-Allaah ibn Wahhab
-
Asalamu'alaikum One of the Salaf said •► 'If this world does not cry for you (upon departing it), then the Hereafter will not smile for you.' فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنظَرِينَ "And the heaven and earth wept not for them, nor were they reprieved." [surah Ad Dukhan, 44:29]
-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে একান্ত সাাৎকারে অধ্যাপক আবু জাফর নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে আদ্যোপান্ত সঙ্গতিহীন ।। মুসলিম জাতীয় চেতনার পরিপন্থী একটি গভীর চক্রান্ত Share5 3 0 এসবের প্রশ্রয় দেবার কোনো সুযোগ নেই নববর্ষ- পালনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জীবজন্তুর মূর্তি বানিয়ে যেভাবে মঙ্গল-শোভাযাত্রা ও কনসার্টের মাধামে বর্ষবরণ করা হচ্ছে, এ-সব বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চেতনা ও সংস্কৃতির সাথে অবশ্যই সাংঘর্ষিক;- শুধু সাংঘর্ষিক নয়, রীতিমত আত্মবিলুপ্তির একটি পথ। জীবজন্তুর ছবি আঁকা যেখানে ইসলাম নিষিদ্ধ, সেখানে জীবজন্তুর মূর্তি বানিয়ে বর্ষবরণ বা যে- কোনো অনুষ্ঠানকে চমকপ্রদ করে তোলা কোনো মুসলমানের পে আদৌ সম্ভব নয়। ঢোল-বাদ্যসহকারে মঙ্গল-শোভাযাত্রা এবং ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে আদ্যোপান্ত সংগতিহীন। এতদসঙ্গে ইউরো- আমেরিকান প্রভাবপুষ্ট কনসার্ট প্রোগ্রাম। এ-সবই আমাদের মুসলিম জাতীয়-চেতনার পুরোপুরি পরিপন্থী। আমাদের সরলমতি যুবক-যুবতীরা জানে না, এ-সবের মধ্যদিয়ে একটি গভীর চক্রান্ত সক্রিয় রয়েছে, যার মূল ল্য হলো এতদ্দেশীয় মুসলমানকে এমনভাবে ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করা, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের স্বকীয়তাকে মুছে দিতে পারে। কথাটা আমাদের সবারই বিশেষভাবে অনুধাবন করা জরুরি। অন্যথায় আমরা আমাদের আত্মবিনাশের পথকেই সুগম ও প্রশস্ত করে তুলবো। তাওহিদবাদী মুসলমানের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে (সা.) নিঃশর্তভাবে মেনে চলা ফরয বা অপরিহার্য; এেেত্র দ্বিতীয় কোনো ভাবনা-চিন্তার অবকাশই নেই। অতএব নববর্ষ-পহেলা বৈশাখের নামে হোক, রবীন্দ্র-দর্শন হোক, আবহমান লৌকিক ঐতিহ্যের নামে হোক, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে থেকে যদি তাওহিদী আমানত বিনষ্ট বা তিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে প্রশ্রয় দেবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য। বাংলা নববর্ষ ও নববর্ষ পালন সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে একান্ত সাাৎকারে অধ্যাপক আবু জাফর এসব কথা বলেন। এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভুইয়া ও মুস্তাফিজুর রহমান পলাশ। ছবি তুলেছেন কেএম সুলতান। বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক আবু জাফর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ায় তার নিজস্ব বাড়িতে অবস্থান করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : বাংলা সন কবে, কখন এবং কীভাবে প্রবর্তন করা হয়েছিল? অধ্যাপক আবু জাফর : সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণের ২৯ বছর পর হিজরি-৯৯২ ইং-১৫৮৫ সনে বহু পরীা-নিরীা ও গবেষণা করে হিজরির সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা সন সৌর-নিয়মে বিন্যস্ত করা হয়। আকবরের সিংহাসন আরোহণ -বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হিজরি -৯৬৩ ইং -১৫৫৬ সালের এপ্রিল থেকে বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে বাংলা সনের গণনা শুরু হয়। যেহেতু বাংলা সনের সঙ্গে হিজরির একটা নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান, হিন্দুরা এটাকে ঠিক মেনে নিতে পারেনি; তারা কিছুটা পরিবর্তন করে শকাব্দ বা বিকমাব্দ প্রচলন করে। ভারতে এইভাবেই ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, হিজরি থেকে বাংলা সৌর সনের রূপান্তর সাধনে ভূমিকা রাখেন সম্রাট আকবরের অন্যতম সভাসদ আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : বাদশাহ আকবর হিজরি সালকে কেন বাংলা সনের ভিত্তি হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন? অধ্যাপক আবু জাফর : ইসলামী ঐতিহ্য-রা অর্থাৎ ধর্মীয় তাগিদেই তিনি হিজরি সনকে ভিত্তিরূপে গ্রহণ করেন। এছাড়া অন্য আর কোনো কারণ ছিল বলে মনে হয় না। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : বাংলা সন কি আদর্শিক নাকি আর্থিক কারণে প্রবর্তিত হয়েছিল? অধ্যাপক আবু জাফর : আদর্শগত কিছু নয়; এটা একান্তই একটি বৈষয়িক পরিবর্তন। রাজকোষে অর্থাগম ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এটা করা খুবই প্রয়োজন ছিল, যে -কারণে এটাকে ‘ফসলি সন’ও বলা হয়। অবশ্য আদর্শের প্রশ্ন এই অর্থে তোলা যায় যে, বাংলা সনের উৎস যেহেতু হিজরি সাল, বাদশাহ আকবর- এর অন্তরে মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি হয়ত জাগরূক ছিল। এদিক থেকে এই রূপান্তর আকবরের মধ্যে বিরাজমান বংশানুক্রমিক ধর্মপ্রীতির কিছুটা অন্তর স্যা বহন করে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : এই অঞ্চলে বাংলা নববর্ষ- পালন শুরু হয় কখন থেকে? অধ্যাপক আবু জাফর : সময় তারিখ মিলিয়ে সঠিক ইতিহাস আমার জানা নেই। তবে অনুমান করতে পারি, এতদঞ্চলের মানুষ যেহেতু সবসময়ই উৎসবপ্রিয়, বৎসরের বিদায় ও নববর্ষের আগমন উপলে তারা-যে একটু সম্মিলিত বিনোদনে মেতে উঠবে, সেটা স্বাভাবিক। বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইরানী নওরোজ -এর একটা প্রভাব পড়ে, আর তৎসঙ্গে বাঙ্গালির নিজস্ব আচরণ ও আয়োজন-তো ছিলই। তখন জমিদার ভূস্বামীদের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। কিন্তু একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, মুসলমান হোক হিন্দু হোক কেউই তখন সীমা অতিক্রম করেনি, আনন্দের ধারা নির্মলই ছিল, অশ্লীলতার আবর্তে উৎসব তখন কোনোভাবেই কদর্য হয়ে ওঠে নি। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : এক সময় গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন বারোয়ারি মেলা পালনের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ পালন করা হতো, আর বর্তমানে এই নববর্ষ- পালনকে কেন্দ্র করে বিজাতীয় কৃষ্টি কালচারের যে উত্তাল স্রোত শুরু হয়েছে, তা আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে কতটুকু সংগতিপূর্ণ? অধ্যাপক আবু জাফর : সংগতিপূর্ণ-তো নয়-ই, বরং বলা উচিত উদ্ভট ও সংগতিহীন এক বেপরোয়া উন্মত্ততা। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আগের- দিনের আনন্দোৎসব ছিল নির্মল ও শ্লীল; কিন্তু বর্তমানে নববর্ষ উদযাপনই হোক বা অন্য যে-কোন উৎসবই হোক প্রায় সর্বত্রই বিজাতীয় কৃষ্টির দুর্বার প্লাবনে আমাদের যুবমানস ভয়াবহ সর্বনাশকে সানন্দে আপন করে নিচ্ছে। একে প্রতিহত করা কঠিন, কিন্তু সকলেরই এটুকু অন্তত স্মরণ রাখা উচিত যে, এটা শুধু নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ব্যক্তি সমাজ ও জাতীয় জীবনের অস্তিত্বের প্রশ্ন। স্বেচ্ছায় আত্মঘাতী হবার এই ভ্রান্তিবিলাস থেকে আত্মরা করা আমাদের সমূহ কর্তব্য। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : নববর্ষ-পালনের কি কোনো আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য আছে। অধ্যাপক আবু জাফর : বলবো-না যে একেবারে নেই। আছে, কিন্তু আদর্শ যদি আদর্শহীনতায় পর্যবসিত হয়, সংস্কৃতি যদি অসংস্কৃত জীবনাচারকে বড় করে তোলে, তাহলে- তো তাৎপর্য বলে কিছু থাকে না। জীবনের সৌরভ ও মানবিক সৌন্দর্যবোধ যদি পরিত্যক্ত হয়, সেখানে শুভত্ব ও কল্যাণ আশা করা যায় না। আত্মপরিচয়হীন বিশ্বাস ভ্রষ্ট মানুষের যে-কোনো উৎসব প্রকৃতপে এক ধরনের আরণ্যক বর্বরতারই দৃশ্যরূপ। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যেখানে নববর্ষ পালিত হচ্ছে তাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? অধ্যাপক আবু জাফর : দেখছি, কিন্তু দেখছি যে, এর মধ্যে আদৌ কোনো সুস্থতা নেই। বারবারই মনে হয়, আমোদ- প্রমোদের নামে মানুষ যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই আদিম বন্যতাকে জীবনের সারবস্তু বলে মনে করছে। বস্তুতপে এটা মারাত্মক অসুস্থতা। অথচ খুবই দুঃখজনক যে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদে, নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাই আজ এই ব্যাধিকেই যেহেতু সুস্থতা হিসেবে বিশ্বাস করছে, এ -থেকে আরোগ্যলাভ করা রীতিমত দুঃসম্ভব। অবশ্য এ নিয়ে কিছু মানুষ খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, তাঁরা যথাসাধ্য প্রতিরোধেরও চেষ্টা করছেন, কিন্তু অবস্থা এমন শোচনীয় রূপ নিয়েছে যে, এই বন্য-উদ্দ্যমতা কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : নববর্ষ- পালনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শাঁখা - সিঁদুর পরে বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি বানিয়ে যেভাবে মঙ্গল-শোভাযাত্রা ও কনসার্টের মাধ্যমে বর্ষবরণ করা হচ্ছে, এ-সব কি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চিন্তা, চেতনা ও সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়? অধ্যাপক আবু জাফর : অবশ্যই সাংঘর্ষিক; -শুধু সাংঘর্ষিক নয়, রীতিমত আত্মবিলুপ্তির একটি পথ। শাঁখা- সিঁদুর পরিধান একান্তভাবেই হিন্দু-নারীদের ধর্মীয় সামাজিক রীতি। কোনো মুসলিম নারী কি এটা পরতে পারে! জীবজন্তুর ছবি আঁকা যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে জীবজন্তুর মূর্তি বানিয়ে বর্ষবরণ বা যে -কোনো অনুষ্ঠানকে চমকপ্রদ করে তোলা কোনো মুসলমানের পে আদৌ সম্ভব নয়। ঢোল-বাদ্যসহকারে মঙ্গল-শোভাযাত্রা ও ইসলামও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে আদ্যোপান্ত সংগতিহীন। এতদসঙ্গে ইউরো-আমেরিকান প্রভাবপুষ্ট কনসার্ট প্রোগ্রাম। এ-সবই আমাদের মুসলিম জাতীয়-চেতনার পুরোপুরি পরিপন্থী। আমাদের সরলমতি যুবক-যুবতীরা জানে না, এ-সবের মধ্যদিয়ে একটি গভীর চক্রান্ত সক্রিয় রয়েছে, যার মূল ল্য হলো এতদ্দেশীয় মুসলমানকে এমনভাবে ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করা, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের স্বকীয়তাকে মুছে দিতে পারে। কথাটা আমাদের সবারই বিশেষভাবে অনুধাবন করা জরুরি। অন্যথায় আমরা আমাদের আত্মবিনাশের পথকেই সুগম ও প্রশস্ত করে তুলবো। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : নববর্ষ-পালনের ব্যাপারে বাংলাদেশি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য ও আহ্বান। অধ্যাপক আবু জাফর : বেশি কিছু নয়, বক্তব্য একটাই। তাওহিদবাদী মুসলমানের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে (সা.) নিঃশর্তভাবে মেনে চলা ফরয বা অপরিহার্য; এেেত্র দ্বিতীয় কোনো ভাবনা-চিন্তার অবকাশই নেই। অতএব নববর্ষ-পহেলা বৈশাখের নামে হোক, রবীন্দ্র-দর্শন হোক, আবহমান লৌকিক ঐতিহ্যের নামে হোক, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে থেকে যদি তাওহিদী আমানত বিনষ্ট বা তিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে প্রশ্রয় দেবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অলঙ্ঘনীয়। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা : এ বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। অধ্যাপক আবু জাফর : আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিশিষ্ট ইসলামী লেখক আবু জাফর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০০ সালে কুষ্টিয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা- উত্তর সময়ে ঢাকা বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন প্রথম শ্রেণীভূক্ত গীতিকার সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকা’দির নাম’ ‘নিন্দার কাঁটা যদি না- বিঁধিলো গায়ে’ ‘আমি হেলেন কিম্বা নূরজাহানকে দেখিনি’ প্রমুখ অনেক সুপরিচিত গানের তিনি লেখক ও সুরকার। ১৯৮০ থেকে ’৯০ -এর মধ্যে তাঁর দুটি গানের বই ‘হৃদয়ের কথা’ ‘বলিতে ব্যাকুল’ ও ‘আমার নিকৃষ্ট গান’ এবং ‘বাংলা গানের সুখ দুুঃখ’ শীর্ষক একটি সঙ্গীতগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই সময়ে বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোম্পানি আবু জাফর ও ফরিদা পারভীনকে নিয়ে একটি লংপ্লেয়িং রেকর্ডও প্রকাশ করে। ভারত কাতার কুয়েত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রথম হজ্জ্বব্রত পালন করেন ১৯৯৫ সালে, তারপর ‘রাবেতা’র আমন্ত্রণে দ্বিতীয়বার ২০০৫ সালে। ’৯৫ সালে হজ্ব থেকে ফেরার পর আবু জাফর সঙ্গীত থেকে স¤পূর্ণরূপে বিদায় নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ইসলাম স¤পর্কিত লেখালেখি ও চিন্তাভাবনায় সর্বাত্মকভাবে নিবেদিত। ইতোমধ্যে প্রকাশিত আবু জাফর এর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘তুমি পথ প্রিয়তম নবী তুমিই পাথেয়’ ‘মহানবীর (সা.) মহাজীবন’ ‘ইসলামের শত্র“মিত্র’ ‘আল্লামা ইকবাল: কবি ও নকীব’ ‘ফাস্ট থিংস ফাস্ট (অনুবাদ)’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর নতুন একটি বই ‘মোহাম্মদ (সা.) মহাবিপ্লবের মহানায়ক’ শীঘ্রই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
-
Asalamu'alaikum তথাকথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা হাতি , ঘোড়া , বাঘ , সাপের মুখোশ পড়ে নারী – পুরুষ একসাথে ঢোল বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় নেচে – গেয়ে বেড়ালে সেটা কেন ও কিভাবে মঙ্গল বা কল্যাণকর হয় , কেউ কি আমাকে বুঝিয়ে বলবেন ? আজ রাত শেষ হলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা এ ধরনের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবেন আর তাতে অংশ নেবেন হাজারো নারী - পুরুষ । এই শোভাযাত্রার দেখতে জড়ো হবেন আরো হাজারো মানুষ । বেশ কয়েক বছর ধরেই এমনটি হয়ে আসছে ; এতে ব্যক্তিগতভাবে কার কী মঙ্গল হয়েছে বলতে পারবো না । তবে ব্যবসায়ীদের লাভ নিশ্চয়ই হয় অনেক । তাদের প্রচারের কারণে অবস্থা এখন এমন যে - পয়লা বৈশাখে ইলিশ মাছ খেতে না পারলে , মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে না পারলে জীবন ব্যর্থ বলে মনে করেন অনেকে । আমরা যেন বাঙালী সংস্কৃতি উদযাপনের নামে অশালীন কোন কাজে , শিরকের মত ভয়াবহ কোন পাপে ডুবে না যাই - সাবধান , সাবধান । কোন কাজে আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণ পেতে হলে তাঁর আদেশ মেনে চলতে হবে , তাঁর নবী - রাসূলদের আদর্শ মেনে চলতে হবে । আল্লাহর কোন নবী বিশেষ কোন দিনে পশুদের মুখোশ মুখে লাগিয়ে হাজারো নারীর সাথে রাস্তায় নেচেছেন , এমন কোন কথা আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদীসে আজো পাই নি । সপরিবারে মেলা দেখতে যান , বাচ্চাদের মাটির তৈরি ব্যাংক , খেলনা , বাংলা ছড়া – গল্পের বই কিনে দিন , মিস্টি নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় যান - এসব ঠিক আছে । কিন্ত্ত প্রকাশ্যে বা গোপনে নির্লজ্জভাবে নারী – পুরুষ হাত ধরে নাচানাচি করবেন না বা দয়া করে একে মঙ্গলময় বলে প্রচার করবেন না । ধন্যবাদ ।
-
"Be patient at all times and in all places.... for patience leads to righteousness, and righteousness leads to Paradise." "Do not become angry and furious.... for those two emotions lead to wickedness, and wickedness leads to the Hellfire." -- Sufyan al-Thawri --
-
"The one who is (truly) imprisoned is... the one whose heart is imprisoned from Allahand the captivated one is... the one whose desires have enslaved him." [ibn Taymiyyah]
-
Asalamu'alaikum পহেলা বৈশাখ: ইতিহাস ও বিধি-বিধান Posted: 09 Apr 2012 11:32 PM PDT লেখকঃ আ.স.ম শো‘আইব আহমাদ | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া এপ্রিল মাসে আমরা বাংলাদেশীরা একটি উৎসব করে থাকি, তা হলো ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালন করা। আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবার তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়। তাহলে বাংলা সন মূলত হিজরী সন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হিজরত থেকেই এ পঞ্জিকার শুরু। ১৪১৫ বঙ্গাব্দ অর্থ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হিজরতের পর ১৪১৫ বৎসর। ৯৬২ চান্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৫৩ বৎসর সৌর বৎসর। সৌর বৎসর চান্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন বেশি এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চান্দ্র বৎসর এক বৎসর বেড়ে যায়। এজন্য ১৪৩৩ হিজরী সাল মোতাবেক বাংলা ১৩১৮-১৯ সাল হয়। মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত: রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল। এ ধরনের কিছু সংঘটিত হওয়া মূলত ইসলামে নিষিদ্ধ বলার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু বর্তমানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন কিছু কর্মকান্ড করা হচ্ছে যা কখনোই পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালীরা করেন নি; বরং এর অধিকাংশই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে প্রচণ্ডভাবে সাংঘর্ষিক। পহেলা বৈশাখের নামে বা নববর্ষ উদযাপনের নামে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদেরকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও এদেশের মানুষেরা যা জানত না এখন নববর্ষের নামে তা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানানো হচ্ছে। বাংলার প্রাচীন মানুষেরা ছিলেন দ্রাবিড় বা সম্মানিত রাসূল নূহ আলাইহিস সালাম-এর বড় ছেলে সামের বংশধর। খৃস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে ইয়াফিসের সন্তানদের একটি গ্রুপ আর্য নামে ভারতে আগমন করে। ক্রমান্বয়ে তারা ভারত দখল করে ও আর্য ধর্ম ও কৃষ্টিই পরবর্তীতে ‘‘হিন্দু’’ ধর্ম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ভারতের দ্রাবিড় ও অর্নায ধর্ম ও সভ্যতাকে সর্বদা হাইজ্যাক করেছে আর্যগণ। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘‘বাঙালী’’ সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে হাইজ্যাক করা। আর্যগণ বাংলাভাষা ও বাঙালীদের ঘৃণা করতেন। বেদে ও পুরাণে বাংলাভাষাকে পক্ষীর ভাষা ও বাঙালীদেরকে দস্যু, দাসের ভাষা ইত্যাদি বলা হয়েছে। মুসলিম সুলতানগণের আগমনের পরে তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। বাঙালী সংস্কৃতি বলতে বাংলার প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতির সংমিশ্রণ বুঝানো হতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে আর্যগণ ‘‘বাঙালীত্ব’’ বলতে হিন্দুত্ব বলে মনে করেন ও দাবি করেন। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদিগণ Hindutva অর্থাৎ ভারতীয়ত্ব বা ‘‘হিন্দুত্ব’’ হিন্দু ধর্মত্ব বলে দাবি করেন এবং ভারতের সকল ধর্মের মানুষদের হিন্দু ধর্মের কৃষ্টি ও সভ্যতা গ্রহণ বাধ্যতামূলক বলে দাবি করেন। তেমনিভাবে বাংলায় আর্য পণ্ডিতগণ বাঙালীত্ব বলতে হিন্দুত্ব ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ বলতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালী সংস্কৃতি বলতে হিন্দু সংস্কৃতি বলে মনে করেন। এজন্যই তারা মুসলিমদের বাঙালী বলে স্বীকার করেন না। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত গল্পে আমরা দেখেছি যে বাঙালী বলতে শুধু বাঙালী হিন্দুদের বুঝানো হয়েছে এবং মুসলিমদেরকে তাদের বিপরীতে দেখানো হয়েছে। এ মানসিকতা এখনো একইভাবে বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদেরকে ‘‘বাঙালী’’ পরিচয় দিলে বা জাতিতে ‘‘বাঙালী’’ লিখলে ঘোর আপত্তি করা হয়। এ মানসিকতার ভিত্তিতেই ‘‘পহেলা বৈশাখে’’ বাঙালী সংস্কৃতির নামে পৌত্তলিক বা অশ্লীল কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে। এক সময় বাংলা বর্ষপঞ্জি এদেশের মানুষের জীবনের অংশ ছিল। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি ও কর্ম এ পঞ্জিকা অনুসারেই চলত। এজন্য পহেলা বৈশাখ হালখাতা বা অনুরূপ কিছু অনুষ্ঠান ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে আমাদের জীবনের কোথাও বঙ্গাব্দের কোনো প্রভাব নেই। কাগজে কলমে যাই লেখা হোক, প্রকৃতপক্ষে আমরা নির্ভর করছি খৃস্টীয় পঞ্জিকার উপর। যে বাংলা বর্ষপঞ্জি আমরা বছরের ৩৬৪ দিন ভুলে থাকি, সে বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনে আমরা সবাই ‘‘বাঙালী’’ সাজার চেষ্টা করে এ নিয়ে ব্যাপক হইচই করি। আর এ সুযোগে দেশীয় ও বিদেশী বেনিয়াগণ ও আধিপত্যবাদীগণ তাদের ব্যবসা বা আধিপত্য প্রসারের জন্য এ দিনটিকে কেন্দ্র করে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার প্রচার করে। পাশ্চাত্য সভ্যতার অনেক ভাল দিক আছে। কর্মস্পৃহা, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি অনেক গুণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। পাশাপাশি তাদের কিছু দোষ আছে যা তাদের সভ্যতার ভাল দিকগুলি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ দোষগুলির অন্যতম হলো মাদকতা ও অশ্লীলতা। আমরা বাংলাদেশের মানুষের পাশ্চাত্যের কোনো ভালগুণ আমাদের সমাজে প্রসার করতে পারি নি বা চাই নি। তবে তাদের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও মাদকতার ধ্বংসাত্মক দিকগুলি আমরা খুব আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতে ও প্রসার করতে চাচ্ছি। এজন্য খৃস্টীয় ক্যালেন্ডারের শেষ দিনে ও প্রথম দিনে থার্টিফার্স্ট নাইট ও নিউ-ইয়ারস ডে বা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের বেহায়পনার শেষ থাকে না। পক্ষান্তরে, আমাদের দেশজ সংস্কৃতির অনেক ভাল দিক আছে। সামাজিক শিষ্টাচার, সৌহার্দ্য, জনকল্যাণ, মানবপ্রেম ইত্যাদি সকল মূল্যবোধ আমরা সমাজ থেকে তুলে দিচ্ছি। পক্ষান্তরে দেশীয় সংস্কৃতির নামে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদকতা ও অপরাধ একসূত্রে বাধা। যুবক-যুবতীদেরকে অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন, অথচ তারা অশ্লীলতা, ব্যভিচার, এইডস, মাদকতা ও অপরাধের মধ্যে যাবে না, এরূপ চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য অপরাধের সাথে অশ্লীতার পার্থক্য হলো কোনো একটি উপলক্ষ্যে একবার এর মধ্যে নিপতিত হলে সাধারণভাবে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরা আর এ থেকে বেরোতে পারে না। বরং ক্রমান্বয়ে আরো বেশি পাপ ও অপরাধের মধ্যে নিপতিত হতে থাকে। কাজেই নিজে এবং নিজের সন্তান ও পরিজনকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ বলেছেন: ‘‘তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর; যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফিরিশতাগণ, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ করেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্য হোন না, আর তাদের যা নির্দেশ প্রদান করা হয়, তা-ই তামিল করে’’। [সূরা আত-তাহরীম: ৬] রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯) প্রিয় পাঠক ! পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদেরকে বেপর্দা ও বেহায়পনার সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে বুঝান ও নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি মসজিদে নামায আদায় করছেন আর আপনার ছেলেমেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। আপনার ছেলেমেয়ের পাপের জন্য আপনার আমলনামায় গোনাহ জমা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে ‘‘দাইউস’’ বলা হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বারংবার বলেছেন যে, “তিন ব্যক্তি আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়” (মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯) নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করার পাশাপাশি মুমিনের দায়িত্ব হলো সমাজের মানুষদেরকে সাধ্যমত ন্যায়ের পথে ও অন্যায়ের বর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কাজেই পহেলা বৈশাখ ও অন্য যে কোনো উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার ক্ষতি, অন্যায় ও পাপের বিষয়ে সবাইকে সাধ্যমত সচেতন করুন। যদি আপনি তা করেন তবে কেউ আপনার কথা শুনুক অথবা না শুনুক আপনি আল্লাহর কাছে অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করবেন। আর যদি আপনি তা না করেন তবে এ পাপের গযব আপনাকেও স্পর্শ করবে। কুরআন ও হাদীসে বিষয়টি বারংবার বলা হয়েছে। ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেওয়ার জন্য মিছিল, মেলা ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছুই হতে পারে না। অশ্লীলতা প্রসারের ভয়ঙ্কর পাপ ছাড়াও ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা শুনুন: ‘‘যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’’ (সূরা নূর: ১৯) সাবধান হোন! সতর্ক হোন! আপনি কি আল্লাহর সাথে পাল্লা দিবেন? আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আপনি কি জয়ী হবেন? কখন কিভাবে আপনার ও আপনার পরিবারের জীবনে ‘‘যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’ নেমে আসবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। আপনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য পথ দেখুন। অন্য বিকল্প চিন্তা করুন। তবে কখনোই অশ্লীলতা প্রসার ঘটে এরূপ কোনো বিষয়কে আপনার স্বার্থ উদ্ধারের বাহন বানাবেন না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন!! জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
-
Asalamu'alaikum Knowledge is three hand-spans: the first breeds arrogance, the second breeds humility, and in the third, you realize you know nothing. [sufyan ath-Thawri (Rahimullah)] May Allah increase our knowledge, Ameen
-
Asalamu'alaikum মানুষ কেন এবং কখন আত্মহত্যা করে? ভাববার বিষয় হলো মানুষ কখন আত্মহত্যা করে ? যখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে সে অসহায় ও ভরসাহীন ভাবে, তখনই সে আত্মহত্যা করে বসে। নানা সমস্যায় পড়ে মানুষ আত্মহত্যার এ নিন্দিত পথ বেছে নেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ১. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ এবং যৌতুক নিয়ে ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা। ২. অভিভাবক তথা পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে অভিমানজনিত আত্মহত্যা। ৩. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার প্রতিকিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যা। ৪. আরোগ্য থেকে হতাশ হয়ে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্থ যন্ত্রণাকাতর ব্যক্তির আত্মহত্যা। ৫. প্রেমে বা ভালোবাসায় ব্যর্থ বা প্রতারিত ও মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া নারী বা পুরুষের আত্মহত্যা। ৬. ব্যবসা-বাণিজ্যে বা শেয়ার বাজারে বারবার ব্যর্থ হওয়া মানুষ বা তরুণ-যুবার আত্মহত্যা। ৭. প্রতাপশালী শক্রর হাতে ধরা পড়া থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা ইত্যাদি। আত্মহত্যা রোধে করণীয় মানুষের জীবনের প্রতিটি দিন এক রকম কাটে না। