Jump to content
IslamicTeachings.org

MUSLIM WOMAN

Members
  • Posts

    1,173
  • Joined

  • Last visited

  • Days Won

    41

Everything posted by MUSLIM WOMAN

  1. কোরবানি : ১৫টি অতি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য ও আহকাম কোরবানির দিন ও কোরবানির দিনের ফজিলত (১) এ দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু জবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছে : ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কোরবানির দিন। রাসূলে কারীম স. বললেন : এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। [১] (২) কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন। [২] কোরবানির দিনের করণীয় ঈদের সালাত আদায় করা, এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অর্জন, সুন্দর পোশাক পরিধান করা। তাকবীর পাঠ করা। কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা। এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা। এ দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়। (৩) কোরবানির দিনটি হল ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন। কেননা এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে সালাত ও কোরবানি একত্র হয়। যা ঈদুল ফিতরের সালাত ও সদকাতুল ফিতরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে কাওসার দান করেছেন। এর শুকরিয়া আদায়ে তিনি তাকে এ দিনে কোরবানি ও সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। [৩] ১. কোরবানি পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার এবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেন : ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার এবাদত করবে।’[৪]আল্লাহ তাআলা তার এবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করলেন। এবাদত বলে,—যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে।[৫]আর এ এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন :— ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [৬] ইবনে কাসীর রহ. বলেন : এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবেহ করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয় আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কোরবানি শুধু তার নামেই হবে যার কোন শরিক নাই। এ কথাই আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসারে বলেছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [৭] অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানি তারই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে ও পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে। ২. যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল :‘নবী কারীম স. গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন ?’ বর্ণনাকারী বলেন : আলী রা. এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন : ‘নবী কারীম স. মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন,এরপর লোকটি বলল : ‘হে আমিরুল মোমিনীন ! সে চারটি কথা কি ? তিনি বললেন : ‘১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা’নত করেন। ৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা’নত করেন যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়। ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। [৮] ৩. এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ. বলেন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েজ ও তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম। যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে: ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকর মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু আর শ্বাস রোধে মৃত জন্তু,শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা জবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীত, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব হল পাপ-কার্য...। [৯] ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন যা কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা যে হারাম এ ব্যাপারে মুসলিমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত। ৪. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে। সালমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। অন্য এক ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। এ কথা শুনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করল এটা কীভাবে হবে ? তিন বললেন : দু ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্প্রদায়ের নিয়ম হল যে ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে যাবে তাকে তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দুজনের একজনকে বলল : আমাদের এ প্রতিমার জন্য কিছু উৎসর্গ কর ! লোকটি উত্তর দিল আমার কাছে তো এমন কিছু নেই যা আমি এ প্রতিমার জন্য উৎসর্গ করতে পারি। তারা বলল একটি মাছি হলেও উৎসর্গ কর। সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফলে সে জাহান্নামে যাবে।তারপর তারা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ কথা বলল। সে উত্তরে বলল আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিছু উৎসর্গ করি না। তারা তাকে হত্যা করল। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল। [১০] বর্ণিত এ হাদিস থেকে আমারা কয়েকটি শিক্ষা লাভ করতে পারি শিরক কত বড় মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবন করা যায়। যদি তা খুব সামান্য বিষয়েও হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘যে আল্লাহর সাথে শরিক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’ [১১] যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে কিন্তু উক্ত কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু সে মুশরিকদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কাজটি করেছিল। যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে মুসলিম ছিল, কিন্তু সামান্য বিষয়ে শিরক করার কারণে জাহান্নামে গেল। তাওহীদ ও এখলাসের ফজিলত কত বেশি তা অনুধাবন করা যায়। যে লোকটি জান্নাতে প্রবেশ করল সে তাওহীদের জন্য নির্যাতন সহ্য করল, নিহত হল তবু শিরকের সাথে আপোশ করল না। ৫. কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে : ১. হাদী ২. কোরবানি ৩. আকীকাহ তাই কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য জবেহ করা। ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [১২] ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [১৩] হাদিসে এসেছে : বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করল তার কোরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। [১৪] আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আল্লাহর রাসূল স. নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।[১৫] তবে বোখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে‘শিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে ৬. কোরবানির বিধান কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে। প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন। দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। [১৬] যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল : (এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [১৭] আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে। (দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’[১৮] যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব। (তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। [১৯] যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল : (এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : ‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।’ [২০] এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়। (দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়। শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই। ৭. কোরবানির ফজিলত (ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম আ. ও মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন। (খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :— ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।’ [২১] (গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কোরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না। ৮. কোরবানির শর্তাবলি (১) এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে :— ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি ; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’[২২] হাদিসে এসেছে :— ‘তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।’[২৩] আর আল্লাহর রাসূল সা. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম সা. এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে,‘আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।’[২৪] গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া। (২) শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। (৩) কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্র“টি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে :— সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ স. আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—অন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায়‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। [২৫] আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্র“টিযুক্ত পশু কোরবানি না করা ভাল। সে ত্র“টিগুলো হল শিং ভাংগা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা,লিংগ কাটা ইত্যাদি। (৪) যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। ৯. কোরবানির নিয়মাবলি | কোরবানির পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা কোরবানির জন্য পশু পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য নিম্নোক্ত দুটো পদ্ধতির একটি নেয়া যেতে পারে। (ক) মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এভাবে বলা যায় যে ‘এ পশুটি আমার কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল।’ তবে ভবিষ্যৎ বাচক শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট হবে না। যেমন বলা হল—‘আমি এ পশুটি কোরবানির জন্য রেখে দেব।’ (খ) কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায় যেমন কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করল অথবা কোরবানির নিয়তে জবেহ করল। যখন পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল তখন নিম্নোক্ত বিষয়াবলী কার্যকর হয়ে যাবে। প্রথমত : এ পশু কোরবানি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না, দান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না। তবে কোরবানি ভালভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে। দ্বিতীয়ত : যদি পশুর মালিক ইন্তেকাল করেন তাহলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল এ কোরবানি বাস্তবায়ন করা। তৃতীয়ত : এ পশুর থেকে কোন ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন দুধ বিক্রি করতে পারবে না, কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে না, সওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, পশম বিক্রি করা যাবে না। যদি পশম আলাদা করে তাবে তা সদকা করে দিতে হবে,বা নিজের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে, বিক্রি করে নয়। চতুর্থত : কোরবানি দাতার অবহেলা বা অযতেœর কারণে যদি পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে বা চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা। আর যদি অবহেলা বা অযতেœর কারণে দোষযুক্ত না হয়ে অন্য কারণে হয়, তাহলে দোষযুক্ত পশু কোরবানি করলে চলবে। যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কোরবানি দাতার উপর পূর্ব থেকেই কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কোরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। আর যদি পূর্ব থেকে ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কোরবানির নিয়তে পশু কিনে ফেলেছে তাহলে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কোরবানি করতে হবে। ১০ - কোরবানির ওয়াক্ত বা সময় কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি এবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কোরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসেবে আদায় করলে অন্য কথা। যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কোরবানির পশু জবেহ করা হয় তাহলে কোরবানি আদায় হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে— আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ স. খুতবাতে বলেছেন : এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কোরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে জবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কোরবানির কিছু আদায় হল না। [২৬] সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোরবানি পশু জবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর জবেহ করা ভাল। কেননা রাসূলুল্লাহ স. এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে: সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা. বলেছেন : নবী কারীম স. কোরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু জবেহ করলেন। [২৭] জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কোরবানির দিন নবী কারীম সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে জবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে জবেহ করে। আর যে জবেহ করেনি সে যেন জবেহ করে। [২৮] আর কোরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব কোরবানির পশু জবেহ করার সময় হল চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।কারণ : এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :— ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।’ [২৯] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন : ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কোরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ [৩০] অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তাআলা কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। দুই. রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :— ‘আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন জবেহ করা যায়।’ [৩১] আইয়ামে তাশরীক বলতে কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়। তিন. কোরবানির পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েজ নয়। এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কোরবানি করা যাবে। চার. রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : ‘আইয়ামে তাশরীক হল খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর জিকির করার দিন।’ এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কোরবানির পশু জবেহ করা যেতে পারে। পাঁচ. সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরবানির পরবর্তী তিনদিন কোরবানির পশু জবেহ করা যায়। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : আলী ইবনে আবি তালেব রা. বলেছেন : ‘কোরবানির দিন হল ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কোরবানির দিন হল মোট তিন দিন; যিলহজ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ। এবং বার তারিখের পর জবেহ করলে কোরবানি হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি। [৩২] ১১ - মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি মূলত কোরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ স. ও তার সাহাবাগণ নিজেদের পক্ষে কোরবানি করেছেন। অনেকের ধারণা কোরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েজ ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদিসে এসেছেঃ আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল ! আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোন কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন : হ্যাঁ। [৩৩] মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তাঁর জন্য উপকারী। এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কোরবানি করা জায়েজ আছে। অবশ্য যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কোরবানি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে। যেমন হাদিসে এসেছেঃ আয়েশা রা. ও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. যখন কোরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিংওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কোরবানি করলেন ; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কোরবানি করেছেন। [৩৪] মৃত ব্যক্তি যদি তার সম্পদ থেকে কোরবানি করার অসিয়ত করে যান তবে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। ১২ - অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা যাকে ‘ভাগে কোরবানি দেয়া’ বলা হয়। ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তি একটা কোরবানি করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের নামে সাতটি কোরবানি করা যাবে। ইতিপূর্বে জাবের রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে। অংশীদারি ভিত্তিতে কোরবানি করার দুটি পদ্ধতি হতে পারে : (এক) সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া। যেমন কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল। অত:পর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল। বকরির মালিক বকরিটি কোরবানি করল। যে কজন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সওয়াবের অংশীদার হল। (দুই) মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি। দু জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কোরবানি করল। এ অবস্থায় কোরবানি শুদ্ধ হবে না। অবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েজ আছে। মনে রাখতে হবে কোরবানি হল একটি এবাদত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়,সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে। কোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কোরবানির উদ্দেশ্য হল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা। তাই, আমরা দেখলাম কীভাবে রাসূলুল্লাহ সা. গোশতের বকরি ও কোরবানির বকরির মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করলেন। তিনি বললেন যা সালাতের পূর্বে জবেহ হল তা বকরির গোশত আর যা সালাতের পরে জবেহ হল তা কোরবানির গোশত। ১৩ - কোরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন হাদিসে এসেছেঃ উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে—‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে।’ [৩৫] কোরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন : কোরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : ‘কোরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ [৩৬] যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কোরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে। ১৪ - কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মাবলি কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করবেন, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. নিজে জবেহ করেছেন। আর জবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কোরবানি নিজে জবেহ করার চেষ্টা করা উচিত। ইমাম বোখারি রহ. বলেছেন : ‘সাহাবি আবু মুসা আশআরী রা. নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কোরবানির পশু জবেহ করেন।’ [৩৭] তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কোরবানির পশু জবেহ করতে পারেন। তবে কোরবানি পশু জবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েজ আছে। কেননা সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা. তেষট্টিটি কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করে বাকিগুলো জবেহ করার দায়িত্ব আলী রা.-কে অর্পণ করেছেন। [৩৮] জবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয় (১) যা জবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে ,সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. বলেছেন : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা জবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। [৩৯] (২) যদি উট জবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হল উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।’ [৪০] ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এর অর্থ হল তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে। [৪১] উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে। মোস্তাহাব হল জবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতিপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বোখারির হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে। (৩) জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।’[৪২] জবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদিসে এসেছে:— জাবের রা. থেকে বর্ণিত ... একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ স. নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ ! এটা আমার পক্ষ থেকে। এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।’[৪৩] অন্য হাদিসে এসেছে— রাসূলুল্লাহ সা. দুটি শিংওয়ালা ভেড়া জবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। [৪৪] জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—اللّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ—(হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য) বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ আছে। এ ভাবে বলা—‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।’ যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দুম্বা জবেহ করার সময় বললেন :— ‘আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।’ [৪৫] কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :— ‘অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।’[৪৬] রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন :— ‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ [৪৭] ‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন : কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব। কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’—বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হল দুর্ভিক্ষ।দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েজ হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কোরবানি দাতা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে। কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েজ নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়। হাদিসে এসেছে :— ‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না।’ [৪৮] তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েজ হবে না। ১৫ - আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয় আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। আইয়ামুত তাশরীক এর ফজিলত এ দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নীচে আলোচনা করা হল :— (১) এ দিনগুলো এবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন :— ‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ [৪৯] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন :— ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—‘নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।’ [৫০] ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন : ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোন দ্বি-মত নেই।[৫১] আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদিসে এসেছে— মিনায় অবস্থানের দিন হল তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই।[৫২] হাদিসে এসেছে— নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকিরের দিন।’[৫২] ইমাম ইবনে রজব রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন : আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নেয়ামত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে। [৫৪] (২) আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদিসে এসেছে— ‘সাহাবি উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন: আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও মিনার দিন সমূহ (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।’ [৫৫] (৩) এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফজিলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। (৪) এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী। আইয়ামুত তাশরীকে করণীয় এ দিনসমূহ যেমনি এবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন।’ [৫৬] এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা। জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে। (১) সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিন। আর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও। (২) কোরবানি ও হজের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা। (৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তাআলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া। (৪) হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবীর পাঠ করা। (৫) এ গুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা ------------------------------------------------------------------------------------------------------------- সংকলনঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুররহমান সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান [১]আবু দাউদ-১৯৪৫, হাদিসটি সহিহ [২]আবু দাউদ-১৮৬৫, হাদিসটি সহিহ [৩]লাতায়েফুল মাআরিফ : ইবনে রজব র., পৃ- ৪৮২-৪৮৩ [৪]সূরা জারিয়াত : ৫৬ [৫]ফতহুল মজিদ : ১৭ [৬]সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩ [৭]সূরা কাওসার : ২ [৮]মুসলিম, শরহে নবভী [৯]সূরা মায়িদাহ : ৩ [১০]আবু নঈম, আহমদ [১১]সূরা মায়েদা : ৭২ [১২]সূরা কাওসার : ২ [১৩]সূরা আনআম ঃ ১৬২-১৬৩ [১৪]বোখারি- ৫৫৪৫, মুসলিম-১৯৬১ [১৫]বোখারি-৫৫৬৫, মুসলিম-১৯৬৬ [১৬]আহকামুল উযহিয়্যা : মুহাম্মদ বিন উসাইমীন, পৃ- ২৬ [১৭]সূরা কাওসার : ২ [১৮]মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৩ হাদিসটি হাসান [১৯]মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৫ হাদিসটি হাসান [২০]মুসলিম- ১৯৭৭ [২১]সূরা হজ্ব : ৩৭ [২২]সূরা হজ্ব : ৩৪ [২৩]মুসলিম- ১৯৬৩ [২৪]ইবনে মাজা- ৩১৩২, হাদিসটি সহিহ [২৫]তিরমিজি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদিসটি সহিহ [২৬]বোখারি- ৯৬৫ [২৭]বোখারি- ৯৮৫ [২৮]বোখারি- ৫৫৬২ [২৯]সূরা হজ্ব : ২৮ [৩০]ফাতহুল বারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৬১ [৩১]আহমদ- ৪/৮২, হাদিসটি সহিহ [৩২]যাদুল মাআদ, ২য় খন্ড, পৃ-৩১৯ [৩৩]বোখারি-১৩৩৮, মুসলিম-১০০৪ [৩৪]ইবনে মাজা, হাদিসটি সহিহ [৩৫]মুসলিম-১৯৭৭ [৩৬]আহকামুল উযহিয়্যাহ : ইবনে উসাইমীন। পৃ-৭৭ [৩৭]ফাতহুল বারী ১০/২১ [৩৮]মুসলিম- ১২১৮ [৩৯]মুসলিম-১৯৫৫ [৪০]সূরা হজ : ৩৬ [৪১]তাফসীর ইবনে কাসির [৪২]সূরা আনআম : ১১৮ [৪৩]আবু দাউদ [৪৪]সুনানে দারামী- ১৯৮৮, হাদিসটি সহিহ [৪৫]মুসলিম- ১৯৬৭ [৪৬]সূরা হজ্ব-২৮ [৪৭]বোখারি-৫৫৬৯ [৪৮]বোখারি -১৭১৬ মুসলিম-১৩১৭ [৪৯]সূরা বাকারা : ২০৩ [৫০]ফতহুল বারী, ঈদ অধ্যায় [৫১]তাফসীর কুরতুবী [৫২]আবু দাউদ- ১৯৪৯, হাদিসটি সহিহ [৫৩]মুসলিম- ১১৪১ [৫৪]লাতায়েফুল মাআরেফ : ইবনে রজব র. পৃ-৫০৪ [৫৫]আবু দাউদ-২৪১৩, হাদিসটি সহিহ [৫৬]মুসলিম-১১৪১ http://www.quraneralo.com/
  2. বছরের শ্রেষ্ঠ ১০ দিনে করণীয় ১০ আমল QuranerAlo.com Website - - আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এ উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন- যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন। যে কারণে এই দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন ১. আল্লাহ তা‌‘আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ, মহা সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন, ‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ {সূরা আল-ফাজর, আয়াত : ১-২} আয়াতে ‘কসম দশ রাতের’ বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ মতটিই সঠিক। ২ এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আ বলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ {সূরা আল-হজ, আয়াত : ২৮} জমহূর উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ও ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত। ৩. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২০৯০] ৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন : আরাফার দিন হলো বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আরাফা দিবসই হজ’। [তিরমিযী : ৮৯৩; নাসায়ী : ৩০১৬] ৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনো কোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬] ৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে : হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০] এই দশটি দিনের আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭] আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ [মুসনাদ আমহদ : ১৩২; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪] অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘যিলহজের (প্রথম) দশদিনের মতো আল্লাহর কাছে উত্তম কোনো দিন নেই। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ [সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/১৫; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৩] এ হাদীসগুলোর মর্ম হল, বছরে যতগুলো মর্যাদাপূর্ণ দিন আছে তার মধ্যে এ দশ দিনের প্রতিটি দিনই সর্বোত্তম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনসমূহে নেক আমল করার জন্য তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর এ উৎসাহ প্রদান এ সময়টার ফযীলত প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ওপরে ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে। ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসেবে যিলহজ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় أَحَبُّ (‘আহাব্বু’তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনো কোনো বর্ণনায় أَفْضَلُ (‘আফযালু’ তথা সর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়ে নেক আমল করার থেকে বেশি মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তী পুণ্যবান মুসলিমগণ এ সময়গুলোতে অধিকহারে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন আবূ ছিমান নাহদী বলেন, ‘তাঁরা অর্থাৎ সালাফ তথা পূর্বসূরীগণ দিনটি দশককে অনেক বেশি মর্যাদাবান জ্ঞান করতেন : রমযানের শেষ দশক, যিলহজের প্রথম দশক এবং মুহাররমের প্রথম দশক।' এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর ১০টি উপায় প্রতিটি মুসলিমের উচিত ইবাদতের মৌসুমগুলোকে সুন্দর প্রস্তুতির মাধ্যমে স্বাগত জানানো। যিলহজ মাসকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি নিচের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে : এ দশ দিন যে আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিতঃ ১. এই দশটি দিন কাজে লাগাতে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা : শুরুতেই যা করা সবার উচিত তা হল, এই দিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায় সুশোভিত করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি কোনো কাজের সংকল্প করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। তার জন্য সাহায্যকারী উপায় ও উপকরণ প্রস্তুত করে দেন। যে আল্লাহর সঙ্গে সত্যবাদিতা দেখায় আল্লাহ তাকে সততা ও সফলতায় ভূষিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ {সূরা আল-আ‘নকাবূত, আয়াত : ৬৯} ২. হজ ও উমরা সম্পাদন করা : হজ ও উমরা এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যারা এ দিনগুলোতে হজ আদায়ের সুযোগ পেয়েছেন তারা যে অনেক ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ যাকে তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় হজ বা উমরা করার তাওফীক দান করেন তার পুরস্কার শুধুই জান্নাত। কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এক উমরা থেকে আরেক উমরা এতদুভয়ের মাঝের গুনাহগুলোর কাফফারা এবং মাবরূর হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’[বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ৩৩৫৫] আর মাবরূর হজ সেটি যা পরিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয় রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায়। যাতে কোনো রিয়া বা লোক দেখানো কিংবা সুনাম বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর মানসিকতা নেই। নেই কোনো অশ্লীলতা বা পাপাচারের স্পর্শ। যাকে বেষ্টন করে থাকে নেক কাজ ও পুণ্যময় আমল। ৩. সিয়াম পালন করা : মুসলমানের জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন করা। সাওম আল্লাহর অতি প্রিয় আমল। হাদীসে কুদসীতে সিয়ামকে আল্লাহ নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, সিয়াম ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু সিয়াম ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ।’[বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ২৭৬২] সাওম যে এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন ও আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা আমরা অনুধাবন করতে পারি আমরাএ হাদীস থেকে। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনের সাওমের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’ [মুসলিম : ১১৬৩] এ হাদীসের ভিত্তিতে যিলহজের নয় তারিখ সাওম পালন করা সুন্নত। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এসব দিনে সাওম পালন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব। কোনো কোনো দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, যিলহজ মাসের সাত, আট ও নয় তারিখে সাওম পালন করা সুন্নত। কিন্তু সাওমের জন্য এ তিন দিনকে নির্দিষ্ট করার কোনো প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে পারে। ৪. সালাত কায়েম করা : সালাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানীত ও মর্যাবান আমল। তাই এ দিনগুলোতে আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত ফরয সালাতগুলো জামাতে আদায় করতে। আরও চেষ্টা করা দরকার বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতে। কারণ, নফল সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচে বেশি নৈকট্য হাসিল করে। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে,আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা-সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা-সংকোচ করি মুমিন বান্দার প্রাণহরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।’ [বুখারী : ৬৫০২] ৫. দান-সাদাকা করা : এ দিনগুলোতে যে আমলগুলো বেশি বেশি দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাদাকা। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাদাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৪} আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘সাদাকা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন।’ [মুসলিম : ৬৭৫৭] ৬. তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’[বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪] তাকবীরের শব্দগুলো নিম্নরূপ : (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।) উল্লেখ্য, বর্তমানে তাকবীর হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যাক্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত। আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারণা চালানো। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতসমূহ থেকে একটি সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে সে পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যে পরিমাণ তার ওপর (সে সুন্নতের ওপর) আমল করা হয়েছে। এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ [তিরমিযী : ৬৭৭] যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ ও আলী রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে এ মতটি বর্ণিত। ইবন তাইমিয়া রহ. একে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত বলেছেন। উল্লেখ্য, যদি কোনো ব্যক্তি ইহরাম বাঁধে, তবে সে তালবিয়ার সাথে মাঝে মাঝে তকবীরও পাঠ করবে। হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত। [ইবন তাইমিয়াহ, মজমু‘ ফাতাওয়া : ২৪/২২০] ৭. পশু কুরবানী করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন।’ {সূরা আল-কাউসার, আয়াত : ০২} এই দশদিনের অন্যতম সেরা প্রিয় আমল হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই ও গরিবদের মধ্যে এর গোশত বিতরণের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এর দ্বারা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায় এবং তাদের কল্যাণ সাধন হয়। ৮. গুনাহ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা : সৎ কর্মের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, গুনাহের কাজের মাধ্যমে তেমন আল্লাহ থেকে আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ তার নিজের করা অপরাধের কারণে কখনো আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা যদি অপরাধ মার্জনা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশী হই, তাহলে এ দিনগুলোতে এবং এর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বছরের অন্য দিনগুলোতে গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। কেউ যখন জানতে পারেন কী বড় অর্জনই না তার জন্য অপেক্ষা করছে, তার জন্য কিন্তু যে কোনো কষ্ট সহ্য করা সহজ হয়ে যায়। ৯. একনিষ্ঠ মনে তওবা : তওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। যে সব কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অপছন্দ করেন তা বর্জন করে যেসব কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করেন তার দিকে ফিরে আসা। সাথে সাথে অতীতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে অন্তর থেকে অনুতাপ ও অনুশোচনা ব্যক্ত করা। যিলহজের শুভাগমনের আগে সবচে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এ তওবা তথা সকল গুনাহ থেকে ফিরে আসার প্রতি। স্বার্থক তওবা সেটি যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা- প্রথম. গুনাহটি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা। দ্বিতীয়. গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এবং তৃতীয়. এই গুনাহটি ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা। "বাস্তবেই এটি তওবার সুবর্ণ সময়। দয়াময় খোদা এ সময় বেশি বেশি তওবার তাওফীক দেন এবং অধিক পরিমাণে বান্দার তওবা কবুল করেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তবে যে তাওবা করেছিল, ঈমান এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (কাসাস : ৬৭) "তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {যুমার : ৫৩} অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোন, আপনি এ দিনগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হোন। সময় চলে যাওয়ার পর আফসোস না করতে চাইলে যিলহজ মাস আসার আগেই এতে অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিন। অন্য সাধারণ আমল বেশি বেশি করা : উপরে যে নেক আমলগুলোর কথা উল্লেখ করা হলো এসব ছাড়াও কিছু নেক আমল আছে যেগুলো দিনগুলোতে বেশি করা যায়ঃ যেমন : কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, দু‘আ, দান-সাদাকা, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার, আত্মীয়তার হক আদায় করা, মা-বাবার সখী-সখার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, সালামের প্রচার ঘটানো, মানুষকে খাবার খাওয়ানো, প্রতিবেশিদের প্রতি সদয় আচরণ করা, মেহমানকে সম্মান করা, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, অন্যকে কষ্ট না দেওয়া, অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করা, অসাক্ষাতে অন্য ভাইয়ের জন্য দু‘আ করা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া, পরিবার ও সন্তানদের জন্য অর্থ ব্যয় করা, আরও যেসকল আমল করতে পারেন সেগুলো হল; অধিনস্তদের প্রতি সদয় হওয়া, ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা, হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া, সালাতগুলোর পরে আল্লাহর জিকির করা, সুন্দরভাবে অযূ করা, আযান ও ইকামতের মাঝখানে দু‘আ করা, জুমাবারে সূরাতুল কাহফ পড়া, মসজিদে গমন করা, সুন্নত সালাতগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আদায় করা, ঈদগাহে গিয়ে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা, হালাল উপার্জন করা, মুসলিম ভাইদের আনন্দ দেওয়া, দুর্বলদের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া, কৃপণতা পরিহার করা, ভালো কাজে পথ দেখানো, ছেলে-মেয়েদের ‌সুশিক্ষা দেওয়া, কল্যাণকাজে মানুষকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। এসবের প্রতিটিই ঈমান ও আল্লাহর মুহাব্বত বৃদ্ধি করে ফলে আল্লাহও তাকে বেশি ভালোবাসেন। এসবই একজন মুমিনের চরিত্র মাধুরীর অংশ। এসবের মাধ্যমে একজন মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। আল্লাহ এসবের মাধ্যমে দান করেন আত্মিক প্রশান্তি- প্রতিটি আল্লাহ-ভোলা মানুষই যার শূন্যতায় ভোগে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সেসব ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন যারা এই সুবর্ণ সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। আমীন। -------------------------------------------------------------------- মূল :যিলহজের প্রথম দশক : ফযীলত ও আমল লেখক : আলী হাসান তৈয়ব সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সংকলন : সরল পথ