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বত্রই পরিবর্তন হতে থাকে। কখনো দিন কাটে সুখে, কখনো কাটে দুঃখে। কখনো আসে সচ্ছলতা। আবার কখনো দেখা দেয় দরিদ্রতা। কখনো থাকে প্রাচুর্য কখনো আবার অভাব-অনটন। কখনো ভোগ করে সুস্থতা কখনো আক্রান্ত হয়ে পড়ে রোগ শোকে। কখনো দেখা দেয় সুদিন, আবার কখনো আসে দুর্ভিক্ষ। কখনো আসে বিজয়, আবার কখনো আসে পরাজয়। কখনো আসে সম্মান আবার কখনো দেখা দেয় লাঞ্ছনা। এ অবস্থা শুধু বর্তমান আমাদের সময়েই হয়ে থাকে, তা নয়। এটা যুগ যুগ ধরে এভাবেই আবর্তিত হয়ে আসছে। আল্লাহ যেমন বলেন, ﴿ ثُمَّ بَدَّلۡنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلۡحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَواْ وَّقَالُواْ قَدۡ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ فَأَخَذۡنَٰهُم بَغۡتَةٗ وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ٩٥ ﴾ [الاعراف: ٩٤] ‘তারপর আমি মন্দ অবস্থাকে ভাল অবস্থা দ্বারা বদলে দিয়েছি। অবশেষে তারা প্রাচুর্য লাভ করেছে এবং বলেছে, ‘আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও দুর্দশা ও আনন্দ স্পর্শ করেছে’। {সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৯৫} যেহেতু বিপদ-আপদ, কষ্ট-শোক আমাদের নিত্যসঙ্গী তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নির্মূলে প্রথমত দরকার পুরো সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের বাস্তব অনুশীলন। কারণ, মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হতাশার চরম মুহূর্তে। আর অনুশীলনরত মুসলিম জীবনে হতাশার কোনো স্থান নেই। আল্লাহ বলেন, ﴿ قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٢] বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। {সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৫২} যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যাবতীয় ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এবং আল্লাহ যা-ই করেন বান্দার তাতে কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, সে কখনো নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভাবার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে তো হাজার বিপদেও অবিচল থাকবে এ বিশ্বাসে যে আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অবশ্যই তিনি আমাকে পুরস্কৃত করবেন। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথম দরকার ইসলামী শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন ইসলামের বাস্তবানুশীলন। নিচে একটি আত্মহত্যা সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরছি, সেটিই প্রমাণ করবে আমাদের এ দাবি কতটা যথার্থ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবগুলো কম্যুনিস্ট অধ্যুষিত দেশ সহ বৌদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের সেক্যুলার দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রথম পঞ্চাশটি দেশের মধ্যে মুসলিম অধ্যুষিত একটি মাত্র দেশ আছে। প্রথম পঁচাত্তরটি দেশের মধ্যে মাত্র চারটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আছে। দেশগুলো হচ্ছে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ও উজবেকিস্তান। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই চারটি দেশই কম্যুনিস্ট শাষিত সোভিয়েত রাশিয়ার অধীনে ছিল। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়ায় এই দেশগুলোও স্বাধীন হয়। তার মানে দেশগুলো হয়ত কম্যুনিজমের বস্তুবাদী প্রভাব থেকে আজো সেভাবে মুক্ত হতে পারে নি। অধিকন্তু, দেশ চারটি মুসলিম অধ্যুষিত হলেও মুসলিমদের শতকরা হার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো অত বেশি না। ফলে এই দেশগুলোতে অমুসলিমদের মধ্যে হয়ত আত্মহত্যার হার বেশি, আর সেটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশে আত্মহত্যার হার খুবই কম। যেমন ইরানে প্রতি আড়াই লক্ষে মাত্র একজন আত্মহত্যা করে; সিরিয়াতে প্রতি পাঁচ লক্ষে একজন; আর মিশরে প্রতি দশ লক্ষে একজন। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে কম্যুনিস্ট অধ্যুষিত দেশ সহ বৌদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের সেক্যুলার দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি – সেখানে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার এত কম কেন? এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনারা মনে করেন? কারণ তো সেটিই যার প্রতি আমরা ইঙ্গিত করলাম। মুসলিম সমাজে শত অবক্ষয়ের পরও এখনো তাকদীরের ভালো-মন্দ সিদ্ধান্ত এবং আল্লাহর ওপর আস্থার শিক্ষার কারণেই এ হার এত কম। আত্মহত্যা সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান No. Country Rate No. Country Rate 1. Lithuania 81.0 49. Netherlands 18.7 2. Belarus 73.6 50. Kyrgyzstan 18.5 3. Russia 67.9 51. Argentina 17.6 4. Sri Lanka 61.4 52. Turkmenistan 17.3 5. Hungary 53.5 53. Mauritius 17.0 6. Slovenia 53.2 54. Spain 15.8 7. Kazakhstan 53.1 55. Thailand 15.8 8. Latvia 51.6 56. Zimbabwe 15.8 9. Japan 48.0 57. Saint Lucia 15.4 10. Ukraine 47.9 58. Belize 15.0 11. Guyana 45.4 59. Ecuador 14.4 12. Korea 43.7 60. Italy 14.4 13. Estonia 42.8 61. Nicaragua 14.4 14. Belgium 42.6 62. EI Salvador 13.8 15. Finland 40.7 63. Britain 13.6 16. Croatia 40.2 64. Macedonia 13.5 17. Serbia 39.5 65. Puerto Rico 12.7 18. Moldova 36.6 66. Costa Rica 12.5 19. France 35.6 67. Israel 12.5 20. Switzerland 35.2 68. Panama 12.5 21. Hong Kong 35.1 69. Malta 11.9 22. Poland 32.4 70. Colombia 11.5 23. Austria 31.7 71. Uzbekistan 11.1 24. C Republic 31.1 72. Venezuela 10.2 25. Uruguay 30.9 73. Seychelles 9.1 26. China 27.8 74. Brazil 8.7 27. Denmark 27.3 75. Mexico 8.4 28. Sweden 26.6 76. Albania 8.0 29. Bulgaria 26.4 77. Bahamas 7.3 30. Germany 26.3 78. Greece 7.1 31. Trinidad 25.8 79. Grenadians 6.8 32. Slovakia 25.7 80. Paraguay 6.1 33. Romania 25.5 81. Bahrain 5.4 34. Cuba 24.8 82. Tajikistan 5.2 35. Suriname 24.2 83. Georgia 4.5 36. New Zealand 24.0 84. Guatemala 4.3 37. Bosnia 23.6 85. Philippines 4.2 38. Norway 23.1 86. Kuwait 3.9 39. Canada 22.7 87. Armenia 3.7 40. Portugal 22.4 88. D republic 3.5 41. Iceland 22.3 89. Azerbaijan 2.3 42. USA 22.2 90. S.T. Principe 1.8 43. Luxembourg 22.0 91. Peru 1.7 44. Australia 21.8 92. Barbados 1.4 45. India 21.3 93. Iran 0.4 46. Chili 20.9 94. Jamaica 0.3 47. Singapore 20.6 95. Syria 0.2 48. Ireland 19.5 96. Egypt 0.1 সূত্র : http://www.shodalap.org/?p=185 এ তো গেল সাধারণভাবে প্রযোজ্য করণীয়। এ ছাড়াও ওপরে আমরা আত্মহত্যার কারণ যেগুলো তুলে ধরেছি, সুনির্দিষ্টভাবে সেসবের প্রতিকার হিসেবে করণীয়গুলো যথাক্রমে এমন : ১. পৃথিবীর সংঘাতময় জীবনে মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হবে- এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিচ্ছদ স্বরূপ। একে অপরের শান্তিদাতা ও শান্তিদাত্রী। ইরশাদ হয়েছে, ﴿ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ ١٨٧ ﴾ [البقرة: ١٨٧] ‘তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ’ । {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৭} ﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ ﴾ [الروم: ٢١] ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।’ {সূরা আর-রূম, আয়াত : ২১} দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। কারও মাঝে সব গুণের একত্র সমাহার বিরল। স্বামীর যেমন কিছু গুণ থাকে তেমনি কিছু দোষও থাকে। স্ত্রীর ব্যাপারেও একথা সমভাবে প্রযোজ্য। তাই উভয়কে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে সংলাপ-সহযোগিতা-সমঝোতা-সহমর্মিতা থাকতে হবে। উভয়কে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তদুপরি আল্লাহর কাছে পরস্পরের জন্য দু‘আ করতে হবে। আল্লাহ স্বয়ং আমাদের সে দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন, এই দু‘আটি আমরা নিয়মিত পড়ব। ইরশাদ হয়েছে, ﴿ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان: ٧٤] ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ৭৪} ২. পিতা-মাতার প্রথম কাজ হবে সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল বা যা-ই বানান কেন সর্বপ্রথম তাকে কুরআন ও প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান শিখিয়ে তবেই অন্য কোনো কিছু শেখানো। দ্বিতীয়ত তাদেরকে ইসলামী কায়দায় লালন-পালন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন, কখন সন্তানকে শাসন করা যাবে আর কীভাবে সন্তানকে শাসন করতে হবে না। না জেনে প্রকৃত তথ্য না বের করে সাবালক সন্তানদের অযথা বকাঝকাও পরিহার করতে হবে। এমন মানসিক কষ্ট না তাদের কখনো দেয়া যাবে না যা তাদেরকে আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ দিতে বাধ্য করে। সর্বোপরি