  3. THEY: Hunting slaves in the villages that were surrounded by the jungle was done by lighting fires in the straw of which the corrals surrounding the villages were made, then when the villagers fled to open land, THE BRITISH HUNTED THEM DOWN WITH WHATEVER MEANS THEY HAD AT THEIR DISPOSAL. - The Encyclopaedia Britannica (2/779) on the topic of SLAVERY. WE: It was narrated that Abu Dharr (may Allaah be pleased with him) said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “They (slaves) are your BROTHERS whom Allaah has put under your authority, so if Allaah has put a person’s brother under his authority, let him FEED HIM FROM WHAT HE EATS and CLOTHE HIM FROM WHAT HE WEARS, and let him not OVERBURDEN him with work, and if he does overburden him with work, then let him HELP HIM.” Narrated by al-Bukhaari (6050). It was narrated that Abu Hurayrah (may Allaah be pleased with him) said: I heard Abu’l-Qaasim (peace and blessings of Allaah be upon him) say: “Whoever accuses his slave when he is INNOCENT of what he says will be FLOGGED on the Day of Resurrection, unless he is, as he said.” Narrated by al-Bukhaari (6858). I Love Allah blog
  4. Hajj & Hope* By: Br. Sadullah Khan Many of those intending pilgrimage this year are about to embark on that life-enhancing journey to hajj, that largest annual convention of faith; where millions of Muslims gather in the holy land, merging as streams of devotees from every corner of the earth to become part of the sea of Believers, spiritually swirling in human waves around the Ka'bah in tawaaf. Each individual pilgrim is a drop in that ocean; an ocean that knows no barrier of race, nor language, color, gender, age or time. The Hajj ... demonstrates universal Islamic fraternity acquaints pilgrims with historical and spiritual environment of Prophet Ibrahim (Alaihis-salam), Hajirah, Prophets Isma'il and Muhammad (sall'Allahu alaihi wa sallam) re-enacts fundamental aspects of our history reminds of the ‘Grand Assembly' on the Day of Judgment Hajj, Family and Future Abraham (Alaihis-salam) was the first to "announce the pilgrimage" [Qur'an 22:27], while most hajj rites also focus on Abraham (Alaihis-salam) and his family. Ibrahim (Alaihis-salam), Hajirah and Isma'il, played a major role in the re-establishment of tawhid/monotheism in Makkah and much of the annual pilgrimage/hajj undertaken by believers are symbolic re-enactments of significant phases in their life; and this include the tawaaf (circumambulation of the Ka'bah), the sa'iy (running between the hills of Safa and Marwa), the udhiyah (sacrifice of animals). The story of Prophet Ibrahim (Alaihis-salam), Hajar and Isma'il is about.. - the establishment of tawhid - the struggle of a family to survive - about community, about the hope, about preparation for future generations This family in that wadi ghayri dhi dhar'in ‘ind baytikal muharram / "barren valley near the sacred house" [Q14:37] established the foundation of sound belief for the ideological guidance of generations to come; as a well as the blessing of the well of zamzam which is a source of life and living, a source of hope for generations to this day and beyond. We send salutation on Prophet Ibrahim (Alaihis-salam) and the family as we send salutation on Prophet Muhammad (sall'Allahu alaihi wa sallam) and his family. Rituals and Beyond The performance of prescribed rites (manaasik), at specified times, at particular places in a recommended manner is aimed at reflecting a wholesome demonstration of Muslim brotherhood and sisterhood. It familiarizes the pilgrim with the historic, spiritual and physical environment of Adam and Hawa/Eve, of Ibrahim (Alaihis-salam), Isma'il and Hajirah and of Prophet Muhammad (sall'Allahu alaihi wa sallam). By re-enacting some of the significant elements/moments/aspects of the best of our history (Hajirah's running in search for water, Prophet Ibrahim (Alaihis-salam)'s preparedness to sacrifice his willing and obedient son Isma'il or Abraham (Alaihis-salam)'s pelting of the shaytaan, thereby symbolically declaring war against evil; all this identifies us with the best of our past and the lessons we need to learn from our great legacy. Perpetuating the Abrahamic Legacy We, as Muslims have the responsibility of continuing the legacy of Prophet Ibrahim (Alaihis-salam), which was perpetuated by Prophet Muhammad (sall'Allahu alaihi wa sallam). We need to be of those who transmit .. the principles of tawhid be concerned about the (physical, spiritual and moral) survival of our community be engaged in manifesting hope for future generations. Though the statement of the Prophet stating that "Islam is based on five pillars" is well-known, most of us do not pay attention to the wider philosophy behind it. Islam is not just about these five pillars. The Prophet is trying to direct us to understand that the pillars serve as our base but there is a structure on top of these pillars. We need to realize that most of Islam is beyond of the masjid. We are Muslims for 24 hours each day, as Allah says "I have created you just to worship me". prayers takes only 15 minutes of our time, what about rest of the hours in the day? Islam is something that needs to be expressed outside wherever we are. An example can be found in the story of Prophet Yusuf when the inmates who were with him in jail saw a dream and went to him for its meaning, as they remarked that they noticed his goodness and his ability to tell the truth in such matters إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ [Q 12:36]. We should therefore heed ... وَلاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاَحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَتَ اللّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ Do not cause mischief/corruption on earth after it has been set proportionately in order; rather call upon the Almighty with deep consciousness and heartfelt desire. Surely, Allah is near to those who do good. [Qur'an 7:156] Look at the major issues affecting the world ... Global Climate Change is the single biggest threat to the planet and will affect everyone on Earth. Nuclear War could destroy the human civilization The United Nations Joint Program on AIDS (UNAIDS) estimates that since the start of the global HIV pandemic over 30 million people have been infected with HIV. Over 3 million people die annually due to AIDS, and it is estimated that 25 million children will be orphaned due to AIDS by 2010. In the past decade, more than 4million children have been killed due to war (31 000 a month), and 6 million have been seriously injured or disabled due to war. The onset of war inflates the average child death rate up to 24 times. Thousands die as the result of direct violence; millions more die from indirect consequences, including destruction of food supply, water systems, health services and sanitation. Approximately 1 million children have been orphaned by war in the past decade and an additional 4 million have been subjected to physical mutilation and torture. Hunger, Starvation, Lack of Water. Hunger, poverty, and homelessness are sources of desperation in all parts of the world. Most victims of these social ills are found in developing countries. Consider these statistics from the United Nations Development Program (UNDP):Worldwide: - nearly 800 million people do not get enough food daily - half a billion people suffer from some form of malnutrition, 250 million of these are children of preschool age. Talking about children, recent UNICEF and Save the Children reports indicate that ... 34,000 of the world's children die each day from starvation and related causes Every three seconds, poverty takes at least one child's life, resulting in 30,000 deaths each day. 11 million children every year and more than 5 million of these are un Only 1% of the world's water is usable to us. About 97% is salty sea water, and 2% is frozen in glaciers and polar ice caps. Thus that 1% of the world's water supply is a precious commodity necessary for our survival. Dehydration (lack of water) will kill us faster than starvation (lack of food). Since the plants and animals we eat also depend on water, lack of it could cause both dehydration and starvation. More than one billion people worldwide lack access to clean water and over two billion do not have adequate sanitation facilities. During the past 10 years more people have died from lack of clean water than in armed conflict. 2.4 billion people - or just under half the world's population - have no adequate water supply for daily needs. The World Resources Institute predicts that by 2025, at least 3.5 billion people, or nearly 60 percent of the world's population, will face water scarcity. Prioritize The case of the English school teacher Gillian Gibbons indicates how some people are often more passionate about non-issues than about the real issues. People are dying in Sudan, there is internal strife, hunger... and people are emotionally over-charged over a teddy-bear being used as a teaching tool being called by the name of Muhammad (sall'Allahu alaihi wa sallam); a name chosen by the school students due to the popularity of the name in that area. The teacher is accused of publicly insulting or degrading religion, its rites, beliefs and sacred items or humiliating its believers -- she may face up to six months in jail, 40 lashes and a fine. We must ensure that we never lose our sense of priorities, focusing on major issues, then minor issues; always avoiding non-issues from our priority list. There are enough major issues affecting the world, let's start there. The Crucial Question How are we, the perpetuators of the tradition of Prophet Ibrahim (Alaihis-salam) responding to these crises? How are we engaging in the affairs of community, in bringing about hope,and laying the groundwork in preparation for future generations? Glory to the Almighty Glory be to Allah for making the Ka'bah the meeting of the ummah, for making hajj the key expression of solidarity among Believers and as a manifestation of the bond of fraternity and mutual affinity. All praise is due to Allah for making this unique, international gathering of hajj an inexhaustible source for spiritual revival and as a continuous re-affirmation of faith and may Allah accept the hajj of all who are going. [ The Messenger of Allah (sal Allahu alaihi wa sallam) said, “When Allah wishes good for someone, He bestows upon him the understanding of the Deen.” [bukhari]
  5. ৫. খাওয়া, ঘুম ও কথা - যত কম তত ভাল: আমরা আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি যে ছাত্ররা অবশ্যই কম খাবে ও যা হালাল তা খাবে। পেটের লোভ থেকে মুক্তি পাবার উপায় হলো অল্পতে খুশী থাকা। একজন ধীরে ধীরে তার খাওয়া কমাবে যেন পরিমিত পর্যায়ে সে আসতে পারবে - মধ্যম পন্থাই সেরা। সে এই পরিমাণ খাবে যেন শক্তি বজায় থাকে ও ইবাদত ঠিকমতো করতে পারে। সে অনাহারেও থাকবে না আবার ভরপেটও খাবে না। তখন সে সুস্থ থাকবে, তার আকাংখা উঁচু স্তরে যাবে ও বিবেক পরিষ্কার থাকবে। সে যদি পরিমিত মাত্রার চেয়ে বেশী খায়, তাহলে সে বেশী ঘুমাবে ও তার বুদ্ধিমত্তা নীচু স্তরে থাকবে। খাওয়া হালাল হওয়াটা সব মুসলমানের জন্য দরকার, বিশেষ করে যারা জ্ঞানের সন্ধানে আছে তাদের জন্য আরো বেশী দরকার। কেননা, এরা হলো হালাল – হারামের জ্ঞানের সুরক্ষিত স্থান। আমরা আগেই বলেছি খাওয়া ও পানীয়ের বিষয়ে কিভাবে সাবধান হওয়া উচিত। রাসূল صلى الله عليه وسلم কিভাবে একটি খেজুর খেতে গিয়েও খান নি এই ভেবে যে, হয়তো সেটি দানের আর দান গ্রহণ নবী صلى الله عليه وسلم এর জন্য বৈধ ছিল না। খাওয়া নিয়ে বেশী চিন্তা করার সময় নেই যে ছাত্রের, সে মোটা হবে না। বরং জ্ঞানের প্রতি অনুরাগে সে খাওয়ার কথা ভুলে থাকবে। শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ কখনো খাবার চাইতেন না। তিনি জ্ঞান চর্চায় এতটাই মগ্ন থাকতেন যে খাবার দেয়া হলে অনেক সময় তা পড়ে থাকতো। মাঝেমাঝে তিনি সেখান থেকে অল্প কিছু নিয়ে খেতেন। তিনি কখনো এই দুনিয়ার ভোগ – বিলাস – আনন্দ নিয়ে কিছু বলতেন না বা এসব কিছু চাইতেন না। বরং তার সব ভাবনা ও কথাবার্তা ছিল পরকালকে নিয়ে এবং কিভাবে আল্লাহর আরো ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যাওয়া যায় সেটা নিয়ে। আন নুমান বিন বাসির বলেন, উমর বিন আল খাত্তাব رضي الله عنهم বলেছিলেন কিভাবে মানুষ অভাবের সাথে লড়াই করতো। রাসূল صلى الله عليه وسلم একবার সারাদিন অনাহারে কষ্ট পান - নীচু মানের কোন খেজুরও তিনি সেদিন খেতে পারেন নি ( সহীহ মুসলিম )। আবু হুরায়রা رضي الله عنهم একবার একদল মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা ভেড়ার ভাজা মাংস খাচ্ছিলো। তারা তাকে দাওয়াত দিলে আবু হুরায়রা রাজী হলেন না। তিনি বললেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم এই দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছেন পেট ভরে এমন কি রুটি না খেয়েই ( সহীহ বুখারী )। আনাস বিন মালিক رضي الله عنهم বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم কখনো টেবিলে বসে বা একাকী প্লেটে কিছু খান নি। তিনি আমৃত্যু চিকন, ভালভাবে ভাজা রুটি কখনো খান নি ( সহীহ বুখারী )। ঘুম ছাত্ররা ঘুমের সময় কমাবে এতদূর পর্যন্ত যেন শরীর – মনের ক্ষতি না হয়। আট ঘন্টার বেশী তার ঘুমানো উচিত না। সারাদিনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় এটি ও যদি সম্ভব হয় সে আরো কম ঘুমাবে। আস যারলুমি رضي الله عنهم বলেন: আল হাসান বিন যিয়াদ আশি বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেন। এর পরের চল্লিশ বছর তিনি সারা রাত বিছানায় ঘুমান নি। মুহাম্মদ বিন আল হাসান আশ সায়বানী (রহঃ) রাতে একদমই ঘুমাতেন না। তিনি নিজের সামনে অনেক বই রাখতেন। যদি কোন বই পড়তে পড়তে বিরক্তি বোধ করতেন, তাহলে অন্য বই নিয়ে পড়তে শুরু করতেন। তিনি সামনে পানি রাখতেন ঘুম তাড়ানোর জন্য, বলতেন: ঘুম আসে গরম থেকে আর একজন শীতল পানি দিয়ে ঘুম তাড়াবে। আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ ঘুমাতে যায়, তখন শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি বাঁধন দেয় এই বলতে বলতে যে -তোমার সামনে অনেক লম্বা রাত রয়েছে, তাই ঘুমাতে থাকো। কেউ যখন জেগে উঠে আল্লাহর নাম নেয়, তখন একটি বাঁধন ঢিলা হয়। সে যদি উযু করে, তখন দুইটি বাঁধন ঢিলা হয়। সে যদি সালাত আদায় করে তাহলে সব বাঁধন ঢিলা হয়ে যায় ও সকালে সে ভাল মেজাজে থাকে ও কাজ করতে পারে। তা না হলে সে খারাপ মেজাজে থাকে ও সকালে অলসতা বোধ করবে ( বুখারী ও মুসলিম )। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ رضي الله عنهم বলেন, এক লোকের কথা বলা হয়েছিল যে সকাল হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল। রাসূল صلى الله عليه وسلم এ নিয়ে বলেছেন, এমন মানুষের কানে শয়তান পেশাব করে ( বুখারী ও মুসলিম )। আল্লাহ সঠিক পথের মানুষদের প্রশংসা করেছেন, তারা ভাল কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন - সেটা হলো তারা রাতে কম ঘুমায় ( সূরা যারিয়াত; ৫১: ১৫-১৯ )। ইবনে কাসির رضي الله عنهم বলেন, আল্লাহ যে বলেছেন “ তাদের রব যে সম্পদ দান করেছেন, তারা তা উপভোগ করবে ” - যেহেতু তারা সঠিক পথের মানুষ ছিল,তারা বেহেশতে রবের দেয়া সব ধরণের আনন্দ, রহমত ভোগ করছে। আল্লাহর এই কথা ‘ অবশ্যই তারা ছিল ’ বোঝাচ্ছে দুনিয়ার জীবনের কথা। তারা ‘ ভাল কাজ করে ’ বলতে বোঝানো হয়েছে যা সূরা হাক্কাতেও বলা হয়েছে “ পানাহার করো তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে ( ৬৯: ২৪ )। আল্লাহ বলেছেন তারা কী ভাল কাজ করতো - ‘রাতে তারা কম ঘুমাতো ’। ইবনে জারীর আল বাসরী বলেন: তারা ইবাদতের জন্য রাত জাগে ও ‘ খুব কমই ঘুমায় ’। আল হাসান আল বাসরী (রহঃ) বলেন: তারা রাত জেগে ইবাদত করে ও খুব অল্প সময় ঘুমায়। এরপর সামর্থ্য থাকলে তারা ইসতিগফার করে ভোর হওয়া পর্যন্ত। আশ সাদী رضي الله عنهم বলেন, তারা ভাল কাজ করতো, খুব কম বিশ্রাম নিত ও ঘুমাতো। রাতে বেশীরভাগ সময় তারা রবের প্রতি মনোযোগী থাকে - সেটা হয় সালাত, নয়তো কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, দুআ, আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া ইত্যাদি। শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে মাফ চায় যেন তারা সকাল না হওয়া পর্যন্ত ইবাদত করে যেতে পারে। এরপর তারা রাতের ইবাদত শেষ করে ইসতিগফার করে – ইসতিগফার হলো পাপের জন্য তওবাহ করা। যে জ্ঞানের সন্ধান করছে, বেশী ঘুম তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য না। তারা এ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকবেন। তারা চিন্তাশীল ও নিবেদিতপ্রাণ হবেন। যত ভাল কাজই তারা করুন না কেন, তাতে তারা সন্তুষ্ট হবেন না যতক্ষণ না বেহেশতে যেতে পারছেন। রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আন –নাওয়ায়ী বলেন, কেউ কিছু বলতে চাইলে সেটাই বলবে যা ভাল, প্রশংসার যোগ্য; ফরয বা যা বলতে সুপারিশ করা হয়েছে। এমন কিছু সে বলবে না যা বলা নিষেধ, অপছন্দীয় বা বলার অনুমতি আছে - তবে এসবই এক। এসব ক্ষেত্রে যা বলার অনুমতি আছে সেটা বলবে না এই ভয় থেকে যে, তা হয়তো নিষিদ্ধ বা অপছন্দীয় কথাবার্তার দিকে নিয়ে যাবে - এমনটি ঘটে। উপরের হাদীসের আলোকে ইমাম শাফেয়ী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন, তুমি যদি কিছু বলতে চাও, তবে আগে চিন্তা করো। যদি মনে করো এতে কোন ক্ষতি নেই, তাহলে তা বলো। যদি মনে করো এটা বললে ক্ষতি হবে, তাহলে চুপ থাকো। ইবনে হাজার رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم অল্প কথায় এই হাদীসে অনেক কিছু বুঝিয়েছেন। কথা হয় ভাল বা খারাপ বা এই দুইয়ের যে কোন একটির দিকে হেলে থাকে। ভাল কথার অন্তর্ভূক্ত হলো যা ফরয বা সুপারিশ মুলক। রাসূল صلى الله عليه وسلم এটা বলতে বা যে কথা এদিকে নিয়ে যাবে তা বলার অনুমতি দিয়েছেন, যদিও এটা অনেক রকমের হয়। খারাপ কথা বা যা খারাপ কথার দিকে নিয়ে যাবে, তা বলতে রাসূল صلى الله عليه وسلم মানা করেছেন। ইবনে আল বার رضي الله عنهم বলেন, জ্ঞানীরা যে সব পরীক্ষার মুখোমুখি হোন তার একটি হলো, তিনি শোনার চেয়ে কথা বলতে বেশী পছন্দ করেন। ইয়াযিদ বিন আবু হাবিব বলেন: শোনা হলো নিরাপদ ও তা একজনের জ্ঞান বাড়ায়। যে শুনে সে বক্তার অংশীদার। কথা হলো দ্বিধা ও প্রতারণা, বাহুল্য ও অভাববোধের সমন্বয়। যে কথা বলে সে ফিতনার অপেক্ষায় থাকে; যে শুনে সে ক্ষমার অপেক্ষায় আছে। আবু আদ যিয়াল বলেন: চুপ করে থাকতে শিখো যেভাবে তুমি কথা বলতে শিখেছো, কেননা যদি কথা তোমাকে পরিচালিত করে, তবে নীরবতা তোমাকে বাঁচাবে। চুপ থাকলে তুমি দুইটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে: তোমার থেকে যারা বেশী জ্ঞানী তাদের থেকে তুমি জ্ঞান নিতে পারবে; আর তোমার থেকে যে অজ্ঞ, তার অজ্ঞতা তুমি নেবে না। ভাল কথা বলা সওয়াবের কাজ ও নীরবতা থেকে উত্তম। কেননা, নীরবতা সবচেয়ে ভাল জিনিষ যা দিতে পারে তা হলো নিরাপত্তা আর ভাল কথা বললে তুমি অতিরিক্ত কিছু পাবে। বলা হয় - ভাল কথা যে বলে সে জয়ী হলো; যে চুপ থাকে সে নিরাপদ থাকলো। জ্ঞান নিয়ে কথা বলা সবচেয়ে ভাল কাজগুলির অন্তর্ভূক্ত। এটি যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের একই স্তরের - যদি তা অজ্ঞতা দূর, আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন ও যা বলা হয়েছে তার যথার্থ মানে আবিষ্কারের জন্য করা হয়। সালমান رضي الله عنهم এর কাছে এক লোক এসে বললো: আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, কথা বলবে না। লোকটি বললো: যে মানুষের মধ্যে থাকে, তার জন্য কথা না বলা অসম্ভব। সালমান رضي الله عنهم জবাব দিলেন, তাহলে তুমি যখন কথা বলবে,তখন যা ঠিক তাই বলবে। তা নইলে চুপ থাকবে। লোকটি বললো, আরো কিছু বলুন। সালমান رضي الله عنهم বললেন, রাগ করবে না। লোকটি জানালো, আপনি আমাকে বলছেন রাগ না করতে কিন্তু আমি মাঝেমাঝে খুব রেগে যাই আর কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারি না। সালমান رضي الله عنهم বললেন, তাহলে যখন তুমি রাগ করো, কমপক্ষে তোমার জিহবা ও হাতকে সংযত রেখো। লোকটি বললো, আমাকে আরো বলুন। সালমান رضي الله عنهم বললেন, মানুষের সাথে মিশবে না। লোকটি বললো, মানুষের মধ্যে যে বাস করে, সে তাদের সাথে মিশতে বাধ্য। সালমান رضي الله عنهم জবাব দিলেন, তাহলে তুমি ওদের সাথে মেশার সময় সত্য বলবে ও কথা দিলে কথা রাখবে। আবু হারান আত তারমী বলেন, এটা বলা হয় যে মানুষ কোথায় তার পা রাখছে, সেটা থেকেও সে বেশী সতর্ক হবে সে কী বলছে তা নিয়ে। এটা এজন্য যে, জিহবা ও অতিরিক্ত কথা বিশ্বাসীদের জন্য বিপদজনক। জিহবার ফাঁদ অনেক ও এসব হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ। এর যে কোন একটি সারাজীবন ধরে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বিপদজনক। তবে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেন অশুভ থেকে কল্যাণকে আলাদা করার জন্য। জিহবার পাপ : ইবনে কুদামাহ رضي الله عنهم বলেন , জিহবার পাপ অনেক । এই পাপ মানুষের মন থেকে তার স্বভাবে বিকশিত হয় । এই বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো চুপ থাকা । আবু আদ দারদা رضي الله عنهم বলেন , মুখের চেয়ে তোমার কান বেশী ব্যবহার করো । তোমাকে কান দেয়া হয়েছে দুইটি ও মুখ দেয়া হয়েছে একটি যেন তুমি কথা যা বলো , তার থেকে বেশী শুনো । মাখলাদ বিন আল হুসাইন বলেন , ৫০ বছরে আমি এমন একটা কথাও বলি নি যাতে অনুতাপ করতে হয় । জিহবার পাপগুলি হলো : এমন কিছু নিয়ে কথা বলা যার সাথে ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই : যে সময়কে মুল্য দেয় , সে এমন কিছুতে তা নষ্ট করবে না , যা তার কোন উপকারে আসবে না । এই উপলব্ধি একজনকে তার জিহবাকে সংযত করতে বাধ্য করে । যে এসব অনর্থক কাজে সময় অপচয় করে ও আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে , তার তুলনা হলো - দামী রত্ন কেনার সামর্থ্য থাকার পরেও কাদামাটি কেনা - এটা জীবনের একটা বড় ক্ষতি । লুকমান رضي الله عنهم কে প্রশ্ন করা হয়েছিল , আপনি কিভাবে এত জ্ঞানী হলেন ? তিনি বলেছিলেন , আমার যা দরকার নেই , তা আমি চাই না ; যার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই সে বিষয়ে আমি কথা বলি না । বলা হয় যে লুকমান رضي الله عنهم একবার দাউদ আলাইহিস সালামের কাছে গিয়েছিলেন । তিনি তখন বর্মগুলি গুছিয়ে রাখছিলেন । লুকমান رضي الله عنهم অবাক হয়ে তা তাকিয়ে দেখলেন । তার জানতে ইচ্ছা হচ্ছিলো এ নিয়ে কিন্ত্ত তার প্রজ্ঞা তাকে বাধা দিল । দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম পরে বললেন , যুদ্ধের জন্য এটা কেমন চমৎকার ? লুকমান رضي الله عنهم বললেন , নীরবতা আসে জ্ঞান থেকে আর খুব কম মানুষই এর চর্চা করে । মিথ্যা বলা : মিথ্যা অনেক রকমের । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , অবশ্যই দাস এমন একটা মাত্র কথা বলতে পারে যা তাকে আগুনের এত নীচে ফেলবে , যেটার গভীরতা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব যত , ততটুকু ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী ,ইমাম মুসলিম ; সূত্র আবু হুরায়রা ) । এর সাথে তুলনীয় আরেকটি বিষয় হলো : কেউ কারো সাথে তর্ক করতেই থাকে এজন্য যে , অন্যের দোষ সবার সামনে তুলে ধরবে ও সবার মনোযোগ নিজের দিকে আকর্ষণ করবে । একজন তার জিহবা দিয়ে যা খারাপ তা করতে মানা করবে ও স্পষ্ট বোঝাবে কোনটা ভাল । তার থেকে এটা যদি গ্রহণ করা না হয় , তবে সে তর্ক এড়িয়ে যাবে । সে এমন করবে যদি তা ধর্ম নিয়ে কিছু হয় । যদি দুনিয়াদারীর কোন বিষয় হয় , তবে তর্কের কোন কারণ থাকতে পারে না । এই বিষয়ে সফল হতে হলে অহংকারবোধ , যে জন্য অন্যের চোখে আমরা ভাল হতে চাই , তা দূর করতে হবে । তর্ক করার থেকে খারাপ হলো লড়াই আর ঝগড়া করা । যে বিষয়ে জ্ঞান নেই , তা নিয়ে ঝগড়ার কথা এখানে বোঝানো হচ্ছে । যার যুক্তি দেখানোর যোগ্যতা আছে , সেও এটা এড়িয়ে চলবে ; কেননা এটা মনে ক্ষোভ ও হিংসার জন্ম দেয় , রাগ বাড়ায় । ফলে মানুষ একে অন্যকে অসম্মান করে । অতিরিক্ত অলংকারবহুল বাচনভঙ্গী : এটি তখন প্রযোজ্য যখন অতিরিক্ত অলংকারবহুল কথা আন্তরিকতা ছাড়া বলা হয় । মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন খতীব বা অন্য কারো সুন্দর ভঙ্গীর কথা এর অন্তর্গত না । মূল কথা হলো , বক্তব্য যেন সহজ হয় ও মনকে উদ্বুদ্ধ করে । অশোভন ও মানানসই নয় , এমন কথা বলা : কেউ যখন মানানসই বা যথাযথ না এমন কথা স্পষ্ট ও সরাসরি বলে – যা অনেক সময় গানের মধ্যে করা হয় । * রসিকতা - যদি সত্য হয় তবে রসিকতা নিষিদ্ধ না ; কেননা রাসূল صلى الله عليه وسلم কখনো কখনো কৌতুক করতেন ও সত্য ছাড়া কিছু বলতেন না । ঠাট্টার ছলে বলা সেই কথা সবসময়ই নীচের শর্ত পূরণ করতো : সত্য বলা ; নারী , শিশু ও দূর্বল পুরুষদের সাথে বলেছিলেন , যাদের মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একটু হালকা কথা বলা দরকার ছিল - তিনি সবসময় নয় বরং খুব কমই এটা করেছেন । * কাউকে উপহাস করা ও তার মর্যাদা নষ্ট করা : কারো দোষ প্রকাশ করে তাকে উপহাস করলে তার সম্মান নষ্ট করা হয় । এটা সরাসরি কোন কথা বা কাজ দিয়ে করা হয় অথবা পরোক্ষভাবে তার দোষ তুলে ধরা হয় । এ দুটোই শরীয়াহতে নিষিদ্ধ । * গোপন কিছু প্রকাশ করা , কথা না রাখা ও মিথ্যা শপথ : এসব কিছু হারাম - ব্যতিক্রম হলো স্ত্রীর মন রক্ষায় ও যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা যায় । * পরনিন্দা : কারো সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বলা যা সে শুনলে পছন্দ করতো না । যেমন , তার কোন শারীরিক খুঁতের বর্ণনা দেয়া যে সে বেশী লম্বা , বেঁটে , মোটা , টাক মাথা , তার চোখ ট্যারা বা সে অন্ধ ইত্যাদি । তার পরিবারকে হেয় করে কিছু বললে যেমন তারা তেমন অভিজাত না ইত্যাদি । তার স্বভাব নিয়ে কিছু বললে যেমন সে বদমেজাজী । তার পোশাক নিয়ে কিছু বলা যেমন সে ময়লা বা কম দামী কাপড় পরে বা মাপমতো কাপড় পরে না ইত্যাদি । এসবের পক্ষে প্রমাণ হলো : রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে গীবত নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল । তিনি বলেন : এটা হলো তুমি তোমার ভাইকে নিয়ে এমন কথা বললে যা সে পছন্দ করে না । তাকে বলা হলো , যদি এমন হয় যা বলেছি সে তাই ? তখন রাসূল صلى الله عليه وسلم বললেন , তুমি যা বললে সে যদি তাই হয় , তবে তা গীবত । আর যদি সে তা না , তবে তুমি অপবাদকারী ( বর্ণনায় মুসলিম , দাউদ , তিরমিযী ) । কারো মর্যাদা নানাভাবে নষ্ট করা হতে পারে - কথা দিয়ে , চোখের ইশারায় , আঙুল তুলে দেখানো বা লেখার মধ্য দিয়ে - কলম হলো তোমার দুইটি জিহবার একটি । সবচেয়ে জঘন্য গীবত হলো মিথ্যা ধার্মিকদের গীবত । যখন কারো কথা বলা হয় , তারা বলে : আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমরা তার মতো নির্লজ্জ না বা আল্লাহ আমাদের মাফ করুন । এটা এজন্য যে তারা অন্য মানুষের সম্মান নষ্ট করার পাশাপাশি নিজেদের নিয়ে অহংকার করছে । এদের মধ্যে কেউ এমনো দুআ করে : আহা , এই বেচারা অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । আল্লাহ তাকে ও আমাদেরকে মাফ করুন । এভাবে সে মনের আসল ভাব লুকিয়ে রাখে । জেনে রাখো , যে গীবত শুনে সেও গীবতকারীর সাথী হলো । যদি সে গীবতের বিরুদ্ধে কিছু না বলে তবে সে এই পাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলো না । যদি সে গীবতকারীর সামনে প্রতিবাদ করতে ভয় পায় , তবে কমপক্ষে সে মন থেকে গীবতকে ঘৃণা করবে । সম্ভব হলে সে ঐ জায়গা থেকে চলে যাবে বা আলোচনার বিষয় বদলে ফেলবে । কারো গোপন কথার প্রচার : রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , মানুষের গোপন কথা যে ফাঁস করে , সে বেহেশতে যাবে না ( বর্ণনায় হুদাফা ) । এতে একের বেশী মানুষ জড়িত হয়ে পড়ে । কেননা তুমি কাউকে বললে ,অমুক তোমাকে নিয়ে এই কথা বলেছে - তখন এটা শুধু এর মধ্যে সীমিত থাকে না । বরং এটা এমন বিষয় ফাঁস করে , যা হওয়া উচিত ছিল না । এটা হতে পারে কথা বা কোন কাজ । এমন কী , তুমি যদি দেখো কেউ তার নিজের টাকা গর্তে ঢুকিয়ে রাখছে আর তুমি সেটা অন্যকে বলো , সেটা হবে কথা লাগানো । এ ধরণের কথা যে শুনবে - অমুক তোমার সম্পর্কে এই কথা বলেছে বা তোমার বিরুদ্ধে এই করেছে , তার উচিত হবে নীচের ছয়টি কাজ করা । ১. যা শুনবে তা বিশ্বাস না করা । কেননা , যে কথা লাগায় সে পাপী ও তার কথা অস্বীকার করতে হবে । ২. সে তাকে উপদেশ দিবে ও এই কাজ করতে মানা করবে । ৩. সে আল্লাহর জন্য এই পাপীকে ঘৃণা করবে ; কেননা আল্লাহ একে ঘৃণা করেন । ৪. একজন তার অনুপস্থিত ভাই সম্পর্কে খারাপ কোন ধারণা করবে না । ৫. সে গোয়েন্দগিরি করবে না । ৬. অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না ; কেননা আল্লাহ বলেন : তোমরা একে অপরের গোপনীয় তথ্য খুঁজবে না ( সুরা হুজুরাত , ৪৯ : ১২ ) । সে অন্যকে যা করতে মানা করেছে , সেটা সে নিজেও করবে না ; এর মানে সে যা শুনেছে তা অন্য কাউকে বলে বেড়াবে না । দুইটি জিহবা থাকা : এটি ঘটে তখনই যখন , দু’জন শত্রুর মধ্যে একের কথা কেউ অন্যজনকে লাগায় । তাদের কারো কাছে গিয়ে সেটাই বলে, যা সে শুনতে চায় অথবা যাকে সাহায্য করবে বলে কথা দেয় বা সামনাসামনি তার প্রশংসা করে , কিন্ত্ত অন্য পক্ষের সামনে তার সম্মান নষ্ট করে কথা বলে । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , সবচেয়ে খারাপ লোক হলো দুই মুখের লোকেরা যারা কারো কাছে একরকম চেহারা নিয়ে যায় ,আবার অন্যের কাছে অন্যভাবে যায় ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা ; বুখারী ও মুসলিম শরীফ , দাউদ ) । মানুষের প্রশংসা করা : যে প্রশংসা করে ও যার প্রশংসা করা হয় , তাদের দুজনেরই ক্ষতি হয় । যে প্রশংসা করে তার পাপ হলো , সে যা বলে তা সত্য নাও হতে পারে ও তা নিশ্চিত করা যায় না । যেমন , সে বললো অমুক দুনিয়াদারির ভোগ – বিলাস থেকে দূরে থাকে । প্রশংসা করতে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে সে এমন কথা বলতে পারে, যা মিথ্যার পর্যায়ে চলে যায় । সে যার সম্পর্কে বলছে সে হয়তো তিরস্কারের যোগ্য । যার প্রশংসা করা হয় , সে অহংকারী বা উদ্ধত হয়ে উঠতে পারে । এ দুটিই খুব ক্ষতিকর । ধর্ম এটা হয় কেউ যদি ধর্ম বিশেষ করে মহান আল্লাহ সম্পর্কে মারাত্মক কোন ভুল করে ফেলে । তাই ছাত্ররা জিহবা সংযত করবে , সময় বাঁচাবে , সত্য নিয়ে ব্যস্ত থাকবে , সামান্য বিষয়ে সময় নষ্ট করবে না , গঠণমূলক কিছু না করে জীবনটা অনর্থক পার করবে না। সেই সঠিক পথে পরিচালিত হয় যাকে আল্লাহ পথ দেখান ।
  6. A Unique take on Forgiveness *One rainy afternoon I was driving along one of the main streets of town, taking those extra precautions necessary when the roads are wet and slick. Suddenly, my daughter, spoke up from her relaxed position in her seat. Dad, Im thinking of something. This announcement usually meant she had been pondering some fact for a while, and was now ready to expound all that her six-year-old mind had discovered. I was eager to hear. What are you thinking? I asked. The rain, she began, is like sin, and the windshield wipers are like Allah wiping our sins away. After the chill bumps raced up my arms I was able to respond. Thats really good, Then my curiosity broke in. How far would this little girl take this revelation? So I asked Do you notice how the rain keeps on coming? What does that tell you? She didnt hesitate one moment with her answer: We keep on sinning, and Allah just keeps on forgiving us. I will always remember this whenever I turn my wipers on. Courtesy of LI
  7. *'Adiyy b. Haatim: '''The tongue of a person is their translator for their intellect.''' [al-Mujaalasah p. 296]*
  8. 'Allah's generosity is connected to gratitude, and gratitude is linked to increase in His generosity. The generosity of Allah will not stop increasing unless the gratitude of the servant ceases.''' - 'Ali ibn Abi Talib Radiallaahu Ta'Aalaah 'Anhu
  9. Ibn Qayyim Rahimahullah said: "Righteous actions are only according to righteous intentions, and a good intention does not make something which is futile correct. This is because intentions alone cannot make an action correct, but rather complying with the Sharee’ah (Prescribed Laws) must be added to that". [Madaarijus-Saalikeen (1/85) ]
  10. A man said to Wahb bin Munabah rahimahullaah: ‘So and so spoke ill of you’ Whereupon Wahb rahimahullaah replied: ‘Did Shaytaan not find anyone better than you to deliver this news?’ [Minhaaj al-Qaasideen p. 183]
  11. গোলামীতে অভ্যস্ত মনের প্রশ্নঃ “আরবী শিখে কী হবে?” লিখেছেনঃ আবূ সামীহা গতকাল [বাংলাদেশ সময়ঃ ২৯ মার্চ ২০১২; সন্ধ্যা ০৬:০৫] ব্লগার “আরবী শেখার আসর” এর এক পোস্টে অন্য এক ব্লগার নীচের মন্তব্যটা করেছেনঃ “এসব শিখে কি হবে? পেটে কি কারো ভাত পড়ে? এসব পড়ে তো সবাই অন্যে দান দক্ষিণাতে বাঁচে।” তার এই মন্তব্যটা দেখে কিছু কথা মনে পড়ে গেল। আমি আমাদের স্কুলের সব ক্লাসে [৬-১০] প্রথম ছিলাম। এরপর ভাল কলেজে [চট্টগ্রাম কলেজ] পড়েছি। তারপর বাংলাদেশের তিন-তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েছিলাম, যদিও ডিগ্রী নেয়া হয়েছে শুধু একটা থেকে। অবশ্য ওখানে বহিরাগত [external/private] পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর বিদেশে পড়তে গেলাম। চার বছর পরে দেশে আসলে স্কুলের এক পুরনো শিক্ষকের সাথে দেখা হল। তিনি আমাদের সাথে বন্ধুর মতই থাকতেন। অবশ্য আমি বিজ্ঞানের ছাত্র থাকায় স্কুলে তিনি আমার কোন ক্লাসেরই শিক্ষক ছিলেন না। তিনি নামাজী মানুষ ছিলেন; আর আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে লজিং থাকতেন। সেই হিসেবে আমাদের সাথে বন্ধুত্ব। তিনি আবার কলেজ জীবনে আমাদের থানার/উপজেলার আওয়ামী ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন। ভদ্র-শান্ত ও নামাজী একজন মানুষ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এটা একটু অস্বাভাবিক। আমাদের মত “মৌলবাদী” পোলাপানের সাথে তাঁর খাতিরটাও ছিল অন্যরকম দেখতে; হয়তো নামাজ পড়ার মত মৌলবাদী কাজে তিনি অভ্যস্থ ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। দেশে ফিরে দেখলাম ঐ শিক্ষক আর আমার বন্ধুর ঐ বাড়িতে নেই, তিনি অন্য বাড়িতে লজিং থাকেন। যাইহোক, পুরনো বন্ধুত্বের খাতিরে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম তাঁর নতুন লজিং বাড়িতে, যা ছিল আমাদের স্কুলের কাছেই। তাঁর সাথে কথা প্রসঙ্গে আমি কোন বিষয়ে পড়েছি এবং আমার বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ধরণ নিয়ে কথা হল। আমাকে আরবী ভাষাও শিখতে হয়েছে এবং আরবীতেই ইসলামিক স্টাডিজের কিছু কোর্স নিতে হয়েছে শুনে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন এবং এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর কথা হচ্ছে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরবী পড়তে হবে। তোমার মত মেধাবী ছাত্র আরবী শিখে সময় নষ্ট করছো। তুমি তোমার সাব্জেক্ট ইংরেজীতে পড়বে - এটাই যথেষ্ট। তাঁকে যতই বুঝানোর চেষ্টা করিনা কেন কোন ফল হলনা। বুঝলাম অনেকদিনের ইংরেজদের গোলামী সুদূরপ্রসারী প্রভাব আর তাঁর রাজনৈতিকভাবে বাঙালী-জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরপেক্ষ মন কোনভাবেই একটা উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণভাবে সব ছাত্র-ছাত্রীদের আরবী ও ইসলামিয়্যাত পড়াটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা। দেশে থাকতে সবসময় ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতাম আমরা। আর বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সে পদ্ধতি ছিল অনুপস্থিত। আমরা ইসলামী শিক্ষা বলতে বুঝতাম একটা আদর্শ ব্যবস্থা সেখানে থাকবে দীনী ও দুনিয়াবী শিক্ষার সমন্বয়। যেমন একজন শিক্ষার্থী যখন দুনিয়াবী কোন বিষয় [যেমন ডাক্তারী, প্রকৌশল, অর্থনীতি, ইত্যাদি] পড়বে তখন সাথে সাথে ইসলামী মৌলিক বিষয়গুলোতেও জ্ঞান অর্জন করবে; আবার একজন শিক্ষার্থী যখন ইসলামী কোন বিষয়ে [তাফসীর, হাদীস, ফিক্বহ, আক্বীদাহ্‌, ইত্যাদি] বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করতে চাইবে তখন সাথে সাথে বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোর জ্ঞানও লাভ করবে। আল্লাহর শোকর যে তিনি বিদেশে এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ছিল ইন্টারডিসিপ্লিনারি [interdisciplinary]– শব্দটার যথাযথ বাংলা আমার জানা নেই তবে “সমন্বিত ব্যবস্থা” বলা যেতে পারে। এর ধরণটা হচ্ছে আপনি যে বিষয়েই অনার্স পড়ুননা কেন আপনাকে আরো অন্যান্য অনেক বিষয়ে কোর্স নিতে হবে। যেমন আমার অনার্সের বিষয় ছিল কমিউনিকেশন [Journalism, Public Relations, etc.]। স্নাতক [সম্মান] ডিগ্রীর জন্য আমাদের ফ্যাকাল্টির ছাত্রদের পড়তে হত কমপক্কে ১৩৪ ক্রেডিট। আমাকে আমার অনার্সের সাবজেক্ট [communication] থেকে পড়তে হয়েছে ৫৪ ক্রেডিট মানে ১৮টা সাবজেক্ট। আমরা যারা হিউম্যান সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ছিলাম তাদেরকে আরো ২৭ ক্রেডিট - ৯টা কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে ইসলামিক স্টাডিজের [উলুমুল কুরআন, উলুমুল হাদীস, আক্বিদাহ, ফিক্বহ, সীরাহ্‌, ইত্যাদি] নিতে হত। এর মধ্যে কমপক্ষে দুইটা কোর্স করতে হত আরবীতে – ক্লাসের লেকচার এবং পরীক্ষা সবই আরবীতে। এছাড়া আরো ৫৪ ক্রেডিট নিতে হয়েছে অন্যান্য সাবজেক্ট – সোসিওলজী, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সাইকোজলী, দর্শন, ম্যানেজমেন্ট, পরিসংখ্যান, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ভাষা – থেকে। ভাষার কোর্স গুলোর মধ্যে ছিল আরবী, ইংরেজী ও মালয়ী। বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে শুরুতেই দিতে হয়েছিল দুটো ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট – Special English Language Exemption Test [sELET] এবং Arabic Placement Test [APT]। দেশে থাকতে TOEFL না দেয়াতে SELET দিতে হল। ইংরেজীতে সবসময় একটু ভাল ছিলাম বলে কোন সমস্যা ছাড়াই পাস করে ফেললাম। APT তে আমার দেশীয় সহপাঠিরা ০ পেলেও আমি ৫ পেয়েছিলাম দুই তিনটা শব্দ জানা ছিল বলে। এর পর– Pre-sessional Arabic এর Elementary ও Intermediate লেভেল শেষ করে Advanced লেভেলের ৪ ক্রেডিটও করতে হয়েছে। না হলে ইসলামিক স্টাডিজের ৬ ক্রেডিট আরবীতে করা যেতনা এবং কপালে ডিগ্রী জুটতনা। ইকনোমিক্স এণ্ড ম্যানেজম্যান্ট ফ্যাকাল্টির ছাত্রদের অবশ্য ইসলামিক স্টাডিজের কোর্স করতে হলেও আরবীতে করতে হত না। এজন্য বাংলাদেশীদের অনেককেই দেখতাম আরবী ভাষার কোর্সগুলোকে সিরিয়াসলী না নিতে। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত আরবীতে ফেল করে ডিগ্রী না নিয়ে যাবার উপক্রম। দু’একজন বোধহয় ডিগ্রী ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন ৪-৫ বছর পড়ার পরেও। আবার কেউ কেউ আরবী ভাষার কোর্স ফেল করে শেষে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কুরআনের কিছু অংশ মুখস্ত করার পর ছাড়পত্র পেয়েছেন। অন্যদিকে অমুসলিম চীনা ও ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখতাম আরবী ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজের কোর্সগুলোতে A পেয়ে পাস করতে। উলুমুল হাদীসের ক্লাসে ড: হাবীব রহমান ইব্রামসার দেয়া বিশাল বিশাল কয়েকখানা হাদীস মুখস্ত করতে আমার রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে। অথচ আমার এক অমুসলিম চীনা সহপাঠিনীকে দেখলাম কোন অনুযোগ ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজের কোর্সগুলোকে অবজ্ঞা করতে দেখতাম বাঙালী ছাত্রদেরকেই বেশী। আমাদের দু-ব্যাচ পরে দেশ থেকে একটা গ্রুপ আসল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের একজন মাদ্রাসা পাস। তার বাবা তাকে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রীর নেবার জন্য এখানে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মপরিচয় সম্পর্কে প্রচণ্ড হীনমন্যতায় ভোগা এই ছেলেটি আরবীর পরিবর্তে ইংরেজী পড়তে শুরু করল; আর অধিকাংশ বাংলাদেশীর সাথেই তার কোন সম্পর্ক ছিলনা। শেষ পর্যন্ত কোনমতে অনার্স শেষ করে দেশে ফেরত যায় সে। আমি আরো অনেক বাংলাদেশীকে দেখি যাদের ইংরেজীর প্রতি রয়েছে প্রচণ্ড দূর্বলতা; আর আরবীর প্রতি প্রচণ্ড উন্নাসিকতা ও হীনমন্যতাবোধ। ইংরেজদের অনেকদিনের গোলামী করার কারণে ইংরেজীর প্রতি একধরণের সহজাত দূর্বলতা তৈরী হয়ে গেছে দেশীয় জনগোষ্ঠির। কাউকে ইংরেজীতে কথা বলতে দেখলে তার প্রতি বিশেষ দূর্বলতা পোষণ করা অথবা নিজে ভাল ইংরেজী বলতে পারলে অথবা ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হলে একটু কী হয়ে গেনুরে ভাব দেখায় অনেকেই, যা খুবই বিরক্তিকর। ইংরেজী একটা ভাষা। কোন ভাষা শিক্ষা করাতে দোষের কিছু নেই বরং কোন ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করতে পারা একটা বিরাট প্রসংশনীয় কাজ। আর এই কাজটা ইংরেজীর জন্য যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য অন্য যে কোন ভাষার জন্য। সেজন্য আরবী ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করতে পারাও বিরাট প্রসংশনীয় কাজ। কিন্তু আমাদের হীনমন্যতাবোধ ইংরেজীতে দক্ষতা লাভকে এবং ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নকে মনে করে গৌরবের কারণ ওটা ইংরেজ প্রভূদের ভাষা। আর আরবী ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নকে মনে করে অনগ্রসরতা; অথচ দুটোই বিদেশী ভাষা। ভাষা হিসেবে বরং ইংরেজীর চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ ও প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী হচ্ছে আরবী। সুতরাং আরবীতে দক্ষতা অর্জন ইংরেজীর চেয়েও বেশী মর্যাদাশীল হবার কথা। আমার এক ভাগ্নে বাংলাদেশের একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ওখানে তাকেও আরবী ভাষা শিখতে হয়। দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে মনে হল তিনি এই আরবী শেখানোটাকে অহেতুক বাড়াবাড়ি ও সময়ের অপচয় মনে করছেন। আমার মালয়েশিয়ার জীবনে আমি দেখেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন আরবী কোর্স করতে আসতেন অনেক বয়স্ক ও বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ নারী ও পুরুষরা। তাঁরা পয়সা দিয়ে আরবী শিখতে আসতেন। এদের একদল আসতেন নিজের দীনের মূল উৎস কুরআনকে বুঝার জন্য আরবী শেখার প্রয়োজনীয়তা থেকে; আরেকদল আসতেন আরবী শিখে নিজেদেরকে অন্যদের তুলনায় অধিকতর ভাল অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য যাতে করে চাকরীর বাজারে নিজের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে মজবুত করা যায়। আমেরিকায় আসার পর দেখলাম গ্রীষ্মকালে স্কুলের দুইমাসের ছুটিতে মসজিদ্গুলোতে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ইমাম সাহেবের অনুরোধে আমি আমার স্থানীয় মসজিদে এক গ্রীষ্মে (২০০২) পড়াতে রাজী হলাম। আমরা কুরআন এবং ইসলামী মৌলিক বিষয়গুলোর শিক্ষাদানের সাথে সাথে আরবী ভাষাও পড়াব সিদ্ধান্ত নিলাম। এক বাঙালী ভদ্রলোক তাঁর ছেলেকে মসজিদ স্কুলে [মাদ্রাসায়] ভর্তি করাতে আসলেন। তিনি আরবী শেখানোর কথা শুনে খুবই উদ্দীপ্ত হলেন। তিনি মনে করেছিলেন মসজিদে বাচ্চারা শুধু কুরআন তিলাওয়াত শিখতে যায়, যেমনটা বাংলাদেশে হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি তাঁর হাইস্কুলে পড়ুয়া ছেলের ব্যাপারে খুবই আশান্বিত হলেন যে সে নতুন একটা ভাষা শিখতে পারবে এবং এতে চাকরীর বাজারে তার অবস্থান ভাল হবে। সেই প্রথম আমি আরবী শেখার ব্যাপারে একজন বাঙালী অভিভাবককে প্রচণ্ড রকমের আগ্রহী দেখেছিলাম। ভদ্রলোক অন্তত ভাষা শেখার দুনিয়াবী কল্যাণটা বুঝতে পেরেছিলেন। আমাদের বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে গত ৬/৭ দশক ধরে কৌশলে যে হীনমন্যতা বোধ ঢুকানো হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল নিজেদের মুসলিম পরিচয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি এক ধরণের অবজ্ঞা ও ঘৃণাবোধ তৈরী করা। ভাষা শিক্ষা করা সাধারণভাবে একটা ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়; হোক সে আরবী ভাষা বা ইংরেজী ভাষা অথবা অন্য যে কোন ভাষা। কিন্তু ইংরেজী শিক্ষা করাকে গৌরবের মনে করা হলেও আরবী শিক্ষা করাকে হীনমন্যতার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে কারণ আরবী অন্য যে কোন ভাষার মতই একটা ভাষা হলেও এ ভাষাতেই রয়েছে মুসলমানদের হিদায়াতের উৎস আল-কুরআন। তাই আরবী ভাষা শিক্ষা করাকে পশ্চাদপদতার সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেয়া হয়েছে আমাদের দেশে, যাতে আরবীতে অজ্ঞ একটা জনগোষ্ঠিকে তাদের আত্মপরিচয়ের উৎস সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা যায়। যে কোন ভাষা শিক্ষা করাতেই রয়েছে কল্যাণ। আরবীতে একটা কথা আছে من تعلم لغة قوم أمن مكرهم ; যার মানে হলঃ “যে কোন জাতির ভাষা শিখল সে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে নিরাপদ করল।” এ কথার সমর্থনে আমরা রসূলুল্লাহ্‌র (সঃ) একটা হাদীসও দেখতে পাই। তিনি জ়ায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হিব্রু ভাষা শেখার জন্য এই বলে যে তিনি ইয়াহুদীদের ব্যাপারে ভয় করেন যে তারা তাদের লিখালিখির মাধ্যমে বিকৃতি সাধন করবে। [আহমদ, আবূদাঊদ ও তিরমিজ়ী]। রসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম) থেকে এ রকম শিক্ষা থাকার পরেও আমাদের উলামাদের একদল অতীতে ইংরেজী শিক্ষা করাকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন আবেগের বশবর্তী হয়ে। ফল হয়েছিল হিন্দুরা প্রাত্যহিক জীবনের সবক্ষেত্রে অগ্রসর হয়ে গিয়েছিল। আর মুসলমান তরুণদের মধ্যে যারা ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হচ্ছিল তারা পশ্চিমা দুনিয়ার ধ্যানধারণার ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যাপারে উলামাদের দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছিল এই কারণে যে ইউরোপীয় ভাষা না জানা উলামাগণ এ সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখতেন না। উলামাদের সাথে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বে বেড়ে উঠা এইসব তরুণরা পরবর্তীতে মুসলিম সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ করণে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। আর এখন আমাদেরকে আরবী শেখা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফলে আমরা অনেকেই দীন ও দুনিয়ার অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে পিছিয়ে যাচ্ছি। যেখানে অমুসলিম এশীয়, ইউরোপীয় ও আমেরিকান আরবী শিখছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করতে সেখানে আমরা দেখি আরবী শেখাকে অনগ্রসরতা হিসেবে। এমনকি ইসলামকে নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার দাবীদারদের অনেকের মধ্যেও আরবী শেখার প্রতি রয়েছে মারাত্মক রকমের উন্নাসিকতা। অথচ ভাষা শিক্ষা করার দুনিয়াবী কল্যাণের সাথে সাথে আরবী শিক্ষা করাতে রয়েছে দীনী ও উখরাওয়ী কল্যাণ। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী ভাষা হচ্ছে আরবী। দুনিয়ার ভাষাগুলো প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে উদ্ভব হচ্ছে নতুন ভাষার; হারিয়ে যাচ্ছে অনেক ভাষা চিরতরে। ২১০০ সালের মধ্যেই হয়তো কয়েক হাজার ভাষা হারিয়ে যাবে। ইংরেজীও আস্তে আস্তে তার গুরুত্ব হারাবে এবং একসময় আর লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হবেনা অনেক স্থানেই। কিন্তু কুরআনের কল্যাণে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার ক্লাসিক্যাল রূপেই বর্তমান থাকবে আরবী। আর এ ভাষা শিখার মাধ্যমে দুনিয়াবী কল্যাণ পাওয়া যেমন সম্ভব, যথার্থ সওয়াবের নিয়্যত থাকলে আখিরাতের কল্যাণও হবে নিশ্চিত। ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবন গাফফার QuranerAlo.com - কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
  12. আমার মাকে কেন বিশ্বসুন্দরী করা হয় না? আমার বয়স তখন দশ বা এগারো। আবুধাবীতে হুলস্থুল শোরগোল পড়ে গেল। প্রথমবারের মত টেলিভিশনে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হবে। আমি বুঝিনা কিছুই। কিন্তু সবাই লাফায় তাই আমিও লাফাতে লাগলাম। বাসায় গিয়ে বাবাকে বললাম বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখব। অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে বাবাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে নিলাম এটি কিসের প্রতিযোগিতা, কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা আমি এ’ব্যাপারে মহামূর্খ। বাবা বলল, “এই প্রতিযোগিতা হোল সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর নানান দেশ থেকে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাদের নির্বাচন করে এখানে নিয়ে আসা হয় এদের মধ্যে কে সবচেয়ে সুন্দর নির্ধারন করার জন্য”। আমি বসে রইলাম দেখার জন্য না জানি এরা কোন স্বর্গের অপ্সরী! কড়া মিউজিক আর বর্নাঢ্য আলোকমালার ঝলকানির মাঝে শুরু হয়ে গেল সুন্দরী প্রতিযোগিতা। প্রথমেই সব সুন্দরীদের জড়ো করা হোল স্টেজে। তাদের দেখে আমি বিশাল এক ধাক্কা খেলাম। বাংলাদেশের গলি ঘুপচিতে এর চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। আমার মাকে দেখেই তো দেশবিদেশের সবাই মা’র সৌন্দর্যের প্রশংসা করত, জিজ্ঞেস করত মা’র বিবাহযোগ্যা বোন আছে কি’না, কার্ড উপহার দিত। বাবাকে বললাম, “এদের চাইতে মাকে বিশ্বসুন্দরী করা হলে ভালো হত”। বাবা হা হা হো হো হাসতে লাগল। আমি বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। তখন বুঝিনি কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে বুঝলাম এই বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন একটা ভূয়া কন্সেপ্ট। প্রত্যেক মানুষের কাছে তার মা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা এবং তার বাবা এই বিশ্বের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ তা তারা দেখতে যেমনই হোন না কেন। কোন শিশুকে কি বলতে শুনেছেন, “আমার বাবা সুন্দর না, আমি এখন থেকে টম ক্রুজকে বাবা ডাকব” বা “আমার মা সুন্দরী নন, আমি এখন থেকে ঐশ্বর্য রাইকে মা ডাকব”? তাহলে কিসের ভিত্তিতে একজন মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হিসেবে নির্বাচন করা সম্ভব যেখানে পৃথিবীর সব মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অনুভূতিগুলোকে বিবেচনায় আনা হয়নি? তাহলে এমন একটি অসার প্রতিযোগিতার আয়োজন করার অর্থ কি? একসময় বুঝতে পারলাম এটি মূলত দেহব্যাবসার একটি আধুনিক ও যুক্তিযুক্ত সংস্করণ। ক্ষেপে যাবার আগে একটু চিন্তা করে দেখুন। দেহকে পুঁজি করে যে ব্যাবসা তাই তো দেহব্যাবসা। একজন সুন্দরী যদি তার দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে পয়সা কামানোর উদ্যোগ নেন তবে তাকে দেহব্যাবসা বলা অযৌক্তিক হয় কোন বিচারে? তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দেহব্যাবসায় আসা অনেক লাভজনক ও মানবিক। আগেকার দিনে লোকালয় থেকে মেয়েদের অপহরণ করে এ’জাতীয় পেশায় বাধ্য করা হত (উদাহরণঃ ‘উমরাও জান’), কখনো সখনো অভাব বা অসহায়ত্ব তাদের এসব পেশায় ঠেলে দিত (উদাহরণঃ অমর প্রেম)। এখন আমরা জাঁকজমক করে আমাদের মেয়েদের স্বেচ্ছায়, সর্বসমক্ষে এবং বাবামা’র আশীর্বাদসহকারে এই পেশায় যোগ দেয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করি। তারা ব্যাবসায় নামার আগেই নিজেদের অ্যাডভার্টাইজ করার মত একটি প্ল্যাটফর্ম পায়, সুপরিচিত হবার সুযোগ পায়। আর লোকজনও তাদের ছি ছি করেনা বরং বাহবা দেয়। একদল বুদ্ধিমান এবং সৃষ্টিশীল লোক এই সুন্দরী নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্য থাকে এমন একদল মেয়েকে খুঁজে বের করা যারা নিজেকে পণ্য হিসেবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী নয় বা খ্যাতির পেছনে ছুটতে গিয়ে তাদের কি বিসর্জন দিতে হচ্ছে তা দেখতে না পাবার মত যথেষ্ট অসচেতন এবং যাদের পরিবার যথেষ্ট লোভী অথবা বোকা। অতঃপর তারা এদের একজনকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচন করে তাকে দিয়ে ফলাও করে নানাপ্রকার আপাতদৃষ্টিতে ভালো কাজ করায়। এটি একপ্রকার মূলা ঝুলানো। কেননা তখন বাকী সুন্দরীরা কে কোথায় গেল বা কি করল তা নিয়ে মানুষ আর মাথা ঘামায়না। তবে ধন্য মিডিয়া। এ’ যেন শাঁখের করাত। সে নিজেই এই নিষ্পাপ মেয়েগুলোকে পতিত করে আবার এই পতনের কাহিনী নাটক সিনেমা নিউজ আকারে তুলে ধরে- এক্কেবারে “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও” ফিলসফির বাস্তব প্রয়োগ। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা এখন জানি এই বাকী মেয়েগুলোর কি হয়। সৌন্দর্যের খেতাবপ্রাপ্তির স্বপ্নে বিভোর মেয়েগুলো বাস্তবের জন্য প্রস্তুত থাকেনা মোটেই। ফলে যারা রিজেক্টেড হয় তাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। উপরন্তু যেহেতু নিজের সৌন্দর্যকে বর্ধিত করার মত গুন ব্যাতীত তেমন আর কোন যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ বা সময় তাদের হয়না, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এটিই তাদের একমাত্র পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। যারা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয় তাদের প্রথম টার্গেট হয় মডেল বা অভিনেত্রী হওয়া। হায় রে! মডেল মানে তো কাপড়ের হ্যাঙ্গার বা বস্তুকে বিকানোর জন্য মানুষের ব্যাবহার! বান্ধবী শিমু বলত, “সিনেমার নামে কি সুকৌশলে আমাদের পর্ণোগ্রাফির টুকরো টুকরো ডোজ গিলিয়ে দেয়া হচ্ছে আমরা নিজেরাও টের পাচ্ছিনা”। একটু ভেবে দেখুন যে মেয়েটি এবং যে ছেলেটি অভিনয় করছে তারা আদতেই কেউ কারো কিছু নয়। অথচ একে অপরকে স্পর্শ করা থেকে অবলীলায় পরস্পরের সাথে শুয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবই তারা নির্দ্বিধায় করছে (পয়সার জন্য, কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়) আর আমরা সব জেনেও না জানার ভান করে সপরিবারে সাড়ম্বরে সামর্থের বাইরে গিয়েও বিশালাকার টিভি, ডিভিডি ইত্যাদি কিনে তাদের কীর্তিকলাপ দেখছি! এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমরা আত্মীয় স্বজন আসলে বা ফোন করলে বিরক্ত হই, প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধবের জন্য আমাদের হাতে কোন সময় নেই, বিয়েবাড়ীতে এখানে সেখানে সিনেমা টেলিভিশনের নায়িকা আর মডেলরাই এখন আমাদের আদর্শ। তাহলে আমাদের সন্তানেরা মডেল হওয়া বা অভিনেত্রী হওয়াকে উত্তম পেশা মনে করবে না কেন? ফলে আমাদের সন্তানদের এখন স্বপ্ন বড় মডেল বা নায়িকা হওয়া। খুব মজা লাগে যখন শোনা যায় অমুক নায়িকা খুব ভালো, সে অভিনয় করার সময় তার মা সাথে থাকে। আহারে, কি পবিত্র কাজে মা তার মেয়েকে সাহচর্য দেন! আরেকবার শুনলাম অমুক নায়িকা খুব ভালো সে শুধু তার স্বামীর সাথেই অভিনয় করে। কি মজা! স্বামীস্ত্রীর প্রেম্ কি সর্বসমক্ষে প্রদর্শনী দেয়ার মত ব্যাপার নাকি পয়সা কামানোর জন্য পুঁজি করার মত পণ্য?! হলিউডের বিখ্যাত ফন্ডা পরিবারের খ্যাতনামা অভিনেত্রী জেন ফন্ডা থেকে শুরু করে ষাটের দশকের সকল আমেরিকান অভিনেত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে যেকোন প্রকার রোল পাবার জন্য তাদের আগে ডাইরেক্টরদের সন্তুষ্ট করতে হত। আর আজকাল তো ঘরের কাছেই বলিউডে নায়িকারা কিভাবে সিনেমায় সুযোগ পান তা নিজেরাই প্রচার করেন। যারা মডেলিং করেন তাদের অবস্থাও তথৈবচ। ব্যাতিক্রম আছে তবে তাকে তো আর নিয়মের মধ্যে ধরা যায়না। তবে একটু ভেবে দেখুন যদি একজন অভিনেত্রী, মডেল, গায়িকা বা নর্তকীর গুনই তার আসল পরিচয় হয় তবে তাকে পুতুলের মত সাজিয়ে, ক্যামেরার নানাবিধ পদ্ধতি প্রয়োগ করে তার দৈহিক শৈলীকেই কেন মূল উপজীব্য করে তুলে ধরা হয়? কেন নানাধরনের বিশেষন প্রয়োগ করে তাদের নিয়তই কনভিন্স করার চেষ্টা করা হয় যে তারা ভারী সুন্দর ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে তারা নিজেরাও জানে কোন মানুষই সবদিক মিলিয়ে সবচেয়ে সুন্দর হতে পারেনা? এ তো গেল যাদের কোন উপায়ে এইসব ইন্ডাস্ট্রিতে ঠাঁই হয় তাদের কথা। যাদের হয়না তাদের নিয়ে তৈরী ভিক্টোরিয়া প্রিন্সিপাল অভিনীত Mistress মুভিটি দেখুন। সৌন্দর্যের গরবে এবং খরচে তাদের পক্ষে সাধারন মেয়েদের মত যেমনতেমন কোন চাকরী করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয়না। ফলে এদের একটা উপায় হয় কোন সুন্দরের পুজারী বড়লোক পুরুষকে বিয়ে করা। যাদের ভাগ্য ততটা ভালো হয়না তারা কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ নিরুপায় হয়ে কখনো অন্য মহিলার বড়লোক অথচ লম্পট স্বামীর ঘাড়ে ঝুলে পড়ার কায়দা করে, কেউ ব্যার্থ হয়ে নিজের চরিত্র বিসর্জন দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে। এই কি জীবনের সার্থকতা?! এই কি রূপের সার্থক ব্যাবহার?! একটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। একবার এক বিশাল বড়লোক আত্মীয়ের বাসায় গেছি। খানিক পর শার্টপ্যান্ট পরা এক অসাধারন সুন্দরী মহিলা এলেন। তাঁর নখের আগা থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত সৌন্দর্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে যেন। আত্মীয়ার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মুক্তোর মত কিছু অশ্রুবিন্দু তাঁর মসৃন গাল বেয়ে নেমে এলো। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় তাঁর প্রতি স্বামীর সমস্ত আকর্ষণ শেষ। তিনি রান্না পারেন না, ঘরের প্রতি তাঁর কোন সহজাত আকর্ষণ নেই, পার্টির প্রতি স্বামীর আর নেশা নেই, তাঁর নিজের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য যে বিশাল খরচ তা চালাবার মত যোগ্যতা তাঁর নেই, এদিকে সংসার ভাঙ্গে ভাঙ্গে অবস্থা। সেই অসম্ভব সুন্দর মুখে মক্তোর মত জ্বলজ্বলে অশ্রবিন্দু সেকথাই জানান দিল রূপে নয়, গুনেই পরিচয়। সুতরাং চলুন, আমরা রূপের নয়, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে গুনের চর্চা করি। আর রূপ? একটি জীবন পার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট! Collected From Sister রেহনুমা বিনত আনিস http://collected-notes.blogspot.com/2011/05/blog-post_3462.html
  13. We live in societies in which most men and women have lost their sense of modesty, women are obsessed with their appearances and wear clothes to be seen by others and to attract the attention of other men even if they are married! They have lost their sense of shame. Marriage is often looked upon as old-fashioned and short term affairs and frivolous relationships are the norm, everyone waiting to attract a better partner and feeling totally justified to dump one partner for another at the drop of a hat. Feminism too has reached its peak and men and women are told to suppress their natural emotions. Men are not even embarrassed when their wives are dressed up and attract the attention of other men, they don’t mind if another man sees, chats, laughs and even dances with their womenfolk and if they do mind, they are told not to be so possessive! In Islam we have a concept of gheerah. Gheerah is an Arabic word which means protectiveness or jealousy. It is a good type of jealousy, like when a man feels jealous or protective over his wife or sisters and other-womenfolk and doesn’t like other men to look at them. It is a natural inbuilt feeling Allah has given men and women. The Prophet (peace be upon him) had the most gheerah for his wives and all of the companions were known for their gheerah. All Muslim men should have a collective sense of protectiveness for Muslim women as Allah says in the Qur’an, the meaning of which is: “The Men are the protectors and maintainers of women…” [1] Men who do not care about how their women behave and appear in front of other men and don’t enforce hijaab upon their wives or women-folk are called dayyooth. Being a dayyooth is a major sin and a detailed description of this evil characteristic can be found in al-Dhahabi’s Book of Major Sins. A story of Gheerah To further understand the quality of gheerah, we can look at an incident that Asmaa’ (may Allah be pleased with her) the daughter of Abu Bakr al-Siddiq (may Allah be pleased with him) and sister of Aisha (may Allah be pleased with her), relates about herself. Abu Bakr was a wealthy merchant and married his daughter Asmaa’ to the great companion Az-Zubayr ibn al-‘Awwam (may Allah be pleased with him) who was a very poor man but a man of great piety and one of the companions who were promised Paradise. Asmaa’ relates: “When az-Zubayr married me, he had neither land nor wealth nor slave…” so Asmaa’ had to work very hard kneading dough, going far off to get water. “And I used to carry on my head,” she continues, “the date stones from the land of az-Zubair which Allah’s Messenger (peace be upon him) had endowed him and it was a distance of two miles from Madinah. One day, as I was carrying the date-stones upon my head, I happened to meet Allah’s Messenger (peace be upon him), along with a group of his Companions. He called me and told the camel to sit down so that he could make me ride behind him. I felt shy to go with men and I remembered az-Zubair and his gheerah and he was a man having the most gheerah . The Messenger of Allah (peace be upon him) understood my shyness and left. I came to az-Zubair and said: “The Messenger of Allah (peace be upon him) met me as I was carrying date-stones upon my head and there was with him a group of his Companions. He told the camel to kneel so that I could mount it, but I felt shy and I remembered your gheerah .” So Asmaa’ declined the offer made by the Prophet (peace be upon him). Upon this az-Zubair said: “By Allah, the thought of you carrying date-stones upon your head is more severe a burden on me than you riding with him.”[2] Look at the sense of dignity and modesty of Asmaa’! See how she felt shy in front of men? See how careful she was about her husband’s feelings? She knew that her husband had a lot of gheerah so she didn’t want to upset him by accepting the Prophet’s (peace be upon him) help even though the Prophet was the purest of men and even though it meant bringing hardship on herself! And look at az-Zubair (may Allah be pleased with him), even though he had a lot of gheerah, he didn’t want to inconvenience his wife. What a beautiful relationship they had! Nurturing our sense of Gheerah Sometimes Muslim women don’t understand if their menfolk want them to cover their faces or if they ask them to change something about the way they dress or speak in public, thinking that the men are being over-protective. But my dear sisters! If your husband asks you not to wear a certain colour of khimar because it brings out the beauty of your eyes or if he wants you to cover your face – be thankful! Be proud of the fact that your husband has a sense of gheerah for you and that he values you and cares for your hereafter. He knows what men can be like more than you do and so never try and suppress his gheerah in these types of matters. And his concern for you should incite your own sense of honour! Why should any man be able to see your beauty and think indecent thoughts about you? We must nurture our own and our menfolk’s sense of gheerah by behaving and dressing modestly ourselves and paying attention to their valid opinions. We expect certain behaviour from them and they expect it of us. And besides, if our husband asks us to do something that it not haram, we must do it. Brothers! How can you allow your wife or sister to walk around attracting the attentions and evil-thoughts of other men? How can you not mind if she smiles as she talks to other men. Nobody has the right to enjoy her and her company but you and her Maharim men. You are not being overbearing if you first encourage and then enforce the hijab on your womenfolk because YOU will be asked about it on the Day of Judgement and it is also a major sin upon you! It is upon the men to enforce these things in their homes and you cannot use the excuse that your wife didn’t want to. Women need a firm, balanced, guiding hand from their men, so with wisdom you must enforce hijab in your home. You are a shepherd and are responsible for your flock! Allah reminds us all in the Qur’an, the meaning of which is: “O you who believe, Protect yourselves and your families from a fire whose fuel is men and stones.”[3] There is a big difference between how Islam values and protects women and how cheaply women are treated outside of Islam. As Muslims we have to be careful that our sense of modesty, shame and gheerah don’t wear out in a society in which people have lost it. [1] Surah al-Nisaa, verse 34 [2] Al-Bukhari [3] Surah al-Tahreem, verse 6