সন্তানের জন্যও পিতা-মাতা উপরোল্লেখিত আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া দু‘আটি পড়বেন। ৩. শিক্ষার্থীদের মাঝে পারিবারিকভাবে এবং তাদের পাঠ্য বইয়ের মাঝে আল্লাহর ওপর ভরসা, হতাশা জয় করা এবং কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধারণের শিক্ষা শুরু থেকেই ঢুকে দিতে হবে। আর ছাত্র-ছাত্রীদের কর্তব্য হলো, সারা বছর ঠিক মত পড়ালেখা করা, শিক্ষাগুরু ও বাবা-মায়ের কথামত প্রতিদিন রুটিন মেনে পাঠ্য মুখস্থ করা। পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে অতিরিক্ত চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সালাত পড়ে বিশেষভাবে দু‘আ করা যেতে পারে। হে আল্লাহ। আপনিই তো জ্ঞান-প্রতিভা-মেধা ও ফল দেয়ার মালিক। এগুলো দিয়ে আমাকে অনুগ্রহ করুন যাতে আমি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারি। সর্বোপরি পড়তে বসার সময়, পরীক্ষার হলে বিষয় মনে না এলে, সালাতের পর এবং সমসময় আল্লাহর শেখানো বাক্যটি পড়তে পারেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ﴿ وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا ١١٤ ﴾ [طه: ١١٤] ‘আর তুমি বলো, হে প্রভু। আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন’। {সূরা ত-হা, আয়াত : ১১৪} ৪. মারাত্মক ও কষ্টদায়ক অসুখে পড়লে এ কথা মনে করা যে, দুনিয়া হলো মুমিনের পরীক্ষার স্থান। রোগ-বিসুখ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরই বেশি পরীক্ষায় ফেলেন। আল্লাহ বলেন, ﴿ وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰٓ أُمَمٖ مِّن قَبۡلِكَ فَأَخَذۡنَٰهُم بِٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمۡ يَتَضَرَّعُونَ ٤٢ ﴾ [الانعام: ٤٢] ‘আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে বিভিন্ন কওমের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর আমি তাদেরকে দারিদ্র্য ও দুঃখ দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে’। {সূরা আল-আনআম, আয়াত ৪২} আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ এ আয়াতে ‘বাছা’ ও ‘দাররা’ দুটো শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাছা শব্দের অর্থ হল, কঠিন অভাব ও দরিদ্রতা, জীবনোপকরণের সংকট। আর দাররা শব্দের অর্থ হল, শরীর ও স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রোগ ব্যধি। তাই কঠিন রোগ হলে কর্তব্য হলো, চিকিৎসার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত অনুনয়-বিনয়সহ আরোগ্য কামনা করা। সালাতে দাঁড়িয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানানো। দাঁড়াতে না পারলে বসে পড়া, তা না পারলে শুয়ে এবং তাও না পারলে ইশারায় পড়া। আমরা আল্লাহর কাছে এ দু‘আটিও করতে পারি। হে আমার রব। আমাকে রোগে কষ্ট দিচ্ছে। আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। আমাকে রোগ-মুক্ত করুন। আইয়ুব আলাইহিস সালাম তাঁর ভীষণ অসুখে এ দু‘আ পড়েছিলেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ﴿ وَأَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ٨٣ ﴾ [الانبياء: ٨٣] ‘আর স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবকে আহ্বান করে বলেছিল, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩} ৫. ব্যবসায়ী ভাইদের প্রথমে মনে রাখতে হবে ব্যবসায় বলতে লাভ-ক্ষতির খেলা। ব্যবসা হালাল হলে তাতে অল্প লাভেই বরকত হয়। তাই ব্যবসায় সাময়িক কোনো লোকসানে একেবারে মুষড়ে না পড়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশে যেসব বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন তা জেনে তদনুযায়ী আমল করতে হবে। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এই দু‘আটি পড়তেন, »اللَّهُمَّ ، إِنِّي أَسْأَلُكَ رِزْقًا طَيِّبًا ، وَعِلْمًا نَافِعًا ، وَعَمَلا مُتَقَبَّلا« ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হালাল রিযক, উপকারী ইলম এবং মাকবুল আমল প্রার্থনা করছি।’ [মুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক : ৩১৯১; তাবরানী : ১৯১৬৮] সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আমলটি আমরাও নিয়মিত করতে পারি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নিচের দু‘আটিও পড়তে পারি আমরা নিয়মিত। পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা একজন খাদেম চাইতে আসলে তিনি তাঁকে এ দু‘আ শিখিয়ে দেন : «اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ ، وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ ، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ الْعَظِيمِ ، أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ». ‘হে আল্লাহ, সপ্তাকাশের রব, আরশে আযীমের অধিপতি, আমাদের রব এবং প্রতিটি জিনিসের রব, তাওরাত, ইঞ্জিল ও মহা কুরআনের অবতরণকারী, আপনিই সর্ব প্রথম; অতএব আপনার আগে কোনো জিনিস নেই। আপনিই সর্ব শেষ; অতএব আপনার পরে কোনো জিনিস নেই। আপনিই যাহের; অতএব ওপর কিছু নেই। আপনিই বাতেন; অতএব আপনার অজ্ঞাত কিছুই নেই। আপনি আমাদের ঋণ পরিশোধ করুন এবং অভাব ও দারিদ্র থেকে আমাদের মুক্তি দিন।’ [তিরমিযী : ৩৪৮১; মুসলিম : ৭০৬৪] তিরমিযীর অপর এক বর্ণনায় একই দু‘আ সম্পর্কে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে ঘুমানোর পূর্বে এ দু‘আ পড়ার শিক্ষা দেন। [তিরমিযী : ৩৪০০] ৬. আত্মহত্যার কথা মনে আসলে এ বিপদ থেকে রক্ষাকল্পে নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং সিজদায় গিয়ে বিনীতভাবে আল্লাহর আগ্রহ-দয়া-সাহায্য কামনা করা প্রয়োজন। প্রতি মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মোট কথা যখনই নিজেকে অসহায় ও আশাহত মনে হয় এবং আত্মহত্যার চিন্তা আসে তখনই মনে করতে হবে এখন শয়তান এসেছে। ইসলামে আত্মহত্যা নাজায়েয এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। তাই এ থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। সাথে সাথে মনে করতে হবে আল্লাহই আমার সহায় এবং আশার আলো। তাই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায পড়ার সাথে নফল নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও সাহায্য কামনা করতে হবে। প্রতি মুহূর্তে সবর অর্থাৎ ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এতে ইনশাআল্লাহ মন ও হৃদয় প্রশান্ত থাকবে এবং বিপদ দুরীভূত হবে। ৭. এছাড়াও বহু ছাত্র-ছাত্রীর জীবন বিসর্জন দিতে হচ্ছে-কৃত্রিম ভালোবাসার, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়ে, অপ্রত্যাশিত আশা-আকাঙ্ক্ষার ফলে। আর এসবের পেছনে সবচে বড় হাত রয়েছে বেপর্দা ও অশ্লীলতার। একটি সুখী, শান্তিময়, সুন্দর সমাজ গঠনে শালীনতাপূর্ণ, রুচিসম্মত, মার্জিত বেশ ভূষা, চাল চলন ও আচার-আচরণের গুরুত্ব অপরিসীম। অশালীন বেশ ভূষা ও আচার-আচরণ মানুষের মধ্যকার পশু বৃত্তিকে জাগিয়ে তুলে। কুৎসিত কামনাকে উত্তেজিত করে। এতে নানা রকম পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নানা ধরনের পাপকর্ম সংঘটিত হয়। মহাবিপর্যয়, অন্যায় ও অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহ বিধানকে মেনে চলাই সর্বোত্তম পন্থা। পর্দার ওপর গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [الاحزاب : ٣٢، ٣٣] ‘হে নবী পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২-৩৩} আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। আপন ইজ্জত রক্ষা করে এবং আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো আবৃত রাখে। যাতে কোনো অসুস্থ অন্তর বা অসংযত দৃষ্টির অধিকারী পুরুষ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে না পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ﴾ [النور : ٣١] ‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১} এই আত্মহত্যার মাধ্যমে অনেক অবলা সতী নারীর জীবনের মায়া ত্যাগ করতে হচ্ছে যৌতুকলোভী নরপিশাচদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্যাতনের কারণে। এসব আসলে পারিবারিক অশান্তিরই অংশ। পারিবারিক অশান্তি রোধেও প্রথমে দরকার পরিবারে ইসলামের চর্চা বাড়ানো তথা ইসলামী পরিবার গড়ে তোলা। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীসহ পুরুষের পরিবারের সবাইকে মনে রাখতে হবে যৌতুকের নামে কোনো কিছু গ্রহণই তাদের জন্য বৈধ নয়। ইসলামে যৌতুকের কোনো স্থান নেই। মানুষের আন্তরিক প্রদান ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণই বৈধ নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, ﴿ إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَظۡلِمُونَ ٱلنَّاسَ وَيَبۡغُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٢ ﴾ [الشورى: ٤٢] ‘অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’। {সূরা আশ-শূরা, আয়াত : ৪২} রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « لاَ يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلاَّ بِطِيبِ نَفْسِهِ ». ‘কোনো মুসলিমের সম্পদ তার আন্তরিক অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য হালাল নয়।’ [বাইহাকী : ৫৪৯২; সুনান কুবরা : ১১৩২৫] আত্মহত্যা সংক্রান্ত কিছু তথ্য: ১. আত্মহত্যাকারীদের চেয়ে এতে চেষ্টাকারীর সংখ্যা তিনগুণ। ২. খুনীদের তুলনায় আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা তিনগুণ। ৩. মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রচেষ্টা সবচে বেশি। ৪. সফল আত্মহত্যায় পুরুষদের সংখ্যা বেশি। ৫. নারীরা আত্মহত্যা করে বেশি প্রাণনাশকারী অসুধ খেয়ে এবং আগুনে পুড়ে। আর পুরুষরা বেশি করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। ৬. বিবাহিত বিশেষত যাদের সন্তান রয়েছে এমন দম্পতিদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কম। ৭. আত্মহত্যাকারীদের হার সবচে বেশি বিশ্বের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে। ৮. প্রতি দশজন আত্মহত্যাকারীর পাঁচ জনই আত্মহত্যার আগে কোনো না বার্তা বা লক্ষণ রেখে যায়। ৯. যুদ্ধকালীন ও জাতীয় সংকটের সময় আত্মহত্যার হার সবচে কম। আয় আল্লাহ, সকল স্তরের নারী-পুরুষ ও সন্তান-সন্ততিকে আত্মহত্যার মত মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকার মত জ্ঞান বুদ্ধি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মত সুচিন্তা ও চেতনা দান করুন। আমীন!