  14. When a person makes dua he finds in this dua a way out of the problems he is facing. No matter how great the problem is he realises that there is an exit from this problem through dua. So his spirits are lifted and he is optimistic about his situation. Dua gives him hope and increases his trust in Allah's mercy. It opens up a door that shows him the escape from the cage of problems that he is in, and it lights up the path that grants him an exit from his darkness." - Shaykh Yasir Qadhi
  15. নতুন হজ যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ নতুন হজ যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ মোহাম্মদ আল-আমীন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হজ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রত্যেক সুস্থ এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একবার হজ করা ফরজ। এই হজের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে। অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি আছেন যাদের ভাগ্যে হজ নসিব হয় না। আবার এমন অনেক লোক আছেন যারা অসুস্থ বা তেমন কোনো সামর্থ্য নেই, আল্লাহর রহমতে তবুও তাদের হজ করার সৌভাগ্য হয়ে যায়। আল্লাহর মেহমান হওয়া নিtসন্দেহে অনেক গর্বের বিষয় এবং হাজীরা আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত। হজ এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালীপনা, তাদের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গী, সর্বোপরি হজের ব্যাপারে অনেক তথ্য না জানার কারণে অনেক সময় বিদেশের মাটিতে বিপাকে পড়তে হয় হাজীদের এবং অনেক সময় হজ হয়ে উঠে ভুলে ভরা। নতুন হাজীদের ক্ষেত্রে আমার এই পরামর্শগুলো সামান্য হলেও কাজে আসবে বলেই আশা করছি। সৌদি আরবে অবস্থান করে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই আলোকে আপনাদের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি। ১. যারা বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা অবশ্যই যে এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন, সেই এজেন্সির খোঁজ খবর নেবেন। তারা ‘হাব’ এর সদস্য কিনা, তাদের অতীত রেকর্ড কেমন, মক্কা মদীনায় কোথায় রাখবে, বাইতুল্লাহ থেকে কতোদূর রাখবে, এজেন্সির পক্ষ থেকে কতো বেলা খাবার দেবে। ২. জেনে নিন, আপনি যে গ্রুপের সঙ্গে হজে যাচ্ছেন সেই গ্রুপের মোয়াল্লেম ভালো মানের আলেম কিনা, মোয়াল্লেমের আগে হজের অভিজ্ঞতা আছে কিনা। অনেক সময় লক্ষ করা যায় অনেক এজেন্সি তাদের হাজীদের নিয়ে ছেড়ে দেন। হাজীরা জানেনও না কোথায় কি করতে হবে। অনেক মোয়াল্লেম আলেম না হওয়ার কারণে নিজে ভুল করেন এবং হাজীদেরও ভুল করিয়ে দেন। অনেক সময় হজ্জের নিয়ম কানুন পালনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মোয়াল্লেমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলে দিতে পারবেন। মোয়াল্লেম আলেম না হলে সমস্যা হতে পারে। যেমন ধরা যাক, তাওয়াফ করার সময় যদি ফরজ নামাজ শুরু হয়ে যায় তখন হাজী কি করবেন? তিনি কি নামাজ পড়বেন, নাকি তাওয়াফ করবেন? যদি নামাজ পড়েন তাহলে কি প্রথম থেকে তাওয়াফ শুরু করবেন নাকি তাওয়াফ যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করবেন? অথবা সায়ী করার সময় অজু না থাকলে তখন কি হবে? ইত্যাদি এমন ধরনের সমস্যা হতে পারে। ৩. মনে রাখবেন হজে যাওয়ার নিয়ত করা থেকেই আপনি আল্লাহর মেহমান। তাই হজে যাওয়ার আগে খুব ভালো মতো হজের নিয়ম কানুন শিখে নেবেন, প্রশিক্ষণ নেবেন এবং তখন থেকেই আপনি আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছেন সে রকম মন মানসিকতা লালন করতে শুরু করবেন। মাসলা মাসায়েলগুলো ভালোমতো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। হজের নিয়ম কানুনের ব্যাপারে বাজারে অনেক বই-পুস্তক পাওয়া যায় আপনি সেগুলো ভালোভাবে পড়তে পারেন। ৪. হজের গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে তা হলো এহরাম অবস্থায় কি কি কাজ করতে পারবেন না। কারণ এহরাম পরার পর থেকেই আপনার সামনে কোনো না কোনো পরীক্ষা আসবে। যেমন, এহরাম অবস্থায় কোনো পশু-পাখি এমনকি কোনো পোকা মাকড় মারতে পারবেন না বা কাউকে মারার জন্য দেখিয়ে দিতে পারবেন না। এমন সময় আপনার সামনে মশা চলে এলো, আপনি অভ্যাস বশত মশা মেরে ফেললেন। মনে রাখতে হবে, কীট পতঙ্গ পর্যন্ত মারা যাবেনা এসময়। ৫. এহরাম অবস্থায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেন বা একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করেন। আবার অনেকে গীবত করেন। সাবধান! এহরাম অবস্থায় এসব নিষিদ্ধ। অবশ্য এটা সবসময় নিষিদ্ধ। অন্য হাজীর যেন কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ আপনার মতো তিনিও আল্লাহর মেহমান। ৬. আপনি ভালোভাবে জেনে নিন কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয়। যেমন, কাবা ঘরের ভেতর, যমযমের কাছে, সাফা-মারওয়ায়, সাফা-মারওয়ার সবুজ বাতির মাঝখানে, মাকামে ইব্রাহীমের কাছে, আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনায়, তিন জামাআরাহ এর পাশে, হাজরে আসওয়াত বা কাবা শরিফের কালো পাথরে চুমু খেয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। ৭. মক্কা-মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। ফলে আপনার এজেন্সি যখন আপনাকে সেখানে ঘুরাতে নিয়ে যাবে তখন মনের মাঝে ফিলিংসটা কাজ করবে। মনে রাখবেন, দর্শনের সময় কোনো অবস্থায় দাঁড়িয়ে বা বসে হাত তুলে দোয়া করবেন না । এটা বেদাত। এগুলো করতে গেলে অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয়। ৮. হজে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদত তাই, নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে বসে না থাকলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাবেন না। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা আগে গেলে মসজিদের ভেতর ভালো জায়গা পাবেন। ৯. অনেক নারী জামাতে নামাজ পড়তে পারেন না। যাওয়ার আগে শিখে নেবেন। ছেলেদের দায়িত্ব তাদের নারী আত্মীয়দের জামাতে নামাজ পড়তে শিখিয়ে দেওয়া। কারণ আমাদের দেশের নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত নন। ১০. বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক আপনার পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড, হোটেলের কার্ড, কব্জি বেল্ট সঙ্গে রাখবেন। মনে রাখবেন, আপনি হারিয়ে গেলে এগুলোর মাধ্যমে আপনাকে আপনার এজেন্সির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। ১১. প্রতি ওয়াক্তে জানাজার নামাজ হয়। অনেক নারীই জানাজার নামাজ পারেন না। শিখে নেবেন । পড়লে ভালো। ১২. হজের সময় আপনি সারা দুনিয়ার মানুষকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন। যেটা আর কোথাও পাবেন না। দেখতে পারবেন নানান মানুষের নানান রকম মত আর নিয়ম কানুন। যদি কেউ কোনো ভুল করে তাহলে তাকে সাবধানে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। কাউকে সরাসরি শোধরানোর চেষ্টা করবেন না। অপর ব্যক্তি না বুঝলে চুপ থাকুন। ১৩. দোয়া কবুল হওয়ার স্থানে মন ভরে দোয়া করুন এবং আগে থেকে ঠিক করে রাখুন কি দোয়া করবেন। অনেক সময় আবেগের কারণে কি দোয়া করবেন তা মনে থাকেনা। মন ভরে কাবা ঘর দেখে নেবেন। কারণ আপনার নসিবে দ্বিতীয়বার কাবা ঘর দেখা সম্ভব নাও হতে পারে। ১৪. বিমানে ওঠার আগে থেকেই আপনার হ্যান্ড ব্যাগে পাতলা জায়নামাজ এবং স্প্রে করা যায় এমন পানির বোতল সবসময় সঙ্গে রাখবেন। যাতে অজু করার জায়গা না থাকলে স্প্রে করে হাতের তালুতে পানি নিয়ে অযুর ফরজগুলো আদায় করে অজু করে নিতে পারেন। ১৫. আপনাকে অনেকক্ষণ মসজিদে থাকতে হবে। তাই সঙ্গে খেজুর, বাদাম বা শুকনো খাবার রাখবেন। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই আপনাকে অসুস্থ হওয়া চলবে না। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি অসুস্থ হয়ে যান। যেমন বেশি উমরা করতে গিয়ে অনেকে এমন অসুস্থ হয়ে যান যে ফরজ কাজ করতে পারেন না। ১৬. আপনি হজের আগে সামান্য রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন, এতে হজের সময় কষ্ট কম হবে। অতিরিক্ত জিয়ারাহ বা তাওয়াফ হজের পরে করাই ভালো। প্রচুর পরিমাণে পানি ও জুস খেতে হবে। হজের সময় কমদামী এবং হাল্কা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন। ১৭. আপনি যখন মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় অবস্থান করবেন, তখন চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাগের ওজন যেন কম হয়। কারণ অনেক হাঁটতে হবে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হবে। ১৮. জামাআরাহতে (পাথর নিক্ষেপের জায়গা) বড় ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না। ব্যাগ নিয়ে ফেলে দেয় অনেক সময়। সেই ক্ষেত্রে সাবধান। নিক্ষেপ করার পাথর পারলে মোয়াল্লেমের মাধ্যমে আগেই সংগ্রহে রাখবেন। ১৯. এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো সুগন্ধি বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। অনেকেই বিভিন্ন লোশন ও সাবান ব্যবহার করেন যা সুগন্ধি যুক্ত। এ ক্ষেত্রে সুগন্ধিমুক্ত লোশন ও ভেসলিন ব্যবহার করতে পারেন। ২০. এহরাম অবস্থায় অনেকেই বাথরুম ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয় না। যা স্বাস্থ্য সম্মত না। মিনা, মুজদালিফা ও আরফায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আগে থেকেই ছোট করে টুকরো করা সুগন্ধি ছাড়া সাবান ও প্লাস্টিক বা পলিথিন নেবেন। বাথরুমে যে পানির পাইপ থাকে তা প্রায় সময় মাটিতে পড়ে থাকে। পলিথিন দিয়ে পাইপ ধরতে পারেন বা হ্যান্ড গ্লাভস দিয়ে। তবে হ্যান্ড গ্লাভস পরা ও খোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই পলিথিনই ভালো। বাথরুমের বাইরে অনেক লোক অপেক্ষা করে থাকে। তাই চেষ্টা করবেন দ্রুত কাজ শেষ করে আসতে। ২১. আরাফার ময়দানে অনেক নিম গাছ দেখতে পাবেন। এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো গাছের ডাল ভাঙতে পারবেন না। কিন্তু অনেকেই গাছের ডাল ভেঙে মেসওয়াক করে। এ ব্যাপারে সাবধান। প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে মুভ, প্যারাসিটামল, অ্যাসিডিটির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত কেউ যদি কোনো ওষুধ খায় সেগুলো কতো দিনের প্যাকেজের জন্য যাচ্ছেন সেই হিসেবে সঙ্গে রাখবেন। ২২. মদিনায় যখন মসজিদে কুবায় যাবেন, তখন হোটেল থেকে অজু করে যাবেন। কারণ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লে একটা উমরা হজের সওয়াব পাওয়া যায়। ২৩. জামাআরাহতে যখন পাথর মারা হয় তখন অনেকেরই একটা জোশ চলে আসে। অনেকেই জুতা, স্যান্ডেল, বোতল ছুড়ে মারেন। এটা করা যাবে না। পাথর মারার সময় দোয়া পড়ে পাথর মারতে হবে এবং মনের ভেতর এমন একটা ফিলিংস আনতে হবে যে, ‘ আমি খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পাথরটা ছুড়ে মারছি। কারণ এখানেই ইব্রাহীম (আ.) শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। কারণ তিনি আল্লাহকেই বড় মনে করেছিলেন শয়তানের থেকে। তাই আমিও আল্লাহকেই সবার চেয়ে বড় মনে করি’। ২৪. মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরীফে মেয়েদের সব সময় ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফযর, যোহর ও এশার নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢুকতে দেয়। মেয়েদের জন্য ২৫ নং গেট দিয়ে ঢুকলে সব চেয়ে ভালো। বাংলাদেশসহ সব দেশের মেয়েদের আলাদা আলাদা করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দৌঁড়া-দৌঁড়ি এবং ধাক্কা-ধাক্কি করবেন না। তবে ছেলেদের এমন নিয়ম নেই। সেখানে রিয়াজুল জান্নাহ দোয়া কবুলের জায়গা। শুধু মাত্র সবুজ কার্পেট বিছানো অংশটুকু রিয়াজুল জান্নাহ। ২৫. আপনার লাগেজের গাঁয়ে বাংলাদেশের পতাকার ছাপ লাগাতে হবে এবং লাগেজের গায়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে বাংলাদেশ লিখতে হবে। তাছাড়া নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোয়াল্লেম নম্বর লিখতে হবে। দড়ি, টেপ, মার্কার পেন, কাঁচি, সুঁই-সুতা সঙ্গে রাখবেন। ২৭. আপনি মক্কা বা মদিনা যেখনেই থাকুন না কেন, সেখানে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। কোনো কারণে আপনার সঙ্গী বা আপনি হারিয়ে গেলে সেই জায়গায় চলে আসবেন। সঙ্গীদের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। আপনি নিজে হারিয়ে গেলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পে জানান। তারাই আপনাকে আপনার হোটেলে পৌঁছে দেবে। ২৮. ফরজ তাওয়াফের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়। সাফা মারওয়ায় ফরজ তাওয়াফ দোতালায় করলে ভিড় একটু কম পাওয়া যায়। কারণ সবাই চায় নিচে তাওয়াফ করতে। ফরয তাওয়াফের পর সায়ী করার সময় অনেক ভিড় হবে। তবে চার তলায় একটা সায়ী করার জায়গা আছে। সেখানে ভিড় কম হয়। জায়গাটা আগে থেকে দেখে রাখবেন। কারণ জায়গাটার সিঁড়ি পেতে কষ্ট হয়। ২৯. যেখানেই যাবেন চেষ্টা করবেন ২/৩ জন একসঙ্গে থাকতে, তাতে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর হ্যাঁ টাকা পয়সা অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। হজের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করবেন যাতে সামান্য ভুল টুকুও না হয়। কোথাও কোনো ভুল হলে অবশ্যই দম (রক্ত বা কোরবানীর মাধ্যমে কাফফারা) দিতে হবে। চেষ্টা করবেন মানুষের সৃষ্ট জটলা এড়িয়ে চলতে। মনে রাখবেন এখানে আসার পেছনে উদ্দেশ্য শুধু একটাই আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানো। লেখক: সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর মেইল: [email protected]
  16. Sitting with poor & less fortunate people removes the ego & pride from your heart." - Imam Ibn Al Qayyim (rahimahullah)
  17. Ibn al-Qayyim [rahimahullah] said: "The soul will never become pious and purified except through undergoing afflictions. It is the same as gold that can never be pure except after removing all the base metals in it." [al-Fawaa`id, p365]
  18. Asalamu'alaikum They insult our Prophet (saw) with the things that they say ** but we insult our Prophet (saw) by not following his way.* Boonaa Mohammed
  19. বাংলাদেশের কোথায় কুরআন ও আরবী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে , কোর্স ফি কত ইত্যাদি তথ্য এখানে দিলে অনেকেরই উপকার হবে । ইকরা কুরআন শিক্ষা ফাউন্ডেশন সব শ্রেণীর বয়সের নারী - পুরুষের জন্য মাত্র ১৫- ২০ দিনের মধ্যেই ( রোজ এক ঘন্টা করে ) পবিত্র কুরআন শরীফ সহি শুদ্ধভাবে শেখার সুব্যবস্থা আছে । যোগাযোগ : পরিচালক মাওলানা এম আনিসুর রহমান আকন্দ ( মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকমিল প্রাপ্ত ) কনকর্ড আর্কেডিয়া শপিং মল ( ৬ ষ্ঠ তলা ) , রোড ৪ , ধানমন্ডি , ঢাকা ১২০৫ ফোন : ৯৬১৩৩২৫ , ০১৭১৬৪৬০৪০৫ , ০১৯১২৭২১৯২৩
  20. "O you who sold yourself for the sake of something that will cause you suffering and pain, and which will also lose its beauty, you sold the most precious item for the cheapest price, as if you neither knew the value of the goods nor the meanness of the price. Wait until you come on the Day of mutual loss and gain and you will discover the injustice of this contract." -Ibn al Qayyim al Jawziyyah
  21. "To act in haste without sound knowledge and wisdom is extremism." ~AbdulBary Yahya
  22. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য-সমর্থন করার একশত উপায় Posted: 13 Sep 2012 অনুবাদ : ইকবাল হোসাইন মাছুম কাউসার বিন খালেদ সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। নবী ও রাসূলদের শ্রেষ্ঠতম সত্বা, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম , তাঁর সাথী-সঙ্গী এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। ইসলামের মূলভিত্তি সমূহের একটি হল: এ কথার ঘোষণা দেয়া যেঃ~ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ইসলামের এ মহান দু'টো ঘোষণার দ্বিতীয়টি হল:~ মুহাম্মাদ [সা:] আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে এ ঘোষণার বাস্তবায়ন করা যায়ঃ প্রথমতঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সত্য বলে মেনে নেয়া। তিনি মানব ও জ্বিনসহ সকলের জন্য প্রেরিত। তার প্রধান মিশন হল আল-কুরআন ও সুন্নাহ। এ দু’টো বাদ দিয়ে কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ তার আনুগত্য করা, তার হুকুমে সন্তুষ্ট থাকা। তার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ সম্পূর্ণভাবে মেনে নেয়া, তার সুন্নাত ও আদর্শের অনুসরণ করা। এবং এর বাহিরে যা আছে তা প্রত্যাখ্যান করা। তৃতীয়তঃ নিজের চেয়ে, নিজের মাতা-পিতা ও পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বেশী মুহাব্বত করা-ভালবাসা। এ ভালবাসার যথার্থ রূপ হচ্ছে তাকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, সাহায্য করা এবং তার পক্ষ সমর্থন করা। সকল মুসলিমের কর্তব্য হলঃ এ বিষয়গুলো বাস্তবে রূপদানের চেষ্টা করা। এতে তার ঈমান পরিশুদ্ধ হবে, কালেমায়ে তাওহীদের দ্বিতীয় ঘোষণা সঠিক বলে গৃহীত হবে। শুধু মুখে স্বাক্ষ্য দেয়ার নাম ঈমান নয়। যেমনটি করে মুনাফিকরা। আল্লাহ বলেনঃ মুনাফিকরা বলে, আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহও জানেন নিশ্চয়ই আপনি তাঁর রাসূল। কিন্তু আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-মুনাফিকুনঃ ১) কেন মুনাফিকদের এ ঘোষণা কাজে আসেনি? কারণ তারা এ ঘোষণার বাস্তবায়নে কাজ করেনি। এ প্রসঙ্গে আমরা আপনার খেদমতে এমন কিছু বিষয় পেশ করছি যা দিয়ে আপনি আল্লাহর রাসূলকে মুহাব্বত ও ভালবাসার পরিচয় দিতে পারবেন। বিশেষ করে বর্তমানের এ সংকটময় সময়ে তার মুহাব্বত ও ভালবাসার প্রমাণ দেয়া অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। ঈমানের দাবীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকে যার যার সামর্থ অনুযায়ী মুহাব্বতের দাবীর প্রমাণ দিবেন। নিজে এর দায়িত্ব বহন করবেন। ব্যক্তি হিসাবে দায়িত্বঃ~ [১ ]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের অকাট্য প্রমাণাদির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা, যা দিয়ে প্রমাণ হয় যে, তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের রাসূল। এ সকল প্রমাণের মূল হল আল-কুরআন। এতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের সত্যতার বিষয়ে যে সকল বানী এসেছে তা অনুধাবন করা ও তাতে চিন্তা-গবেষণা করা। [২]~ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও অনুসরণ যে অবশ্য কর্তব্য এবং তার সকল নির্দেশ পালন করা যে অপরিহার্য, এ বিষয়ে কুরআন,সুন্নাহ ও ইজমার প্রমাণাদিগুলো শিক্ষা করা। [৩]~ মহান আল্লাহ তাআলা যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ সংরক্ষণ করেছেন সে ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করা এবং সঠিক ধারণা লাভ করা। আর সেটি সম্পন্ন হয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও অক্লান্ত চেষ্টা-মেহনতের মাধ্যমে যেমন আমরা দেখি উম্মাতের হাদীস বিশারদগন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দূর্বল হাদীস, সহীহ হাদীস, বানোয়াট হাদীস চি‎িহ্নত করেছেন। এবং এগুলো নিরূপনের অত্যান্ত সূক্ষ্ম ও গ্রহনযোগ্য কিছু মূলনীতি প্রনয়ন করেছেন। এটা শুধু এ উম্মাতে মুহাম্মদীই করেছে এবং করছে। অন্য কোন জাতি তাদের নবীর আদর্শ সংরক্ষণের বিষয়ে এমন ভূমিকা অতীতে রাখেনি। [৪]~ অন্তরে আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহাব্বতের অনুভূতি জাগ্রত করার চেষ্টা করা। এটা তার অনুপম স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট মন্ডিত অবয়ব-আকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন ও তার সীরাত পাঠের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। [৫]~ আমাদের প্রত্যেকের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যে ইহসান ও অনুগ্রহ আছে তা সদা অনুভব করা। তিনি কত সুন্দরভাবে আল্লাহর দীন আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন ও উম্মাতের কল্যাণ কামনা করেছেন। [৬]~ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ও অনুগ্রহের পর আমাদের উপর তার অনুগ্রহ সবচে বেশী। তিনিই আমাদের আল্লাহর দিকে ও তার জীবন বিধানের দিকে পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদানে সম্মানিত করুন! যে প্রতিদান হবে সকল নবীকে তাদের উম্মাতের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিদানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর। [৭]~ অনুভব করা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তার উম্মাতের প্রতি সবচেয়ে দয়াদ্র, করুণাময়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্টতর।” (সূরা আল-আহযাব : ৬) অর্থ্যাৎ একজন ঘনিষ্ট ও আপন ব্যক্তি তার আরেক ঘনিষ্ট ব্যক্তিকে যত আপন ভাবে, যত আন্তরিক হতে পারে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতের জন্য এর চেয়ে বেশী ঘনিষ্ট। [৮]~ যে সকল আয়াত ও হাদীস আল্লাহর কাছে তার শ্রেষ্ঠত্ব, তার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা , তাকে আল্লাহর সম্মান প্রদর্শন বিষয়ে প্রমাণ বহন করে তা জানা ও সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। [৯]~ আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে ভালবাসতে আমাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তা কঠোরভাবে পালন করা।বরং তাকে নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসা। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার প্রাণের চেয়ে, সন্তানের চেয়ে, মাতা-পিতার চেয়ে ও সকল মানুষের চেয়ে অধিকতর প্রিয় না হব।” [১০]~ আল্লাহ তাআলা তার সাথে যে আদব-কায়দা, শিষ্ঠাচার অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন তা কাঠোরভাবে পালন করা। যেমন তিনি বলেছেনঃ হে ঈমানদারগন! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তার সাথে সে রকম উচ্চস্বরে কথা বলো না; কারণ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। (সূরা আল-হুজুরাত : ২-৩) আল্লাহ আরো বলেনঃ “রাসূলকে ডাক দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা একে অপরের ডাকের মত গণ্য করো না।” (সূরা আন-নূর : ৬৩) [১১]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করার বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ “যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর।” (সূরা আল-ফাতহ: ৯) [১২]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক নিয়্যত ও সংকল্প অব্যাহত ভাবে ধারণ করা তার পক্ষে প্রতিরোধ করা। [১৩]~ বিশ্বাস করা, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করবে, তাকে ভালবাসবে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার, জান্নাতে সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর সাথে থাকবে। যেমন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, আমি আপনাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তুমি যাকে ভালবাস তার সাথে থাকবে।” [১৪]~ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া। যখনই তাঁর নাম উচ্চারণ হয়, আজানের পরে, জুমআর দিনে তার প্রতি বেশী করে দরুদ পাঠ করা। [১৫]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঠিক ও বিশুদ্ধ সীরাতগ্রন্থ পাঠ করা। তার সকল ঘটনাবলী থেকে নিজের জীবন গঠনের উপাদান সংগ্রহ করে নেয়া। নিজে জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা-সাধনা করা। [১৬]~ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- এর সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা। তার সহীহ হাদীসমূহ অধ্যায়ন করা, ভালভাবে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা। তাতে যে সকল বিষয় উন্নত চরিত্র গঠন সম্পর্কে, এক আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলো সুন্দরভাবে অনুসরণ করা। [১৭]~ তাঁর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সকল সুন্নতের অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া। [১৮]~ মুস্তাহাব বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও আগ্রহভরে তাঁর অনুসরণ করার চেষ্টা করে যাওয়া। এমনকি পূর্ণ জীবনে অন্তত একবারের জন্যেও যদি হয়। যাতে জীবনের যাবতীয় পর্বে - প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ সম্পন্ন হয়। [১৯]~ তাঁর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর যে কোন সুন্নত ও আদর্শ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা। [২০]~ মানুষের মাঝে তাঁর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর আদর্শের অনুশীলন ও প্রসার দেখলে আনন্দিত হওয়া। [২১]~ মানুষের মধ্যে তাঁর আদর্শের চর্চা ও আমলের অনুপস্থিতির কারণে ব্যথিত ও মর্মাহত হওয়া। [২২]~ নবীজী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর বা তাঁর আদর্শের সমালোচনা-ছিদ্রান্বেষণকারীর প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষন করা। [২৩]~ তাঁর পরিবারস্থ লোকজন যথা সন্তান-সন্ততি ও সহধর্মিণী প্রমুখদের ভালবাসা। ইসলাম ও নবীজীর আত্মীয়তার সূত্রধরে তাদেরকে মুহাব্বতকরে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা।তাঁর আত্মীয়ের মধ্যে যারা অমুসলিম বা পাপি তাদের হেদায়াত কামনা করা। কেননা নবীজীর নিকট অন্যদের তুলনায় এদের হেদায়াতই ছিল সবচে প্রিয় ও কাঙ্খিত। বিষয়টি আমরা উমর বিন খাত্তাব [রা]-এর নিম্নোক্ত উক্তি থেকে স্পষ্টকরে বুঝতে পারব, যখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চাচা আব্বাস [রা] আনহুকে সম্মোদন করে বলেছিলেন। ( হে আব্বাস! ইসলাম গ্রহন করার জন্য আপনাকে অশেষ মুবারকবাদ।যেদিন আপনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন সেদিন আপনার ইসলাম গ্রহন আমার নিকট পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহন অপেক্ষা অধিক প্রিয় ও কাঙ্খিত ছিল। তার কারণ হচ্ছে : আমি জানতে পেরেছিলাম যে রাসুলুল্লার [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আপনার মুসলমার হওয়াটা খাত্তাবের মুসলমান হওয়া অপেক্ষা অধিক কাঙ্খিত ও প্রিয় ছিল। [২৪]~ আহলে বাইত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অসিয়ত পালন করা। কারণ নবীজী বলেছেন:“আমার পরিবার সর্ম্পকে আমি তোমাদেরকে আল¬াহর কথা স্মরণ করিয়ে যাচ্ছি” একথাটি তিনি পরপর তিন বার বলেছেন। [২৫]~ নবীজীর সাহাবীদের মুহাব্বত করা ,তাঁদের সম্মান করা এবং তাদের পরে আগত সকল উম্মত অপেক্ষা এলম,আমল এবং আল্লাহ্‌ তা'লার নিকট তাদের অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় তাদের মর্যাদা বেশী বলে বিশ্বাস পোষন করা। [২৬]~ আলেম-উলামাদের মুহাব্বত করা, তাঁদের সম্মান করা।নবুওয়াতী উত্তরাধিকার তথা এলমের সাথে তাদের সম্পর্ক ও অবস্থানগত উচ্চতার কারণে।উলামারাই হচ্ছেন নবীদের উত্তরসূরী।সুতরাং উম্মতের উপর নবীজীর অধিকারের ভিত্তিতে তাদের (উলামা) মুহাব্বত ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে। পরিবার ও সামাজিক ক্ষেত্রে:~ [২৭]~ রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুহাব্বতের উপর সন্তানদের প্রশিক্ষন দান করা। [২৮]~ জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে তাদেরকে (সন্তান) নবীজীর আদর্শের অনুসরণের প্রশিক্ষন দান করা। [২৯]~ তাদেরকে নবীজীর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর জীবন-চরিত সম্পর্কীয় বই-পুস্তক সংগ্রহ করে দেয়া । এই লিংক থেকে ডাউনলোড করুন। [৩০]~ তাঁর জীবন-চরিতধর্মী ক্যাসেট সংগ্রহ করা। [৩১]~ প্রশিক্ষন দানের ক্ষেত্রে পরিষ্কার ও বোধগম্য কারিকুলাম সম্পন্ন কার্টুন ছবি বাছাই করে দেয়া। [৩২]~ নিজ ঘরে পরিবারস্থ লোকদের নিয়ে সাপ্তাহে এক বা একাধিক সীরতের দরসের আয়োজন করা। [৩৩]~ গৃহ:স্বামীকে পরিবারস্থ লোকজনদের সাথে চাল-চলন উঠা-বসার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অনুসরণ করা। [৩৪]~ সন্তানদেরকে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- কর্তৃক বর্ণিত দোআসমূহ মুখস্থ করানো এবং প্রাত্যহিক জীবনে তা বাস্তবায়ন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা। [৩৫]~ সন্তানদেরকে তাদের প্রাত্যহিক ব্যয়ের একটি অংশ হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে ব্যয়ের জন্য উৎসাহী করা। যেমন ইয়াতীমকে সহযোগিতা করা, খাদ্য প্রদান, প্রয়োজনগ্রস্তকে সহযোগিতা করা। [৩৬]~ হাদীসে বর্ণিত উপমাগুলো বাস্তবায়নে সন্তানদের অভ্যস্ত করে তোলা ; যেমন ‘মুমিন বিচক্ষণ এবং চতুর’, ‘মুমিন এক গর্তে দুবার পা দেয় না’, ‘সহজ করে দেও, কঠিন কর না’ ইত্যাদি। [৩৭]~ সীরাত সম্পর্কিত পারিবারিক প্রতিযোগিতার আয়োজন। [৩৮]~ ‘রাসূলের গৃহে একদিন’ এই শিরোনামে রাসূলের জীবনীর সংশ্লেষে মুসলিম পরিবারের পরিচয় প্রদান। শিক্ষা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট লোকদের ক্ষেত্রেঃ~ [৩৯]~ উম্মতের উপর রাসূলের হক বর্ণনা করে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে রাসূলের মুহাব্বাতের বীজ বপন। [৪০]~ অধিকহারে আলোচনা সভার আয়োজন করা, যাতে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর ব্যক্তিত্ব ও জীবনের সংশ্লিষ্ট সার্বিক আলোচনা উত্থাপন করা হবে। [৪১]~ শিক্ষা সিলেবাসে এবং ইসলামিক ডিপ্লোমা শাখাগুলোতে সীরাতুন নবীর বিষয় আকারে সংযোজনের জন্য শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা। [৪২]~ পশ্চিমা প্রসিদ্ধ ভার্সিটিগুলোতে সীরাত পাঠের জন্য স্বতন্ত্র ডিপার্টমেন্ট খোলার জন্য অর্থায়নের তৎপরতা চালানো। [৪৩]~ সীরাত সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সীরাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য গবেষকদের উৎসাহ প্রদান। [৪৪]~ স্কুল এবং ভার্সিটিতে সীরাতের প্রদর্শনীর কার্যক্রম গ্রহণ, যাতে ইসলামের অভ্যুদয়কালিন ভৌগলিক কাঠামো বানানো হবে এবং রাসূলের সীরাত ও রেসালাতের পরিচয় প্রদান করা হবে। [৪৫]~ লাইব্রেরীগুলোর নির্দিষ্ট একটি অংশ বিশিষ্ট করে দেয়া হবে, যাতে রাসূলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু থাকবে, এবং তা স্থাপিত হবে প্রকাশ্য কোন স্থানে। [৪৬]~ সীরাতুন নবী বিষয়ে বিশ্বকোষধর্মী কোন কাজ হাতে নেয়া হবে, এবং তাকে রেফারেন্সের মানে উন্নীত করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষায়। [৪৭]~ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বাৎসরিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, তাতে উপস্থাপিত হবে সীরাতুন নবীর সর্বোত্তম আলোচনা-গবেষণাটি। এবং মূল্যবান পুরস্কারে গবেষককে ভূষিত করা হবে। [৪৮]~ যুবকদেরকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করা এবং তাদেরকে বাস্তব কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট করে তাদের অন্তরে রাসূলের মুহাব্বাত এবং তার সুন্নতের সাথে সম্পৃক্ত করা। [৪৯]~ রাসূলের অনুসারী নেতৃত্ব গঠনে বিশেষ অনুশীলনমূলক কর্মশালার আয়োজন। ইমাম, দায়ী ও তালেবুল ইলমদের ক্ষেত্রেঃ~ [৫০]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ও রেসালাতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা। তিনি উদার ও বিশুদ্ধতম সত্য নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন এবং তার দাওয়াতের মৌল নীতি হচ্ছে তাবৎ মানব শ্রেণিকে মানুষের প্রতিপালকের নিরঙ্কুশ ইবাদতের প্রতি হেদায়েত করা—সাথে সাথে এ বিষয়টিরও স্পষ্টিকরণ। [৫১]~ গোত্র, শ্রেণি নির্ভেদেমানুষকে দাওয়াত এবং এই দীনের প্রতি তাদেরকে হেদায়েতের নিমেত্তে কর্মতৎপরতা চালানো। [৫২]~ রাসূলের চারিত্রিক ও স্বভাবগত সিফাত সমূহ—রিসালাতের পূর্বের ও পরের—বর্ণনা। [৫৩]~ উপভোগ্য শৈলী ব্যবহার করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফযীলত এবং তার উম্মতের বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা। [৫৪]~ পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী এবং সাহাবীদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ নীতিমালা বর্ণনা। [৫৫]~ আহলে কিতাব, পৌত্তলিক এবং মুনাফিকদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ পদ্ধতির বর্ণনা। [৫৬]~ রাসূলের প্রাত্যহিক জীবনের নীতিমালা সংক্রান্ত বর্ণনা। [৫৭]~ কিছু কিছু জুমার দ্বিতীয় খুতবা রাসূলের সীরাত বিষয়ক আলোচনা দ্বারা বিশিষ্ট করা, পুরো খুতবা জুড়ে এ আলোচনার প্রয়োজন নেই। [৫৮]~ কুরআনের যে সমস্ত আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, সালাতে পাঠ করা হলে সে প্রসঙ্গে সালাতের পূর্বে অনুর্ধ্বে পাঁচ মিনিট সার আলোচনা করা। [৫৯]~ মসজিদ কেন্দ্রিক তাহফীজুল কুরআনের হলকার পাশাপাশি সীরাতুননবীর অনুশীলনের হলকার সংযোজন। [৬০]~ রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত যে সমস্ত বিভ্রান্তি সাধারণ মানুষের ভাবনায় ছড়িয়ে আছে সেগুলোর অপনয়োন এবং বিশুদ্ধ করণ। এবং রাসূলের পক্ষ যা বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা আকড়ে ধরার জন্য সুবিস্তৃত এবং স্পষ্ট ভাষায় সকলকে আহ্বান জানান। [৬১]~ রাসূলের বিরোধিতায় যে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, আঘাত করেছে তার মর্যাদায়, তার ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ফতোয়া বর্ণনা করা, এবং যারা এ বিষয়ে লিপ্ত, তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা এবং তাদের কর্মকান্ড হতে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করা ওয়াজিব—এ বিষয়টি সবিশেষ উল্লেখ করা। [৬২]~ রাসূলের দাওয়াতী নীতিমালার সবিস্তার উল্লেখের মাধ্যমে মানুষকে তাদের ধর্মের প্রতি প্রত্যবর্তনের লক্ষ্যে কর্মতৎপরতা চালানো। [৬৩]~ রাসূলের ব্যাপারে অতিরঞ্জন পরিহারের লক্ষ্যে টিভি, রিডিও এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সতর্কবাণী প্রচার করা। অতিরঞ্জন সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়া যেমন কুরআনে এসেছে— তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন কর না। এবং এ ব্যাপারে রাসূলের বিশেষ হাদীসগুলো বর্ণনা করা, যেমন হাদীসে এসেছে— তোমরা আমার অনর্থক স্তুতি কর না, যেমন খ্রিস্টানরা ইবনে মারইয়ামের সাথে করেছে। সাথে সাথে এ বিষয়টিও বর্ণনা করে দেয়া যে, বিশুদ্ধ মুহাব্বাত একমাত্র তার অনুসরণেই নিহিত। [৬৪]~ সীরাতের মৌলিক উৎসগুলো হতে রাসূলের জীবনী অধ্যয়নে সকলকে উৎসাহী করা, এবং সে উৎসগুলো সম্পর্কে তাদেরকে ওয়াকিবহাল করানো। [৬৫]~ রাসূল ও তার সীরাত সম্পর্কে যে সকল বিভ্রান্তি, সংশয় ছড়িয়ে আছে সেগুলো দূর করা। সংকৃতিবান, চিন্তাবিদ, মিডিয়াকর্মী এবং সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রেঃ~ [৬৬]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব, তার উম্মতের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি প্রচার প্রসার এবং মিডিয়া এবং কালচারাল বিভিন্ন ফাংশনে সে সংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত। [৬৭]~ এমন কোন বিষয়ের উল্লেখ হতে বিরত থাকা, যাতে রাসূলের সুন্নতের সামান্যতম বিচ্যুতি ঘটে। [৬৮]~ পশ্চিমা ও ইহুদি প্রপাগান্ডার মুকাবেলা করা ; তারা আমাদের ধর্ম ও নবী সম্পর্কে যে সমস্ত সংশয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে তার যথপোযুক্ত প্রতিরোধ করা। [৬৯]~ অমুসলিমদের উদার শ্রেণিকে নিয়ে কালচারাল ও তথ্যের আদান-প্রদান সূচক সম্মিলনীর আয়োজন এবং রাসূল ও তার রেসালাত সম্পর্কিত আলোচনার উত্থাপন। [৭০]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিমদের উদার ও ন্যয়নিষ্ঠ শ্রেণি যা বলেছে, লিখেছে, সেগুলো প্রচার করা। [৭১]~ রাসূলের নীতিমালা, পদ্ধতি, সীরাত এবং তার আচরিত নীতিমালার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার লক্ষ্যে কালচারাল সেমিনার-সিম্পেজিয়ামের আয়োজন। [৭২]~ রাসূলের সীরাত নিয়ে মিডিয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং এ জন্য মূল্যবান পুরস্কার নির্ধারণ। [৭৩]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার জীবনী নিয়ে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প এবং ছোট ছোট পুস্তিকা প্রণয়ন। [৭৪]~ পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীর সম্পাদকদের নিয়ে পরামর্শ সভা ও বৈঠকীর আয়োজন করা, যাতে কুরআন ও হাদীসের সে আয়াত ও বর্ণনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যা প্রমাণ করে রাসূলের মুহাব্বাত ওয়াজিব, তার মুহাব্বাত সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও সকল মানুষের মুহাব্বাতের চেয়ে অগ্রগামী, এমনকি তা অগ্রগামী নিজের প্রতি মুহাব্বাতের চেয়েও। এবং এই মুহাব্বাতের অনস্বীকার্য দাবী হচ্ছে তার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন, তার অনুসরণ এবং পৃথিবীর যে কারো কথার তুলনায় তার কথাকে অধিক অগ্রাধিকার প্রদান। [৭৫]~ রাসূলের সীরাত, স্ত্রী-পরিজন-সাহাবী এমনকি শত্র“দের সাথে আচরণ নীতিমালা ও তার চারিত্রিক ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য বিভিন্ন চ্যানেলের কর্ণধারদের সাথে বৈঠক করা। [৭৬]~ ভিজ্যুয়াল কোম্পানীগুলোকে রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত ভিডিও ক্যাসেট প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে উৎসাহ প্রদান। [৭৭]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ-বৈশিষ্ট্য, এবং সুন্নতে নববীর কিছু গল্প নিয়ে কার্টুন নির্মাণের জন্য টেলিভিশন এবং চ্যানেল কোম্পানী ও সংস্থাগুলোকে উৎসাহ প্রদান। দাতব্য ও দাওয়াতী প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেঃ~ [৭৮]~ বিভিন্ন কমিটি গঠন বা ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহায্য-সহযোগিতার ঝান্ডা বহন করবে। [৭৯]~ নবীজীর বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অডিও, ভিডিও, ক্যাসেট ও বিভিন্ন বই পুস্তক প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী স্থানসমূহ ও মেলায় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলোতে স্টল বরাদ্দ নেয়া। [৮০]~ রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত ক্যাসেট, পুস্তক, ও প্রকাশনা পরিবেশনের জন্য শো রুম প্রতিষ্ঠা। [৮১]~ সুন্নাত এবং সীরাতের সর্বোত্তম সেবাকারীকে সালাফের অনুসৃত নীতিমালার মাপকাঠিতে নির্ধারিত পুরস্কার প্রদান এবং বার্ষিক সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন, যাতে বড় বড় ব্যক্তিত্বদের নিমন্ত্রণ জানানো হবে। [৮২]~ অন্যান্য ভাষায় রাসূলের সীরাত প্রকাশের এবং বিশ্বব্যাপী প্রকাশনা কেন্দ্র এবং মাকতাবাগুলোতে পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ। [৮৩]~ রাসূলের পবিত্র সীরাত সংক্রান্ত আলোচনা, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা, উম্মতের বৈশিষ্ট্যবলী এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত এ ধর্মের সৌন্দর্য বর্ণনা সম্বলিত পত্রিকা বা সাময়িকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা। [৮৪]~ রাসূলের নুসরতে নিয়োজিত কর্মীদের এবং সীরাত সংক্রান্ত রচনা, অনুবাদ এবং সাইট নির্মাণে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা। সাইট কর্মকর্তা এবং কর্ণধারদের ক্ষেত্রেঃ~ [৮৫]~ সম্মেলনের আয়োজন, যাতে ইসলাম ধর্মের বৈশিষ্ট্য, সকল নবীর ক্ষেত্রে একই মুহাব্বাতের অনুবর্তনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। [৮৬]~ সাইট নির্মাণ কিংবা সংস্থা গঠন। অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত, তার বৈশ্বিক রেসালাতের বর্ণনা সম্বলিত সাইটের একটি অংশ নির্ধারণ করে দেয়া। [৮৭]~ অমুসলিমদের হেদায়েতের লক্ষ্যে তাদের সাথে আলোচনা-বৈঠকে অংশগ্রহণ, তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর ব্যক্তিত্ব এবং তার আনিত ধর্মের পাঠে উৎসাহ প্রদান। [৮৮]~ বিশেষ কোন হাদীস বা নববী বাণী সমৃদ্ধ বিশেষ ''গ্রপ'' মেইল করা। [৮৯]~ এখন থেকে শেষ পর্যন্ত সমকালিনতার সাথে প্রাসঙ্গিক করে রাসূলের ব্যক্তিত্ব, তার দাওয়াত সংক্রান্ত বিশেষ ইন্টারনেট প্রচারণা। [৯০]~ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে মিডিয়া পুস্তক ও গবেষণার যে তালিকা বের হয়, তাতে সীরাত সংক্রান্ত গবেষণাগুলো সংযোজন করা। বিত্তবান এবং ইসলামী হুকুমাতের ক্ষেত্রেঃ~ [৯১]~ সীরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মতৎপরতার পৃষ্ঠপোষকতা করা। [৯২]~ হাদিস ও ওয়াজ সম্বলিত বিভিন্ন লিফলেট ছাপানো. [৯৩]~ বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় ইসলাম ও নবিজী সম্পর্কে আলোচনা করে, প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এমন চ্যানেল প্রতিষ্টা করা ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করার কাজে অংশগ্রহন করা। [৯৪]~ ইসলাম ও নবিজী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপনার জন্য বিদেশী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সময় বরাদ্দ নেয়া ও ভাড়া নেয়া। [৯৫]~ নবিজীর সীরাত গবেষণা ও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্র বা সেন্টার প্রতিষ্টা করা। [৯৬]~ নবিজীর সীরাত কীর্তি সম্বলিত বিভিন্ন পাঠাগার ও যাদুগার প্রতিষ্টা করা। [৯৭]~ নবিজীর সীরাত সম্বলিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট নির্মান করা। [৯৮]~ বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় এমন বই পুস্তক ছাপানো ও প্রকাশ করা, বা ক্যাসেট বের করা ও মিড়িয়া প্রোগ্রামসমূহের আয়োজন করা যা নবীজী আনিত ইসলাম ধর্মের চমৎকার দিকগুলো ফুটিয়ে তুলে, মহানবীর উৎকৃষ্ট চরিত্রের বিভিন্ন দিকসমূহ গতিময় উপস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের সম্মুখে পেশ করে। [৯৯]~ সীরাত সংক্রান্ত বিভিন্ন দাওয়াতী প্রতিযোগীতায় সাহায্য করা। উৎসাহ ব্যাঞ্জক পুরস্কার ঘোষনা করা। [১০০]~ নবীজীর সাহায্য-সমর্থন করার ক্ষেত্রে বৈধ পন্থা অবলম্বন করা এবং বিদআত ও কুসংস্কার সহ সর্বপ্রকার সুন্নাহ পরিপন্থি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা। ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবন গাফফার ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাহ (জীবনী) কেন পড়া উচিৎ? বইঃ আর রাহীকুল মাখতুম - ডাউনলোড ( রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনী) কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?