-
Asalamu'alaikum আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং একটি সমস্যা লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব| সম্পাদনা : ড. মুহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী আমার জীবনের প্রথম বন্ধু আবদুল মালেক। অবুঝ বয়সে ও আর আমি একসঙ্গে মাদরাসায় যেতাম। আমার আর ওর বাড়ি থেকে খাবার আনত ওর বড় ভাই। আমি যখন দুনিয়ার ভালো-মন্দ কিছুই বুঝতাম না, তখন ও অনেক কিছুই বুঝত। ও প্রায়ই মাদরাসা পালিয়ে বাড়িতে যেত। পড়াশুনার বাইরের জগতের প্রতিই ওর ছিল যত আগ্রহ। বছর পার না হতেই সে মাদরাসায় না পড়ার জন্য নানা বাহানা খুঁজতে লাগল। অবশ্য ওর বাবা ওকে মাদরাসায় পড়ানোর জন্য চেষ্টায় কসুর করেন নি। একদিন সে সত্যিই মাদরাসাকে বিদায় জানাল। মাদরাসা থেকে চলে যাবার পর অনেক বছর যাবত তার সঙ্গে আমার দেখা নাই। মক্তব ছেড়ে আমি একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করলাম। ওর সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। বেচারার কথা যে মনে পড়ে না, তা নয়। আসলে ওর খবর নেয়ার তেমন সুযোগই ঘটেনি। একদিন বগুড়ার এক ইসলামী মাহফিলে হঠাৎ দেখা ওর সঙ্গে। ছোটবেলায় ও আমার বাড়ি থেকে আনা খাবারে আগ্রহ দেখাত বলে ওকে পেটুক বলে ডাকতাম। এতদিন পর সাক্ষাতেও সে বাল্যকালের কথাই মনে করিয়ে দিল। বলল, দোস্ত কিছু খাওয়া। আমি হেসে বললাম, যাক তাহলে অভ্যাসটায় খুব একটা হেরফের হয়নি। ওকে সম্ভবত চটপটি আর পাপড় খাওয়ালাম। তারপর পড়াশুনার খাতিরে চট্টগ্রাম চলে এলাম। তিন মাস পর বাড়ি এসে শুনি আবদুল মালেক আত্মহত্যা করেছে! বাপের ওপর রাগ করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন করেছে। শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারপর ওর বাবা-মা’র সাথে সাক্ষাৎ করলাম। সেদিনের বিবরণ শুনলাম তাদের কাছে। আবদুল মালেক নাকি বাবার ওপর রাগ করে তিনদিন না খেয়ে চতুর্থ দিনে এসে এ কাজ করে বসে। দিন তারিখ মিলিয়ে হিসেব করে দেখলাম আমার সাথে সাক্ষাতের দিনটি ছিল ওর মৃত্যুর আগের দিন। হতবাক হয়ে গেলাম। ইস যদি আমি ওকে পেট ভরে ভাত খাওয়াতাম। তিনদিনের অনাহারী ছিল বলেই বোধ হয় অবশেষে বাল্যবন্ধুকে পেয়ে অকপটে খাওয়ানোর আবদার করেছিল। আর তাকেই কি-না বাল্যকালের দোহায় দিয়ে পেটুক বলেছিলাম বলে আফসোসে দগ্ধ হতে লাগলাম। আত্মহত্যা শব্দটির সঙ্গে অবশ্য পরিচয় এ ঘটনার অনেক আগে। আমাদের মহল্লার একটি পরিত্যক্ত বাসায় এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। কৈশোরের অবুঝ মনে সেদিন বড় বিস্ময় উপহার দিয়েছিল আস্ত একটি মানুষের নিষ্প্রাণ দেহ। তবে প্রকৃতপক্ষে ক্ষণকালের তালিবুল ইলম আবদুল মালেকের আত্মহননই প্রথম আমাকে বিপুলভাবে নাড়া দেয়। তখনই আমি শুনতে পাই আত্মহত্যা সম্পর্কে বাঙালী সমাজে প্রচলিত সত্য-মিথ্যা নানা কথা। ওর বাবা-মা'র কান্নাভেজা কণ্ঠ আমাকে বড়ই আবেগাপ্লুত করে। আমাকে দেখে তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, 'হায় একই রকম দু'টি বাচ্চা একসঙ্গে মাদরাসায় যেত। আর এখন একজন জান্নাতের পথিক 'মাওলানা' আর আমাদের ছেলেটা চিরস্থায়ী জাহান্নামী'! জন্মদাতা বাবা-মা'র মুখে সন্তানের চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী হবার কথা আমাকে প্রবলভাবে কাঁপিয়ে দেয়। আমার মনে প্রশ্ন জাগে আত্মহত্যাকারী মুসলিম কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবেন যেমন মনে করে আমাদের সমাজ? শুধু তাই নয়, আমি যখন আবদুল মালেকের কথা স্মরণ করে দু'আয় কেঁদে উঠি, তখন কেউ কেউ বলেন, 'ছি, ওদের জন্য দু'আ করতে নেই'। সে থেকেই আত্মহত্যা নিয়ে আমার কৌতূহল আর এ সম্পর্কে জানার পর এ নিয়ে লেখার এবং মুসলিম সমাজকে এ সম্পর্কে সঠিক কথা জানানোর আগ্রহ। পাঠক, আজ চলুন এ বিষয়েই জানা যাক নানা কথা। আত্মহত্যা কী? আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যন্ত্রণা দেয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। আমাদের বাংলাদেশে অনেক নারী-পুরুষ বিশেষত যুবতী বোনেরা জীবন সংগ্রামের পরিবর্তে জীবন থেকে পালিয়ে যাবার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তুচ্ছ পারিবারিক কলহ, বিদ্যালয়ের গমনাগন পথে বখাটেদের উৎপাত, ভালোবাসায় ব্যর্থতা ও প্রতারণা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে তরুণীরা এবং স্বামীর নির্যাতন-অত্যাচার, যৌতুক সমস্যা, স্বামীর অর্থনৈতিক অক্ষমতা, পারিবারিক অশান্তি থেকে বাঁচার পথ হিসেবে অনেক মহিলা আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে। এসবই বড় ভুল, এসব সমস্যা সব দেশে, সব জাতিতে আছে। আত্মহত্যা এসবের কোনো সুষ্ঠু সমাধান বা সঠিক প্রতিকার নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা পবিত্র কুরআন থেকে : এবার চলুন যাওয়া যাক আত্মহত্যা সম্পর্কে আমাদের শরীয়ত কী বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ। সকল ফিকহবিদ এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ তা'আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٥٧ ﴾ [العنكبوت: ٥٧] 'প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।' {সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭} আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ﴿ هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٥٦ ﴾ [يونس : ٥٦] 'তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।' {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬} উপরোক্ত আয়াতদুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, ﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠ ﴾ [النساء : ٢٩، ٣٠] 'আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।' {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০} আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥] ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫} হাদীসে নাববী থেকে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই কাজটি থেকে নানাভাবে বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন : ছাবিত বিন যিহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَىْءٍ فِى الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ». ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ [বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০] অপর এক হাদীছে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ». ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। [সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯] আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « مَنْ خَنَقَ نَفْسَهُ فِي الدُّنْيَا فَقَتَلَهَا خَنَقَ نَفْسَهُ فِي النَّارِ ، وَمَنْ طَعَنَ نَفْسَهُ طَعَنَهَا فِي النَّارِ ، وَمَنِ اقْتَحَمَ ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ اقْتَحَمَ فِي النَّارِ». ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১] জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ». ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [বুখারী : ৩২৭৬; মুসলিম : ১১৩] আত্মহত্যা তো দূরে থাক, মৃত্যু কামনাও বৈধ নয় আত্মহত্যা তো দূরের কথা আমাদের পবিত্র এই শরীয়ত কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করেছে। যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ أَحْيِنِى مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِى وَتَوَفَّنِى إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِى ». ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ [বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম : ৬৯৯০] আত্মহত্যাকারী জানাযা না পড়ানো আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মহত্যাকারীর জানাযা ত্যাগ করেন। যেমন জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أُتِىَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- بِرَجُلٍ قَتَلَ نَفْسَهُ بِمَشَاقِصَ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ. ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যিনি নিজেকে তরবারীর ফলা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাযা পড়লেন না।’ [মুসলিম : ২৩০৯] অপর বর্ণনায় রয়েছে, জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَجُلا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصَابَتْهُ جِرَاحٌ ، فَآلَمَتْ بِهِ ، فَدَبَّ إِلَى قَرْنٍ لَهُ فِي سَيْفِهِ فَأَخَذَ مِشْقَصًا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " . নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী আহত হন। এটি তাকে প্রচণ্ড যন্ত্রনা দেয়। তখন তিনি হামাগুড়ি দিয়ে একটি শিংয়ের দিকে এগিয়ে যান, যা তার এক তরবারির মধ্যে ছিল। এরপর তিনি এর ফলা নেন এবং আত্মহত্যা করেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়ান নি। [তাবরানী : ১৯২৩] আত্মহত্যাকারীর কি জানাযা পড়া যাবে না? অনেকে সমাজে অনেকে মনে করেন কেউ আত্মহত্যা করলে তার বুঝি জানাযা পড়া যাবে না। ওপরের হাদীসটিও কেউ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাতা ইমাম নাববী রহ. বলেন, " وفي هذا الحديث دليل لمن يقول : لا يصلى على قاتل نفسه لعصيانه , وهذا مذهب عمر بن عبد العزيز والأوزاعي , وقال الحسن والنخعي وقتادة ومالك وأبو حنيفة والشافعي وجماهير العلماء : يصلى عليه , وأجابوا عن هذا الحديث بأن النبي صلى الله عليه وسلم لم يصل عليه بنفسه زجرا للناس عن مثل فعله , وصلت عليه الصحابة " انتهى . ‘এ হাদীসকে তাঁরা প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন, মানুষকে সতর্ক করার জন্য যারা আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া হবে না বলে মত দেন। এটি উমর বিন আব্দুল আযীয ও আওযাঈ রহ.-এর মত। তবে হাসান বছরী, ইবরাহীম নখঈ, কাতাদা, মালেক, আবূ হানীফা, শাফেঈ ও সকল আলিমের মতামত হলো, তার জানাযা পড়া হবে। উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত অন্যদেরকে এ ধরনের মন্দ কাজ থেকে সতর্ক করার জন্যই আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন। আর সাহাবীগণ তাঁর স্থলে এমন ব্যক্তির জানাযা পড়েছেন। [নাববী, শারহু মুসলিম : ৭/৪৭] তাই গণ্যমান্য আলেম ও বিশেষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের জন্য করণীয় হলো আত্মহত্যাকারীর জানাযা না পড়ানো। বরং সাধারণ কাউকে দিয়ে তাদের জানাযা পড়িয়ে দেয়া। এ সূত্র ধরেই আমাদের সমাজে উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেমের স্থলে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেম দ্বারা আত্মহত্যাকারীর জানাযার সালাত পড়ানো হয়। আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী ? কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলত আল্লাহর গজব ও ক্রোধের শিকারে পরিণত করে। সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কারণ, তা কোনো শিরকী কাজ নয়। একমাত্র শিরকই এমন গুনাহ আল্লাহ যা ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١١٦ ﴾ [النساء : ١١٦] ‘নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮} শিরক ছাড়া যা আছে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর আত্মহত্যা শিরক নয়। তেমনি যিনা, চুরি, মদ্য পান- সবকিছুই গুনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। কেউ যখন এসব গুনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন- তার নেককাজগুলোর বদৌলতে কিংবা ইসলামে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আর তিনি চাইলে তাকে তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তি দেবেন। অতপর সে গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস মতে সে চির জাহান্নামী হবে না। কোনো গুনাহগারই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। খুনী, মদ্যপ কিংবা অন্য কোনো অপরাধীও নয়। কিন্তু ওপরে যেমন বলা হলো, আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে আজাব দেবেন তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। একমাত্র কাফেররাই শুধু জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহতে অবিশ্বাসী মুশরিক কাফেররাই শুধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত দীনকে যারা অস্বীকার করেছে। তবে শুধু খারেজী ও মুতাজিলা সম্প্রদায় মনে করে আত্মহত্যাকারী চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের মতে গুনাহগার ব্যক্তিরাও চির জাহান্নামী। এ দু’টি দলই ভ্রান্ত ফেরকা। এটি তাদের ভ্রান্ত মত। কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীবৃন্দ এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর আদর্শ অনুসারীদের মত হলো, গুনাহগার ব্যক্তিরা চির জাহান্নামী হবে না। কারণ গুনাহগার মাত্রেই সে নিজেকে অপরাধী ভাবে। বরং শয়তানের প্ররোচনায় বা প্রবৃত্তির তাড়নায় সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তাই সে অনন্তকাল জাহান্নামী হবে না। বরং আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে তার ঈমানের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অন্যথায় তাকে তার সাজা ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এ ব্যাপারে হাদীসের কোনো অভাব নেই যে মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে অতপর সাজা খেটে সেখান থেকে জান্নাতে দাখিল হবে। অবশ্য কেউ যদি নিজের গুনাহকে বৈধ মনে করে বা আল্লাহর বিধানের সঙ্গে কুফরীবশত গুনাহ করে বা আত্মহত্যা করে তবে সবার মতে সে জাহান্নামী। জাহান্নামই তার স্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আত্মহত্যাকারীর জন্য কি দু‘আ করা যাবে ? তবে এসবের অর্থ এই নয় যে কেউ আত্মহত্যা করলে তার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দু‘আ করা যাবে না যেমনটি আমাদের সমাজের অনেকে মনে করেন। এসব বরং অধিক পাপী হওয়ার দরুণ ওই ব্যক্তির জন্য আরো বেশি বেশি দু‘আ করা উচিত। আত্মহত্যা কোনো কুফুরী কাজ নয়, যার মাধ্যমে মানুষ ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। দু‘আ করা যাবে না কেবল ওই ব্যক্তির জন্য যে ঈমানহীন অবস্থায় মারা যায়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ سَوَآءٌ عَلَيۡهِمۡ أَسۡتَغۡفَرۡتَ لَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ لَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٦ ﴾ [المنافقون: ٦] ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা না কর, উভয়টি তাদের ক্ষেত্রে সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। অবশ্যই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।’ {সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত : ০৬} অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ﴿ ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٨٠ ﴾ [التوبة : 80] ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা চাও, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা না চাও। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা চাও, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ১১৩-১১৪} একই সূরায় অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ﴿ مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ ١١٣ وَمَا كَانَ ٱسۡتِغۡفَارُ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَن مَّوۡعِدَةٖ وَعَدَهَآ إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُۥٓ أَنَّهُۥ عَدُوّٞ لِّلَّهِ تَبَرَّأَ مِنۡهُۚ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ لَأَوَّٰهٌ حَلِيمٞ ١١٤﴾ [التوبة : 113-114] ‘নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী। নিজ পিতার জন্য ইবরাহীমের ক্ষমা প্রার্থনা তো ছিল একটি ওয়াদার কারণে, যে ওয়াদা সে তাকে দিয়েছিল। অতঃপর যখন তার নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নিশ্চয় সে আল্লাহর শত্রু, সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম ছিল অধিক প্রার্থনাকারী ও সহনশীল।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ১১৩-১১৪} অতএব আমাদের উচিত আত্মহত্যাকারীর জন্য বরং আরও বেশি বেশি দু‘আ করা। তার মাগফিরাত ও ক্ষমার জন্য এবং তার ওপর রহমত ও দয়ার জন্য আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে প্রার্থনা করা। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা এসব দু‘আ কবুল করে তাকে মাফ করে দেবেন।
-
"Anyone who does not show mercy will not be shown mercy. Anyone who does not forgive will not be forgiven. Anyone who does not turn in repentance will not be turned to nor will he be protected or guarded." Sayyiduna `Umar ibn al Khattab in Bukhari's Adab al Mufrad.