  23. নবী ﷺ যেভাবে হজ করেছেন - পর্ব ১ সংকলনঃ শাইখ মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দীন আল-আলবানী (রহ) | অনুবাদঃ মুফতী নুমান আবুল বাশার, ড. এটিএম ফখরুদ্দীন জাবের (রা.)২ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় বসবাসকালে দীর্ঘ নয় বছর পর্যন্ত হজ করেননি।৩ হিজরী দশম বছরে চারিদিকে ঘোষণা দেয়া হল, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বছর৪ হজ করবেন। অসংখ্য লোক মদীনায় এসে জমায়েত হল। বাহনে চড়া অথবা পায়ে হাঁটার সামর্থ রাখে এরকম কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রইলনা৫ । সবাই এসেছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বের হওয়ার জন্য৬ । সবার উদ্দেশ্য, রাসূলুল্লাহ ﷺএর অনুসরণ করে তাঁর মতই হজের আমল সম্পন্ন করা। জাবের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন৭ এবং বললেন, مُهَلُّ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ وَ [مُهَلُّ أَهْلِ] الطَّرِيقُ الآخَرُ الْجُحْفَةُ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْعِرَاقِ مِنْ ذَاتِ عِرْقٍ وَمُهَلُّ أَهْلِ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ يَلَمْلَمَ মদীনাবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান হচ্ছে, যুল-হুলাইফা৮ । অন্যপথের (লোকদের ইহরাম বাঁধার স্থান) আল-জুহফা৯ , ইরাকবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান যাতু ইরক১০ । নজদবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান করন এবং ইয়ামানবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান, ইয়ালামলাম১১।১২ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যিলকদ মাসের পাঁচ দিন অথবা চার দিন অবশিষ্ট থাকতে বের হলেন।১৩ এবং হাদী তথা কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দিলেন ।১৪ আমরা তাঁর সাথে বের হলাম। আমাদের সাথে ছিল মহিলা ও শিশু।১৫ যখন আমরা যুল-হুলাইফাতে১৬ পৌঁছলাম। তখন আসমা বিন্ত উমায়েস রা. মুহাম্মদ ইবন আবূ বকর নামক এক সন্তান প্রসব করলেন। অতপর তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ ﷺ এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন যে, আমি কী করব? তিনি বললেন, اغْتَسِلِى وَاسْتَثْفِرِى بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِى ‘তুমি গোসল কর, রক্তক্ষরণের স্থানে একটি কাপড় বেঁধে নাও এবং ইহরাম বাঁধ।’ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে সালাত আদায় করলেন এবং চুপচাপ রইলেন১৭ । ইহরাম অতপর কাসওয়া১৮ নামক উটনীতে সওয়ার হলেন। উটনীটি তাঁকে নিয়ে বাইদা নামক জায়গায় গেলে তিনি ও তাঁর সাথিগণ হজের তালবিয়া পাঠ করলেন।১৯ জাবের রা. বলেন, আমি আমার দৃষ্টি যতদূর যায় তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর সামনে কেবল আরোহী ও পায়ে হেঁটে২০ যাত্রারত মানুষ আর মানুষ। তাঁর ডানে অনুরূপ, তাঁর বামেও অনুরূপ তাঁর পেছনেও অনুরূপ মানুষ আর মানুষ। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়। তিনিই তো তার ব্যাখ্যা জানেন। তাই তিনি যে আমল করছিলেন আমরা হুবহু তাই আমল করছিলাম।২১ তিনি তাওহীদ সম্বলিত২২ তালবিয়া পাঠ করেন, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ ، لاَشَرِيكَ لَكَ. ( লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক ) ‘আমি হাযির, হে আল্লাহ, আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোন শরীক নেই।২৩ আর মানুষেরাও যেভাবে পারছিল এই তালবিয়া পাঠ করছিল। তারা কিছু বাড়তি বলছিল। যেমন, لَبَّيْكَ ذَا الْمَعَارِجِ, لَبَّيْكَ ذَا الْفَوَاضِلِ. (লাববাইকা যাল মাআরিজি, লাববাইকা যাল ফাওয়াযিলি) কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে তা রদ করতে বলেননি।২৪ তবে তিনি বারবার তালবিয়া পাঠ করছিলেন। জাবের রা. বলেন, আমরা বলছিলাম, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ (লাববাইক আল্লাহুম্মা) لَبَّيْكَ ِبالحَجِ (লাববাইকা বিল-হাজ্জ)। আমরা খুব চিৎকার করে তা বলছিলাম। আর আমরা কেবল হজেরই নিয়ত করছিলাম। তখনো আমরা হজের সাথে উমরার কথা জানতাম না।২৫ আর আয়েশা রা. উমরার নিয়ত করে এলেন। ‘সারিফ২৬ ’নামক স্থানে এসে তিনি ঋতুবতী হয়ে গেলেন।২৭ মক্কায় প্রবেশ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এমনিভাবে আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহ্ এসে পৌঁছলাম। সময়টা ছিল যিলহজের চার তারিখ ভোরবেলা।২৮ নবী ﷺ মসজিদের দরজার সামনে এলেন। অতপর তিনি তাঁর উট বসালেন। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন।এরপর তিনি তাঁর ডান দিকে চললেন।২৯ অতপর তিনি তিন চক্করে রমল৩০ করতে করতে হাজরে আসওয়াদের কাছে আসলেন। আর চতুর্থ চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম আ.-এ পৌঁছে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন : وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ( ওয়াত্তাখিযূ মিম মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা ) তিনি উচ্চস্বরে এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন যাতে লোকেরা শুনতে পায়।৩১ এরপর মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বায়তুল্লাহ্র মাঝখানে রেখে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।৩২ তিনি এ দু’রাক‘আত সালাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পড়েছিলেন।৩৩এরপর তিনি যমযমের কাছে গিয়ে যমযমের পানি পান করলেন এবং তাঁর নিজের মাথায় ঢাললেন।৩৪ এরপর তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে তা স্পর্শ করলেন। সাফা ও মারওয়ায় অবস্থান তারপর সাফা দরজা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ে গেলেন। সাফা পাহাড়ের কাছাকাছি এসে পাঠ করলেন : إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন, আমিও তা দিয়ে শুরু করছি। অতপর তিনি সাফা দিয়ে শুরু করলেন এবং কাবাঘর দেখা যায় এমন উঁচুতে উঠলেন।অতপর তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে বললেন, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْد يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه. ( লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল্ মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্ ) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন। আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন; তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু-দলগুলোকে পরাজিত করেছেন।৩৫ অতপর এর মাঝে তিনি দু‘আ করলেন এবং এরূপ তিনবার পাঠ করলেন। এরপর মারওয়া পাহাড়ের দিকে হেঁটে অগ্রসর হলেন। যখন তিনি বাতনুল-ওয়াদীতে পদার্পন করলেন, তখন তিনি দৌড়াতে লাগলেন। যখন তিনি ‘উপত্যকার অপর প্রান্তে’৩৬ এসে গেলেন, তখন তিনি স্বাভাবিক গতিতে চলতে লাগলেন। মারওয়ায় এসে তিনি তাতে আরোহন করলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে তাকালেন।৩৭ অতপর সাফা পাহাড়ে যা করেছিলেন মারওয়া পাহাড়েও তাই করলেন। চলবে................... ........................................................................................................... ১। রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় হিজরত করার পর মোট চার বার উমরা করেছেন। ১ম বার : ৬ষ্ঠ হিজরীতে যা হুদায়বিয়া নামক স্থানে কুরাইশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হবার ফলে তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি। এবার তিনি শুধু মাথা মুন্ডন করে হালাল হয়ে যান এবং সেখান থেকেই মদীনায় ফেরত আসেন। ২য় বার : উমরাতুল কাযা ৭ম হিজরীতে। ৩য় বার : জি‘ইররানা থেকে ৮ম হিজরীতে। ৪র্থ বার : বিদায় হজের সময় ১০ম হিজরীতে। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ উমরার উদ্দেশ্যে হারাম এলাকার বাইরে বের হয়ে উমরা করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই (বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মা‘আদ : ২/৯২-৯৫)। ২। জাবের রা. উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন একজন সাহাবী। হজ সম্পর্কিত সবচে’ বড় হাদীসটির বর্ণনাকারী। ৩।নাসাঈ, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হিজরী ৯ম অথবা ১০ম সালে হজ ফরয হয়। হজ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ হজ করেন। দ্র. ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ। ৪। নাসাঈ। ৫। নাসাঈ। ৬। নাসাঈ। ৭। বুখারী, মুসলিম ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনা অনুসারে রাসূল সা. এ ভাষণ দিয়েছিলেন মসজিদে নববীতে। সময়টা ছিল মদীনা থেকে হজের সফরে বের হওয়ার পূর্বে। ৮। মদীনা থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত (কামূস); হাফিজ ইব্ন কাছীর রহ.-এর মতে, ‘৩ মাইল দূরে অবস্থিত’ (হিদায়া : ৫/১১৪); ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর মতে, এক মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত (যাদুল মা‘আদ : ২/১৭৮)। ৯। মক্কা থেকে ৩ মারহালার দূরত্বে অবস্থিত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, এটি একটি প্রাচীন শহর। এর নাম ছিল মুহাইমা। এটি বর্তমানে পরিত্যক্ত স্থান। যারা পশ্চিম থেকে হজ করতে আসেন এটি তাদের মীকাত। যেমন মিশর ও শামবাসী। আর পশ্চিমের লোকেরা যখন মদীনা হয়ে মক্কা গমন করেন যেমন তারা বর্তমানে করে থাকেন, তখন তারা মদীনাবাসীর মীকাত থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। কারণ, তাদের জন্য সবার ঐক্যমতে এটিই মুস্তাহাব (মাজমু‘ রাসাইল কুবরা’ মানাসিকুল হাজ্জ : ২/৩৫৬)। ১০। যাতু ইরক ও মক্কার মধ্যে ৪২ মাইলের দূরত্ব (ফাত্হ)। ১১। মক্কা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। ১২। মুসলিম। ১৩। নাসাঈ। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা মাথায় তেল ব্যবহার করে চুল আচড়িয়ে জামা-কাপড় পরে বের হন। তিনি এক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহৃত কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড় যেমন পাজামা বা চাদর ইত্যাদি পরতে নিষেধ করেননি। বুখারীতে যেমন ইব্ন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইবন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হাদীস থেকে মীকাতের আগেই ইহরামের কাপড় পরার অনুমতি বুঝা যায়। অথচ অনেকেই এটাকে অনুমোদিত বলে মনে করেন না। তবে নিয়ত এর ব্যতিক্রম। কারণ, গ্রহণযোগ্য মতানুসারে নিয়ত করতে হবে মীকাত থেকে আর বিমানে ভ্রমণ করলে ইহরামের নিয়ত ছুটে যাবার সম্ভাবনায় মীকাতের কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে। মনে রাখবেন, নিয়ত কখনো মুখে উচ্চারণ করার বিধান নেই; ইহরামেও না সালাত, সিয়াম প্রভৃতি ইবাদাতেও না। নিয়ত সব সময়ই করবেন কলব বা অন্তরে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা মূলত বিদআত। তবে ইহরামে لبيك اللهم عمرة وحجا পড়েছেন বলে যা সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, তার উত্তরে বলা হয় তিনি শুধু এতটুকুই বলেছেন, এর অতিরিক্ত কিছু বলেননি (শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. ‘আন-নিয়্যাহ’ মজমু‘ রাসাইল কুবরা : ১/২৪৪-২৪৫)। ১৪। ইরওয়াউল গালীল। ১৫। মুসলিম। ১৬। যুল-হুলাইফা মসজিদে নববী থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত। ১৭। নাসাঈ। অর্থাৎ এখানে আর তালবিয়া পড়লেন না। এরপর তালবিয়া পড়া শুরু করেন তাঁর উটনীটি বাইদা নামক স্থানে পৌঁছার পর, যেমনটি সামনে আসছে। ১৮। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উটনীর নাম। এর আরও নাম রয়েছে যেমন : ‘আযবা’ এবং ‘জাদ‘আ’। কারো কারো মতে কাসওয়া তাঁর উটের নাম (নাববী, শারহ)। ১৯। ইবন মাজা। ২০। ইমাম নাববী রহ. বলেন, এ থেকে সবাই একমত যে আরোহন করে এবং পায়ে হেঁটে- উভয়ভাবে হজ করা বৈধ। তবে উভয়টির মধ্যে উত্তম কোনটি সে বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ আলিমের মতে বাহনে করে হজই উত্তম। কারণ, (ক) নবী ﷺ এমনটি করেছেন (খ) বাহনে করে হজ করা হজের কার্যাদি আদায়ে সহায়ক এবং (গ) এতে খরচও বেশি হয়। তবে দাউদ জাহেরী প্রমুখ হেঁটে হজ করাকে উত্তম বলেছেন। তার মতে এতে বেশি কষ্ট হয় বলে তা উত্তম। তার এ মত সঠিক নয়। এ থেকে বুঝা যায় বিমানে সফর করে হজে যাওয়া জায়িয বরং মুস্তাহাব। তবে কেউ কেউ যে হাদীস বর্ণনা করেন, ‘বাহনে হজকারির প্রতিটি কদমে সত্তরটি নেকি লেখা হয় আর হেঁটে হজকারির প্রতি কদমে সাতশ নেকি লেখা হয়’ এটি সম্পূর্ণ জাল ও বানোয়াট হাদীস। (দেখুন : সিলসিলাতুল আহাদীস আদ-দাঈফা : ৪৯৬-৪৯৭)। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, এ ব্যাপারটি নির্ভর করবে হজকারির ওপর। কারো কারো জন্য বাহনে হজ উত্তম আবার কারো কারো জন্যে হেঁটে হজ উত্তম। এটিই সঠিক মত। ২১। জাবির রা.-এর কথার মধ্যে এ কথার প্রতি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সাহাবীদের সামনে পবিত্র কুরআন তুলে ধরতেন। একমাত্র তিনিই কুরআনের যথার্থ তাফসির ও ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি ছাড়া অন্যরা এমনকি খোদ তাঁর সাহাবীরাও তাঁর ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী ছিলেন। ২২। তাওহীদ ও শিরক বিপরীতমুখী দু’টি বিষয় যা কোনদিন একত্রিত হতে পারে না। এ-দুয়ের একটির উপস্থিতির অর্থ অন্যটির বিদায়। ঠিক রাত-দিন অথবা আগুন-পানির বৈপরিত্বের মতই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ ‘তোমরা হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য সম্পন্ন করো।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে তাওহীদ সবচে’ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি তাওহীদকে তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছেন। হজে নিম্নবর্ণিত আমলসমূহ সম্পাদনে তাওহীদের প্রতি তাঁর গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন, ১. তালবিয়া পাঠ। ২. লোক-দেখানো ও রিয়া থেকে মুক্ত হজ পালনের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ। ৩. তাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করার সময় তাওহীদ সম্বলিত ‘সূরা আল-কাফিরূন’ ও সূরা ইখলাস’ পাঠ। ৪. সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদনির্ভর দু‘আ পাঠ। ৫. আরাফার দু‘আ ও যিকরসমূহেও তাওহীদ সম্বলিত বাণী উচ্চারণ ৬. হাদী বা কুরবানীর পশু যবেহের সময় তাকবীর পাঠ। ৬. জামরায় পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর পাঠ ইত্যাদি। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য, তাওহীদের হাকীকত সম্পর্কে সচেতন হওয়া। শিরক ও বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা। ২৩। বুখারী : ৫৯১৫, মুসলিম : ১১৮৪। ২৪। ইবরাহীম আ. এর তালবিয়া ছিল তাওহীদ সম্বলিত। সর্বপ্রথম আমর ইবন লুহাই খুযাঈ জাহেলী যুগে তালবিয়াতে শিরক যুক্ত করে বলে, إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ. ‘কিন্তু একজন শরীক যার তুমিই মালিক এবং তার যা কিছু রয়েছে তারও’ (উমদাতুল কারী : ২৪/ ৬৫; আযরাকী, আখবারে মক্কা : ১/২৩২)। তার অনুসরণে মুশরিকগণ হজ ও উমরার তালবিয়া পাঠে উক্ত শিরক সম্বলিত বাক্য যুক্ত করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তালবিয়ায় তাওহীদের স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন এবং তা থেকে শিরকযুক্ত বাক্য দূর করে দিলেন (মুসলিম : ১১৮৫)। ২৫। ইবন মাজা। ২৬। এই জায়গাটি তান‘ঈমের কাছাকাছি বায়তুললাহ থেকে ১০ মাইল দূরে উত্তর দিকে অবস্থিত। ২৭। মুসলিম। ২৮। মুসলিম। ২৯। মুসলিম। ৩০। রমল হচ্ছে, ঘন পদক্ষেপে বীরের মত দ্রুত হাঁটা। ৩১। নাসাঈ। ৩২। বায়হাকী, মুসনাদে আহমদ। ৩৩। নাসাঈ, তিরমিযী। ৩৪। আহমদ। ৩৫। নাসাঈ, মুসলিম। (খন্দকের যুদ্ধে) ৩৬। মুসনাদে আহমদ। ৩৭। নাসাঈ।
  24. Shaikh Ibn Uthaimeen, may Allaah have mercy on him, said,•► “If you see that you have turned away from something from Allaah’s Religion or you see that you have turned away from the Book of Allaah, the Mighty and Majestic, either from reciting its [actual] words, or reciting it [by pondering over] its meaning, or reciting it by acting on it, then it is obligatory on you to cure yourself–and know that the cause of that turning away is SINS.” [Tafsir Surah al-Maa’idah, vol. 1, p. 483] <img alt="" style="border: 0px; " /> I Love Qu'ran! ♥
×
×
  • Create New...