-
"If a man seeks knowledge, it will appear in his face, hands an tongue and in his humility to Allah." - Hassan Al-Basri
-
“The servant exists between the Hands of Allah at two times- while standing during performing prayer, and while standing on the Day of Resurrection. Whoever fulfills the rights of the first standing, will in fact be facilitating the second one. And whoever considers this easy and does not pay due attention to it, he will be making the other one difficult for himself.” 'Ibn Al Qayyim
-
“The believer conceals and advises while the wicked individual exposes, condemns and humiliates.” Fudayl ibn 'Iyaad.
-
ভ্রাম্যমাণ ইসলামী পাঠাগার : প্রয়োজন ও পরিকল্পনা Posted by QuranerAlo.com Editor • প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ভ্রাম্যমাণ ইসলামী পাঠাগারপ্রতিষ্ঠাকরাদরকারকেন? শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি সভ্য ও উন্নত হতে পারে না। ভোগ করতে পারে না তাদের স্বাধীনতার সুফল। স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর পর এসে দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে উৎসাহ ব্যঞ্জকভাবে। মানুষের জীবনযাত্রার মানও হতাশাব্যঞ্জক নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উৎকর্ষের এ যুগে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি নানা ঘাত-অভিঘাত সত্ত্বেও। দেশের আনাচ-কানাচ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে শিক্ষার আলো। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত খালি নেই প্রাথমিক বিদ্যালয় বা প্রাইমারি স্কুল থেকে। প্রতিটি শহরে গড়ে উঠেছে কলেজ-মহাবিদ্যালয়। দ্রুত বেড়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও। সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও শিক্ষিত শ্রেণির আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ধনী-গরিব-ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই যাচ্ছে পাঠশালায়। এমনকি শিক্ষার সৌভাগ্য বঞ্চিত গত প্রজন্মের প্রবীণরাও বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে। তবে এসব সত্ত্বেও যে সত্যটি অস্বীকার করবার মত নয় তা হলো, আদর্শ চরিত্রবান দেশ প্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হবে না। সম্ভব হবে না দেশের প্রতিটি নাগরিকের মুখে হাসি ফোটানো। আগে মনে করা হত, সামাজিক অপরাধের সঙ্গে শুধু অশিক্ষিত ও গরিদ্র জনগোষ্ঠীই জড়িত; কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে র্যাব কর্তৃক পরিচালিত মাদক ও নৈতিকতাবিরোধী অভিযান সে ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেছে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যেসব অসামাজিক ও নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তা দেখে দেশবাসী যুগপৎ বিস্মিত ও হতাশ হয়েছে। তখন একযোগে সকল মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি এবং ধর্মীয় চেতনা হ্রাস পাওয়ার কারণেই এ চারিত্রিক ধস। আজ দেশের এ ক্রান্তিকালে সবাই অনুধাবন করছেন যে, শিক্ষিত ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরির কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে সুশিক্ষিত ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলবার জন্য দরকার তাদের মাঝে শিক্ষার আলো এবং পরকালে জবাবদিহিতার ভয় ঢুকিয়ে দেয়া। এ জন্য ইসলাম শুরুতেই মানুষকে শিক্ষিত ও আলোকিত হবার নির্দেশ দিয়েছে। আসমানী প্রত্যাদেশের প্রথম শব্দই ছিল, ‘পড়’। আর ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দ্ব্যর্থহীনভাবে শিক্ষার গুরুত্ব ঘোষণা করেছেন। বদর যুদ্ধে শত্রু পক্ষের যারা আটক হয়েছিল, তাদের মধ্যে পণমূল্য না থাকায় যারা মুক্তি পাচ্ছিল না তাদের জন্য তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরক্ষরকে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মুক্তি লাভের সুযোগ দেন। এ থেকে তাঁর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ অনুমিত হয়। দেশে শান্তি কায়েম করতে এবং নাগরিকের দুনিয়া ও আখিরাতের এ লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তেও চাই সবার কাছে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেয়া। কিন্তু স্যাটেলাইট চ্যানেলের আধিপত্যের যুগে মানুষ যেখানে ঘরে বসে চটুল বিনোদনের আস্বাদ পাচ্ছে সারাক্ষণ, সেখানে তাদের বই কিনে পড়ার মত কসরত করার ধৈর্য না থাকাই স্বাভাবিক। এ জন্য দরকার জ্ঞানের সুবাসও তাদের ঘরে ঘরে প্রত্যেকের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া। এ বিবেচনা থেকেই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ধারণার জন্ম। যেভাবে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না মানুষকে জ্ঞানের নেশার সন্ধান দেবার জন্য এসব মোবাইল লাইব্রেরির সংখ্যা। যেভাবেএরকার্যক্রমপরিচালিতহতেপারে পাঠকদের অনেকে হয়তো বলবেন এ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করবে কে? এটা কার দায়িত্ব সরকার না জনগণের? আসলে সে প্রশ্ন না করে আমরাই এ কাজ শুরু করতে পারি। দরকার শুধু কয়েকজন উদ্যমী ও কর্মনিষ্ঠ মানুষের। সেটা কিভাবে হতে পারে তারই একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া যাক। নির্দিষ্ট দিনে সপ্তাহে একবার নির্দিষ্ট স্থানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি গিয়ে দাঁড়াবে। ভেতরে দু’জন লোক থাকবেন। একজন নতুন করে সদস্য করবেন এবং অন্যজন পুরনো সদস্যদের বই জমা নেবেন। কাঙ্ক্ষিত বই তাদের তুলে দেবেন তাদের হাতে। খাতায় সব কিছু উল্লেখ থাকবে। এককালীন ৫০/১০০ টাকা দিয়ে সদস্য হবে। আর জামানত হিসেবে ফেরতযোগ্য ১৫০ টাকা নেয়া হবে। বছর শেষে সাড়ম্বর অনুষ্ঠান করে পাঠকদের মধ্যে সেরা নির্বাচিতদের পুরস্কৃত করা হবে। সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় বই পাঠাগারে না পেলে বইয়ের নাম ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে দিয়ে যাবেন, পরের সপ্তায় সে বই তাকে এনে দেয়া হবে। এছাড়া অফিসে একটি লাইব্রেরি থাকবে সেখান থেকেও সদস্য হয়ে যে কেউ বই সংগ্রহ করতে পারবেন। একটি পাঠাগার স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে যা যা দরকার ক. একটি গাড়ি। খ. একজন চালক। গ. গাড়িতে কমপক্ষে দু’জন সার্বক্ষণিক গ্রন্থাগারিক। ঘ. স্থির পাঠাগার। ঙ. পাঠাগারের পরিচালক। চ. দু’জন কর্মচারী। ছ. উভয় পাঠাগারের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রন্থ-ভাণ্ডার। জ. ব্যাপক প্রচারণা ও পাবলিসিটি। ঝ. প্রয়োজনীয় অর্থ। আমরা যারা ইসলাম নিয়ে ভাবি, মানুষের কল্যাণ ও দেশের সমৃদ্ধি চিন্তায় জীবনের নানা ঝামেলা ও কর্মব্যস্ততার মধ্যে খানিক সময় বের করি তাদের উচিৎ যুগ চাহিদার প্রেক্ষাপটে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা। মন্দ যেখানে হাত বাড়াতেই পাওয়া যায় ভালোটাকেও সেভাবে সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।